চাদ: জেনে নিন সেখানে কখন মনুষ্য বসতি গড়ে ওঠে


চাদ। আফ্রিকার এই দেশটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আকাশের চাঁদ নয়। দেশের নাম চাদ। অথবা শাদ নামেও পরিচিত। লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন

Table of Contents

খ্রীস্টপূর্ব ৭ম সহস্রাব্দের শুরুতে চাদ উপত্যকাতে বড় আকারের মনুষ্য বসতি গড়ে ওঠে।

খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দ নাগাদ চাদের সহিলীয় অঞ্চলটিতে বহু রাজ্য ও সাম্রাজ্যের উত্থান -পতন ঘটে। চাদের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া আন্তঃসাহারান বাণিজ্য পথটি নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল এগুলির লক্ষ্য।

১৯২০ খৃষ্টাব্দ নাগাদ ফ্রান্স এ দেশটি দখল করে নেয়। অতঃপর চাদ দেশটিকে ফরাসি বিষুবীয় আফ্রিকার অংশীভূত করে।

১৯৬০ খৃষ্টাব্দে ফ্রাঁসোয়া তোম্বালবাইয়ের নেতৃত্বে চাদ স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু মুসলিম -অধ্যুষিত উত্তারঞ্চল তোম্বালবাইয়ের নীতির বিরোধিতা করে এবং ১৯৬৫ খৃষ্টাব্দে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৭৯ খৃষ্টাব্দে বিপ্লবীরা রাজধানী দখল করে এবং দক্ষিণের আধিপত্যের অবসান ঘটায়।

কিন্তু বিপ্লবী নেতারা অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ইসেনে আব্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করেন। ১৯৯০ খৃষ্টাব্দে তারই সামরিক জেনারেল ইদ্রিস দেবি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।

আরও পড়ুন:

দুর্ধর্ষ মোঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিস খান জন্মেছিলেন যে দেশে

তিব্বত: দূর্গম প্রকৃতির রহস্যময় এক দেশ

চাদ দেশটিতে যুদ্ধের কারণে এখন পর্যন্ত অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়ে আছে।

রাজনৈতিক সহিংসতা ও অভ্যুত্থান বা ক্যু এর ঘটনা চাদের রাজনীতিকে জর্জরিত করে রেখেছে।

চাদ বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি। চাদ দেশটির বেশির ভাগ নাগরিক দিনমজুর ও কৃষিকাজ করেন।

ঐতিহ্যবাহী তুলা শিল্প একদা এ দেশের প্রধান রপ্তানিকারী শিল্প হলেও ২০০৩ খৃষ্টাব্দ থেকে খনিজ তেল দেশটির রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস।

চাদ দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশের শতকরা ৫৫ ভাগ লোক মুসলিম ধর্মাবলম্বী। শতকরা ৪১ ভাগ লোক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।

চাদ দেশটির সরকারি নাম চাদ প্রজাতন্ত্র। এটি মধ্য আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র।

চাদ দেশের উত্তরে লিবিয়া, পূর্বে সুদান, দক্ষিণে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ -পশ্চিমে ক্যামেরুন ও নাইজেরিয়া এবং পশ্চিমে নাইজার।

সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত বলে এবং মরু জলবায়ুর কারণে চাদকে ‘আফ্রিকার মৃত হৃদয়’ বলেও মাঝেমধ্যে অভিহিত করা হয়।

চাদের সরকারি ভাষা আরবি ও ফ্রেন্স বা ফরাসি।

এ দেশের নৃগোষ্ঠী হলো – সারা, আরব, কানেম্বু, মাসালিট, তোবো, মাসা, বিদিয়ো, বুলালা, মাবা, দাজু, মুনদাং, গাবরি, জাঘাওয়া, ফুলা, তুপুরি, তামা, কারো, বাগির্মি, মাসমাজে, চাদীয়।

জাতীয়তাবাদ – চাদীয়।
দেশটি ১৯৬০ খৃষ্টাব্দের ১১ আগস্ট ফ্রান্স কর্তৃক স্বাধীনতা লাভ করে।
চাদ দেশের আয়তন মোট ১২,৮৪,০০০ বর্গকিলোমিটার।
জনসংখ্যা ১,৬২,৪৪,৬০০ জন।
চাদকে বাংলা ভাষা রীতিগত পরিবর্তনের কারণে শাদ বলেও ডাকা হয়।

চাদকে তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। যেমন – উত্তরের সাহারা মরুভূমি অঞ্চল ; মধ্যভাগের ঊষর সহিলীয় বেষ্টনী এবং দক্ষিণের অপেক্ষাকৃত উর্বর সুদানীয় সাভানা তৃণভূমি অঞ্চল।

চাদ হ্রদটি চাদ দেশের বৃহত্তম এবং আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয়। এই হ্রদের নামের কারণে দেশটির নামকরণ করা হয়েছে চাদ। সাহারা অঞ্চলের মধ্যেও পড়েছে এ দেশটি। দেশের সর্বোচ্চ পর্বতমালা হলো তিবেস্তি আর এই পর্বতমালার এমি কৌসি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এ দেশে ২০০’র বেশি জাতিগত ও ভাষাভিত্তিক গোষ্ঠীর বসবাস।

চাদের রাজধানী বসেছে এনজামেনাতে। এটি চাদের সর্ব বৃহৎ শহর। শহরটি লগন ও চারি নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। ঠিক এর মুখোমুখিভাবে অবস্থিত ক্যামেরুনের কৌসুরি শহর। শহর দু’টি একটি সেতুর দ্বারা একে অপরের সাথে সংযুক্ত।

এনজামেনা শহরটি একটি বিশেষ বিধিবদ্ধ অঞ্চল, যা ১০টি জেলা বা আরোনডিসেসমেন্টে বিভক্ত। এটি গবাদিপশু, লবণ, খেজুর এবং শস্যের আঞ্চলিক বাজারের জন্য খ্যাত। মাংস, মাছ এবং তুলা প্রক্রিয়াকরণ এখানকার প্রধান শিল্প এবং শহরটি চাদের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে থাকে। এখানের অর্থাৎ এনজামেনা শহরের ফোর্ট -ল্যামি ১৯০০ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ফোর্ট ল্যামির প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফরাসি সেনাপতি ইমিল জেন্টিল।