যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের ব্রেক্সিট চুক্তিতে যা আছে


 

অবশেষে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে কিছু বিষয়ে চুড়ান্ত ঐক্যমতে পৌঁছেছে দুইপক্ষ। অনেক দিন থেকেই এই বিষয়টি সূতোর উপর ঝুলছিল। নো-ডিল ব্রেক্সিট হবে। না দুইপক্ষের সমঝোতা হবে।

শেষ পর্যন্ত সমঝোতার পথে চলতে সিদ্বান্ত নিয়েছে দুই শিবির। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রধান মিলে ব্রেক্সিট ডিলের ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্বান্ত নিয়েছেন।

ব্রেক্সিট বিল একটি বড় আকারের প্রস্তাবনা যা প্রায় ১৫০০ পৃষ্টার। পূর্ণাঙ্গ বিল এখনও প্রকাশ হয়নি। তাই সবগুলো বিষয় এখনই জানা সম্ভব হবে না। এজন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে সে সম্পর্কেই  ব্রেক্সিট ডিলের প্রধান বিষয়গুলোর উপর সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল।

 

বাণিজ্য ও অর্থনীতি:

দুই পক্ষের যাবতীয় বাণিজ্যে কোন নতুন রকমের ফি আরোপ হবে না কিংবা পণ্য ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ বা কোটা আরোপিত হবে না। পহেলা জানুয়ারী ২০২১ থেকে আগের মতই থাকবে।তবে, সীমান্তে আগের চেয়ে চেকআপ বৃদ্ধি পাবে। নিরাপত্তা ও শুল্কের বিষয়গুলো গভীরভাবে দেখা হবে। এজন্য পণ্য আনা-নেয়াকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন সমূহকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

আর্থিক ও অন্যান্য পরিষেবা সমূহ যা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- তাতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে কীনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। নতুন নিয়মে আগে যেভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব পরিষেবা সরাসরি চালু হয়ে যেত এখন আর সেরকম থাকবে না। তবে যুক্তরাজ্য বলেছে চুক্তিটি বড় আকারে সব খাতেই সরাসরি প্রবেষাধিকার নিয়ন্ত্রণ করেছে।

চিকিৎসা, নার্স এবং স্থপতিদের মতো পেশাদাররা তাদের যোগ্যতার স্বয়ংক্রিয় স্বীকৃতি হারাবেন।

আরও পড়ুন: ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা নেয়া উচিত যে 5টি কারনে

 

ভ্রমণ:

যুক্তরাজ্যের অধিবাসীরা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের কোন দেশে ৬ মাসের মধ্যে ৯০ দিনের বেশি অবস্থান করতে চাইলে ভিসা নিতে হবে। সীমান্তে বৃটিশ নাগরিকরদের পাসপোর্ট কিংবা কাগজপত্র কড়াকড়িভাবে দেখা হবে।

গৃহপালিত পশু-পাখিদের জন্য ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রদত্ত পাসপোর্ট গৃহীত হবে না।

 

মৎস্য আহরন:

যুক্তরাজ্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌম উপকূলীয় দেশ । সমুদ্র উপকুলে নিজ এলাকায় মৎস্য আহরনের ব্যাপারে তারা যেকোন সিদ্বান্ত নিতে পারবে। তবে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মাছধরা নৌকাগুলো আরও কয়েক বছর যুক্তরাজ্যের অধিভূক্ত এলাকায় মাছ ধরতে পারবে। সেখানে আহরণকৃত মাছের সর্বমোট মূল্যের শতকরা ২৫ ভাগ যুক্তরাজ্য পাবে।

 

এই নীতিমালা আগামী সাড়ে পাঁচ বছরের জন্য বলবৎ থাকবে। পরবর্তীতে দুই পক্ষ আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্বান্ত নিবে।

 

বিচার ও নিরাপত্তা

বিচার ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন যুক্তরাজ্য ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের আদালতের সিদ্ধান্ত মানতে এখন থেকে আর বাধ্য নয়।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা: যুক্তরাজ্য এখন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য যা কেন্দ্রীয়ভাবে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন কর্তৃক সংরক্ষিত তা ব্যবহার করতে পারবেনা। তবে বিশেষ প্রয়োজনে কিংবা অনুরোধে ব্যবহার করতে পারবে।

ইউরোপুল যা ইউরোপের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তার সদস্যপদ হারাবে যুক্তরাজ্য। তবে এর সদর দপ্তরে উপস্থিত থাকতে পারবে। এখন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে এই সুবিধা পেয়ে আসছে তার মতই।

 

 

শিক্ষা:

যুক্তরাজ্য ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের ইরেসমাস স্কিমের সুবিধা হারাবে। এই স্কিমের অধীনে এক দেশের শিক্ষার্থী অন্য দেশের পাবলিক স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। অবশ্য এর জায়গায় নতুন স্কিম চালু হচ্ছে যার নামকরন করা হয়েছে গণিতবিদ অ্যালান তুরিংয়ের নামে। তবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা ইরেসমাস স্কিম ব্যবহার করতে পারবেন আয়ারল্যান্ডের সরকারের একটি ব্যবস্থাপনায়।

ব্রেক্সিটের এই চুক্তির মাধ্যমে প্রায় পাঁচ বছরের দোদুল্যমান অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছে দুইপক্ষ। চুক্তিহীন অবস্থায় ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে এলে দুই শিবিরেই নানা আশংকা বিরাজ করত। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীকালীন সময়ে যেকোন আর্থিক কিংবা ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় কিংবা গভীর বিশ্ব মন্দার দিকে ধাবিত হত। ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর একটি চুক্তির ব্যাপারে দুই পক্ষের ঐক্যমত হওয়ায় আপাতত সেই শংকা কিছুটা দূর হল বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

(বিবিসি অবলম্বনে)