গায়ানা: দক্ষিণ আমেরিকার যে দেশে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগুরু


এক সময়ের ব্রিটিশ গায়ানা ১৯৬৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পর গায়ানা নামেই পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তর উপকূলের এই দেশ নিয়ে লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন

Table of Contents

গায়ানা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তর উপকূলের একটি দেশ। গায়না একটি আদিবাসী আমেরিকান শব্দ, এর অর্থ হল ‘পানির দেশ’।

রাজধানীর নাম জর্জটাউন।

গায়ানা রাষ্ট্রের পশ্চিমে ভেনেজুয়েলা ; দক্ষিণ ও দক্ষিণ -পূর্বে ব্রাজিল ; পূর্বে সুরিনাম রাষ্ট্র এবং উত্তরে আটলান্টিক মহাসাগর।

দেশটি আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত। এই দেশের পাশাপাশি রয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ – এই দ্বীপগুলোর সাথে এ দেশের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন বেশি। গায়নাতে বসবাসরত ৯টি আদিবাসী উপজাতি রয়েছে, এরা হল, ওয়াই ওযাই, মাকুশি, পাতামোনা, লোকোনো, কালিনা, ওয়াপিশানা, পেমন, আকওয়ায়ো এবং ওযারাও।

গায়ানার রাজধানী বসেছে জর্জ টাউনে। গায়ানার রাষ্ট্র ভাষা হলো ইংরেজি।

গায়ানার মোট জনসংখ্যার ৫৫ ভাগ লোক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। বাকি লোক হিন্দু, মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মের।

গায়ানা প্রথমে ওলান্দাজদের উপনিবেশ ছিল। পরবর্তীতে ১৮শ শতকের শেষ দিকে এ দেশটি ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে আসে।

১৮শ শতকের শুরু থেকেই আখ এই দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হয়ে ওঠে। ইউরোপীয়ারা এখানকার চিনির প্ল্যান্টেশনগুলিতে শত শত আফ্রিকানদের দাস হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিয়ে আসে। ১৮৩০ এর দশকে দাসপ্রথা বিলুপ্ত ঘটলে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বহু লোককে প্ল্যান্টেশনগুলিতে কাজ করার জন্য নিয়ে আসা হয়। ২০ শতকের শেষ নাগাদ ভারতীয় ও আফ্রিকানরা সবচেয়ে বড় দুইটি জাতিগত গোষ্ঠী গঠন করে। স্বাধীনতার পর গায়নাতে জাতিগত রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে।

গায়ানা দেশটির আয়তন ২,১৪,৯৭০ বর্গকিলোমিটার।

গায়ানাতে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগ।

এই দেশে মসজিদের সংখ্যা ১৫০টি।

গায়ানার অনেক অংশ বড় নদী দ্বারা বিভক্ত। নদীগুলো পারাপারের জন্য স্পিডবোট রয়েছে। নদীতে বেড়ানোর জন্য নৌকাও আছে। তবে নৌকো ভাড়াটা একটু বেশি।

জর্জটাউন_গায়ানা
গায়ানা

গায়ানার রাজধানী জর্জটাউন ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্যাক্সি একটি ভালো উপায়। এখানের সমস্ত ট্যাক্সি নম্বর প্লেট ‘এইচ দিয়ে শুরু হয়। বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য ট্যাক্সির জন্য নির্ধারিত মূল্য রয়েছে। কোনো চালক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে এক মুদ্রাও বেশি নেন না। ভাড়া নিয়ে তাই দর -কষাকষি নেই। তাছাড়া গায়না রাষ্ট্রে লাইসেন্স বিহীন কোনো ড্রাইভার নেই। তাছাড়া লক্করঝক্কর মার্কা যানবাহনও নেই। কোনো চালক ট্রাফিক আইন ভঙ্গও করেন না। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোনো চালক দোষী হয়েছে এবং তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে – এমন একটি দৃষ্টান্তও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি এ দেশে গায়ানিজ ক্রেওল, আমেরিন্দিয়ান ভাষা চালু রয়েছে। বেশির ভাগ স্থানীয় লোক গায়ানিজ ক্রেওল ভাষায় কথা বলে থাকেন।

আরও পড়ুন: ব্রাজিল : দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ দেশ

গায়ানা দেশটিও রেইনফরেস্টের জন্য বিখ্যাত। অনেকগুলি জলপ্রপাত রয়েছে – মুলত এগুলি দর্শনীয় স্থান। দেশের ৭০ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে রেইনফরেস্ট। তাই সেখানে কোনো বসতি নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাস করে রাজধানী জর্জটাউন অথবা এর আশেপাশের এলাকায়। জর্জটাউনের একপাশে রেইনফরেস্ট আর অন্য পাশে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর। জর্জটাউন গায়ানার বৃহত্তম শহর – এটি ডেমোরারা মাহাইকা অঞ্চলে অবস্থিত। শহরটি আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত হলেও এর সংলগ্নে ডেমেরারা নদী। জর্জটাউন শহরের আরেক নাম ‘গার্ডেন সিটি অফ দি ক্যারিবিয়ান’। এ শহরটি গড়ে ওঠে ১৭৮১ খৃষ্টাব্দে। শহরের আয়তন ৭০ বর্গকিলোমিটার।

জর্জটাউনের পরেই রয়েছে আরেক উল্লেখযোগ্য শহর, এর নাম কুইন্স টাউন। এদেশের উত্তর -পশ্চিমাঞ্চলের ‘দ্য ওমেই স্বর্ণখনি’ পৃথিবী বিখ্যাত। এখানে ৩৭ লাখ আউন্স পরিমাণ স্বর্ণ রয়েছে।

গায়ানায় মুসলমানদের ছুটির মধ্যে রয়েছে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার উৎসব, নবী মুহাম্মদ ( সা.) এর জন্মদিনের ছুটিও দেয়া হয়। হিন্দুদের কালীপূজা, দিপাবলিতেও সরকারি ছুটি থাকে।

গায়ানার উল্লেখযোগ্য স্থান হল – চ্যারিটি, আন্না রেগিনা, ব্রিড ইন হোপ, পারিকা, ফোর্ট ওয়েলিংটন, নিউ আমস, লিনডেন, কুমপুকারি, তকমা, কাওকোয়াম, বার্টিকা, মাহদিয়া, সুরামা, লেটহেম, অ্যাপোটেরি, কুমাকা, ইসহার্টন, বিলোকু ইত্যাদি।