পর্তুগাল: ভাসকো দা গামার দেশ


Table of Contents

পর্তুগাল বা পর্তুগীজ দেশটি দক্ষিণ -পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এটি আইবেরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম অংশে, স্পেনের দক্ষিণে ও পশ্চিমে অবস্থিত।

আটলান্টিক মহাসাগরে দেশটির দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। এছাড়াও দু’টি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ পর্তুগালের নিয়ন্ত্রণাধীনে রয়েছে। এ দ্বীপপুঞ্জগুলি হলো – আসোরেস দ্বীপপুঞ্জ এবং মাদেইরা দ্বীপপুঞ্জ।

এ দ্বীপপুঞ্জ দু’টি আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত।

পর্তুগালের রাজধানী বসেছে লিসবনে। লিসবন পর্তুগালের বৃহত্তম শহর।

পর্তুগাল খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়। দৌউরু বা দৌরু নদীর মোহনায় অবস্থিত প্রাক্তন রোমান বসতি পোর্তুস নামে খ্যাত ছিল। পরবর্তীতে পোর্তুস নামটি পরিবর্তন হয়ে পর্তুগাল হয়েছে।

খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমান শাসনের অবসানের পর ইউরোপের অভ্যন্তরভাগ থেকে জার্মানীয় জাতির লোকেরা এসে পর্তুগাল শাসন করে। এরপরে উত্তর আফ্রিকা থেকে মুসলমানেরা এসে দেশটি দখল করে। কিছুকাল পরে দেশটি স্পেনীয় রাজাদের অধীনে আসে।

১২শ শতকে পর্তুগাল একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

১৫শ শতকে পর্তুগাল ইউরোপের প্রধান সমুদ্রাভিযান কেন্দ্রে পরিণত হয়। পরবর্তী প্রায় ১০০ বছর পর্তুগীজ নাবিকেরা বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে যান এবং বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে।

পর্তুগাল দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১,০৩,৭৯,৫৭৩ জন।

পর্তুগাল টাকার মান কত?

এখানের মুদ্রার নাম ইউরো। বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ১ ইউরোর বিপরীতে বাংলাদেশী ১১৩ টাকা পাওয়া যায়। পর্তুগাল ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত সবগুলো দেশে একক মুদ্রা ইউরো প্রচলিত।

পর্তুগাল ভাষা

এ দেশের ভাষা পর্তুগিজ। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা পর্তুগীজ। পর্তুগীজরা যেসব দেশে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করেছিল সেসব দেশে পর্তুগীজ ভাষার প্রচলন করেছিল। সাবেক পর্তুগীজ উপনিবেশ ব্রাজিল, অ্যাংগোলা, কাবো ভার্ডে, মোজাম্বিক, সাওতমে, প্রিন্সিপ এবং পূর্ব তিমূরে পর্তুগীজ ভাষা প্রচলিত।

পর্তুগালে বেতন কত?


পর্তুগালে সাধারণ শ্রমঘন্টা সর্বনিম্ন ৪.৪ ইউরো করে প্রদান করা হয়। তবে স্থায়ী চাকুরীতে দুই মাস বেতনের সমপরিমান বোনাস প্রদান করা হয়। সেই বোনাস হিসাবে নিলে ঘন্টাপ্রতি মজুরীর পরিমান দাঁড়ায় ৫.১৪ ইউরো। এছাড়া এখানে মাঝারী মানের চাকুরীতে বছরে ৩৩ হাজার ইউরো বেতন পাওয়া যায়।

পর্তুগাল কতবার বিশ্বকাপ জিতেছে?


ক্রিষ্টিয়ানো রোনাল্ডো পর্তুগালের ফুটবলের খ্যাতি এ প্রজন্মের সমর্থকদের মনে দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকেরই তাই ধারনা পর্তুগাল অতীতে হয়তো বিশ্বকাপ জিতেছিল। তবে রেকর্ড বলছে পর্তুগাল কখনো বিশ্বকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে তৃতীয় স্থান করেছিল। এরপর ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলে শেষ চারে পৌঁছেছিল তারা।

বিশ্বকাপ ফুটবলে পর্তুগাল এপর্যন্ত ৮বার চূড়ান্তপর্বে খেলেছে। এরমধ্যে পাঁচবারই পর্তুগালের হয়ে অংশ নিয়েছেন রোনাল্ডো। তবে শেষ পর্যন্ত দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে পারেননি ফুটবলের এই ট্রাজিক তারকা।

এ দেশের অধিকাংশ মানুষ রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী।

পর্তুগাল বা পর্তুগীজ দেশটি মোটামুটি আয়তাকৃতির। এর উত্তরের ভূমি পর্বতময় ও সবুজে ছাওয়া। এ দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং আবহাওয়া থাকে শীতল।

পর্তুগাল দেশটি বিশেষকরে দোউরু নদীর উপত্যকা জুড়ে আঙুর ক্ষেতের জন্য বিখ্যাত। এই উপত্যকা থেকে শুরু করে পর্তুগালের বিখ্যাত পোর্ট পর্যন্ত আঙুর ক্ষেতের ছড়াছড়ি। এই আঙুর দিয়ে পর্তুগালে মদ তৈরি হয়। এখানকার নারীপুরুষ নির্বিশেষে সবাই আঙুর দিয়ে প্রস্তুতকৃত মদ খেয়ে থাকে। সবাই মদে আসক্ত।

আরও পড়ুন:

যুগোস্লাভিয়া: ইউরোপ মহাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি দেশ

যে ৫টি কারনে ভ্রমণ জরুরী

পর্তুগালের মধ্য ও দক্ষিণ ভাগ উষ্ণতর এবং শুষ্কতর। এখানে আঙুর ছাড়াও গম ও অন্যান্য কৃষিদ্রব্য উৎপাদিত হয়। এখানে কর্ক, ওক ও জলপাই গাছও জন্মে।

দেশের একেবারে দক্ষিণে আলগার্ভ অঞ্চলটি উষ্ণ। গ্রীষ্মকাল এলাকাও বটে, তবে এখানে মাইলের পর মাইল জুড়ে রয়েছে বিস্তৃত রৌদ্রজ্বল বেলাভূমি।

ইতিহাস, ঐতিহ্যে ইউরোপের প্রাচীন দেশ পর্তুগাল। শিল্প, নান্দনিকতা ও ঐতিহাসিক ভাবে মানুষের কাছে ভালবাসার দেশ পর্তুগাল।

এখানের দর্শনীয় স্থান হল – লিসবন। এই লিসবন শহরে অসংখ্য পার্ক, ঝরণা রয়েছে। বৃহৎ সাতটি পাহাড় নিয়ে গঠিত টাগুস নদীর তীরে মনোরম শহর এই লিসবন। এটি একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক শহর। গ্রীসের এথেন্স এবং ইতালির রোমের পর বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীন শহর হলো লিসবন। সাগর, পাহাড়, নদী বেষ্টিত প্রকৃতির পরিবেশ রয়েছে এখানে। আর এর সঙ্গে জড়িত আছে বেশ কিছু বিশ্ব ঐতিহ্য। পুরাতনের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধনের এক অপরূপ সৌন্দর্যের শহর এই লিসবন। এই শহরেই দেখবেন ভাসকো দা গামার সমাধিস্থল। এটি একটি বৃহৎ গীর্জা বা মঠ। এটিকে বিশ্বের অন্যতম সুদর্শন মঠ বলা হয়ে থাকে। ষোড়শ শতকে নির্মিত এ সমাধিস্থল বা গির্জাটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসাবে স্বীকৃত।

পোর্টো পর্তুগালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই শহরে অসংখ্য রঙিন ভবন রয়েছে, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে থাকে। এই শহরে রয়েছে দৌরো উপত্যকা – এই উপত্যকায় অসংখ্য পর্যটক সারা বছর ধরে ভ্রমণে আসেন।

মাদেরিয়া একটি দ্বীপ শহর। ফুটবলপ্রেমী পর্যটকদের আকর্ষণীয় জায়গা এই মাদেরিয়া।

পর্তুগালের এরিকেইরা, আলগার্ভ, আলেন্টেজো, সিন্ট্রা, ওবিডোস, সেরা ডা এস্ট্রেলা, কইম্ব্রা ইত্যাদি শহরগুলিও আকর্ষণীয় এবং এই সব জায়গায় দর্শনীয় স্থানের ছড়াছড়ি রয়েছে।