ম’ -এর মর্যাদা দিতে হবে যেসব কারনে


ম বর্ণের ব্যবহার আমাদের কোমল অনূভূতিগুলোর সঙ্গে জড়িত। শৈশবে ম কিংবা মা ধ্বণি উচ্চারণ করেই আমরা কথা বলতে শিখি। লিখেছেন- লিয়াকত হোসেন খোকন

Table of Contents

‘মধুর আমার মায়ের হাসি …. মাকে মনে পড়ে ‘ – গানের মায়ের এ কথা বলতে গিয়ে ‘ম’ বর্ণটি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ‘ম’ বর্ণের মর্যাদা দিতে পারছি না আমরা।

বর্ণ পরিচয়ে ৫২টি বর্ণ। প্রত্যেকটি বর্ণই আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কোনও বর্ণকেই বাদ দিয়ে আমরা দৈনন্দিন জীবনযাপন করতে পারি না। এককথায় বর্ণহীন জীবন মৃত্যুতুল্য। প্রত্যেকটি বর্ণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা জানি না, আমি জানি বা বুঝি, এই ৫২টি বর্ণের মধ্যে ‘ম’ বর্ণের গুরুত্ব অপরিসীম।

আমাদের বা বাঙালিদের জন্মের মুহূর্তেই সবার মুখ থেকে প্রথম যে শব্দটি বেরিয়ে আসে, সেটা হল ‘উঁঞা’ অর্থাৎ মা।

‘ম’ বর্ণ দ্বারা উচ্চারিত শব্দগুলি বেশির ভাগই ভীষণভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এবং পবিত্র একথা কখনোই অস্বীকার করা যায় না।

‘ম’ বর্ণটি রয়েছে মন্দির -মসজিদ, মানবিক, মানবতা, মানুষ, মন, মহৎ, মহানুভবতা, মহাবীর, মুহাম্মদ, হরহর মহাদেব, মক্কা -মদিনা ইত্যাদিতে।

এই সব পবিত্র শব্দগুলি মানব জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন: অনলাইনে যেসব সাইটে পাবেন বাংলা বই, পত্রিকা ও ম্যাগাজিন

‘ম’ দিয়ে আরও আছে – মই, মাখন, মা়ছ, মুগ্ধ, মনোরম, ময়ূর, নিম্ন, চম্পা, গুম্ফা, অম্বর, স্তম্ভ, জম্মু, কাম্য, নম্র, ম্লান, মসলিন, মাস, মাধবী, মধু, মধুসূদন, মশাল, মরমীয়া – ইত্যাদি।

‘ম’ দিয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান – বুলবুল পাখি ময়না টিয়ে ; ও শ্যাম যখন তখন ; ওগো মনের দুয়ারে ; মাধবী মধুপে হল মিতালী ; মরি মরি একী লজ্জা ; আবছা মেঘের ওড়না গায়ে ; এত মঞ্জরী কেন আজ ; মন বলেছে আজ সন্ধ্যায় ; মনের নাম মধুমতী ; নাচ ময়ূরী নাচ রে ; মহুয়া বনে পাপিয়া ; তুফান মেল যায় ; প্রণাম তোমায় ঘনশ্যাম ; অন্তর মন্দির মাঝে ; মুক্তির মন্দির সোপানতলে ; নাই বা ঘুমালে ; তুমি যে আমার ; আজি মিলন নিশি ভোরে ; কত মধুরাতি এল ; তুমি আজ কত দূরে ; মেনেছি গো হার ; চঞ্চল মন আনমনা ; মধুর আমার মায়ের হাসি – ইত্যাদি।

আমার বা যে কোনো মানবিক মানুষের কথায় ‘‘ বর্ণটি মানব জীবনে ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের জীবনে চলার পথে একটা শুভ ইঙ্গিত বহন করে, যা আমরা হয়তো সম্যক জ্ঞানে বুঝি না, বা বোঝার চেষ্টাও করি না কখনও। ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে বিচার করলে ‘ম’ বর্ণটিকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে গুরুত্ব সহকারে মেনে চললে আমাদের তথা সমগ্র পৃথিবীর মঙ্গল ছাড়া অমঙ্গল হবে না কখনো।

যে কোনো ধর্মের লোক ধর্মভীরু। এই ধর্ম কথাটাও শেষ হয়েছে ‘ম’ দিয়ে।

পূর্ণিমার কথাই বলা যাক। পূর্ণিমার শেষ বর্ণটি ‘ম’।

যে পূর্ণিমা অমাবস্যার অন্ধকার সরিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে সেই পূর্ণিমা’র শেষ বর্ণটি ‘ম’ এর সঙ্গে ‘আ’ যোগ হয়ে হয়েছে ‘মা’।

‘মা’ শব্দের তাৎপর্য বা গুরুত্ব কতখানি সেটা পূর্ণিমা থেকেই উপলব্ধি করা যায়।

‘মা’ শব্দটি বা কথাটির মধ্যেই একটা পবিত্রতা, একটা স্নিগ্ধতা, একটা কোমল স্পর্শ অনুভব করি আমরা।

ভাবতে অবাক লাগে যে, যে বর্ণ প্রথমে উচ্চারণ করে আমরা পৃথিবীর প্রথম আলো দেখি, যে মায়ের কোলে খেলা করতে করতে বেড়ে উঠি, সেই আমরাই তবে সকলেই নয় অধিকাংশরাই স্বাবলম্বী হয়ে গর্ভধারিণী মাকে অবহেলা করে। আর এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, আমাদের চলার পথে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সেই ‘ম’ বর্ণের কতটা মর্যাদাহানি করি।

‘ম’ এর মানুষ নামটাও আজ যেন কালিমালিপ্ত। কেননা, কিছু সংখ্যক মানুষ অমানুষ হয়ে বিশ্বজুড়ে খুন, ধর্ষণ, হিংসা, দাঙ্গা, ঘুস, দুর্নীতি, দখলবাজি, মানুষে মানুষে লড়াই, ঘৃণা, বিদ্বেষ, হানাহানি বেড়েই চলেছে।

সত্যিই যদি আমরা আমাদের সমাজ তথা দেশকে সুস্থ -সুন্দর রাখতে চাই বা আমরা নিজেরাও সুস্থ ও ভালো বা সুন্দর থাকতে চাই তাহলে ‘ম’ এর পূর্ণ মর্যাদা দিতেই হবে।

এখানে ‘ম’ বর্ণ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা স্মরণ করা ভীষণ জরুরি। ‘ম’ -এ যেমন ‘মুখ’ হয়, তেমনই ‘ম’

দ্বারা ‘মুখ ও মুখোশ’ও হয়। এক্ষেত্রে শব্দ দু’টি ‘ম’ দ্বারা উচ্চারিত হলেও দুটোর চরিত্র কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তাদের নিজেদের স্বার্থে মুখ এবং মুখোশ দু’টোকেই এক করে ফেলেছে। যার ফল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ক্রমশই হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর।