হুগলীর তীরে প্রিয় শহর কলকাতায়, পর্ব-1


চলচ্চিত্র ও ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন ভারত ভ্রমণ করেছেন ষাটেরও বেশি বার। লেখকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে তিলোত্তমা নগরী প্রাণবন্ত কলকাতা। বারবার ভ্রমণের সেই অভিজ্ঞতা লেখক প্রান্জল ভাষায় ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সাগরপারের পাঠকদের জন্য। আজ প্রকাশিত হল প্রথম পর্ব।

কলকাতার বড় বাজার -হাতিবাগান -মানিকতলা -শিয়ালদহ -কলেজ স্ট্রীট -পার্কস্ট্রীট ঘুরে দেখার কথা খুব করে মনে পড়ে।

বড় বাজার হ’ল কলকাতা মহানগরীর অন্তর্গত একটি এলাকা।

বড় বাজারকে আবার বড়া বাজারও বলা হয়।

বড় বাজারের উত্তরে পোস্তা এবং জোড়াবাগান ; দক্ষিণে জোড়াসাঁকো এবং পূর্ব দিকে কলুতোলা – দক্ষিণে বিবাদিবাঘ ; পশ্চিমে হুগলি নদী দ্বারা বেষ্টিত।

বড়বাজারের দক্ষিণ – পশ্চিম কোণে বউ বাজার ও লালবাজার রয়েছে।

বড়বাজার এলাকাটি হাওড়া ব্রিজ বা রবীন্দ্র সেতু সংলগ্ন।

বড়বাজারের ডান দিক জুড়ে কাটিং হ্যারিসন রোড – যা সোজা হাওড়া ব্রিজ বা রবীন্দ্র সেতু থেকে এগিয়ে শিয়ালদহ রেলস্টেশন পৌঁছেছে। এটি ১৮৮৯ থেকে ১৮৯২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।

রাস্তাটি প্রথমে স্যার হেনরি হ্যারিসনের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছিল। পরে মহাত্মা গান্ধীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।

বড়বাজার থানাটি কলকাতা পুলিশের কেন্দ্রীয় বিভাগের অন্তর্গত – এটি মল্লিক স্ট্রীটে অবস্থিত।

তালতলা মহিলা থানা কেন্দ্রীয় পুলিশ বিভাগের আওতাধীন সমস্ত পুলিশ জেলাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে বউবাজার, বড়বাজার, গিরিশ পার্ক, হরে স্ট্রীট, জোড়াসাঁকো, মুচিপাড়া, নিউমার্কেট, তালতলা ও পোস্তা।

১৮ শতকের সময়ে কলকাতার বাজার সুতানুটি হাটের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল। বাজারটি প্রায় ৫০০ বিঘা জমি ছড়িয়ে গিয়েছিল ও আরেকটি ৪০০ বিঘা আবাসিক এলাকায় আচ্ছাদিত ছিল। শেঠ এবং বসাক ছাড়াও সেখানে সোনার বণিক মল্লিক এবং তাদের সমমানের অন্যান্য লোক ছিল। তাদের সমৃদ্ধি এবং আড়ম্বর ঐ দিনগুলিতে কিংবদন্তি হিসেবে রয়ে গেছে।

তুলনামূলক কম স্বচ্ছতার বণিকও ছিল।

উদাহরণস্বরূপ হিসেবে এখন যেটি কলাকার রাস্তা নামে পরিচিত, তার আশপাশের এলাকার ঢাকা পট্টি, যা সাহাদের বাসস্থান ছিল, ঢাকা থেকে আগত কাপড় ব্যবসায়ীরা। তখন ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ও কাশিমবাজারের মতো কাপড় উৎপাদন কেন্দ্রগুলির সাথে শেঠ এবং বসাকদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

 

কলকাতা

 

বড়বাজার একটি বাংলা শব্দ – এর অর্থ বৃহৎ বা অনেক অনেক বড়।

তবে জানা যায়, এই জনপদের আশেপাশের এলাকায় শিবের জনপ্রিয় নাম বুড়ো – এই বুড়ো থেকে ঘুরেফিরে বড় এবং বাজার গড়ে ওঠার পরে বড়বাজার নাম হয়ে গেল।

বড়বাজার সুতা ও কাপড়ের জন্য কলকাতার বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং ভারতের বৃহত্তম পাইকারি বাজারগুলির অন্যতম একটি।

বড়বাজারকে নিয়ে আমার বহু স্মৃতি আছে – সত্তুরের দশকে এবং আশির দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বড়বাজার এলাকায় কোনো না কোনো আবাসিক হোটেলে রাত যাপন করতাম। তখন ঢাকা থেকে হাতেগোনা কিছু লোক কলকাতা যেত – বেড়াবার জন্য নয়, ব্যবসার কাজেই লোকজন যেতেন।

হাতিবাগান হ’ল কলকাতার উত্তরভাগে অবস্থিত শ্যামপুকুর ও বড়তলা থানা এলাকার অন্তর্গত একটি অঞ্চল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি বিমানবাহিনী কলকাতার এই হাতিবাগানে একটি বোমা ফেলেছিল। কিন্তু সেটি ফাটেনি – তবে সেই দিনগুলিতে হাতিবাগান এলাকার বাসিন্দারা সার্বক্ষণিক সময় ধরে হামলার আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছিল। এই বুঝি বোমা পড়ছে – ছিল এই রকম দুঃশ্চিন্তা।

পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ এক অগ্নিকাণ্ডে হাতিবাগান বাজারের একটি বড়ো অংশ ভস্মীভূত হয়েছিল।

হাতিবাগান সম্পর্কে জানা যায়, বাংলায় হাতি শব্দের অর্থ হস্তী ও

বাগান শব্দের অর্থ উদ্যান। এই মত অনুসারে, ১৭৫৬ সালে কলকাতা আক্রমণ করার সময় নবাব সিরাজউদ্দৌলার হাতিগুলিকে এখানে রাখা হয়েছিল।

তাই এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় হাতিবাগান।

আবার অনেকে মনে করেন, এই জনপদে হাতি পদবীধারী জনৈক ব্যক্তির একটি বাগান ছিল – আর তা থেকেই হাতিবাগান নামটি এসেছে।

মেহেতাব চাঁদ মল্লিক পরে সেই বাগানবাড়িটি কিনে নিয়েছিলেন।

হাতিবাগান বাজারের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন এই মেহতাব চাঁদ মল্লিক।

এখানের স্টার থিয়েটার নিয়ে অনেক কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে পুরনো দিনের মানুষের মুখে মুখে –

উনিশ শতকের শেষ ভাগে নির্মিত স্টার থিয়েটার নাট্যমঞ্চে গিরিশচন্দ্র ঘোষের একাধিক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও একাধিকবার এই নাট্যমঞ্চে নাটক দেখতে আসতেন।

বর্তমানে সিনেমা হলে রূপান্তরিত স্টার থিয়েটারে টিকিটের দাম কম হওয়ায় কলকাতার অনেক সিনেমা প্রেমিক মাল্টিপ্লেক্সের পরিবর্তে এই স্টারেই সিনেমা দেখতে আসেন।

শ্যামবাজারের পাশে অবস্থিত এই এলাকাটি দোকানপাট, বাজার, সিনেমাহল ও পুরনো নাট্যমঞ্চের জন্য বিখ্যাত এলাকা বলে শুনেছি।

কলকাতার অন্য কোনও অঞ্চলে এতগুলি সিনেমাহল ও থিয়েটারহল নাকি ছিল না।

হাতিবাগানের একটি জনপ্রিয় বিখ্যাত সিনেমাহল তথা নাট্যমঞ্চ হ’ল স্টার থিয়েটার।

কলকাতার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলির একটি এই জনপদে অবস্থিত। এখানের বাজারে বাংলার রেশম ও তাঁতের শাড়ী বিক্রি হয়।

হাতিবাগান প্রধানত কলকাতা পৌর সংস্থার ১০ ও ১১ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত।

হাতিবাগানের নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন হ’ল –

শোভাবাজার বা সুতানুটি এবং শ্যামবাজার।

এখানের লোকসভা কেন্দ্র – কলকাতা উত্তর।

বিধানসভা কেন্দ্র হ’ল – মানিকতলা।

একবার পূজার সময় উৎসব দেখার সময় হাতিবাগানের একটি রেস্তোরাঁয় বসে একটি কবিতা

লিখেছিলাম –

সেই কবিতাটি ডায়েরি থেকে পুনরায় উপস্থাপন করলেম ঃ

শরতের নীল আকাশ আর মাঠে ঘাটে

কাশফুল দেখেছি হুগলির তীরে –

এবার এলাম হাতিবাগানে

ঐ যে ঘরের মেয়ে এসেছে হেথায়

মেয়েকে দেখে হাতিবাগান বাসিন্দারা

মেতে উঠেছে আনন্দে –

চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে পূজার আয়োজন

অলিতে-গলিতে চলছে পূজোর থিম

প্যান্ডেল – আলোর রোশনাই দিয়ে সাজানো

চোখে পড়ে দেশপ্রিয় পার্ক

পূজোর থিম হ’ল বাংলার শিল্প

কত সুন্দর পরিবেশ হাতিবাগান সর্বজনীন

অনবদ্য পদক্ষেপে বিমুগ্ধ সবার সঙ্গে আমিও

হৃদয়ে স্লোগান জাগল –

কত ধানে কত চাল?

হাতিবাগান সর্বজনীনে যে যায়নি কোনোদিন

সে একবার যাক না হাতিবাগান

তখন বুঝবে হাতিবাগান সর্বজনীন

সবার সেরা মণ্ডপ।

মানিকতলা

মানিকতলা হ’ল  উত্তর কলকাতার একটি জনবহুল এলাকা। মানিকতলার লোকসভা কেন্দ্র হ’ল –

কলকাতা উত্তর। বিধানসভা কেন্দ্র হ’ল –

মানিকতলা। মেট্রো স্টেশন – গিরিশ পার্ক।

মূলত মানিকতলাও হ্রদ থেকে উৎপত্তি অর্থাৎ অতীতে এই এলাকাটির অধিকাংশ ছিল জলাভূমি।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের প্রথম দিকে  জলাভূমি ভরাট করে এখানে নগরায়ন হতে শুরু করে।

অধুনা মানিকতলা ক্রসিং হ’ল বিবেকানন্দ রোড বা মানিকতলা মেন রোড এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড বা আপার সার্কুলার রোড এর অন্তর্গত – এই দুটি পথ হ’ল উত্তর কলকাতার দুটি প্রধান সড়ক।

কলকাতার বৃহত্তর অন্যতম দুর্গাপূজা উদযাপন, মানিকতলা, চালতাবাগান লোহাপট্টি দুর্গাপূজা এবং তার আশপাশে দুর্গাপূজা পালিত হয়।

এছাড়াও বিডন স্ট্রিট বা অভেদানন্দ রোড –

উত্তর কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বা সড়কগুলির মধ্যে এটি মানিকতলা থেকে উৎপন্ন হয়ে নিমতলা ঘাটে গিয়ে শেষ হয়েছে।

এর সংলগ্ন এলাকা মানিকতলা -মানিকতলা নামে পরিচিত। এই ক্রসিং শ্যামবাজার, কাঁকুড়গাছি, রাজাবাজার এবং গিরিশ পার্ককে মানিকতলা সংযুক্ত করেছে।

মানিকতলা নামটি হয়েছে মানিক পীরের নাম দিয়ে – মানিকতলার মসজিদটি গড়ে উঠেছিল মানিক পীরকে কেন্দ্র করে।

মানিকতলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বাজার –

এগুলি কলকাতার প্রাচীনতম বাজারগুলির মধ্যে অন্যতম।

সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাংক অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট মানিকতলা ক্রসিংয়ে অবস্থিত।

মানিকতলায় বিবেকানন্দ রোডে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি –

এই নিবাস কলকাতার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে এক অনন্য নজির।

এখানে উজ্জ্বল নক্ষত্র তথা মনীষী স্বামী বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেন।

স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি এখন সংগ্রহশালা হয়ে গেছে।

এখানে স্বামী বিবেকানন্দের সমস্ত জিনিস সযত্নে সংরক্ষিত আছে।

জানা যায়, এখানেই তাঁর শৈশব – কৈশোরের দিন অতিবাহিত হয়েছে।

এখানে তাঁর শয়নকক্ষ, তাঁর মায়ের শিবপূজার জায়গা আজও বৃত্তমান।

 

শিয়ালদহ

কেউ বলে শিয়ালদহ, আবার কেউ বলে শিয়ালদা।

বনগাঁ থেকে ট্রেনে উঠে শিয়ালদহ রেল স্টেশনে কতবার যে নেমেছি বা ভারতের অন্য

বহু স্থান হয়ে কতবার শিয়ালদহে আসা – যাওয়া সব কিছু যেন জীবন খাতায় স্মৃতি হয়ে রইল – শিয়ালদহ রেল স্টেশনের রেস্তোরাঁয় পেট ভরে ভাত খাওয়া – কি করেই বা ভুলবো!

তাই একবার হুগলি নদীর তীরে বসে

শিয়ালদহকে  নিয়ে

গান বেঁধেছিলাম ঃ

চলে না রে চলে না গোয়ালন্দ হয়ে শিয়ালদহ রেলগাড়ী

দেশকে করলো বুড়ো খোকারা খন্ডবিখন্ড

ভাঙলো ওরা প্রদেশ – জেলা – গ্রাম – মহল্লা – উঠান

বাংলা ভেঙে করলো দিখন্ড – সবই ওদের স্বার্থ

হবে রাষ্ট্রপতি – হবে যে কত ডঙের মন্ত্রী

মরে গিয়ে সব হারালো সেই বুড়ো খোকারা

নদীয়া – কুচবিহার – দিনাজপুর – মালদা ভাঙল ওরা

চিরতরে বন্ধ হ’ল গোয়ালন্দ – শিয়ালদহ রেলপথ

আহা কত স্মৃতি জাগে মনে

পদ্মার ইলিশ নিয়ে শিয়ালদহ যাওয়া ;

শৈশবে ভাবতাম হেথায় থাকে শিয়াল

নামটি কি তবে শিয়াল নিয়ে শিয়ালদহ?

একটু আত্মভোলা হলে মানুষরূপী ধূর্ত শিয়াল

আহা মেরে দেয় পকেট –

ঘুরে বেড়ায় কত ধান্ধাবাজ শিয়ালদহে

প্লাটফর্মে দেখা মেলে কত জ্যোতিষ –

হাত দেখাতে গিয়ে একবার লুটে নিল শত টাকা

কথার সঙ্গে জীবন খাতার নেই যে কোনো মিল

তবুও ভালো – হোক না চালু

গোয়ালন্দ – শিয়ালদহ পথে আবার ট্রেন

আমরা যে আবার ফিরে পেতে চাই সেই হারানো

বাংলা.. ….”।

শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন হ’ল কলকাতার অন্যতম প্রধান রেলস্টেশন। শিয়ালদহ ভারতের ব্যস্ততম রেলস্টেশনগুলির একটি।

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরতলী রেল টার্মিনাল।

শিয়ালদহ স্টেশন ১৮৬৯ খ্রীস্টাব্দে চালু হয় – এখান থেকে তৎকালীন পূর্ব বঙ্গীয় রেল বিভাগের আওতায় ছিল।

দেশভাগের আগে দার্জিলিং মেল শিয়ালদহ হতে রাণাঘাট, গেদে – দর্শনা পথ ধরে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছাত।

সরকারি নাম শিয়ালদহ, কিন্তু লোকমুখে পরিচিত শিয়ালদা নামে।

শিয়ালদহর পূর্বনাম ছিল শিয়ালডিহি।

উত্তর কলকাতার শিয়ালদহ রেলস্টেশন সম্পর্কে জানা যায়, কলকাতা যখন ছিল প্রায় জনমানবহীন তখন শিয়ালদহ অঞ্চল ও এর আশপাশ ছিল বিশাল জলাভূমি, যারমধ্যে ছিল কিছু দ্বীপের মত জমি।

পুরনো অভিধান অনুযায়ী শিয়াল শিয়রে বা পর্বদিক এবং ডিহি কথাটার অর্থ গ্রাম। সুতানুটি – গোবিন্দপুর –

কলকাতা এ তিন অঞ্চল মিলে কলকাতার পত্তনের পর সেই শিয়ালডিহি কালক্রমে হয়েছে শিয়ালদহ।

জানা যায়, ১৬৯০ সালের দিকে সুতানুটি দখল করে ব্রিটিশরা। সুতানুটির প্রকৃতি, পরিবেশ অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক এতটাই মোহিত করে যে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা জোব চার্নক এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পাকাপাকি বসতি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইতিহাস বলে, একটি বিশাল অশ্বত্থ গাছের তলায় বসে নিয়ম করে হুকোয় টান দিতেন চার্নক সাহেব। যেখানে এ গাছ ছিল সেই স্থান বর্তমানে শিয়ালদহ স্টেশনের চত্বরের মধ্যে পড়ে। ১৭৯৪ সালে স্যার এ আপজন সাহেব তথা কলকাতা মানচিত্রের রূপকার এবং তার বিবরণেও পাওয়া যায় সে কথা – তবে শহরের ক্রমবর্ধমান আয়তনের সঙ্গে তাল রাখতে ওই গাছপালা কাটা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলেই।

ইতিহাস বলে, ১৭৫৭ সালে শিয়ালদহকে বলা হতো একটি উঁচু জমি, যা পূর্বদিক থেকে আসছে। কটন যখন ভারতে ছিলেন তখন শিয়ালদহ ছিল ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ের শেষ স্টেশন। এ রেলওয়ের প্রথম দিকে কাজ ছিল সহজে পৌঁছানো যায় দার্জিলিং এবং পূর্ববঙ্গে পাট ও তামাক উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোয়।

১৮৬৯ সালে শিয়ালদহ রেল চালু হয় সর্বসাধারণের জন্যে।

শিয়ালদহ রেলপথ ধরেই কলকাতার সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগসহ শিল্প – সাহিত্যের আদান প্রদান করতেন তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানবাসী। তারা থাকতেন শিয়ালদহ স্টেশনের আশেপাশে – এর আশেপাশেই ছিল আজকের বাংলাদেশের জেলার নামে তৈরি একাধিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ।

জানা যায়, শিয়ালদহ স্টেশন লাগোয়া একসময় সস্তা এবং জনপ্রিয় হোটেল ছিল গাইবান্ধা হোটেল। আরও ছিল – ঢাকা, বিক্রমপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, যশোর ইত্যাদি জেলার নামেও হোটেল ও রেস্তোরাঁ। জেলার আদপ কায়দায় এসব হোটেলে এক কিম্বা দুইরাত কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ব্যবসায়ীরা। কলকাতা থেকে কেনাকাটা করে ফিরে যেতেন শিয়ালদহ রেল স্টেশন হয়ে যে যার জেলাতে।

শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশনের ইতিহাসের সঙ্গে এক বর্ণময় জীবনগাঁথা রয়েছে বাংলাদেশেরও। সেদিন ছিল, আজও আছে, আগামীতেও থাকবে।

শিয়ালদহে তিনটি স্টেশন টার্মিনাল রয়েছে –

শিয়ালদহ উত্তর, শিয়ালদহ মেইন এবং

শিয়ালদহ দক্ষিণ।

 

আরও পড়ুন: তুরস্কের আন্টালিয়ার একটি মনোরম রিসোর্টে কয়েকদিন

 

কলেজ স্ট্রিট

কলেজ স্ট্রিট হ’ল  মধ্য কলকাতার একটি ১.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক বা রাস্তা।

বউবাজার এলাকার গণেশচন্দ্র

অ্যাভিনির মোড় থেকে মহাত্মা গান্ধী রোডের মোড় পর্যন্ত এই রাস্তাটি প্রসারিত।

কলকাতা মহানগরীর কয়েকটি প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রধান বই প্রকাশনা ও

বই বিক্রয় কেন্দ্রগুলি এই কলেজ স্ট্রিটের রাস্তার পাশে ও ধারে অবস্থিত।

কলেজ স্ট্রিট এলাকাকে

বইপাড়া বলা হয়।

আনন্দ পাবলিশার্স, দে’জ পাবলিশিং, রুপা অ্যান্ড কোম্পানি, দেব সাহিত্য কুটির, সাহিত্যম,

পত্র ভারতীসহ অসংখ্য বাংলা প্রকাশনা সংস্থার প্রধান কার্যালয় এই কলেজ স্ট্রিটে

অবস্থিত।

কলেজ স্ট্রিটে রাস্তার দুই দিকে বইয়ের অনেক ছোটোখাটো দোকানের ছড়াছড়ি – এই এলাকায় পুরনো ও নতুন বই পাওয়া যায়।

শুধু বাংলা ভাষায় লেখা বই নয় –

বিভিন্ন ভাষায় লেখা বই কলেজ স্ট্রিটে মেলে।

ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডে আউট -অফ- প্রিন্ট হয়ে যাওয়া অনেক বই-ই এখানে পাওয়া যায়।

কলেজ স্ট্রিট এলাকায় অবস্থিত উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি হ’ল –

হিন্দু কলেজ – ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত – পরে নাম পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্সি কলেজ নাম হয়, আবার পরে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণ করে  নামকরণ করা হয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ;

হেয়ার স্কুল – ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ;

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট –

১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ;

সংস্কৃত কলেজ – ১৮২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ;

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল – ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ;

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় – ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ;

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় – ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত।

২০০৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনের বেস্ট অফ এশিয়া তালিকায় ভারতের উল্লেখযোগ্য স্থানের স্বীকৃতি পেয়েছিল এই কলেজ স্ট্রিট।

এই কলেজ স্ট্রিটে কফি হাউসটি

অবস্থিত –

কফি হাউস বা রেস্তোরাঁ হ’ল বাঙালির আড্ডা স্থল।

এই কফি হাউসটি কলকাতার কফি হাউসসমূহের মধ্যে প্রাচীনতম।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের

উল্টো পাশে অবস্থিত কফি হাউসটি

কলকাতার সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

কফি হাউসটি বুদ্ধিজীবিদের আড্ডা স্থল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দেশ বিদেশে।

বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশেও – কলকাতা গেলে কফি হাউসে ছুটে যেতে মন চায়।

ইন্ডিয়ান কফি বোর্ডের উদ্যোগে বাঙালি কফিসেবীদের জন্য সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর কফি হাউস

খোলা হয় ১৯৪১ – ৪২ সাল নাগাদ আর তার কিছুদিন পরেই খোলা হয়

কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসটি।

বিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের মত ব্যক্তিও কোন একসময়ে আড্ডা দিয়ে গেছেন এই কফি হাউসে।

আর বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মান্না দে

গেয়েছিলেন –

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই,

কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই।

নিখিলেশ প্যারিসে, মঈদুল ঢাকাতে,

নেই তারা আজ কোনো খবরে,

গ্র্যান্ডের গিটারিস্ট গোয়ানিজ ডিসুজা

ঘুমিয়ে আছে যে আজ কবরে……

কত স্বপ্নের রোদ ওঠে এই কফি হাউসে

কত স্বপ্ন মেঘে ঢেকে যায়,

কত জন এল গেল, কত জনই আসবে

কফি হাউসটা শুধু থেকে যায়……

 

আরও পড়ুন: পূর্ণিমার রাতে নক্ষত্রের আলোয় অপরূপ সৌন্দর্যের খোঁজে

 

যতবার কলকাতা যাই ততবারই

কফি হাউসে একদিনের জন্য যেতে ভুল করি না।

ওখানে গিয়ে বার বার মনে পড়ে মান্না দে’র গাওয়া এই গানটি। কলেজ স্ট্রিট ও কফি হাউস যেন হৃদয়ের

অতল গহ্বরে বার বার জেগে ওঠে – কফি হাউসকে নিয়ে নিজের লেখা কবিতার কয়েকটি চরণ হ’ল  –

আহা কফি হাউস তুমি নিয়েছ

আমার মন হরণ করে

কলকাতা এলে তোমার দুয়ারে রাখি পায়ের চিহ্ন

তুমি স্মৃতিতে জাগাও সত্যজিৎ রায় আর

মান্না দে নাম

কত জ্ঞানী গুণীজন এসেছে, করেছে পান কফি

আহা কত আড্ডা – আজও বাঙালি আসে

তোমার হাউসে কিছু সময় কাটিয়ে

হিন্দু কলেজের কাছে দাঁড়াই

তখন মনে পড়ে পিরোজপুরের হিন্দু স্কুলের পণ্ডিত মশাইয়ের মুখখানা

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

দেখি বারে বারে –

পড়ে না চোখে পলক

কত বইয়ের দোকান –

পছন্দের বই কিনে পাই আনন্দ

সংস্কৃত কলেজ পানে তাকালে মনে দাবী জাগে –

স্কুল কলেজে পাঠ্যপুস্তকে চাই

সংস্কৃত – সংস্কৃত

এদিক সেদিক ঘুরে হেয়ার স্কুল দেখে মনে জাগে

ব্রিটিশ যুগের কথা –

আবার ঘুরে এসে দাঁড়াই –

আহা দাঁড়াই কফি হাউসের দ্বারে –

কফিতে চুমুক দিয়ে

আহা কি আনন্দ – আহা কি সুখ –

এ যেন স্বর্গ পাওয়া।

পার্কস্ট্রিট কলকাতা মহানগরীর একটি ব্যস্ততম এলাকা।

পার্কস্ট্রিটের ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে আছে কলকাতার ৩০০ বছরের ইতিহাস।

জোব চার্নক নদী পথ ধরে পা রেখেছিলেন কলকাতায় – তখন হুগলি নদীর তীর ছিল গ্রাম আর জলা – জঙ্গলে ভরা বিস্তৃত ফাঁকা জমি। সুতানুটি – গোবিন্দপুর – কলকাতা এ তিন অঞ্চলের সমন্বয়ে আজকের কলকাতা।

আজ যে অঞ্চলটা মধ্য কলকাতা – একসময় সেটা গোবিন্দপুর নামে পরিচিত ছিল। শহরে এক প্রবাদবাক্য ‘ধবধবে গোবিন্দপুর’ অর্থাৎ সুবিশাল ফাঁকা অঞ্চল। এখানে এককালে কয়েকটা গ্রাম ছাড়া গোটা অঞ্চল ছিল জলে – জঙ্গলে পরিপূর্ণ।

পলাশীর যুদ্ধের পরে ইংরেজরা নিজেদের বসতের জন্য গোবিন্দপুর নিজেদের দখলে নিয়ে নিল। ফলে গ্রামের বাসিন্দাদের গ্রাম সেখান থেকে সরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পুনর্বাসন দিতে শুরু করেন তারা। সেই সময়ে এখানকার পার্কস্ট্রিট অঞ্চলে কিছু গ্রামবাসীকে পুনর্বাসন দেয়ার কাজ শুরু হয়। ওই অঞ্চলের নাম তখন ছিল বাদামতলা। তবে কয়েক বছরের মধ্যে ওই এলাকা ইংরেজ সাহেবদের দখলে চলে যায়। এবং ইংরেজ সাহেবরা এখানে বসবাস করতে থাকেন – এরপরে বাদামতলা হয়ে গেল সাহেবপাড়া।

এলাকাটা ছিল বিশাল – তাই ইংরেজ সাহেবরা ঠিক করলেন সব কবর একটা নির্দিষ্ট এলাকায় থাক। ফলে একসময়ের সাহেবপাড়া ধীরে ধীরে পরিণত হতে থাকে ইংরেজের গোরস্থান হিসেবে। গড়ে ওঠে একাধিক কবরস্থান। এখানে সরকারিভাবে প্রথম রাস্তা পরিচিত পায় সমাধিস্থল সড়ক অর্থাৎ বুরিয়াল গ্রাউন্ড রোড নামে। অপরদিকে সাহেবপাড়া দেশীয়দের মুখে মুখে পরিচিতি পায় গোরস্থান কা রাস্তা নামে।

 

কলকাতা

 

ওই রাস্তা ধরে হাঁটলে পড়ে লোয়ার সার্কুলার রোড – এই রোডের উত্তর দিকে একসময় ছিল সাহেবদের কবরস্থান নর্থ পার্কস্ট্রিট সিমেট্রি। পরে তা বন্ধ হয়ে সেখানে গড়ে ওঠে অ্যাসেম্বলি অব গড ⛪ চার্চ স্কুল ; বাজার ; ব্যাঙ্ক ; অফিস ইত্যাদি। তবে তার ঠিক বিপরীতে রয়েছে সাউথ পার্কস্ট্রিট সিমেট্রি। সেখানে রয়েছে হেনরি লুই ভিভিয়ান, উইলিয়াম জোন্স, কলিন ম্যাকেঞ্জি, অগস্টাস ক্লিডল্যান্ড, চার্লস স্টুয়ার্ট, রবার্ট কিড, এডওয়ার্ড কুক, জর্জ উইলিয়াম হেসিং,

ডি রোজিও’র কবর।

আবার পার্কস্ট্রিটের পূর্বদিকে বরাবর গেলে দেখা যায় লোয়ার সার্কুলার রোড আর এই রোডের পাশে রয়েছে আরেকটি গোরস্থান। সেখানে রয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ; ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন প্রমুখের কবর। মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবরের উপর তাঁর আবক্ষ মর্মরমূর্তি –

নীচে সেই বিখ্যাত এপিটাফ –

দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব

বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল!

কবরের দু’পাশে নানা রঙের পাতাবাহার – আহা মধুসূদন দত্তের পাশাপাশি শুয়ে আছেন হেনরিয়েটা। শান্ত, চুপচাপ – কারো মুখে কথা নেই!

তখন কি মনে পড়বে না – হিন্দু কলেজে মধুসূদন ডিরোজিয়োকে পাননি বটে, তবে পেয়েছিলেন ডেভিড লেস্টার রিচান্ডসনকে। সাহিত্যের অধ্যাপক, পরে কলেজের অধ্যক্ষ এই মানুষটির ব্রিটিশ রোম্যান্টিক পোয়েট্রিক ক্লাস মুগ্ধ করেছিল তারুণ্যের দোরগোড়ায় পা রাখা মধুসূদনকে।

বায়রন ছিলেন তাঁর স্বপ্নের কবি, সাময়িক রোল মডেলও – নইলে যে যুগে দেবেন্দ্রনাথ – বিদ্যাসাগর থেকে রাম – শ্যাম – যদু সকলকে কৈশোর না পেরোতেই বিয়ে দেওয়াটা দস্তুর, সে কালে বায়রন – পড়া মধুসূদন ছিলেন ব্যতিক্রম। তাঁর সোজাসাপটা কথা –

বিলিতি কায়দায় কোর্টশিপ না করলে সে কি আর প্রেম, আর প্রেম করে বিয়ে না করলে সে কি আর বিয়ে!

কবির কতগুলো ইচ্ছে পূরণ হয়েছে – বড় কবি হওয়ার ইচ্ছে ছিল, হয়েছেন। আরামে – বিলাসে জীবন কাটানোর ইচ্ছে ছিল – খানিকটা পেরেছিলেন মধু কবি। খ্রিস্টান হওয়ার পরে যে কলেজ কবির ঠিকানা হয়েছিল, সেই বিশপ’স কলেজে সাদা আর কালো ছাত্রের আলাদা পোশাক – নীতি ছিল। শোনা যায়, মধুসূদন কলেজে সাহেবি পোশাক পরে যাওয়ায় হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। একসময় নাকি বাবার সামনে ধূমপান করেছেন মধুসূদন – এমনকি বাবা – ছেলে একত্রে মদ্যপানও করেছেন!

তবে মাইকেল মধুসূদনের মনে আত্ম – প্রশ্ন ছিল আমরণ আর তা হ’ল – ছেড়ে গেলে কষ্ট পেতে হবে, কিন্তু কষ্ট পেতে হবে বলে ছেড়ে যাব না কেন!

পার্কস্ট্রিটের পার্শ্ববর্তী কড়েয়া রোডের পাশেও আছে আরও একটি স্কটিশ কবরস্থান।

১৭৬০ সালে ফোর্ট উইলিয়ামের গভর্নর হিসেবে হেনরি ভ্যান্সিটার্টকে নিযুক্ত করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। গভর্নর হেনরি ঔপনিবেশিক ধাঁচে যেই বাড়িতে বা ভবনটিতে থাকতেন, পরবর্তী সময়ে সেই ভবনটিই হয় লরেটো হাই স্কুল।

এখানের লরেটো হাউস বা মিডলটন রো যেখানে সেখানে এক বিশাল বাগানবাড়ি ছিল – সেটি পার্কস্ট্রিট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বাগানের মালিক ছিলেন উইলিয়াম ফ্রাঙ্কল্যান্ড নামে এক সাহেব। সিরাজদ্দৌলার কলকাতা আক্রমণের সময়ে কেল্লায় আটকে থাকা মহিলা – শিশুদের ফেলেই তিনি কেল্লা থেকে খিড়কিপথ হয়ে নৌকা করে পালিয়ে যান।

পরে বিভিন্ন সময়ে ওই বাগানবাড়িতে থেকেছেন বাংলার গভর্নর হেনরি ভানিসটার্ট ; সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এলিজা ইম্পে ; বিশপ হিবার প্রমুখ। বিচারপতি ইম্পে ওই বাগানে হরিণ পুষতেন – তাই ওই জায়গাটির নাম হয় ডিয়ার পার্ক। পরে ওই থেকেই রাস্তার নাম হ’ল পার্কস্ট্রিট। এখন পার্কস্ট্রিটের নাম পাল্টে হয়েছে মাদার টেরিজা সরণি।

এই পার্কস্ট্রিটের উপরেই ছিল সে যুগের বিখ্যাত সাহেবিনাট্যশালা সাঁসুচি থিয়েটার – এখন সেই জায়গায় রয়েছে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ আর আছে এশিয়াটিক সোসাইটি।