সিনেমা ছিল গত শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে বিনোদনের অন্যতম সেরা অবলম্বন। এরমধ্যে বলিউডের সিনেমা মানেই ছিল দর্শকদের কাছে পরম আরাধ্য কিছু। স্বপরিবারে মাসে একদিন সিনেমা হলে গমন ছিল শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের কাছে অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার।
গত শতাব্দীর আলোড়ন সৃষ্টিকারী ৪টি হিন্দী সিনেমা নিয়ে লিখেছেন চলচ্চিত্র পর্যবেক্ষক ও গবেষক লিয়াকত হোসেন খোকন
আমাদের কালে হিন্দি সিনেমা অসম্ভব জনপ্রিয় ছিল।
তখন তো অশোক কুমার, দিলীপ কুমার, শ্যাম, রঞ্জন প্রমুখ নায়ক আমাদের হৃৎস্পন্দন ছিলেন। নায়িকাদের মধ্যে সুরাইয়া আমার ফার্স্ট চয়েস ছিল। ভাললাগা ৪ টি ছবির কথা এখানে উল্লেখ করা হল, কিসমৎ, মহল, দিল্লাগি ও চন্দ্রলেখা।
কিসমৎ –
বম্বে টকিজ প্রযোজিত এবং কাপুর চাঁদ প্রাইভেট লিমিটেড পরিবেশিত ‘কিসমৎ’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৪৩ সালের ৯ ই মার্চ। পরিচালনায় ঃ শ্রী জ্ঞান মুখার্জ্জী।
সুরসৃষ্টি ঃ শ্রী অনিল বিশ্বাস। সংলাপ ঃ শহীদ লতিফ, সন্তোষী। চিত্রনাট্য ঃ জ্ঞান মুখার্জ্জী। চিত্রশিল্পী ঃ আর, ডি, পারেঞ্জা। সম্পাদক ঃ দত্তারাম পাই।
রূপায়ণে ঃ মমতাজ শান্তি, অশোককুমার,
শাহনেওয়াজ, চন্দ্রপ্রভা, ভি, এইচ, দেশাই, কানু রায়, জগন্নাথ অরোরা, প্রসাদ, হারুন, কমলা কুমারী, ডেভিড আব্রাহাম এবং আরও অনেকে।
কিসমৎ ছবির উল্লেখযোগ্য গান ঃ
১. আয়ে দুনিয়া বাতা — ঘর ঘর মে দিওয়ালি
কন্ঠশিল্পী ঃ আমিরবাঈ কর্ণাটকী।
২. আজ হিমালয় কি ছোটি সে – দূর হটো
কণ্ঠশিল্পী ঃ খান মাস্তানা
৩. আব তেরে শিওয়া কৌন মেরা কৃষ্ণা
কণ্ঠশিল্পী ঃ আমিরবাঈ কর্ণাটকী
৪. ধীরে ধীরে আ রে বাদল মেরা , কণ্ঠশিল্পী ঃ আমিরবাঈ কর্ণাটকী ও অশোক কুমার।
৫. হাম আইসি কিসমৎ কো এক দিন
কণ্ঠশিল্পী ঃ আমিরবাঈ কর্ণাটকী ও অরুণ কুমার।
৬. পাপিহা রে মেরে পিয়া সে কহিও
কণ্ঠশিল্পী ঃ পারুল ঘোষ
৭. তেরে দুখ কে দিন ফিরেঙ্গে, কণ্ঠশিল্পী ঃ অরুণ কুমার
৮. মেরে বুলবুল সো রাহা হ্যায়
কণ্ঠশিল্পী ঃ অশোক কুমার ও আমিরবাঈ কর্ণাটকী।
কিসমৎ ছবিতে অভিনয় করেই অশোক কুমার অভিনেতা হিসেবে দ্য গ্রেট পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন। ছবিতে অশোক কুমার — শেখর এবং মমতাজ শান্তি ছিলেন রাণীর ভূমিকায়। শেখর শৈশবে হারিয়ে যায় – যুবক বয়সে তিনি পকেট মারেন এবং বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। হঠাৎ থিয়েটারের নাচনেওয়ালী রাণীর সাথে তার পরিচয় থেকে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাঝখানে রয়েছে নানান নাটকীয় ঘটনা। অবশেষে হারিয়ে যাওয়া শেখরকে ফিরে পেলেন তাঁর বাবা – মা ।
কিসমৎ ছবিটি ইউটিউবে দেখুন এখানে ক্লিক করে
রক্সি প্রেক্ষাগৃহে এক নাগাড়ে ১৭৪ সপ্তাহ চলেছিল বলে কিংবদন্তি হয়ে থাকল উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। ১৯৪৩ সালের ৯ ই মার্চ রক্সি সহ ৫০ টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল কিসমৎ। কিসমৎ ছবির সাফল্য ছড়িয়ে পড়েছিল পেশোয়ার হয়ে রেঙ্গুন পর্যন্ত – উপমহাদেশের কোটি কোটি দর্শকের হৃদয়ে এনেছিল এক অদ্ভুত উন্মাদনা। ছবি দেখা দর্শকেরা — ” আজ হিমালয় কে ছোটি সে দূর হটো দুনিয়াওয়ালে হিন্দুস্তান হামারা হ্যায় ” গানটি গাইতে গাইতে ঘরে ফিরতো।
সিনেমা দেখার সেই গৌরবময় দিনগুলি কী করে ভুলি।
আর আজ ? বিস্মৃত হতে চলেছে সিনেমা জগৎ — প্রেক্ষাগৃহে এখন আর কেহ যেতে চায় না।
দিল্লাগি –
দিল্লাগি ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৪৯ সালে।
প্রযোজনা ও পরিচালনায় ঃ আবদুর রশিদ কারদার।
কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ ঃ আজম বাজিদপুরী।
সুরসৃষ্টি ঃ নৌশাদ আলী। চিত্রগ্রাহক ঃ দ্বারক দাস দিবেচা। সম্পাদনা ঃ জি, জি, মায়েকর।
প্রযোজনা সংস্থা ঃ কারদার প্রোডাকসন্স। ভাষা ঃ হিন্দি।
চরিত্র চিত্রণে ঃ সুরাইয়া —- মালা চরিত্রে।
শ্যাম — সুরাজ চরিত্রে। শ্যাম কুমার — জ্যোতি চরিত্রে।
অন্যান্য যারা ছিলেন — শারদা, আঘা মেহরাজ, গোলাম হাসান, শ্যামা, আমির বানু, এম, এ, শাহ, চান্দা, অমর এবং আরও অনেকে।
দিল্লাগি ছবির গান ঃ
১. তু মেরা চাঁদ মে তেরী চাঁদনী ২. ইস দুনিয়া মে দিল কা লাগানা খেলা নান— কণ্ঠশিল্পী ঃ মোহাম্মদ রফি।
৩. মুরলিওয়ালে মুরলি বাজা — কন্ঠশিল্পী – সুরাইয়া।
৪. চর দিন কি চাঁদনী ফির ফির আন্ধেরী রাত হ্যায় —
কণ্ঠশিল্পী ঃ সুরাইয়া। ৫. দুনিয়া কেয়া জানে মেরা আফসানা গায়ে দিল —কণ্ঠশিল্পী ঃ সুরাইয়া।
৬. নিরালা মহব্বত কা দস্তুর দেখ —কণ্ঠশিল্পী ঃ সুরাইয়া।
৭. তেরা খায়াল দিল সে ভুলায় না জয়গা —
কণ্ঠশিল্পী ঃ সুরাইয়া।
৮. লে কে দিল চুপকে সে কিয়া মজবুর —
কণ্ঠশিল্পী ঃ সুরাইয়া। ৯. তু মেরা চাঁদ, ম্যায় তেরী চাঁদনী — কণ্ঠশিল্পী ঃ সুরাইয়া ও শ্যাম।
১০. তেরে কোচে মে আরমানো কি দুনিয়া —-
কণ্ঠশিল্পী ঃ মোহাম্মদ রফি। ১১. দে ঝিল দে ঝিল ও রে সখী —–কণ্ঠশিল্পী ঃ উমা দেবী ও শামসাদ বেগম।
১২. জালিম জামানা মুজ কো —- কণ্ঠশিল্পী ঃ সুরাইয়া ও শ্যাম।
গানগুলোর গীতিকার ঃ শাকিল বদায়ুনি।
দিল্লাগি ছবির গল্পটি ছিল রোমান্টিক ও বেদনাদায়ক।
ছবিটি মুক্তির পরে প্রেক্ষাগৃহের সন্মুখে জনতার ভিড় উপচে পড়েছিল — যে করে হোক দিল্লাগি দেখতেই হবে।
আরও পড়ুন: বলিউডের আলোচিত কয়েকটি কমেডি সিনেমা
কাহিনী চুম্বক ঃ
মালা ও সুরাজের ভালবাসার কথা জানাজানি হ’য়ে গেলে মালার বাবা তার ভাইয়ের প্ররোচনায় পড়ে মালাকে ঘরে বন্দী করলেন।
পাশের গ্রামের জ্যোতি নামে এক সম্ভ্রান্ত বংশের যুবকের সঙ্গে বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে গেল মালার — মালা দু’চোখের জল মুছতে মুছতে শ্বশুর বাড়ি চলে গেল।
মালার যে বাড়িতে বিয়ে হলো সেই বাড়িটি খুঁজে বের করলো সুরুজ —
যেন পাগলের মত হয়ে বেদনার সুরে বাঁশী বাজাতে লাগলো।
সারাদিন ধরে পড়ে থাকে ওই বাড়ির আশেপাশে।
আবার সুরুজ গায় —তু মেরা চাঁদ, ম্যায় তেরা চাঁদনী — পাগল সুরুজের মুখে এই গানটি শুনে শিখে ফেললো মালার ননদ পারু ।
বাড়ি ফিরে এসে দোলনায় দুলতে দুলতে এই গানটি গাইতে থাকে মালার ননদ পারু।
মালা এই গান শুনে অবাক, জিজ্ঞেস করে, এ গান তুমি কোথায় শিখলে?
পারু বললো, রাস্তার মোড়ে এক পাগলের মুখে শুনে শুনে।
দিল্লাগী ছবিটি দেখুন ইউটিউবে
মালা পাগলকে দেখতে চাইলে পারু সেখানে তাকে নিয়ে গেল , সুরুজকে দেখে তো মালা অবাক।
এরপর নিত্যদিন মালা প্রেমিক সুরুজের পাশাপাশি বসে পুরনো দিনের সেই ভালবাসার কথা বলে সময় কাটাতে থাকে — আবারও সুরুজকে পাওয়ার মোহে আসক্ত হয়ে পড়লো সে।
ইতিমধ্যে পাগলের সাথে মালার মেলামেশা গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে — মালার স্বামী জ্যোতি তা জানতে পারে এবং তাদেরকে হাতে নাতে ধরে ফেলে।
ক্রুদ্ধ জ্যোতি বন্দুক তাক করে গুলি ছুড়ল সুরুজের বুকে
এবং সেই মুহূর্তে মালা মৃত সুরুজের বুকে লুটিয়ে পড়লো।
অবশেষে প্রেমিক সুরুজের মরদেহ শ্মশানে এলো – পরক্ষণে চিতা জ্বলতে লাগলো।
মহল
মহল ছবির মুক্তির তারিখ — ১২ অক্টোবর, ১৯৪৯। মহল ছিল ভৌতিক ছবি — গল্পের অন্যতম চরিত্র কামিনী ছিলেন ভূত ।
মহল ছবির গান ঃ
১.আয়ে গা আয়ে গা আনে ওয়ালা — কণ্ঠশিল্পী ঃ লতা মঙ্গেশকর।
২. মুশকিল হ্যায় বহুত মুশকিল — কণ্ঠশিল্পী ঃ লতা মঙ্গেশকর।
৩. দিল নে ফির ইয়াদ কিয়া — কণ্ঠশিল্পী ঃ লতা মঙ্গেশকর।
৪. চুন চুন গুঙ্গুরুভা বাজে ঝুম্বা — কণ্ঠশিল্পী ঃ
জোহরাবাঈ আম্বালওয়ালী ও রাজকুমারী—
৫. ম্যায় ওহ হানসি হুন —
কণ্ঠশিল্পী ঃ রাজকুমারী।
৬. এক তীর চালা দিল পে লাগা — কণ্ঠশিল্পী ঃ
রাজকুমারী।
৭. ঘাবরা কে জো হাম — কণ্ঠশিল্পী ঃ রাজকুমারী।
মহল ছবির পরিচালনায় ঃ কামাল আমরোহী।
প্রযোজক ঃ অশোক কুমার। কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ ঃ কামাল আমরোহী। সুরসৃষ্টি ঃ খেমচাঁদ প্রকাশ। চিত্রগ্রাহক ঃ জোসেফ ওয়ারসিং।
সম্পাদনা ঃ বিমল রায়। প্রযোজনা সংস্থা ঃ বোম্বে টকিজ।
চরিত্র চিত্রণে ঃ অশোক কুমার ঃ হরি শঙ্কর চরিত্রে।
মধুবালা ঃ কামিনী ও আশা চরিত্রে। কুমার ঃ হরি শঙ্করের বাবা। বিজয়লক্ষ্মী ঃ রঞ্জনা চরিত্রে।
কানু রায় ঃ শ্রীনাথ চরিত্রে। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন —-এস, নাজির, শীলা নায়েক, নীলম, লীলা পান্ডে, কানিজ, জগন্নাথ, মহসীন, লক্ষ্মণ রাও,
এস, এ, বেকার, রামশ্রী, রাজা সেলিম এবং আরও অনেকে।
মহল পুনর্জন্মের একটি গল্প — ভূতের কাহিনী। উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদে একটি সুন্দর পরিত্যক্ত প্রাসাদ রয়েছে — এই প্রাসাদে বাস করতে আসেন নতুন মালিক হরি শঙ্কর। এই প্রাসাদে ওঠার পরে পুরনো মালী তাঁকে অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্প শুনান। ৪০ বছর আগে এক ভদ্রলোক এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন তাঁর প্রেমিকা কামিনীর জন্য — কামিনী এই প্রাসাদে বাস করতে থাকেন। সেই ভদ্রলোকটি মধ্যরাতে আসতেন কামিনীর সঙ্গে দৈহিক মিলনের জন্য — সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি চলে যেতেন।
এক ঝড়ের রাতে সেই ভদ্রলোকের জাহাজ সাগরে ডুবে গেলে তাঁর সলিল সমাধি ঘটে।
এরই কিছুদিন পরে কামিনী মারা গেলেন।
হরি শঙ্কর যখন শোবার ঘরে যান, তখন দেয়াল থেকে একটি ফটোগ্রাফ পড়ে যায় এবং ছবিতে থাকা ভদ্রলোকের চেহারা অবিকল তাঁর মত দেখতে পান শঙ্কর — অবাক হয়ে গেলেন, ভাবলেন — এ আবার কেমন।
তারপরে একজন মহিলার কন্ঠে গান শুনতে পান। হরি শঙ্কর তাঁর কন্ঠ অনুসরণ ক’রেন — হঠাৎ দেখতে পান ঘরে বসে আছেন সেই মহিলা। চোখের পলকে আবার তাঁকে দেখতে পান না — মনে হয় শঙ্করকে দেখা দিয়ে সেই মহিলা যেন পালিয়ে যান।
শঙ্করের বন্ধু শ্রীনাথ এসেছিলেন এবং শঙ্কর তাঁর আগের জীবনের অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্পের মানুষ হওয়ায় সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
শ্রীনাথ তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তখনই মহিলাটি আবার উপস্থিত হলেন। তাঁরা তাঁকে ছাদে অনুসরণ করেন — দেখতে পেলেন সেই মহিলা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং নীচে তাকালে তাঁরা দু’জনে কিছুই দেখতে পেলেন না।
পরের দিন শঙ্কর কাছাকাছি এক শহরে রওনা দিয়ে আবার সন্ধ্যার ফিরে এলেন প্রাসাদে।
কামিনী সরাসরি শ্রীনাথকে জানান, তিনি শঙ্করকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাবেন — তা শুনা মাত্র শ্রীনাথ তাঁকে গুলি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
ভুত কামিনী আবার এসে শ্রীনাথকে শঙ্করের কাছ থেকে দূরে থাকতে বললেন।
আর এ জন্য শ্রীনাথ শঙ্করকে বার বার সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু কামিনী আরেকদিন শঙ্করকে বলেন, আমি তোমাকে পছন্দ করি —- এমন কোনো মহিলার দেহে প্রবেশ করতে পারলে আবার আমি জীবনে ফিরে আসতে পারবো। তুমি আমার দেহ ভোগ করতে পারবে।
কামিনী এ-ও বলেছিলেন যে, উদ্যানে চলে যাও — সেখানে গিয়ে আমায় কারো মধ্যে পাবে। তোমার যাকে পছন্দ হবে আমি তাঁরই মধ্যে বিচরণ করবো।
শ্রীনাথের পরামর্শ অনুযায়ী শঙ্কর বাড়ি ফিরে গেলেন এবং রঞ্জনাকে বিয়ে করেন — কামিনীকে ভুলে যাওয়ার জন্য তিনি স্ত্রীর সাথে অনেক দূরে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবুও বার বার কামিনীকে মনে পড়ে, পারেন না কামিনীকে ভুলতে — শঙ্কর প্রতি রাতে কোথায় যান তা জানতে চঞ্চল হয়ে ওঠেন রঞ্জনা।
রঞ্জনা একদিন তাঁকে অনুসরণ করেন এবং দেখতে পান — কামিনীর কাছে গেলেন শঙ্কর। কামিনী শঙ্করকে বলেন , মালী কন্যাকে হত্যা করতে আর তাঁকে হত্যা করলেই সে তাঁর সঙ্গে অনায়াসেই যৌন মিলন করতে পারবেন।
রঞ্জনার কানে এ সব কথা যাওয়ার পরে সে বিষ পান করে আত্মহত্যা করলেন —-
এ নিয়ে পরবর্তীতে আদালতে মামলা গড়ায়।
রঞ্জনা আর শঙ্করের মধ্যে দূরত্বের কারণে উদ্যানের মেয়ে আশাও অভিযুক্ত হলেন।
চন্দ্রলেখা
চন্দ্রলেখা মুক্তির তারিখ ঃ ৯ এপ্রিল, ১৯৪৮।
চন্দ্রলেখা ছবির প্রযোজনা ও পরিচালনায় ঃ এস এস ভাসান। হিন্দি চন্দ্রলেখা ছবির সংলাপ লিখেছিলেন ঃ আঘা জনি কাশ্মীরি এবং পণ্ডিত ইন্দ্র।
হিন্দিতে গীত রচনা করেন ঃ ইন্দ্র এবং ভারত ব্যাস।
চন্দ্রলেখা ছবির রূপায়ণে ঃ টি, আর, রাজকুমারী, এম, কে রাধা, রঞ্জন, সুন্দরী বাঈ, এন, এস কৃষ্ণান, টি এ মথুরাম, নারায়ণ রাও, সুবাইয়া পিল্লাই, ভি এন জানকী,
ডি এস সুশীলা, পট্টাই এইচ কৃষ্ণ, ইশোহদ্রা কাটজু,
টিএ জয়লক্ষ্মী, আপ্পানা আইয়ঙ্গার, রামকৃষ্ণ রাও,
গোপাল কৃষ্ণন, বলরাম এবং আরও অনেকে।
চন্দ্রলেখা প্রথমে তামিল ভাষায় এবং পরে হিন্দি ভাষায় নির্মিত হয়েছিল। ছবিতে বীরসিমহান ও সাসাঙ্কন দুই ভাই — তারা রাজার পুত্র। একবার বীরসিমহান ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে যান, সেখানে চন্দ্রলেখা নামে এক নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগে নি।
দুই ভাই দুই চরিত্রের – সিংহাসন দেয়া হবে বড় ভাইকে শুনে সাসঙ্কন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সাসাঙ্কন চোরদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন – আর গ্রামে সর্বত্র বাড়ি বাড়ি ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। বিশৃঙ্খলায় চন্দ্রলেখার বাবা আহত হয়ে পরে মারা যান।
সাসঙ্কন চন্দ্রলেখাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে লোক দিয়ে তাকে ধরে আনেন — চন্দ্রলেখাকে নাচতে আদেশ দেন , নাচবে না – চাবুক মারার পরে চন্দ্রলেখা নাচে। গোপনে চন্দ্রলেখা সাসঙ্কনের আস্তানা থেকে পালিয়ে যায়।
পরে সাসাঙ্কন বীরসিমহানকে আক্রমণ করেন এবং তাকে বন্দী করে রাখেন একটি গুহায়। এর প্রবেশদ্বারটি একটি বোল্ডারের সাহায্যে সিল করে দিয়েছিলেন।
চন্দ্রলেখা একটি সার্কাস গ্রুপের লোকজনের সহায়তায় একটি হাতির দ্বারা বীরসিমহানকে উদ্ধার করেছিলেন।
বীরসিমহান ও চন্দ্রলেখা সার্কাসে যোগ দিয়ে সাসঙ্কনের লোকদের কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলেন।
যখন সাসঙ্কন প্রাসাদে ফিরে আসেন তখন তিনি তার পিতামাতাকে বন্দী করেন এবং নিজেকে রাজা ঘোষণা দিলেন।
সাসঙ্কন চন্দ্রলেখাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য একজন গুপ্তচর প্রেরণ করেন।
গুপ্তচর চন্দ্রলেখাকে সার্কাসে সার্কাস করতে দেখেন এবং তাকে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। বীরসিমহান তাকে বাঁচান, তারা পালিয়ে একদল জিপসিতে যোগ দেয়। বীরসিমহান বাইরে গেলে, সেই সময়ে সাসঙ্কনের লোকজন চন্দ্রলেখাকে ধরে রাজবাড়ীতে নিয়ে আসেন।
যখন সাসঙ্কন চন্দ্রলেখাকে ভোগ করতে চেষ্টা করেন, তিনি যখনই তার কাছে আসেন ততবারই চন্দ্রলেখা মূর্ছার ভান করেন। তার এক সার্কাস বন্ধু সাসঙ্কনের কাছে এসেছিলেন একজন জিপসি নিরাময়ের ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং দাবী করলেন যে তিনি চন্দ্রলেখাকে তার অসুস্থতা নিরাময় করতে পারবেন। তালাবদ্ধ দরজার পিছনে দুই মহিলা কথা বলছেন। চন্দ্রলেখাকে অলৌকিক ভাবে নিরাময় এবং স্পষ্টতই তাকে তাঁর স্বামী হিসাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত পেয়ে সাসঙ্কন খুশী হন ; বিনিময়ে — তিনি রাজকীয় অনুষ্ঠানে ড্রাম নৃত্যের জন্য তার অনুরোধের সাথে সন্মত হন।
প্রাসাদের সামনে সারি সারি বিশাল বিশাল ড্রাম সাজানো হয়েছে। চন্দ্রলেখা নৃত্য শিল্পীদের সঙ্গে যোগ দেন, যারা ড্রামে নাচেন তাদের সঙ্গে। চন্দ্রলেখার নাচ দেখে সাসঙ্কন মুগ্ধ হন তবে তাঁর কাছে অজানা বীরসিমহানের সৈন্যরা ড্রামের ভিতরে যে লুকিয়ে রয়েছে। নাচ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা ছুটে এসে সাসাঙ্কনের লোকদের উপর আক্রমণ করে।
বীরসিমহান সাসাঙ্কনের মুখোমুখি হন এবং তাদের দীর্ঘ তলোয়ার লড়াইয়ে সাসঙ্কনের পরাজয় ঘটে এবং তাকে কারাগারে বন্দী করা হয়।
আর বীরসামহান তার পিতামাতাকে মুক্তি দিয়ে নতুন রাজা হলেন এবং তাঁর রাণী হলেন চন্দ্রলেখা।
হিন্দিতে বীরসিমহানের নাম দেয়া হয়েছিল – বীর সিং আর সাসাঙ্কনের নাম দেয়া হয় — শশাঙ্ক।
হিন্দি চন্দ্রলেখা ছবির গান ঃ
১. সাজনা রে আজা রে — কণ্ঠশিল্পী উমা দেবী।
২. মনভবন সাওয়ান আয়া — কণ্ঠশিল্পী ঃ উমা দেবী।
৩. ও চাঁদ মেরে — কণ্ঠশিল্পী ঃ উমা দেবী।
৪. মাই রে আমি তো মধুবনে মেইন — কণ্ঠশিল্পী ঃ উমা দেবী।
৫. সংঘ কী বেলা জিয়া আকলা — কণ্ঠশিল্পী ঃ উমা দেবী ও টিএ মোথি। ৬. মেরা হুস লুটনে আয়া আলবেলা — কণ্ঠশিল্পী ঃ জোহরাবাঈ আম্বালওয়ালী ও টিএ মোথি।
৭. তু নজরে মিলিয়ে — কণ্ঠশিল্পী ঃ ধুয়।
৮. নদী কিনারে রাম বাগিয়া — কণ্ঠশিল্পী ঃ ভারত ব্যাস।
৯. মাত গা রে মাত গা — কণ্ঠশিল্পী ঃ ধুয়া
১০. বিচ্ছদে দিল আজ মাইল — কণ্ঠশিল্পী ঃ উমা দেবী ও টিএ মোথি। ১১. ও সাজনা কে কিয়া — কণ্ঠশিল্পী ঃ উমা দেব। ১২. নাচে ঘোদা নাচে — কণ্ঠশিল্পী ঃ গীতা দত্ত ও টিএ মোথি। ১৩. নমস্তে সুথো — কণ্ঠশিল্পী ঃ ধুয়া।