ক্যাশব্যাক অ্যাপ ও ওয়েবসাইট যুক্তরাজ্যে কার্যকরভাবে ব্যবহারের উপায়


নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বিশ্বের সব জায়গায় একই অবস্থা। কিছু সুনির্দিষ্ঠ কৌশলের মাধ্যমে এই খরচ একটু সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। সময়ের সাথে মানুষের কৌশল বদলায়। অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য উৎপাদনকারী কিংবা বিক্রেতা দাম বাড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করেন। আবার ক্রেতাও পারেন কিছু কৌশল অবলম্বন করতে। ক্যাশব্যাক ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ সে রকম একটি কার্য্যকর উপায়।

কীভাবে ব্যবহার করবেন ক্যাশব্যাক অ্যাপ?

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা অতি সহজেই এসব অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন। আপনি মোবাইলে ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমেই নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোড করুন। এরপর প্রাথমিক অবস্থায় আপনার নাম এবং ইমেইল দিয়ে একটি একাউন্ট করে নিন। অনেক সময় কনফার্মেশন ইমেইলে গিয়ে ক্লিক করতে হয়। সেক্ষেত্রে অ্যাপ আপনাকে বলবে আপনার ইমেইলে গিয়ে তাদের লিংকে ক্লিক করতে। এভাবেই অল্প আয়াসেই আপনি প্রস্তুত হয়ে গেলেন ক্যাশব্যাক বা নগদফেরত অ্যাপ দিয়ে কেনাকাটা করার জন্য।

কীভাবে ক্যাশব্যাক পদ্ধতি কাজ করে?

পণ্য উৎপাদনকারি কিংবা বিক্রেতা বাজারজাত করনের কৌশল হিসাবে তাদের এজেন্ট বা সহযোগী নিয়োগ করে। এদের এফিলিয়েট বলা হয়। এই এফিলিয়েটদের নির্দিষ্ট ট্র‍্যাকিং লিনক বরাদ্ধ করা হয় বিক্রেতা কোম্পানীর পক্ষ থেকে। আপনি যখন কোন পণ্য কেনার জন্য ক্যাশব্যাক অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার করবেন তখন সেই এফিলিয়েট লিংক লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে তাদের সিষ্টেমে। এর মাধ্যমে এফিলিয়েট কোম্পানী পাবে তাদের নির্দিষ্ট কমিশন। যেহেতু এই ক্যাশব্যাক অ্যাপগুলো অনেক বড় প্রতিষ্ঠান, তাদের কমিশনের ভাগও বেশি। তাই ক্যাশব্যাক সাইটগুলো ক্রেতাদের উৎসাহ প্রদান করতে সেই কমিশনের বড় একটা অংশ ফেরত প্রদান করে ক্রেতাকে। এভাবে লাভবান হন দুই পক্ষই।

ক্যাশব্যাক অ্যাপ ও ওয়েবসাইট যুক্তরাজ্যে কার্যকরভাবে ব্যবহারের উপায়
ক্যাশব্যাক থেকে উপার্জিত ডিসকাউন্ট

ক্যাশব্যাক অ্যাপ সম্বন্ধে যা জানা প্রয়োজন:

ক্যাশব্যাক অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট আপনাকে কোন গ্যারান্টি প্রদান করেনা। যেকোন কারনে আপনি ক্যাশব্যাক নাও পেতে পারেন। কিছু প্রধান কারন হচ্ছে

(১)যদি আপনার অর্ডার ঠিকমত ট্র্যাকড না হয়:

ক্যাশব্যাক অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট দিয়ে আপনার অর্ডার যেকোন কারনে ট্র‍্যাকড নাও হতে পারে। সাধারনত অর্ডার প্রদান করার ১৫ মিনিট থেকে ৭দিনের মধ্যে আপনার অর্ডার রেকর্ড হয়েছে বলে দেখাবে। এটা যদি না দেখায় তাহলে আপনি ম্যানুয়ালি রেকর্ড করতে পারবেন। ক্যাশব্যাক অ্যাপের কাষ্টমার সার্ভিস পরবর্তীতে পরীক্ষা করে আপনার অর্ডার ট্র্যাকড করবে।

(২) যদি বিক্রেতা প্রত্যাখ্যান করে:

ক্যাশব্যাক অফারের মধ্যে কিছু শর্তাবলী থাকে। সেইসব শর্তাবলী লংঘন করলে আপনার ক্যাশব্যাক বাতিল হতে পারে। যেমন: নতুন ক্রেতার জন্য কিছু কোম্পানী সব সময় বেশি ক্যাশব্যাক প্রদান করে। আবার কিছু কোম্পানী একজন ক্রেতাকে একবারই ক্যাশব্যাক দেয়। এক্ষেত্রে যদি আপনি ইতিমধ্যেই ক্যাশব্যাক পেয়ে থাকেন তাহলে দ্বিতীয়বার আর পাবেন না। এছাড়া একই ফ্যামিলি থেকে অনেক সময় একজনকে ক্যাশব্যাক দেয় হয়। দ্বিতীয় অর্ডারে তাই আর ক্যাশব্যাক পাবেন না।

(৩) কুপন ব্যবহার করলে:

ক্যাশব্যাক অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার প্রদানকালে যদি আপনি অন্য ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া কুপন ব্যবহার করেন তাহলে আপনি ক্যাশব্যাক নাও পেতে পারেন। এটা নির্ভর করে নির্দিষ্ট কোম্পানীর নীতিমালার উপরে।

(৪) কোম্পানী দেউলিয়া হলে:

অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে না পারলে কোম্পানী দেউলিয়া কিংবা বন্ধ হয়ে যায়। সংগত কারনেই এখানে আপনার ক্যাশব্যাক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

(৫) ক্যাশব্যাক কোম্পানী বন্ধ হলে:

প্রায় সময়ই দেখা যায় কিছু ক্যাশব্যাক কোম্পানী বন্ধ হয়ে গেছে। পশ্চিমা দেশে যদিও এসব কোম্পানী বন্ধ হওয়ার আগে ঘোষনা দেয় এবং ক্রেতার পাওনা বুঝিয়ে দেয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে ক্যাশব্যাক কোম্পানী বন্ধ হয়ে গেলে কিছু করার থাকে না।

কীভাবে ক্যাশব্যাক ট্র‍্যাকিং নিশ্চিত করবেন?

আপনার পণ্যক্রয়ের সময় ওয়েবসাইটের জাংক ফাইলগুলো কিংবা কুকিজগুলো ডিলিট করে নিতে হবে। আপনি যখন কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করেন তখন বিভিন্ন রকম কুকিজ চলে আসে আপনার মোবাইল কিংবা ল্যাপটপের ব্রাউজারে। এই কুকিজগুলো আপনার কাংক্ষিত অর্ডার ট্র‍্যাকিংয়ের সময় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ব্রাউজারে গিয়ে সার্চ ইতিহাস ডিলিট করে নিন প্রথমেই। অ্যাডব্লক থাকলে সেটার অনুমোদন দিয়ে নিন আপনার নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে। তাহলে ট্র‍্যাকিং আর বাধাগ্রস্ত হবে না।

আরও পড়ুন: গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পরিষেবার সরবরাহকারী নিয়মিত পরিবর্তন করুন

ক্যাশব্যাক অ্যাপ কী নির্ভরযোগ্য?

এই প্রশ্নের উত্তরে স্থান কাল পাত্র বিবেচনায় নিতে হবে। পশ্চিমা দেশগুলোতে আইন প্রয়োগকারী কতৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারির কারনে সেখানে অনিয়মের সুযোগ কম। বেশিরভাগ বড় ক্যাশব্যাক কোম্পানীগুলোই বাজারে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাদের মাধ্যমে কেনাকাটা করায় ঝুঁকি কম। লক্ষ লক্ষ ক্রেতা প্রতিনিয়ত উপকৃত হচ্ছেন ক্যাশব্যাকের মাধ্যমে।

আপনার তথ্য কী নিরাপদ?

ক্যাশব্যাক ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপগুলো আপনার কিছু নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। কিছু অ্যাপ আছে যারা এসব তথ্যের বিনিময়ে আপনাকে নির্দিষ্ট সুবিধা দেয়। কোন কোন ওয়েবসাইট প্রাথমিক অবস্থায় আপনার নাম এবং ইমেইল নেয় (যেমন: যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে টপক্যাশব্যাক, কুইডকো ইত্যাদি)। শুধুমাত্র আপনার ক্যাশব্যাক যদি ব্যাংক একাউন্ট কিংবা পেপলে নিতে চান সেক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক একাউন্টের তথ্য দেয়া লাগবে। যদি আপনি শপিং কুপন হিসাবে আপনার ক্যাশব্যাকের টাকা নেন (যেমন: আমাজন ভাউচার) তাহলে অতিরিক্ত তথ্য দেয়া লাগবে না। সুতরাং এগুলো মোটামুটি নিরাপদ। যদি কোন অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট স্পর্শকাতর তথ্য চায় তাহলে সেগুলো উপেক্ষা করুন।