বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে সব দেশের পর্যটকদের সেরা পছন্দ


বাহামা দ্বীপপুন্জ এবং ওয়েষ্টইন্ডিজ অনেকগুলো পশ্চিমা দেশের পর্যটকদের অবকাশ কাটানোর সেরা পছন্দ। দুই বাংলার অন্যতম সেরা পর্যটন লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন লিখেছেন সেই অজানা কাহিনী।

Table of Contents

বাহামা দ্বীপপুঞ্জ কমনওয়েলথ অফ দ্য বাহামাস নামে পরিচিত। আটলান্টিক মহাসাগরের ওয়েস্ট ইন্ডিজের লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত একটি দেশ।

বাহামা দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী বসেছে নাসাউতে।
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের আয়তন ১৩,৮৭৮ বর্গকিলোমিটার। এটি লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের ভূমির শতকরা ৯৭ ভাগ জুড়ে অবস্থিত এবং এই দ্বীপে শতকরা ৮৮ ভাগ জনসংখ্যার বাসস্থান। সমগ্র দ্বীপপুঞ্জ ৭০০ এর বেশি দ্বীপ, অনুদ্বীপ, প্রবালদ্বীপ নিয়ে গঠিত।

দ্বীপটি আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে কিউবার উত্তরে অবস্থিত। তুর্কস ও কাইকোস এই দ্বীপপুঞ্জের অনেকটা পাশে পূর্বে অবস্থিত । তাছাড়া বাহামা দ্বীপপুঞ্জ আমেরিকার ফ্লোরিডার পূর্বে অবস্থিত।

বাহামা দ্বীপপুঞ্জ

বাহামা দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীদের বলা হয় লুকায়ান। এরা হলো আরাকান ভাষী। লুকায়ানরা ছিল নিরীহ শান্তিপ্রিয় জাতি।

কলম্বাসই প্রথম ইউরোপীয় যিনি ১৪৯২ খৃষ্টাব্দে নতুন পৃথিবী হিসেবে এ দ্বীপ আবিষ্কার করেন। কলম্বাসের দেখাদেখি পরবর্তীকালে স্প্যানিশরা বাহামায় আসে। তারা এসেই লুকায়ানদের সহায়সম্পদ কেড়ে নিয়ে তাদেরকে দূরের দ্বীপে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়।

বাহামা দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে ঘনবসতি পূর্ণ দ্বীপ হল নিউ প্রভিডেন্স। এই দ্বীপেই বাহামার রাজধানী নাসাউ অবস্থিত।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা ওয়েস্ট ইন্ডিয়া ক্যারিবীয় অববাহিকা এবং উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরীয় একটি অঞ্চলবিশেষ। দ্বীপ এলাকা অ্যান্টিলিজ এবং লুকেয়ান দ্বীপপুঞ্জও এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।

সপ্তদশ শতক থেকে ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক অঞ্চল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল ব্রিটিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ড্যানিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নেদারল্যান্ডস অ্যান্টিলেজ, ফরাসি ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং স্প্যানিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ খৃষ্টাব্দের মধ্যে যুক্তরাজ্য ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, বাহামা, ব্রিটিশ হন্ডুরাস ও ব্রিটিশ গায়ানা বাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এলাকার দ্বীপ অঞ্চল সমূহকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফেডারেশনভুক্ত করে। তাদের আশা ছিল ফেডারেশনের  মাধ্যমে একক, স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে। কিন্তু ফেডারেশনের সীমিত সামর্থ্য, বহুবিধ সমস্যা এবং সমর্থন না থাকায় এ প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়।

ক্রিকেট এই অঞ্চলের জনপ্রিয় খেলা। বিশ্ব ক্রিকেটে এর ঐতিহ্য গৌরবান্বিত।

জাহাজ চলে আটলান্টিকে –

আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ। বাহামা দ্বীপপুঞ্জের জাহাজগুলো বেশ বিচিত্র। বিশাল বিশাল জাহাজ চলাচল করে আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে। এই জাহাজগুলোর ভেতরের যা কিছু আছে তা দেখে যে কেউ ভাবেন, এ যেন এক শহর। একটি শহরে যা যা থাকে তা জাহাজে পরিপূর্ণভাবে রয়েছে। একেকটি জাহাজ যেন ৭৮ হাজার টনের জাহাজ। এতে থাকে ১১০০ থেকে ১২০০ টি কেবিন ঘর। ঘরপ্রতি দু’জন করে থাকে অর্থাৎ জাহাজে যাত্রী ওঠে প্রায় ২৪০০ জন।

এদিকে নাবিক, পরিচারক, পরিচালক মিলে আরও প্রায় ১০০০ জন থাকে। সবশুদ্ধ প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি লোক নিয়ে যেন ছোটখাটো শহর হয়ে আটলান্টিকের বুকে ভেসে বেড়ায়। এ জাহাজে আট থেকে দশটা বার আর লাউঞ্জ তো আছেই। দু’টি সুইমিং পুল, এছাড়া খোলা ডেকে বসার কিংবা শুয়ে থাকার ডেক চেয়ার রয়েছে। আরও রয়েছে জিমনেসিয়াম, টেবিল টেনিস, লাইব্রেরি, ক্যাসিনো, ক্যাবার, থিয়েটার, সিনেমা ইত্যাদি।

দিনের বেলা বন্দরে বন্দরে জাহাজ থামে। জাহাজের রেস্টুরেন্টগুলিও বেশ আকর্ষণীয়। যে কোন রেস্টুরেন্টের মতোই এখানে টেবিল -চেয়ার দিয়ে সাজানো আর তার শেষপ্রান্তে উঁচু টেবিলের ওপর থরে থরে নানাবিধ খাদ্যদ্রব্য রয়েছে। অর্থাৎ বুফে যার যা পছন্দ খাবার নিয়ে এসে টেবিল -চেয়ারে বসে খাওয়া -দাওয়া করে। পানীয়ের জন্য নিকটবর্ত্তী বার অথবা পরিবেশকদের বললে তারাও এনে দেয়।

জাহাজের খাওয়াটা স্ন্যাকস জাতীয়। হামবার্গার, সমেজ, নানা রকমের স্যালাড, ডিম বেকন হ্যাম তো আছেই। শহরের মতো তৈরি এই জাহাজে নিরামিষাশীদেরও ভুখা থাকতে হয় না। তবে তাদের কাছে অনেক সময় ডিমকে নিরামিষ ধরা হয়। গার্ডেন ক্যাফের খাদ্য বৈচিত্র্য খোলামেলা জায়গায় দেখে যে কেউ অভিভূত হন।

বাহামা দ্বীপপুঞ্জ

সাগরে চলাচলকারী নরওয়েজিয়ান স্কাই জাহাজটি সবচেয়ে বিশাল। এ জাহাজে খাবারের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময় বা টেবিল নেই। খাবার ঘন্টা বলে কোনও কথাই নেই। ডিনার টাইমের মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গিয়ে বসলেই হল। ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চের জন্য গার্ডেন ক্যাফে সব সময়ই খোলা। অন্য তিনটা রেস্টুরেন্ট সকাল ১০টা পর্যন্ত ব্রেকফাস্ট এবং ১২টা থেকে তিনটা পর্যন্ত লাঞ্চ পরিবেশন করে। এসব কিন্তু সাধারণ রেস্টুরেন্টগুলোর হিসেবে, যেখানে খাবার জন্য বেশি কিছু দিতে হয় না।

এর দাম টিকিটের মধ্যেই ধরা থাকে। এছাড়া দু’তিনটি বিশেষ রেস্টুরেন্ট আছে, যেখানে ফরাসি বা চীনে বা ইতালিয়ান খাবার পাওয়া যায় এবং এগুলোতে জনপ্রতি ১০ থেকে ৩০ ডলার বেশি পড়ে। এসব জায়গা আয়তনে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং এখানে আগে বুক না করলে জায়গা নাও পাওয়া যেতে পারে। এসব ছাড়াও নিজেদের ঘরে রুম সার্ভিস থেকে ২৪ ঘন্টাই কিছু না কিছু খেতে পাওয়া যায়।

আসলে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্রের জাহাজে উঠলে কখন কে, কী খাবে এ নিয়ে কেউ কখনও ভাবে না। বরং কী এবং কখন খাবে না সেটিই প্রধান চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়।

রাতের আলোআঁধারিতে জাহাজে বসে দেখা মেলে দূরে ছাড়াছাড়া অনেক আলোর মালা। তার মাঝে একটি লাইট হাউসের তীব্র আলো ঘুরে ঘুরে যেন নাবিককে পথ দেখাচ্ছে। আকাশে দেখা দেয় নক্ষত্রপুঞ্জ। গভীর রাতে কেবিন ঘরে বসে চা পান করার সুযোগও রয়েছে। অর্থাৎ কেবিন ঘরের মধ্যেই চা তৈরির সরঞ্জাম টি ব্যাগ, গুঁড়া দুধ সব মজুদ থাকে।

বাহামা দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্রে যে জাহাজগুলো চলাচল করে এতে বেশির ভাগ যাত্রী আসেন আমেরিকা, কানাডা এবং পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে।