যে কারণে স্পেনে অবকাশ যাপন থেকে তড়িৎ ফিরলেন যুক্তরাজ্যের পর্যটকরা


 

স্পেন ভ্রমণে না যাবার জন্য যুক্তরাজ্যের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উদযাপনকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। সেখান থেকে ফিরলেই দুই সপ্তাহের জন্য বাধ্যতামুলক কোয়ারেন্টাইন বা নিরোদকালীন ঘরে অবস্থানের বিষয়ে সরকারীভাবে সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিবরনীতে জানায় যে বিশেষ দরকার ছাড়া স্পেনে সব ধরনের ভ্রমণ বন্ধ করা হয়েছে যেহেতু সেখানে হঠাৎ  করে করোনা ভাইরাসের আক্রমনের হার বেড়ে গেছে।

হঠাৎ করে দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে থাকার এই ঘোষনা অবকাশ উদযাপনকারীদের জন্য এক দু:স্বপ্ন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। কারন পূর্বে সরকারীভাবে স্পেন ভ্রমণের জন্য নিরাপদ বলা হয়েছিল।

Spain2

এই ঘোষনার কারনে ভ্রমণকারীরা শনিবার মধ্যরাতের মধ্যেই স্পেন থেকে ইউকে ফিরে আসবেন কীনা তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। যারা বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু এখনও যাননি তারা তাদের হলিডে কাটানোর পরিকল্পনা পরিবর্তন করার জন্য চিন্তা করছেন।

হঠাৎ করে করোনা আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রেক্ষিতে ভূমধ্যসাগর তীরে

গ্রীস্মের ছুটিতে অবকাশ যাপনকালীন হাজার হাজার মানুষ সমস্যায় পড়বেন। জুন মাসে স্পেনে করোনায় আক্রান্তের হার গড়ে প্রতিদিন ২৫০ এর নীচে চলে এসেছিল। কিন্তু এখন সরকারী হিসাবে প্রতিদিন এক হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হিসাবে নিবন্ধিত হচ্ছেন।

স্পেন ভ্রমণ নিরাপদ বলে আর বিবেচিত না হওয়ায় দেশটি থেকে ইউকের যেকোন স্থানে কেউ ফেরত এলেই শনিবার মধ্যরাত থেকে তাকে দুই সপ্তাহের জন্য স্ববিচ্ছিন্ন থাকতে হবে বলে যুক্তরাজ্যের পরিবহন অধিদপ্তর জানিয়েছে। এখন একজন সরকারী মুখপাত্র বলেছেন যে স্পেনকে ট্র্যাভেল করিডোর ছাড়ের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, যৌথ জৈব নিরাপত্তা কেন্দ্র ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের সাথে একত্রে স্পেনের সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস মূল্যায়ন আপডেট করেছে। এর ফলে যেসব দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য স্ব-বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে পূর্বে জানানো হয়েছিল তার তালিকা থেকে স্পেনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে।

‘জনস্বাস্থ্য রক্ষাকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিয়ে করোনার বিস্তার ঠেকাতে আমরা এই সিদ্বান্ত নিয়েছি। ভ্রমণে যেকোন দেশের নাম নিরাপদ তালিকা থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে আমাদের পরিষ্কার সিদ্বান্ত নেয়া আছে। কোয়ারন্টিনে না থাকা এবং ভ্রমণের অন্যান্য উপদেশসমূহ সর্বশেষ ঝুঁকি মূল্যায়ন সম্বন্ধে ধারণা দেয়।

pexels photo 2265876

ইতিমধ্যেই স্পেনে অবস্থানকারী যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের সেদেশের স্থানীয় স্বাস্থ্যবিধি মনে চলা এবং স্বাভাবিকভাবেই ফিরে আসার পর দুই সপ্তাহের জন্য স্ব-বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, পিএইচই বেলিয়ারিক এবং ক্যানারি দ্বীপপুন্জের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সেখানকার যাত্রীদের নিয়মিত এই পরামর্শটি মেনে চলা উচিত।

এদিকে স্কটল্যান্ডের ফার্ষ্ট মিনিষ্টার নিকোলা ষ্ট্যার্জিয়ন আগেই জানান যে স্কটল্যান্ডে কেউ স্পেন থেকে এলে তাকে দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

নাটকীয় এই আইনের কারনে কয়েকটি দেশের সাথে কোয়ারেন্টিন ছাড়া  আকাশপথে ভ্রমণের যে সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছিল তা নিপতিত হল। একই সাথে করোনায় বিপর্যস্ত ভ্রমণ শিল্পে আয় ফিরিয়ে আনার যে সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছিল তাও বাধাগ্রস্ত হল।

এদিকে দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইন এড়াতে অনেকেই স্পেনে অবকাশ যাপন ত্যাগ করে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে অবকাশযাপনকারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ লক্ষ্য করা যায়।

বছরে সাধারনত ১৮ মিলিয়নের কাছাকাছি যুক্তরাজ্যবাসী স্পেনে অবকাশ কাটাতে যান। যদিও এ বছর মহামারীর কারনে সেই সংখ্যা অনেক কম হবে। তবে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৪ লাখ লোকের স্পেনে থাকার জন্য নিজস্ব বাড়িঘর রয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনের সিদ্বান্তের ব্যাপারে স্পেনের পর্যটন এলাকা বেনিডর্মের মেয়র টনি পেরেজ বলেন, আমরা খুবই দু:খিত। করোনার ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য আমরা অনেক কাজ করেছি এবং এখানে এই মুহুর্তে কোন সমস্যা নেই। 

সমুদ্র সৈকত সহকারে বেনিডর্ম খুবই সংঘটিত এবং নিরাপদ গন্তব্য। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করোনা সংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, সমস্যা স্পেনের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায়। কিন্তু এই সিদ্বান্তে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। বিশেষ করে আমাদের যেসব রিসোর্ট রয়েছে যার প্রধান ক্রেতা যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা।