বিলাসহুল ও স্বর্ণ ব্যবসার কেন্দ্রস্থল দুবাই 


দুবাই হল বিলাসবহুল ও আয়েশি জীবন যাপনের শহর। পৃথিবীর বিখ্যাত এক শহরও বটে এই দুবাই। 

১৮৩৩ খৃষ্টাব্দ থেকে দুবাই শাসন করে আসছে আল মাকতুম পরিবার। দুবাইয়ের বর্তমান শাসকের নাম মুহাম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুম, পাশাপাশি তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও উপ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করছেন। 

চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বী অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ সহ সোনা ব্যবসা আর সোনা চোরাচালানের জন্য বিশেষ করে স্মাগলারদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এই দুবাই। 

সোনা চোরাচালানির কেন্দ্রস্থলও বলা হয় দুবাইকে। 

যেমন ধনীর শহর, তেমন স্মাগলারদের নিরাপদ স্থানও বটে দুবাই। 

দুবাই কিসের জন্য বিখ্যাত?

দুবাইয়ে সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হল দুবাই টাওয়ার। এটি বুর্জ খলিফা টাওয়ার নামেও পরিচিত। ১৬০ তলাবিশিষ্ট আকাশচুম্বী এ ভবনটির মোট উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট, যার অবকাঠামো রকেটের মতো। এ ভবনে ঘন্টায় ৪০ মাইল গতিবেগে চলে এমন মোট ৫৪টি এলিভেটর আছে। পর্যটকদের কাছে দুবাই টাওয়ারটি নিঃসন্দেহে আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় এবং আকর্ষণীয় স্থান। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানীর নাম আবুধাবী। দুবাইও সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি বড় শহর। সাধারণত কোন স্বাধীন দেশ অথবা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সেখানের বড় বা গুরুত্বপূর্ণ শহরকে রাজধানী হিসাবে ব্যবহার করা হয়। দুবাই নিজেই একটি শহর। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি আমিরাতের নাম হল আবুধাবী, আজমান, দুবাই, আল ফুজাইরাহ, রাআস আল খাইমাহ, আশ শারজাহ এবং উম্ম আল ক্বাইওয়াইন। আবুধাবী শহরটি ফেডারেশনের রাজধানী এবং দুবাই এ দেশের বৃহত্তম শহর। 

আরব আমিরাত বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৯৭ লক্ষ। 

দুবাই বাদশাহ শেখ মুহাম্মদের অন্তত দুই স্ত্রী আছে। তার প্রথম স্ত্রী হলেন দুবাইয়ের শেখা হিন্দ বিনতে মাকতুম বিন জুমা আল মাকতুম, তাঁর জন্মতারিখ ১৯৬২ খৃষ্টাব্দে। তাঁকে বাদশাহ বিয়ে করেন ১৯৭৯ খৃষ্টাব্দে। ২০০৪ খৃষ্টাব্দে বাদশাহ দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন জর্ডানের রাজকুমারী হায়া বিনতে আল হুসনাকে। দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্মতারিখ ১৯৭৪ খৃষ্টাব্দে। 

দুবাই ভাষা:

দুবাইয়ের অফিসিয়াল বা সরকারী ভাষা হল আরবী। তবে আন্তর্জাতিক পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হওয়াতে দুবাইয়ে ইংরেজী ভাষার বহুল ব্যবহারও দেখা যায়।  এছাড়াও দুবাইতে বেশ কয়েকটি ভাষার চল রয়েছে। যেমন – বাংলা, মালয়ালম, তামিল, ফার্সি, হিন্দি, উর্দু , তাগালগ -ইত্যাদি।

আবুধাবীতে ৩টি প্রধান এলাকা রয়েছে, যেমন – আবুধাবী শহর, আল আইন এবং পশ্চিমাঞ্চল আল ধফরা। 

দুবাইয়ের জনসংখ্যার প্রায় ৬৭ শতাংশ প্রবাসী লোকজন, এরা সবাই দক্ষিণ এশীয়। জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ ইরানি বংশোদ্ভূত। দুবাইয়ের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ পশ্চিমী হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ। 

আরব আমিরাতে সরকার ও ব্যবসায়ের অফিসিয়াল ভাষা আরবি, যেখানে ইংরেজি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বেশির ভাগ রাস্তা এবং দোকানের সামনের চিহ্নগুলি ইংরেজি ও আরবি উভয় ভাষায় লেখা। ব্যাপকভাবে কথ্য অন্যান্য ভাষার মধ্যে রয়েছে হিন্দি, উর্দু এমন ফার্সি। 

আরও পড়ুন: মুহাম্মদ ঘুরীর প্রথম অভিযান যেখানে শুরু হয়েছিল

মূলত আরব আমিরাতের প্রস্তাবিত ফেডারেশনের অংশ হওয়ার উদ্দেশ্যে, প্রথমে বাহরাইন স্বাধীন হয়, এরপরে কাতার স্বাধীনতা লাভ করে। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর হলো দুবাই। দুবাই শহরটি আরব আমিরাতের রাজধানীও। এ শহরটি প্রতিষ্ঠা করিয়েছিলেন উবাইদ বিন সাঈদ ও মাকতুম বিন বুত্তি আল মাকতুম। 

দুবাই শহরের প্রধান এলাকাগুলো হলো – জোবেল আলী, আল লুসায়লি, মারকাব, আল ফাকা, উদ আল বাইদা, উরকাব জুওয়াইজা। 

দুবাই শহর বা নগরীতে জনসংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ। 

দুবাই এর আয়তন কত?

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান শহর দুবাই মহানগরীর আয়তন ৩৫ বর্গকিলোমিটার। 

দুবাই নগরটি পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ -পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। 

দুবাই একটি বৈশ্বিক শহর এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র। এ নগরটি যাত্রী এবং পণ্যবাহী বিমানের জন্য একটি বড় বৈশ্বিক পরিবহনের কেন্দ্র। 

তেল উৎপাদন শহরটির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করেছে। 

দুবাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র, দুবাইয়ের অর্থনীতি বাণিজ্য কর, পর্যটন, বিমানচালনা, রিয়েল এস্টেট এবং আর্থিক পরিষেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর নির্ভরশীল। 

দুবাই বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প, প্রচুর হোটেল এবং বড় বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। 

দুবাইয়ের ইতিহাস:

দুবাইর অতীত বলে, ১৮শ শতাব্দীর প্রথম দিকে দুবাই একটি মাছ ধরার গ্রাম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

১৮২২ খৃষ্টাব্দের মধ্যে বনি ইয়াস উপজাতির প্রায় ৮০০ সদস্য মিলে প্রথমে একটি শহরের গোড়াপত্তন শুরু করে। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি আমিরাত। দুবাই আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে একটি প্রদেশ। এটি পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ তীরে আরব উপদ্বীপে অবস্থিত। 

১৮৩৩ খৃষ্টাব্দ থেকে দুবাই শাসন করে আসছে আল মাকতুম পরিবার। 

দুবাইয়ের বর্তমান শাসকের নাম মুহাম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুম, পাশাপাশি তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও উপ -রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। 

দুবাই রাজধানী:

দুবাই হচ্ছে দুবাই আমিরাতের রাজধানী। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে জনবহুল শহর। সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭টি আমিরাত নিয়ে গঠিত। দুবাই হচ্ছে এর একটি। অন্য আমিরাতগুলো হচ্ছে আবুধাবী, শারজাহ, আজমান, উম আল কুয়েইন ও ফুজাইরা।

দুবাই কোন মহাদেশে অবস্থিত?

দুবাইয়ের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে, অর্থাৎ এশিয়া মহাদেশে।

একসময় আরব আমিরাত ছিল ব্রিটিশদের কলোনি। 

ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে এ দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর। 

যুক্তরাজ্য বা গ্রেট ব্রিটেনের যত উন্নয়ন ঘটেছে তা দুবাই থেকে লুট করা অর্থ সম্পদ দিয়েই কিন্তু। 

আরব আমিরাতের আয়তন মোট ৩,৮৮৫ বর্গকিলোমিটার। 

জনসংখ্যা ৪২,৭৭,৫৭০। 

দেশটির ধর্ম – ইসলাম। 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুবাইয়ের গড় উচ্চতা প্রায় ৫২ ফুট বা ১৬ মিটার। দুবাইয়ের দক্ষিণে আবুধাবি, উত্তর – পূর্বে শারজাহ এবং দক্ষিণ -পূর্বে ওমানের সাথে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। 

দুবাই সরাসরি আরব মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত। তবে, দুবাইয়ের ভূসংস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দক্ষিণ অংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে আলাদা। দুবাইয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যের বেশির ভাগ অংশ বালুচর মরুভূমির নিদর্শন দ্বারা তুলে ধরা হয়েছে। আর কঙ্কর মরুভূমি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এখানের বালির বেশির ভাগই চূর্ণ শেল এবং সূক্ষ্ম প্রবাল নিয়ে গঠিত পরিস্কার এবং সাদা। শহরের পূর্বদিকে লবণাক্ত উপকূলীয় সমভূমিগুলি উত্তর -দক্ষিণে টিলাগুলো লাইন ধরে এগিয়ে গেছে, যা সলখা হিসাবে পরিচিত। আরও পূর্বদিকে, টিলাগুলি বড় হয় এবং লৌহ অক্সাইড কারণে লাল হয়। 

আমিরাতের আওতাভুক্ত এলাকায় মানব বসতি ১ লক্ষ ২০ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান, যেখানে প্রাথমিক কুঠার এবং পাথরের সরঞ্জামের পাশাপাশি তামা ও লৌহ যুগের বহু যন্ত্রপাতি আবিস্কৃত হয়েছে। আরও আবিষ্কার রয়েছে। আল ধাইদ, আল থুকেইবা, মাইলেহা, টেল আবরাক, মুওয়াইলাহ, আল মাদামে এবং জেবেল ফায়া এরমধ্যে রয়েছে। ম্লেহা এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলি আফ্রিকা থেকে বিস্তৃত বিশ্বে মানবতার বিস্তারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মানব বাসস্থান নির্দেশ করে। যা কিনা তথ্য সহকারে দেখানো হয়েছিল ম্লেহা আর্চেওলজিকাল সেন্টারে। 

ঐতিহাসিক ভাবে আমিরাত ছিল এই অঞ্চলের অন্যতম ধনী শহর। 

১৭২৭ খৃষ্টাব্দের দিকে, আল কাসিমি গোষ্ঠী শারজাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রাষ্ট্রকে স্বাধীন ঘোষণা করে। 

শারজাহ কোন দেশে অবস্থিত?

শারজাহ আমিরাত সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি আমিরাত। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭টি প্রদেশের একটি আমিরাত। এর আয়তন প্রায় ২,৫৯০ বর্গকিলোমিটার। 

শারজাহ আমিরাতে জনসংখ্যা ১,৪০০,০০০ জন। 

শারজাহ আমিরাতের রাজধানী শহর হল শারজাহ। শারজাহর দর্শনীয় হলো – বাদশাহ ফয়সাল মসজিদ, শারজাহ মসজিদ। 

আমাদের ফেসবুক পেজ ফলোতে নিন