লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা পাবেন যেখানে


লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা পাবেন কীনা এই নিয়ে অনেকরই চিন্তার শেষ নেই। লন্ডন বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর। এটি নিউইয়র্কের পরই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ শহর বলে বিবেচিত হয়। সারা বিশ্বের অসংখ্য পর্যটক আসেন প্রতি মূহুর্তে। লন্ডনের এয়ারপোর্টগুলো বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত এয়ারপোর্ট হিসাবে পরিগণিত হয়। লন্ডনের ছয়টি এয়ারপোর্ট দিয়ে ২০১৮ সালে সতের কোটি দশ লাখ লোক পরিগমন করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাঙ্গালীরাও আছেন।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ষ্টুডেন্ট ভিসায় আসাটা অনেক সহজ। বাংলাদেশ ও ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে শিক্ষার্থীরা আসছেন এখানে। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ছেলে-মেয়ে সহ পুরো পরিবার নিয়ে আসার চেষ্টায় আছেন। এছাড়া কেয়ার ভিসাসহ অন্যান্য পারমিট নিয়েও আসছেন অনেকেই।

ইউকেতে বসবাসের জন্য প্রথম পছন্দ হিসাবে অনেকেই লন্ডনকে বেছে নেন। এখানে বাঙ্গালী কমিউনিটি অনেক বড়। যুক্তরাজ্যের রাজধানী শহর হিসাবে কর্মসংস্থানের সুবিধা বেশি। তবে লন্ডনে থাকার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতার নাম বাড়ি ভাড়া।

কমবেশি সকলেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি কিংবা অসুবিধায় থাকেন। তবে একটু খোঁজ-খবর নিলে অবশ্য অনেক সময় সহজেই সাশ্রয়ী মূল্যে লন্ডনে আবাসনের ব্যবস্থা করা যায়।

অনেকেই জানতে চাইবেন লন্ডনের কোন এলাকায় থাকা খাওয়া সহজলভ্য। তাদের জন্যই মূলত: লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে একটু আলোকপাত।

লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা পাবেন যেখানে

পূ্র্ব লন্ডনের বাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকায়:

London_e_kom_khoroche_thakar_ jaiga
পূর্ব লন্ডনের একটি দোকানের জানালায় রুম ভাড়ার বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁইয়ে বাঙ্গালীর স্বজন সেখানে আগে থেকেই অধ্যুষিত স্বগোত্রীয় লোকজনেরা। লন্ডনেও তার ব্যতিক্রম নয়। লল্ডনে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল থেকে আসা অধিবাসিরা এখানে সর্বপ্রথম বসতি গড়েন প্রায় চার-পাঁচ পুরুষ আগে। সেই ধারাবাহিকতায় এখানে বাঙ্গালীদের জন্য দেশের বাইরে বসে সম্পূর্ণ দেশীয় আমেজ লাভের সুযোগ অতুলনীয়। বিশ্বের অন্য যেকোন বড় শহরের তুলনায় বাংলাদেশের অধিবাসীরা লন্ডনে একটি তৃতীয় বাংলা গড়ে তুলেছেন।

আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্যে ষ্টুডেন্ট ডিসকাউন্ট কার্ডের সুবিধা নিতে পারেন যে কোন বয়সে

লন্ডন শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্ডারগ্রাউন্ড ষ্টেশন অলগেট। এখানে বাস ষ্টপও আছে। এই অলগেইট ষ্টেশনের হাঁটা দূরত্বে অলগেইট ইষ্ট ষ্টেশন। সেখান থেকে বেরোলেই মিলবে বাঙ্গালিদের আনাগোনা। এখানেই বিখ্যাত ব্রিকলেইন এবং আলতাব আলী পার্ক। এর পাশেই ইষ্ট লন্ডন মসজিদ। আন্ডারগ্রাউন্ড ষ্টেশন অলগেইট ইষ্টের পরই হোয়াইট চ্যাপেল ষ্টেশন। লন্ডনের বাঙ্গালি পাড়ায় থেকে আপনি যদি সেন্ট্রাল লন্ডনের আশেপাশে থাকতে চান তাহলে এই এলাকাকেই বেছে নিন। কারন লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা পাবেন এই এলাকাতেই।

থাকার ব্যবস্থা কীভাবে করবেন?

উপরের বর্ণনা একটু বড় হয়ে গেছে যার আড়ালে এই লেখার আসল উদ্দেশ্য হারিয়ে যেতে বসেছে! আমরা তো এখানে কম খরচে থাকার জায়গা খুঁজছি। এই থাকার জায়গা পাবার জন্যই উপরে বর্ণিত এলাকাটি একটু জেনে নেয়া প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যের বাইরে থেকে আগত বাঙ্গালী পর্যটক ছাড়াও বিলেতের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত দেশীয় মানুষজনের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এদের অনেকেই লন্ডনে বেড়াতে আসতে চান না এর থাকা খাওয়ার খরচের বাহুল্যের জন্য। আবার যারা এখানে কীভাবে কম খরচে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তা জেনে গেছেন তারা সপ্তাহান্তে কাজের ছুটিতে লন্ডন বেড়াতে আসেন।

আপনি যদি একাকী লন্ডন ভ্রমণ করেন তাহলে অত্যন্ত কম খরচে থাকা-খাওয়ার সুবিধা সম্বলিত কিছু জায়গা পাবেন স্থানীয় বাঙ্গালিদের ব্যবস্থাপনায়। প্রশ্ন হল   লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা’র খোঁজ পাবেন কোথায়? কম দামে থাকা খাওয়ার এসব জায়গার খোঁজ পেতে হলে আপনাকে চোখ রাখতে হবে হোয়াইট চ্যাপেল এবং ব্রিকলেনের বিভিন্ন দোকানের উইন্ডোতে কিংবা দরজায় লাগানো বিজ্ঞাপনগুলোতে। এই বিজ্ঞাপনগুলোতে থাকা ঠিকানায় আপনি যোগাযোগ করলে সহজেই পেয়ে যাবেন থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। সাধারনত শেয়ার রুমে (৩-৬) থাকা, দুইবেলা খাওয়া ও সকালের নাস্তা সহ খরচ পড়বে জনপ্রতি ১০-১৫ পাউন্ড। বর্তমান সময়ে অত্যধিক চাহিদার কারণে অবশ্য এর চেয়ে খরচ একটু বেশিও লাগতে পারে।

লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা
হোয়াইট চ্যাপেলের একটি দোকানের উইন্ডোতে রুম ভাড়ার বিজ্ঞাপন

পূর্ব লন্ডনের মেসে থাকার ব্যবস্থা:

আপনি যদি কয়েকদিনের জন্য লন্ডন আসেন তাহলে মেসে উঠতে পারেন। পূর্বলন্ডনের অলিগলিতে অসংখ্য মেস রয়েছে। রাস্তার কর্নারশপের দরজা-জানালায় কিংবা ফোন ফ্যাক্সের দোকানে মেসের থাকার ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখবেন। ইষ্টলন্ডন মসজিদের ভিতরে এবং বড় সুপারমার্কেটগুলোতেও (যেমন-টেসকো, সেইনসবারীস, হোয়াইটচ্যাপেল) বিজ্ঞাপন পাবেন। সপ্তাহে সর্বনিম্ন থাকার খরচ পড়বে ৪০-৫০ পাউন্ড। এটি ছিল আগের দাম। বর্তমানে অনেকটাই বেড়েছে। তবে এক্ষেত্রে অনেক প্রতারণার ঘটনাও আছে। কারো সাথে কোন প্রকার লেনদেন করার আগে বিস্তারিত যাচাই করে নিবেন। রুমে উঠা এবং রুম ছেড়ে দেয়ার আগে নোটিশের সময়সীমা, অগ্রিম টাকা এবং অন্যান্য শর্ত সম্বন্ধে আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে নিন।

আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে ট্রেন ভ্রমণ: জেনে নিন টিকেটে ডিসকাউন্ট পাবার কিছু কৌশল

যুক্তরাজ্যের সাশ্রয়ী ভাড়ার চেইন হোটেল:

লন্ডন শহরের বিভিন্ন এলাকায় চেইন হোটেল গুলোতে যদি আপনি আগে থেকে বুকিং দিয়ে থাকেন তাহলে কম খরচে রুম পাবেন। তবে সেন্ট্রাল কিংবা পশ্চিম লন্ডনে খরচ পড়বে বেশি। কারন পর্যটকদের আনাগোনা ঐসব এলাকায় সবসময় একটু বেশি। অনলাইনে সার্চের সময় ইষ্ট লন্ডন কিংবা ই১ লিখে সার্চ দিতে হবে। চেইন হোটেলগুলোর মধ্যে সাশ্রয়ী কয়েকটি হোটেলের অন্যতম ট্রাভেলজ, ইবাইস,হলিডে ইন, প্রিমিয়ারইন অন্যতম। দুই জনের রুমের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া পড়বে ৩০ পাউন্ড। এছাড়া বিভিন্ন লয়ালিটি কার্ড এবং বিশেষ অফার থেকে রুম বুকিং করলে হয়তো আরও কমে পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া টপ ক্যাশব্যাক এবং কুইডকো‘র মাধ্যমে বুকিং দিলে কিছুটা ক্যাশব্যাকও পাবেন।

লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা

এয়ার বিএনবি:

অনলাইনে বুকিং দিয়ে সাশ্রয়ী আবাসনের জন্য ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি আরাধ্য নাম এয়ারবিএনবি। এই বুকিং ব্যবস্থা অল্পদিনেই সারাবিশ্বের মানুষদের কাছে একটি প্রিয় বিকল্প হয়ে উঠেছে। করোনা মহামারীর কারনে আবাসন শিল্পের এই ব্যবস্থাটি সাময়িকভাবে একটু মন্দা সময় কাটাচ্ছে। যদিও জরুরী প্রয়োজনে অনেকেই এখনও ব্যবহার করছেন এয়ার বিএনবি। যারা এয়ার বিএনবি সম্পর্কে একটু কম জানেন তাদের জন্য বলছি এয়ারবিএনবি হচ্ছে কারো বাড়িতে অতিরিক্ত রুম থাকলে সেখানে তাদের সাথে বিনিময়মূল্য প্রদানের মাধ্যমে শেয়ার করে থাকা।

পূর্ব লন্ডনেও এয়ারবিএনবি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ আতিথেয়তা প্রদান করছে। আপনি যদি এয়ারবিএনবি দিয়ে বুকিং দিতে চান তাহলে পুর্বলন্ডনের যেকোন ঠিকানায় উঠতে পারেন।

ফেসবুক গ্রুপে রুম শেয়ারের পোষ্ট

সবচেয়ে সহজ উপায় হল ইউকেতে বসবাসরত বাঙ্গালী কমিউনিটির বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করে সেখানে খোঁজ নেয়া। ইউকেতে আসার আগেই যে কেউ এভাবে শেয়ারে আবাসন পেতে পারেন। রুম কিংবা শেয়ারে থাকার জন্য অনেক পোষ্ট পাওয়া যায় এসব গ্রুপে। এছাড়া শেয়ার রুম চেয়ে নিজেও পোষ্ট করা যায়। কোথাও রুম খালি থাকলে এসব কমিউনিটি গ্রুপে অনেকেই সাবলেট চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন।

লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা
লন্ডনে প্রপার্টি ভাড়ার বিজ্ঞাপনের একটি নমুনা

রুম শেয়ার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে

ইউকেতে মুলধারার কিছু ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে ফ্ল্যাট কিংবা রুম শেয়ারের বিজ্ঞাপন থাকে। যেমন: স্পেয়ার রুম, মাইরুমস, সিটি রুমস, রুমলেটস, রাইটমুভ ইত্যাদি। সাধারনত এসব ওয়েবসাইটে সব সময়ই রুম ভাড়া পাওয়া যায়। তবে সমস্যা হল এসব জায়গায় ভাড়া থাকে একটু বেশি। এডভান্স দিতে হয় এক থেকে কয়েক মাসের জন্য। মুল ভাড়ার সাথে ইউটিলিটি বিল আলাদা হিসাবে নেয়া হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।

কিছুটা সাশ্রয়ীমূল্যে রুম ভাড়া পাবার অবশ্য আরও কিছু ওয়েবসাইট আছে। যেমন: গামট্রি, ক্রেইগলিষ্ট ইত্যাদি। এসব ওয়েবসাইটে বিভিন্ন শর্তও জুড়ে দেয়া হয় অনেক সময়। কেউ কেউ আবার মহিলাদের জন্য ফ্রিতেও থাকার সুবিধা অফার করেন।

আরও পড়ুন: লন্ডন বাস: ভ্রমণে যে ৫টি উপায়ে পাবেন ডিসকাউন্ট টিকেট

কমদামে খাবেন কোথায়:

কারন লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা’র খোঁজে এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন সাশ্রয়ী মূল্যে দেশীয় খাবার কিংবা ফাষ্টফুড খেতে চাইলে পুর্বলন্ডনের কোন বিকল্প নেই।  এখানকার কিছু বাংলাদেশী এবং ভারতীয়-পাকিস্থানী মালিকানায় পরিচালিত রেষ্টুরেন্টগুলোতে নামমাত্র মূল্যে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। খাবারের জন্য পূর্বলন্ডনের বিশাল এলাকায় অসংখ্য রেষ্টুরেন্ট এবং ফাষ্টফুডের দোকান রয়েছে। মূল্য অনেক সাশ্রয়ী। যেমন ৪-৬ পিস চিকেন ফ্রাইড উইংস মিল পাবেন ২ পাউন্ডের আশেপাশে (£১.৫০-২.৫০)। এক থেকে আড়াই পাউন্ডে পাবেন বিরিয়ানী কিংবা আলু ভর্তা, ডাল ও চিকেন তরকারিসহকারে ভাত। দেশীয় পরিচালনায় এসব রেষ্টুরেন্ট খাবারের মান মোটামুটি ভালই। এছাড়া ৮-১০ পাউন্ডের বিনিময়ে আপনি খেতে পারবেন ৩০-৫০ রকমের আইটেম দিয়ে সাজানো বুফে যা এককথায় বলা যায় উন্নত দেশগুলোর বাঙ্গালীপাড়ার সাথে তুলনায় অদ্বিতীয়।

শেষ কথা:

লন্ডনের পূর্ব পার্শ্বের বিশাল এলাকাজুড়ে বাঙ্গালি কমিউনিটির বসবাস। শুধুমাত্র ব্রিকলেন কিংবা হোয়াইট চ্যাপেলই শেষ নয়। এই এলাকাটি বাসে একবার যেতেই ঘন্টাখানেক সময় প্রয়োজন হবে। সুতরাং জায়গাভেদে থাকা-খাওয়ার দামের সামান্য তারতম্য হতে পারে। এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা পাবেন  কোথায় এই নিয়ে  একটু কম জানেন তাদের  একটি সাধারন ধারণা দেয়া। আপনি লন্ডনে বেড়াতে আসলে অবশ্যই নিজ দায়িত্বে আরও খোঁজ-খবর নিয়ে আসবেন। লন্ডন ভ্রমণে আপনার ভাল ও নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য আমাদের নিবন্ধগুলোতে চোখ রাখুন। এ সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে নীচের কমেন্ট বক্সে কিংবা আমাদের ফেসবুকে পেজে যোগাযোগ করুন।

আরও পড়ুন:

লন্ডনে শিক্ষার্থীরা সহজেই থাকার জায়গা পাবেন যেভাবে

যুক্তরাজ্যে ট্রেন ভ্রমণ: জেনে নিন টিকেটে ডিসকাউন্ট পাবার কিছু কৌশল (2022)

লন্ডন বাস: ভ্রমণে যে ৫টি উপায়ে পাবেন ডিসকাউন্ট টিকেট

লন্ডনের বিখ্যাত পর্তোবেলো রোড মার্কেট

লন্ডন কোন দেশের রাজধানী