সোয়াত উপত্যকার আলকোজাইন পশতুন থেকে যেভাবে সালমান খান


সালমান খানকে বিশ্ব ও ভারতীয় সিনেমার অন্যতম ব্যবসা সফল অভিনয় শিল্পী বলে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। তন্মধ্যে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও অভিনয়ের জন্য দুটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার উল্লেখ করার মতো।

সালমান খানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে।

তাঁর পিতার নাম সেলিম খান, মাতার নাম সুশীলা চরক ওরফে সালমা খান। সালমান খানের পূর্বপুরুষরা ছিলেন সোয়াত উপত্যকার আলাকোজাইন পশতুন, যারা ১৮০০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে অভিবাসিত হয়ে এসেছিলেন। সালমান খান গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে মুম্বইয়ের বান্দ্রার সেন্ট স্ট্যানিসলস হাই স্কুল থেকে তাঁর স্কুল জীবন সমাপ্ত করেন।

সালমান খানের অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৮৮ সাল থেকে।

১৯৮০ এর দশকে তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হল – বিবি হো তো অ্যায়সি, এটিই তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি। ১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবিটি সালমান খানকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেয়। তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

সালমান খান অভিনীত স্মরণীয় ছবি হল – আন্দাজ আপনা আপনা, হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন, হাম দিল দে চুকে সনম, খামোশি, জুড়ওয়া,

হাম সাথ সাথ হ্যাঁয়, বিবি নাম্বার ওয়ান, তেরে নাম, পার্টনার, বডিগার্ড, সুলতান।

সালমান খান

 

সালমান খান অভিনীত

বাজরাঙ্গি ভাইজান

মুক্তির তারিখ – ১৭ ই জুলাই , ২০১৫

বাজরাঙ্গি ভাইজান ছবির পরিচালনায় ঃ

কবীর খান।

সংলাপ ঃ কবীর খান।

কাহিনী ও চিত্রনাট্য ঃ ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ।

চিত্রগ্রাহক ঃ অসীম মিশ্র।

সুরসৃষ্টি ঃ প্রীতম।

গীত রচনা ঃ ময়ূর পুরি, অমিতাভ ভট্টাচার্য, নীলেশ মিশ্র ও কসুর মনির।

প্রযোজনা ঃ সালমান খান, রকলিন ভেঙ্কটেশ।

ভাষা ঃ হিন্দি।

অভিনয়ে ঃ সালমান খান, কারিনা কাপুর, মেহের ভিজ,  নাজির খান , কমলেশ গিল, ওম পুরী, রাজেশ শর্মা, হারশোলী মালহোত্রা, নওয়াজউদ্দীন সিদ্দিকী, শরৎ সাক্সেনা, অলকা কৌশল, অতুল শ্রীবাস্তব

এবং আরও অনেকে।

কাহিনী চুম্বক ঃ

সুলতানপুর পাহাড়ের কোলে পাকিস্তানের একটি মনোরম গ্রাম, সেখানে ছয় বছরের শিশু মেয়ে বাবা – মায়ের সঙ্গে বসবাস করে।

মেয়েটি মায়ের সঙ্গে ট্রেনে ভারতের দিল্লীস্থ সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজারে এসেছিলেন।

ট্রেনটি মেরামতির জন্য এক জায়গায় রাখে — সেই সময় শাহিদা ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। আর তার মা ছিল ঘুমন্ত অবস্থায়। শাহিদা ট্রেনে উঠার আগেই ট্রেন ছেড়ে চলে যায়। আতঙ্কিত হয়ে শাহিদা একটি মালবাহী ট্রেনে উঠে কুরুক্ষেত্রে এসে নামলো। সেখানে পবন কুমার চতুর্বেদীর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়।

সালমান খান

 

পবন কুমারকে স্নেহের সাথে বজরঙ্গি বলা হয় — তিনি একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু ব্রাহ্মণ এবং ভগবান হনুমানের প্ররোচিত ভক্ত। পবন কুমার তার বাবার বন্ধু দয়ানন্দ পান্ডের বাড়িতে থাকেন। শাহিদা কোথায় থাকে বা তার নাম কি —  জানতে চেয়ে ব্যর্থ হলে পবন কুমার মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এবং ওই মেয়েটির নাম দিল – মুন্নী।

পরে জানতে পারে, মুন্নী পাকিস্তানী নাগরিক — সে মুসলিম। ক্ষুব্ধ দয়ানন্দ পবনকে পাকিস্তানী হাইকমিশনারের মাধ্যমে পাকিস্তান প্রেরণের নির্দেশ দেন। কিন্তু বিক্ষোভের কারণে ওই সময় পাকিস্তানী হাইকমিশন অফিস বন্ধ ছিল।

এক ট্রাভেল এজেন্ট মুন্নীকে পাসপোর্ট ছাড়াই পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু পরিবর্তে শাহিদাকে পতিতালয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করে। ফলে পবন রেগে যায় — এবার পবন কুমার ঠিক করলেন, পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া মুন্নীকে বাড়িতে পৌঁছে দেবেন।

পবন কুমার এবং মুন্নী সীমান্তের বেড়া নীচে পাকিস্তানে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। ভারতীয় গুপ্তচর হওয়ার সন্দেহে পবন কুমারকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় পবন কুমার পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক নবাব চাঁদকে সকল কথা খুলে বলেন। নবাব চাঁদ ভেবেছিলেন যে, পবন কুমার একজন ভারতীয় গুপ্তচর। কিন্তু আবিষ্কার করেন , তাঁর ধারণা ভুল।

পরে শাহিদা চিনতে পারে তার সেই গ্রাম — নবাব চাঁদ, শাহিদা ও পবন কুমার সেই গ্রামের দিকে রওনা হ’ল। এদিকে পাকিস্তানী পুলিশ ভারতীয় গুপ্তচর খুঁজছে। সেই সময় একটি পরিকল্পনা করে পবন কুমার জঙ্গলের দিকে ছুটে যায়, অন্যদিকে নবাব এবং শাহিদা পালিয়ে গেল সুলতানপুরের দিকে।

পবন কুমার পালাতে পারলো না, সে ধরা পড়লো পাকিস্তানী আর্মির হাতে। সেই সময় একজন সহানুভূতিশীল সিনিয়র অফিসার বুঝতে পারলেন যে, পবন কুমার নির্দোশ — সে ভারতে হারিয়ে যাওয়া পাকিস্তানের মেয়েটিকে পৌঁছাতে এসেছিল মাত্র অন্যকোনো বিষয় নয়।

পবন কুমার অবশেষে সীমন্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করার সময় দূর থেকে মুন্নী ওরফে শাহিদা বলে ওঠে মামা।

পবন কুমার তার কন্ঠ শুনে — তারপর এরা একে অপরের দিকে ছুটে যান।

আরও পড়ুন: বাংলা মুভি দেখার জন্য কয়েকটি সেরা ওয়েবসাইট

বজরঙ্গি ভাইজান ছবির গান ঃ

১. সেলফি লে লে রে –২.তু চাহিয়ে। ৩. ভার দো ঝোলি মে ৪.আজ কি পার্টি। ৫. চিকেন সং।

৬.জিন্দেগী। ৭.তু জো মিলা। ৮.ভার দো ঝোলি মেরি

৯. তু জো মিলা দেখনা না। ১০.জিন্দেগী কুছ তো বাতা। ১১.তু জো মিলা।

সালমান খান

 

সালমান খান অভিনীত-

সাজন

সাজন ছবির পরিচালনায় ঃ

লরেন্স ডিসুজা।

প্রযোজনা ঃ সুধাকর বোকারে।

সুরকার ঃ নাদিম -শ্রাবণ।

গীত রচনা ঃ সমীর।

চিত্রগ্রাহক ঃ লরেন্স ডিসুজা।

সম্পাদনা ঃ এ, আর, রাজেন্দ্রন।

মুক্তির তারিখ ঃ ৩০ আগষ্ট, ১৯৯১

ভাষা ঃ হিন্দি ও উর্দু।

শ্রেষ্ঠাংশে ঃ

সালমান খান,

সঞ্জয় দত্ত, মাধুরী দীক্ষিত, লক্ষ্মীকান্ত বার্দে,

কাদের খান, রিমা লাগু, একতা সোহিনী,

পঙ্কজ উদাস, অঞ্জনা মমতাজ, দীনেশ হিংগু,

তেজ সাপ্রু, বিকাশ আনন্দ, ইউনুস পারভেজ এবং আর-ও অনেকে।

মনে রাখার মতো গান ঃ

১.দেখ্যা হে পেহলি বার—– কণ্ঠশিল্পী ঃ অলকা ইয়াগনিক। ২.তুম সে মিনলে কি তামান্না হে —

৩.মেরা দিল ভি কিতনা — কণ্ঠশিল্পী ঃ কুমার সানু ও অলকা ইয়াগনিক। ৪.বহুত পেয়ার কারতে হে — কণ্ঠশিল্পী ঃ অনুরাধা পাড়োয়াল। ৫.জিয়ে তো জিয়ে কাইসে –৬.তু শ্যায়র হে — কণ্ঠশিল্পী ঃ অলকা ইয়াগনিক। ৭.পেহেলি বার মিলে হে —

৮.বহুত পেয়ার কারতে হে –৯.জিয়ে তো জিয়ে কাইসে — কণ্ঠশিল্পী ঃ পঙ্কজ উদাস। ১০.তুম সে মিনলে কি তামান্না।

কাহিনী চুম্বক ঃ

জন্মের পর থেকে আমান একজন দরিদ্র – খোঁড়া এতিম, তবে সে শৈশব থেকে এক ধনী পরিবারের দত্তক হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল।

ধনাঢ্য ব্যক্তি ভার্মার ছেলে আকাশ — আমান ও আকাশ ভাই হিসেবে একদিন বড়ো হয়ে ওঠে, তাদের দু’জনার মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুর মত।  আকাশের ব্যক্তিত্ব নমনীয়, গ্রেগরিয়াস এবং সে রোডসাইড রোমিও ধরনের।

চেহারা অত্যন্ত মিষ্টি – মেয়ারা দেখা মাত্র ওকে পছন্দ করে ফেলে।

আমান বেশ প্রতিভাবান — কবিতা লেখায় সে খুব পারদর্শী। কবি হিসেবে ধীরে ধীরে আমন শহরজুড়ে জনপ্রিয় ও সুপরিচিত হয়ে ওঠে। আমান কিন্তু ছদ্মনাম ব্যবহার করে কবিতা লিখে থাকে। কবি হিসেবে তার নাম — সাগর।

অসংখ্য ভক্ত তার — সেই ভক্ত তালিকায় পূজা নামের একটি সুন্দরী মেয়েও আছে। প্রায়ই সে সাগরের সাথে মিল রেখে চিঠি লিখে। পূজা তার এক চিঠিতে সাগরকে লিখেছে, আমি তোমার কবিতার প্রশংসা করি, আমি তোমার কাব্যকে সন্মান করি হৃদয় উজাড় করে  — সাগর তুমি মোর হৃদয়ের নাম, তুমি আমার আমার – সাগর তুমিই যে আমার।

কবিকে দেখেনি কোনো দিন, খুব দেখার ইচ্ছে তার –

কিন্তু একদিন ভাগ্যের মোড় হিসেবে আকাশের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সে ভাবলো, এই তো সাগর — যাকে তার মন দিয়ে বসে আছে।

এরপর আকাশ ও পূজার মধ্যে প্রায়ই দেখা হতে থাকে।

আকাশ একদিন আমানকে জানায়, সে প্রেমে পড়েছে।

পূজার ছবি তাকে দেখাতেই আমান বিস্মিত হলো —

এতো সেই পূজা যাকে আমান —

প্রেমের ক্ষেত্রে মাথায় উঁচু করে রেখেছিল।

কিন্তু সব চেয়ে মজার ব্যাপার, আকাশ কিন্তু জানে না যে, আমান ছদ্মনাম নাম সাগর ব্যবহার করে কবিতা লিখে থাকে।

পূজা কিন্তু কবি সাগরের প্রেমে পড়েছিলেন — সাগর যে আমান তা তার জানা ছিল না। সে ধরে নিয়েছিল আকাশই সাগর।

তবুও আমান মনে মনে ভাবে, আমাকে ভালোবেসে ছিল সে আকাশের হলে কী-ই বা ক্ষতি, সে তো আমারই ছোট ভাই।

ওদিকে আকাশ আস্তে আস্তে কবি হয়ে পূজার সামনে পোজ দিতে থাকে। কিন্তু কবিতা লিখতে গিয়ে বার বার গন্ডগোল বাঁধায়। এদিকে আকাশ আবিষ্কার করেছে যে, আমান সত্যিই পূজাকে ভালবাসে —তার ভাই আমানই সাগর। আকাশ কিছুটা অনুতপ্ত হয়ে একদিন আমানকে পূজার সামনে নিয়ে এসে বলে, দেখো এই যে সেই সাগর – এ হলো কবি সাগর।

সামনা সামনি পূজাকে সাগর বা আমান স্বীকারোক্তি দেয়, সত্যি সত্যিই সে পূজাকে ভালবাসে।

পূজার কাছে তৎক্ষনাৎ এ বিষয়টি অত্যন্ত বিরক্তিকর মনে হয় এবং এই নিয়ে বিভ্রান্ত হ’য়ে পূজা একটি আবেগী উন্মাদনায় তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।

পরে পূজা একদিন আমানের সাথে দেখা করে বলে যে, সে কবি সাগরকে এখনও ভুলতে পারে না — তার জন্য একসময় অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে,

সেই সময় সাগরকে হৃদয় উজাড় করে প্রচন্ড ভালবাসতো।

অবশেষে আমান — আকাশ ও পূজার মধ্যে মিলন ঘটিয়ে পূজার পথ থেকে ভালবাসা থেকে সরে দাঁড়ায়।

 

সালমান খান

 

কবিতায় সালমান খান

সালমান খান তুমি, তুমিই প্রিয় ব্যক্তিত্ব

তুমি তুমি আমার প্রিয় নায়ক, তুমি আমার প্রিয় মানুষ

তুমি সালমান খান –

তুমি সালমান খান, তুমি সালমান খান

মুম্বাই বলি, বোম্বে বলি, বলিউড বলি

তুমিই শ্রেষ্ঠ নায়ক, শ্রেষ্ঠ যুবক, শ্রেষ্ঠ তারকা, শ্রেষ্ঠ বডিবিল্ডার ;

দেখেছিলাম হায়দ্রাবাদে , হাত মিলালাম –

ভুলে গেছ এতদিনে,

সে তো তেইশ বছর আগের কথা –

নাইবা মনে রাখলে,

মনে রাখবেই বা কেমনে?

কোটি কোটি জনতা ভক্ত তোমার –

প্রাণের প্রিয় তারকা তুমি আমার –

প্রিয় সালমান খান, ত্রিশ বছর ধরে আছ চলচ্চিত্র জগতে –

ভারতে শুধু নয়, বাংলাদেশে আমার মত লক্ষ ভক্ত আছে তোমার।

তুমি তুমি চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক আর

টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব তুমি –

তুমি তুমি সালমান খান।

জন্ম তোমার উনিশশো পঁয়ষট্টিতে ইন্দোরে –

দেখেছি ইন্দোর শহর,

সেথায় গিয়ে ভেবেছি তোমারই মুখখানা  –

রইবে মনে তোমার অভিনীত –

প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া, বিবি নাম্বার ওয়ান,

ম্যায়নে পিয়ার কিয়া, এক থা টাইগার, সুলতান

আরও কত ছায়াছবির নাম ;

সালমান খান, তুমি তুমি আমার প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এক সুপুরুষ।