মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র: বায়া ও বান্দাদের দেশ


মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র দেশের দু’টি বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী হলো বায়া ও বান্দা। এছাড়া মাঞ্জিয়া ও সারা নামে দু’টি অন্যতম সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠী রয়েছে । বান্দা ও গবায়া ভাষায় মধ্য আফ্রিকান দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ কথা বললেও এ দেশের দক্ষিণের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীগুলির মুখের ক্রেওল বা মিশ্রবুলি সাংগো-ই দেশটির সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা।

এছাড়া ঔপনিবেশিক আমলে আগত ফরাসিদের ফরাসি ভাষাও ব্যাপক প্রচলিত রয়েছে মধ্য আফ্রিকান দেশটিতে।

মধ্য আফ্রিকা দেশে সরকারি ভাষা ফরাসি ও সাংগো।

দেশের প্রায় এক -তৃতীয়াংশ অধিবাসী ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান ধর্মগুলিতে বিশ্বাসী। দেশের অর্ধেক মানুষ খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। এছাড়া এ দেশের প্রায় ১৫ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী।

ঐতিহাসিক ভাবে দেশটির দক্ষিণের নৃগোষ্ঠীগুলি থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক নেতার আগমন ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উত্তরভাগের জঙ্গি বাহিনীগুলির বিদ্রোহের কারণে বহুসংখ্যক লোক গৃহহীন হয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে।

১৯৬০ খৃষ্টাব্দে দেশটি ফরাসিদের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৬৫ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৯৭৯ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত তথাকথিত সম্রাট বোকাসা দেশটি শাসন করে। এরপর এখানে সামরিক স্বৈরশাসন বলবৎ হয়।

১৯৯৩ খৃষ্টাব্দ থেকে দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরে এলেও নানা ধরনের সহিংসতা লেগেই আছে।

মধ্য আফ্রিকা দেশটির পুরো নাম মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। এ দেশটি আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। প্রায় ৬ লক্ষ ২৩ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে ৪৮ লক্ষ লোকের বাস। ভৌগোলিক ভাবে এ দেশটি চাদ নদী ও কঙ্গো নদীর অববাহিকাদ্বয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলে একটি নিম্ন উচ্চতা বিশিষ্ট মালভূমির উপরে দাঁড়িয়ে আছে। মালভূমিটি সাভানা জাতীয় তৃণভূমি এবং গুল্মজাতীয় উদ্ভিদে আবৃত। দেশটির উত্তরাংশ ঊষর, এর বিপরীতে দেশের দক্ষিণভাগ নিরক্ষীয় – সেখানে অতিবৃষ্টি হয়। কেননা, সেখানে অরণ্য রয়েছে। আর এ কারণেই বৃষ্টি হয়। সারা বছর ধরেই বৃষ্টিপাত হয়, তবে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সবচেয়ে ভারী বর্ষণ হয়ে থাকে।

উবাংগি নদীটি দেশটির সাথে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সীমানা গঠন করেছে।
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের উত্তর ভাগের জলবায়ু উত্তপ্ত ও শুষ্ক প্রকৃতির।
এ দেশের নীতিবাক্য হলো – ‘একতা, মর্যাদা, কাজ’।

দেশটির রাজধানী নগরীর নাম বাংগি। বাংগি আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত। এটি এ দেশের বৃহত্তম নগরী। উবাংগি নদীর তীরে অবস্থিত বলে বাংগি মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের প্রধান নৌবন্দর।

আরও পড়ুন:

চাদ: জেনে নিন সেখানে কখন মনুষ্য বসতি গড়ে ওঠে

ট্রয় নগরী ধ্বংসের কারণ যা আজও বিস্ময়কর

বাংগি থেকে মূলত হীরা, তুলা, কাঠ, কফি ও সিসাল নামক এক প্রকারের আঁশ রপ্তানি করা হয়। স্থানীয় শিল্পীের মধ্যে বস্ত্র, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, সাবান, জুতা ও সিগারেট উৎপাদন এবং বিয়ার জাতীয় মদ চোলাইকরণ কারখানাগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে নগরীটির অর্থনীতি মূলত বাণিজ্য ও সরকারি কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভরশীল। বাংগিতে মধ্য আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও মুদ্রার প্রধান কার্যালয়টি অবস্থিত।

১৮৮৯ খৃষ্টাব্দে বাংগিতে ফরাসিরা একটি দুর্গভিত্তিক সামরিক ও প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করে, যা তাদেরকে মধ্য আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণ নিতে সাহায্য করে। এই দুর্গটিকে ঘিরেই পরবর্তীতে বাংগি শহরটি গড়ে ওঠে। বাংগি নামটি উবাংগি নদীর নাম থেকে এসেছে। উবাংগি নামটি আবার বোবাংগি ভাষা – বোবাংগি ভাষায় বাংগির অর্থ হলো ‘জলপ্রপাত’। ফরাসিরা বাংগিতে রাজধানী করার আগে তাদের রাজধানী ছিল ফর -দ্য পোসেলে।