যে ৫টি কারনে ভ্রমণ জরুরী


ভ্রমণ প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে আদিকাল থেকেই ভ্রমণের সূচনা। মানব জীবনই তো এক প্রকার ভ্রমণ! এর উপকারের দিকগুলো পর্যলোচনা করলে বিষ্ময়ের উদ্রেক করে।

এক সময় বিভিন্ন প্রতিকূলতা থেকে বাচার জন্য ভ্রমণ করতে হত। থাকা-খাওয়া ও নিরাপত্তার জন্য অনুকুল পরিবেশ পাবার পর আবশ্যিক ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়। তবে অন্যান্য কারনে ভ্রমণ কিছুটা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

ভ্রমণের যে সব উপকারিতা রয়েছে সেসবের ইতিবাচক প্রভাব আমাদের দেহমনে অনেক বেশি। শারীরিক কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় ভ্রমণের জুড়ি নেই। দেশে বিদেশে সব জায়গায় তাই ভ্রমণকে জীবনের একটি জরুরী অনুষঙ্গ মনে করা হয়।  

সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারে ঘরে বসেই এখন অন্য স্থানের বিস্তারিত দেখা কিংবা জানা যাচ্ছে। অনেকেই আবার নিয়মিত ভ্রমণ করে আকর্ষণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরছেন। এতে হয়তো কেউ কেউ ভ্রমনে আগ্রহী হচ্ছেন। আবার বিভিন্ন কারনে কেউ হয়তো তেমন আগ্রহী নন।  

জীবনের আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করতে ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই।  ভ্রমণের পাঁচটি বিশেষ উপকারিতা নিয়ে আমরা একটু দৃষ্টিপাত করব।

(১) নতুন এলাকা সম্পর্কে জানা:

নতুন এলাকায় ভ্রমণের অর্থ হচ্ছে আপনি সেই জায়গার মানুষ, পরিবেশ ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে সরাসরি জানতে পারছেন। তথ্যচিত্র দেখে কিংবা বই পড়ে হয়তো যেকোন একটি বা কয়েকটি বিষয় সম্বন্ধে জানা যায়। সরাসরি ভ্রমণের অর্থ হচ্ছে আপনি নিজের অভিজ্ঞতায় অন্য এলাকার সাথে তুলনা করে যে সব পার্থক্য দৃশ্যমান সেগুলো সহজেই বুজতে পারবেন। ভিনদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে পুরোপুরি জানার সুযোগ একমাত্র ভ্রমণই দিতে পারে। নতুন এলাকায় কিছুদিন অবস্থান করার মাধ্যমে সেখানকার সংস্কৃতি নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

(২) মানসিক অবসাদগ্রস্ততা নিরাময়:

এক জায়গায় দীর্ঘ্যদিন থাকার এক ঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের বিকল্প নেই। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি কিংবা অফিসের কাজের চাপ আমাদের শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত করে তুলে। কয়েকদিন নতুন এলাকায় বেড়াতে গেলে সেসব থেকে কিছুদিনের জন্য নিষ্কৃতি মিলে। দৃষ্টিনন্দনকোন এলাকায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ালে চিত্ত প্রফুল্ল হয়। মনের ক্লান্তি দূর হয়। শরীর মন থেকে যাবতীয় অবসাদগ্রস্ততা উধাও হয়ে যায়। ভ্রমণ শেষ আবার কাজে ফেরা যায় ফুরফুরে চিত্তে। 

(৩)আত্ম উন্নয়নে ভ্রমন

ভ্রমণ আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে যা ব্যক্তির বিকাশের জন্য খুবই দরকারী। প্রতিদিনের ধরাবাধা রুটিন কাজের বাইরে গিয়ে কয়েকদিনের জন্য মুক্তভাবে চলাফেরা করার সুযোগ দেয়। নতুন এলাকায় স্বাধীনভাবে সবকিছু করতে গিয়ে নিজের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করা যায়। কোন বিষয়ে নিজের দুর্বলতা থাকলে সেটা ধরা পরে। কোন কোন বিষয়ে উন্নতি করার সুযোগ আছে সেগুলো সহজেই বুঝা যায়। অন্যের সাথে তুলনা করারও সুযোগ আসে। তাই ভ্রমণ হতে পারে আত্ম উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি।

(৪) নতুন খাবারের সাথে পরিচয়:

অচেনা এলাকা কিংবা নতুন জায়গায় ভ্রমনের অন্যতম সেরা সুযোগ হচ্ছে নতুন খাবারের সাথে পরিচিত হওয়া। বিশ্বে অঞ্চলভেদে খাবার রান্না করার প্রক্রিয়া ভিন্ন। একই সাথে খাবারের স্বাদেরও তারতম্য আছে। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন খাবার পরখ করার মহা সুযোগ মিলে। বৈচিত্র‍্যময় খাবার আর উপাদেয় স্বাদ দুটি একই সাথে পাওয়া যায় ভ্রমণে। বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার মজাদার খাবার উপভোগ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল ভ্রমণ। 

(৫) নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচিত হওয়া

নিত্য নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচিত হওয়ার অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে ভ্রমণ। নতুন এলাকায় গেলে সেখানে বিভিন্নভাবে অপরিচিত মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে। মিলবে তাদের সাথে বন্ধুত্বের সহজ সুযোগ। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বন্ধুত্বের সুযোগে ছদ্মনামে প্রতারণা করে বেড়ায়। ভ্রমণে যেহেতু সরাসরি দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে এখানে সে সুযোগ নেই। তাছাড়া ভ্রমণে সাধারনত নানা বয়সের মানুষ থাকেন তাই কোন সমস্যা হয় না। কারো সাথে ক্ষণিক পরিচয়ের স্মৃতি অনেক সময় সারা জীবন আমাদের আনন্দের উপলক্ষ হয়ে থাকে। অনেকদিন পরেও সেই স্মৃতি রোমন্থন করা যায়।

শেষ কথা:

ভ্রমণের উপকারিতা সংক্ষিপ্ত এই লেখার পরিসরে প্রকাশ করাটা কঠিন। নানাবিধ উপকারের মধ্যে ভ্রমণের ৫টি কার্যকর উপকারিতা আমরা তুলে ধরেছি। জ্ঞান অর্জনের জন্য আগেকার যুগে সুদূর চীনে যাবার কথা বলা হত। এই কথাটির সারমর্ম অনেক গভীরে। ধারনা ছিল চীনের পরে আর কোন দেশ নেই। পায়ে হেঁটে চীন দেশে যাবার দূরত্ব অনেক। দীর্ঘ বিপদ সংকুল পথে পড়বে নদী, সমূদ্র, পাহাড়-পর্বত। এছাড়াও আছে হিংস্র প্রানী কিংবা চোর ডাকাতের ভয়। তবুও সব আশংকা উড়িয়ে দিয়ে চীনে যাবার পরামর্শের মধ্যে ভ্রমণের সুবিশাল উপকারিতার দিকেই নিশ্চিতভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে।