জেনে নিন ফাইজার উদ্ভাবিত করোনার ভ্যাকসিন কতঠুকু কার্যকর


সম্প্রতি যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ ফাইজার উদ্ভাভিত করোনার টীকার অনুমোদন দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে ইতিমধ্যে পাঁচ লক্ষাধিক লোক এই ভ্যাকসিন বা টীকা গ্রহণ করেছেন। তবে এই প্রতিষেধক  বাজারে আসার অনুমোদন পাবার আগে পরীক্ষাধীন অবস্থায় এর কার্যকারিতা কী রকম ছিল? অনলাইনে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার উপর ভিত্তি করেই এই প্রতিবেদন।

BNT162b2 ফাইজার এবং বায়োএনটেক দ্বারা উত্পাদিত একটি ভ্যাকসিন। এটা লিপিড ন্যানো পার্টিকেল-সূত্রযুক্ত নিউক্লিওসাইড-সংশোধিত আরএনএ-এর উপর ভিত্তি করে মারাত্মক তীব্র শ্বসন সিন্ড্রোম করোনভাইরাস 2 (সারস-কোভি -2) পূর্ণ দৈর্ঘ্যের স্পাইক প্রোটিনকে ভিত্তি  করে তৈরি। এই ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা 2/3 ধাপে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অধ্যয়ন করা হয়েছিল যেখানে 43,448 অংশগ্রহণকারী ছিলেন যারা কমপক্ষে 16 বছর বা ততোদিক বয়সের অধিকারী। ট্রায়ালে অংশগ্রহনকারীদের  বিএনটি 162 বি 2 বা প্লাসবো এর দুটি ডোজ  দেওয়া হয়েছিল। দুটি ডোজের প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপের ব্যবধান ছিল ২১ দিন।

সবগুলো উপসর্গসহ করোনা পজিটিভ হওয়ার চার দিনের মধ্যে এই প্রতিষেধক প্রয়োগ করে প্রাথমিকভাবে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয় স্তরের পরীক্ষার আওতাধীন প্রধান বিষয় ছিল করোনায় মারাত্মকভাবে অসুস্থ রোগী যাদের প্রত্যঙ্গ কার্যকারিতা হারিয়েছে,যারা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে আছেন কিংবা মারা গেছেন। দ্বিতীয় স্তরে রোগীদের দুইমাসব্যাপী পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই পর্যায়ে সেসব রোগীদের দেখা হয় যারা কমপক্ষে এই প্রতিষেধকের দুটি ডোজের একটি গ্রহন করেছিলেন।

জেনে নিন ফাইজার উদ্ভাবিত করোনার ভ্যাকসিন কতঠুকু কার্যকর

৪৩৪৪৮জন প্রতিষেধক গ্রহণকারীর মধ্যে ৩৭৭০৬জনের দুই মাসের নিরাপদ থাকার তথ্য সংগৃহীত হয়। এই ৩৭৭০৬জন অংশগ্রহনকারীর মধ্যে শতকরা ৪৯ জন ছিলেন মহিলা, ৮৩% মানুষ শ্বেত বর্ণের, ৯% কালো বা আফ্রিকান, ২৮% দক্ষিণ আমেরিকান এবং ৩৫% শারীরিকভাবে মোটা ছিলেন। প্রতিষেধক গ্রহনকারীদের মধ্যবর্তী বয়স ছিল ৫২ বছর এবং ৪২.৩% এর বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি। কার্যকারিতার ক্ষেত্রে আটটি ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ৭দিন পর অংশগ্রহনকারীদের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।

এর মধ্য ১৬২ জন কে প্লেসবো (ট্রায়ালের অংশ হিসাবে যাদের প্রকৃত টীকা না দিয়ে ওষুধ নয় তবে অক্ষতিকর অন্য কিছু দেয়া হয়েছিল) হিসাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায় প্রতিষেধকটি ৯৫% কার্যকর। এর কার্যকারিতায় বয়স, বর্ণ, লিঙ্গ, মোটা কিংবা জাতিগত কোন তফাৎ নেই। প্রতিষেধকটির প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের সময়কালে ৩৯ জনকে টীকা দেয়া হয় এবং ৮২জনকে টীকা না দিয়ে প্লেসবো হিসাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ফলাফলে প্রতিষেধকটির কার্যকারিতা এই সময়কালে পাওয়া যায় ৫২% (৯৫% আস্থার ব্যবধান) যা এর প্রশমন ক্ষমতাকে প্রমান করে।

আরও পড়ুন: করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে যেভাবে সফল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

প্রথম ডোজের ১২ দিনের মাথায় যা শুরু হয়। এই টীকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে দৃশ্যমান ছিল ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা ৮০%, অবসাদগ্রস্ততা এবং মাথাব্যথা ৫৫%। সামগ্রিকভাবে, যারা প্রকৃত টীকা নিয়েছিলেন তারা প্লেসবো (যাদের প্রকৃত টীকা দেয়া হয়নি) অপেক্ষা প্রতিকূল রিপোর্ট বেশি করেছেন (২৭% এবং ১২%) কিংবা এ সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিকূলতা দেখিয়েছেন (২১% এবং ৫%)। মৃত রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানকারীরা প্রতিষেধকের কারনে মৃত্যুর কোন আলামত পাননি এবং কেউ মারাও যাননি।

সুতরাং ফাইজার কিংবা বায়োএনটেকের চিকিৎসা ট্রায়ালে দেখা যায় BNT162b2 mRNA ভ্যাকসিনটি করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ৯৫% কার্যকর এবং অংশগ্রহনকারীদের মধ্যেও গুরুতর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি। 

আরও পড়ুন: হেটেই নিন লাখ টাকা! সাথে আরও বোনাস!

বর্তমানে আরও ৪৮টি প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। যার মধ্যে ১১টির আছে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল কার্যকারিতা পরীক্ষার পর্যায়ে। এই প্রতিবেদনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং আ্যাষ্ট্রজেনেকোর উদ্ভাবিত প্রতিষেধকের কার্যকারিতাও নিবিড়ভাবে দেখা হয়। তবে ফাইজারের টীকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল অক্সফোর্ডের টীকায় অংশগ্রহণকারীদের চেয়ে তিনগুণ বেশি।