পালাউ কাজের ভিসা পাবেন যেভাবে


পালাউ কাজের ভিসা বর্তমান সময়ে অনেক শ্রমিকের পছন্দের একটি ভিসা। তবে এই ভিসাটি পাওয়া ততটাও সহজ কাজ নয় কারন পালাউ কাজের ভিসা পেতে হলে আপনাকে বেশ কিছু শর্তাবলী পূরণ করতে হবে তবেই আপনি পালাউ কাজের ভিসা এর জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। পালাউ কাজের ভিসার আবেদন করার আগে আপনাকে জানাতে হবে পালাউ দেশটি কেমন এ সম্পর্কে। একটি দেশের ভৌগোলিক ও সংস্কৃতির ভিত্তি করে মানুষের জীবন যাপন ও মানুষের আচার ব্যবহার।

Table of Contents

পালাউ দেশটি সম্পর্কে

পালাউ দেশটিকে বলা হয় প্রশান্ত মহাসাগরের মুক্তা। পালাউ দেশটি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটি প্রায় ২০০টি  ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত এবং ফিলিপাইনের পূর্বে বিষুবরেখার কাছাকাছি অবস্থিত। পালাউয়ের মোট আয়তন ৪৫৯ বর্গ কিলোমিটার (১৭৭ বর্গ মাইল)। আয়তনের দিক থেকে দেশটি বিশ্বের ১৯৫ তম দেশ। তবে বুজতেই পেরেছেন যে দেশটি বাংলাদেশের থেকে কয়েকশো গুন ছোট একটি দেশ। ২০২০ সালের পালাউ এর আদমশুমারী অনুসারে, পালাউয়ে প্রায় ১৮,০৯৩ জন লোক বাস করে। এর ফলে, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৪ জন। বেশিরভাগ বাসিন্দাই পালাউয়ান জাতির, এবং তাদের সরকারি ভাষা ইংরেজি ও পালাউয়ান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পালাউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে ছিল এবং ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। বর্তমানে এটি একটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু রেখেছে। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। পালাউয়ের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন, কৃষি ও মৎস্যশিকারের উপর নির্ভরশীল। দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে। মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পালাউয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এখানে চুনাপাথরের গুহা, ঝর্ণা, ম্যানগ্রোভ বন, এবং সমুদ্র সৈকতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য রয়েছে।

পালাউয়ে কিছু অনন্য প্রাকৃতিক আকর্ষণ রয়েছে, যেমন জেলিফিশ লেক, মিল্কিওয়ে লেক, এবং রক আইল্যান্ডস। এই জায়গাগুলো পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। পর্যটন পালাউয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। স্কুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং, কায়াকিং, এবং হাইকিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার ক্রিয়াকলাপের জন্য এটি জনপ্রিয়। এছাড়াও, পালাউ পরিবেশবান্ধব পর্যটনের জন্যও বিখ্যাত। এসব কারণে, পালাউ প্রকৃতি প্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য।

এছাড়া পালাউ দেশটিকে অনেক শিল্প কারখানা ও কাজের ক্ষেএ রয়েছে যেখানে প্রতিবছর কাজের জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিবছর অনেকে কাজের উদেশ্যে পালাউ এর উদ্দেশ্যে রওনা করেন। এবার তবে পালাউ কাজের ভিসা  সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পালাউ কাজের ভিসা এর আবেদন

পালাউ এর কাজের ভিসার জন্য আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।আপনি যদি এসকল নিয়ম অনুসরণ  করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনি পালাউ এর কাজের বিবেচিত হবেন না।তাহলে এ সকল শর্তাবলী হলো:

  • আপনাকে অবশ্যই পালাউ এর একজন নিয়োগকর্তা নিকট হতে একটি নিয়োগ পএ থাকতে হবে। 
  • অবশ্যই বয়স ১৮ বছর এর বেশি হতে হবে। 
  • আপনার অবশ্যই একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে পাসপোর্ট এর মেয়াদ আজ সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ মেয়াদ পর্যন্ত থাকতে হবে। 
  • কাজের নিয়োগপত্র অবশ্যই বৈধ হতে হবে। 
  • আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি প্রয়োজন হবে। 
  • আপনার পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি সদ্য তোলার রঙিন ছবি দরকার হবে। 
  • আপনার মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। 
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। 

এ সকল ডকুমেন্ট প্রদান করার পর আপনাকে পালাউ কাজের ভিসা ফি  প্রদান করতে হবে। তবে এবার পালাউ কাজের ভিসা ফি কত এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

পালাউ কাজের ভিসার ফি কত

পালাউ কাজের ভিসা পাবার জন্য আপনাকে ভিসার ফি প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রাথমিকভাবে ভিসার ফি বাবদ ১০০ ডলার প্রদান করতে হবে। আপনি যদি পরবর্তী ধাপে বিবেচিত হন তাহলে আপনাকে ইমিগ্রেশন ফি ও অন্যান্য খরচ বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার মোট ব্যয় ১ লক্ষ টাকা থেকে ৬ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। তবে এই ব্যয়ের পরিমাণ সর্বদা সময়ের উপর নির্ভর করে। 

পালাউ এর ন্যূনতম মজুরি কত

পালাউ হয়ে ন্যূনতম কাজের বেতন কত এটি নিয়ে আমাদের সকলেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে আপনি শুনে খুশি হবেন যে পালাউ এ আপনি প্রতি ঘন্টায় হিসেবে ৩.৫ ডলার অর্থাৎ ৩৫০ টাকা আয় করতে পারবেন। এটি পালাউ এর প্রতি ঘন্টার ন্যূনতম মজুরি। 

পালাউ এ কোন কাজের চাহিদা বেশি

পালাউতে বিভিন্ন ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি  উল্লেখযোগ্য হল:

  • পর্যটন শিল্পে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। হোটেল কর্মী যেমন রিসিপশনিস্ট, হাউসকিপিং, ওয়েটার, এবং বারটেন্ডার খুবই চাহিদাসম্পন্ন। এ ছাড়া গাইড, ট্যুর অপারেটর, জল ক্রীড়া প্রশিক্ষক এবং ডাইভিং ইনস্ট্রাক্টরও পালাউতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য এ ধরনের দক্ষ পেশাজীবীদের প্রয়োজন হয়।
  • সেবা শিল্পেও পালাউতে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। রেস্তোরাঁ কর্মী, যেমন কুক, ওয়েটার এবং বারটেন্ডার, এখানকার সেবা শিল্পের মূল ভিত্তি। এছাড়াও বিক্রেতা, কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি, অফিস সহকারী এবং শিক্ষক পেশাগুলোতেও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। 
  • নির্মাণ শিল্পে পালাউতে বেশ কয়েকটি পেশার চাহিদা রয়েছে। নির্মাণ শ্রমিক, কারিগর, এবং ইলেকট্রিশিয়ানদের এখানে ভালো সুযোগ রয়েছে। এই পেশাগুলো পালাউয়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
  • মৎস্যজীবী এবং কৃষকদের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পালাউয়ের অর্থনীতির একটি বড় অংশ মৎস্য ও কৃষি নির্ভর। এছাড়া, হস্তশিল্পীরাও পালাউয়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এক কথায় বলতে গেলে পালাউয়ের এই সব পেশায় কাজের সুযোগ রয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতির বিভিন্ন খাতকে শক্তিশালী করে। এই কাজগুলো পালাউয়ের স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখে। 

বহুল জিজ্ঞেসাসিত প্রশ্নসমূহ

পালাউ কাজের ভিসার পাশাপাশি আরো বেশ কিছু প্রশ্ন আমাদের জানার প্রয়োজন হয়। এ সকল প্রশ্নের সময় উপস্থাপন করা হয়েছে:

(১) পালাউ এর কাজে কিভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে? 

উওর: পালাউ এর কাজ খুঁজে পেতে চাইলে আপনাকে https://jobs.ministryofhrctd.pw এ কাজ অনুসন্ধান করতে হবে। 

(২) পালাউ এর মুদ্রা বাংলাদেশে কত টাকা?  

উওর: পালাউ এর মুদ্রা হলো USD আর বর্তমানে ১ USD সমান ১১৭ টাকা। 

(৩) পালাউ কি নিরাপদ দেশ? 

উওর: হ্যাঁ, পালাউ একটি নিরাপদ দেশ। 

শেষ কথা

আশা করি আমরা আপনাকে, পালাউ কাজের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। পালাউ কাজের ভিসা সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

আরও পড়ুন:পর্তুগালের সর্বনিম্ন বেতন কত