হুগলীর তীরে প্রিয় শহর কলকাতায়, পর্ব-3


চলচ্চিত্র ও ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন ভারত ভ্রমণ করেছেন ষাটেরও বেশি বার। লেখকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে তিলোত্তমা নগরী প্রাণবন্ত কলকাতা। বারবার ভ্রমণের সেই অভিজ্ঞতা লেখক প্রান্জল ভাষায় ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সাগরপারের পাঠকদের জন্য। আজ প্রকাশিত হল তৃতীয় পর্ব। আগের পর্ব সমূহ পড়ুন: পর্ব-২, পর্ব-১

 

কলকাতার ধর্মতলা -সন্তোষপুর -হাল্টু -বন হোগলি -ডানলপ -বড়িশা -উল্টাডাঙা -হরিদেবপুর -ঢাকুরিয়া -বাঁশদ্রোণী -টেংরা পায়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখার কথা খুব করে মনে পড়ে।ধর্মতলা কলকাতা মহানগরীর মধ্য কলকাতার একটি পাড়া। কলকাতার ব্যস্ততম এলাকা হ’ল এই ধর্মতলা । এখানের ধর্মতলা স্ট্রিটের নাম পরিবর্তন করে লেলিনের নামকরণ করা হয়েছে লেলিন সরণি।

এই অঞ্চলের ওয়েলিংটন স্কয়ার পর্যন্ত আশেপাশের এলাকাটি ধর্মতলা হিসেবে পরিচিত। ধর্মতলায় রয়েছে বিশাল বাসস্ট্যান্ড -এখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানের বাস ছাড়ে এবং বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা থেকে আসা বাস এখানে শেষ  স্টপেজ এনে রাখা হয়।

 

ধর্মতলা নামের সঙ্গে গ্রামবাংলার উপাস্য দেবতা ধর্মঠাকুরের একটা যোগ আছে।তবে তিনি রাঢ় অঞ্চলের দেবতা।

একটা সিঁদুর মাখানো এবড়োখেবড়ো পাথরের টুকরোতে পূজা হয় তাঁর। বাউড়ি, বাগদি, হাড়ি, ডোম জাতির মানুষেরা  এই দেবতার উপাসক। একদল নিম্নবর্ণের মানুষ জানবাজার অঞ্চলে বসবাস করতেন একসময়ে।

তাঁরা ধর্মঠাকুরের পূজা করতেন, সেই দেবতার একটা মন্দিরও বানিয়েছিলেন সেখানে। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দেখেছিলেন সেই মন্দির।

ইতিহাস বলে, এখানে মহাসমারোহে ধর্মঠাকুরের পূজাটূজা হত, গাজন হত ,মেলা বসত – সব মিলিয়ে একটা জমজমাট উৎসব এই অঞ্চলে চালু ছিল। ধর্মতলা জায়গাটার একদিকে  ছিল ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ – আরেকদিকে ছিল জনবসতি।দুর্গ আর শহরের মাঝখানের জমিতে  ইংরেজিতে একে বলে এসপ্ল্যানেড -যে কারণে ইংরেজ সাহেবদের মুখে এসপ্ল্যানেড নামেও পরিচিত হয়ে উঠেছিল।

জানা যায়,  এই অঞ্চলে একসময় মেম্বা পীরের বাজার ছিল।পরে হ’ল সাহেবের বাজার – অতঃপর পুরনো মেম্বা পীরের বাজারের গুরুত্ব কমে যায়। সন্তোষপুর কলকাতা মহানগরীর দক্ষিণ অংশের একটি অঞ্চল।

সন্তোষপুরের উত্তরে গারফা ; পূর্বে পূর্বাঞ্চলীয় মহানগর বাইপাস ; পশ্চিমে যাদবপুর এবং দক্ষিণে বাঘা যতীন দ্বারা আবদ্ধ – সন্তোষপুরের নিকটস্থ পাতাল রেল স্টেশন হ’ল – জ্যোতিন্দ্র নন্দী মেট্রো স্টেশন এবং সত্যজিৎ রায় পাতাল রেল স্টেশন। সন্তোষপুর অঞ্চলটি কলকাতা পৌর সংস্থার অন্তর্ভুক্ত।

১৯৪৭ সালের আগে সন্তোষপুর অঞ্চলটি রাণী রাশমণির সম্পত্তি ছিল – সেই রাণী রাসমণি ছিলেন দক্ষিণেশ্বরের  মন্দির নির্মাণের সঙ্গে অবদান রেখে গেছেন। সন্তোষপুরের বাগানের এক পুকুরের নীচে শিব মন্দির আছে বলে কিংবদন্তি রয়েছে।

সন্তোষপুরের পুকুরটির কয়েকটি রহস্যময় বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং সন্তোষপুরের স্থানীয় লোকজন এই পুকুরে স্নান করেন।

 

dharmatala_kolkata

 

পুকুরের ঘাটের কাছে রাণী রাসমণির একটি মূর্তি রয়েছে। একসময় এই সন্তোষপুর অঞ্চলটি যাদবপুরের অংশ ছিল।

পঞ্চাশের দশকে এই সন্তোষপুর মূলত অগভীর জলাভূমি এবং কৃষিক্ষেত্র এলাকা ছিল। কিছু বাড়িঘর পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে ও ষাটের দশকে যাদবপুর রেলস্টেশনের পূর্ব দিকে নির্মিত হয়েছিল।

যারা তখন বসতবাড়ি গড়ে তোলেন – তাদের অধিকাংশরা ছিলেন পূর্ববঙ্গের বাঙালি শরনার্থী।

সেই জলাভূমি ও কৃষি জমি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সন্তোষপুর থেকে।

আজ সন্তোষপুরের কিছু কিছু অঞ্চল অভিজাতদের এলাকা রূপে গড়ে উঠেছে।

যাদবপুর রেলস্টেশন ধরে সুকান্ত সেতু নামে একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ যাদবপুর বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে রাজা এসসি মল্লিক রোডের সাথে সন্তোষপুর এভিনিউকে যুক্ত করেছে।

এ কারণে বাঙালি মধ্যবিত্তরাও বসবাস করার জন্য এই অঞ্চল বেছে নিয়েছিল।

সন্তোষপুর অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় শিয়ালদহ দক্ষিণ লাইন মাধ্যমে যাদবপুর রেলওয়ে স্টেশন উত্তর এবং বাঘা যতীন রেলওয়ে স্টেশন সহ দক্ষিণ।

এছাড়াও গড়িয়া আর দমদমের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মেট্রো লাইন স্থাপন করা হয়েছে।

সন্তোষপুরের পাশাপাশি রয়েছে অজয়নগর ও জরিপ পার্ক –

নির্মানাধীন জ্যোতিন্দ্রনাথ নন্দী মেট্রো স্টেশনটি চালু হয়ে গেলে সন্তোষপুরের সঙ্গে যোগাযোগ আরও সহজতর হবে কলকাতার যে কোনো অঞ্চলের।

সন্তোষপুর রেলওয়ে স্টেশন হ’ল কলকাতা শহরতলী রেলওয়ের একটি স্টেশন – এই স্টেশনটি কলকাতার শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে আনুমানিক ১৭ কিলোমিটার দূরে শিয়ালদহ – বজবজ লাইনে অবস্থিত।

 

হাল্টু –

হাল্টু বা হালতু  কলকাতা মহানগরীর কলকাতার একটি দক্ষিণ পাড়া অঞ্চল।

হাল্টু এলাকাটি মুলত কসবা, যাদবপুর, নন্দী বাগান, কালিকাপুর, ঢাকুরিয়া ও সেলিমপুরকে ঘিরে একটি আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে।

হাল্টুর নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন হ’ল –

কবি সুকান্ত মেট্রো স্টেশন। কিন্তু বর্তমানে এটি নির্মাণাধীন রয়েছে।

হাল্টুর বিধানসভা কেন্দ্র হ’ল – কসবা ও যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র।

হাল্টুর লোকসভা কেন্দ্র হ’ল – কলকাতা দক্ষিণ ও যাদবপুর।

গারফা মেইন সড়ক এবং কালিকাপুর সড়কটি এখানে ছেদ করেছে।

হাল্টু অঞ্চলটি কলকাতার বাস নেটওয়ার্কের সঙ্গে ভালভাবে সংযুক্ত।

হাল্টু অঞ্চল থেকে মুকুন্দপুর বাস যায়।

লেক টাউন ; হাওড়া, বিবিরহাট ইত্যাদি পথেও বাস চলাচল করে থাকে।

নিউ টাউন, করুণাময়ী, সল্ট লেকে যাওয়ার জন্যও হাল্টু বা এর আশেপাশের এলাকা থেকে বাস চলাচল করে।

হাল্টুর নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশনগুলি হ’ল –

বালিগঞ্জ জংশন রেলওয়ে স্টেশন ; ঢাকুরিয়া রেলওয়ে স্টেশন ও যাদবপুর রেলওয়ে স্টেশন।

হাল্টু অঞ্চলটি কলকাতা পৌর সংস্থার অন্তর্গত এলাকা।

এ অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হ’ল – হাল্টু বালক উচ্চ বিদ্যালয় ; হাল্টু গার্লস হাই স্কুল। হাল্টুর উল্লেখযোগ্য বাজার হ’ল – হাল্টু বাজার ; রামলাল বাজার ; পৌর বাজার।

হাল্টু ও এর আশেপাশের আকর্ষণীয় স্থানগুলি হ’ল –

পূর্বাচল শক্তি সংঘ ক্লাব ; হাল্টু সুইমিং পুল ; মৈত্রী সংঘের নিকটবর্তী রামকৃষ্ণ মিশন ; সুচেতা নগর কে এম সি শিশু পার্ক ; হাল্টু সংঘশ্রী ক্লাব ;

হাল্টু তরুণ সংঘ ক্লাব ; মিউজিকাল এক্সিলেন্স একাডেমি ; হাল্টু কমিউনিটি হল বা ক্ষুদিরাম ভট্টাচার্য মঞ্চ।

হাল্টুর কাছেপিঠে রয়েছে – নেলি নগর ; লাল গেট ;

অরবিন্দ পার্ক ; সুখপল্লী ; গড়ফা থানা ; কালীতলা কালী মন্দির।

 

বন হোগলি –

বন হোগলি কলকাতা মহানগরীর বরাহনগর লাগোয়া উত্তর দিকে অবস্থিত।

বন হোগলিতে রয়েছে গভর্নমেন্ট কলোনি।

আশেপাশে রয়েছে আরিয়াদহ, বটতলা।

কাছাকাছি আলমবাজার –

আলমবাজারে রয়েছে শ্রী শ্যামা মন্দির।

বেলঘরিয়ার এক্সপ্রেসওয়ে লোকেশন সংলগ্ন হয়ে

দমদম বিমানবন্দরে বন হোগলি হয়ে যাওয়া সুবিধাজনক।

বন হোগলিতে নার্সিং হোম, পার্ক, স্কুল, ব্যাঙ্ক ইত্যাদি রয়েছে।

সুন্দর সুন্দর রাস্তা রয়েছে বন হোগলিতে।

 

কলকাতা মহানগরীর অন্যতম বৃহৎ পরিকল্পনাকারী আবাসিক এলাকাও এই বন হোগলি। বন হোগলির বাসিন্দা বিশেষ করে এখানের যুব সংঘ সংগঠনটি মানুষের বিপদ – আপদ দেখলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও বিপদে আপদে পড়া জনগণের পাশে দাঁড়ায় –

বন হোগলির এই যুবক সংঘ সগঠনটি তাদের সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করে সমাজকল্যাণ মূলক কাজ করে প্রশংসিত হয়েছে।

 

ডানলপ –

ডানলপ এলাকাটি বরাহনগরের পাশেই – বন হোগলির কাছাকাছি।ডানলপ এলাকাটি বেশ জনবহুল – এ অঞ্চলটি কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির আওতাধীন।

ডানলপের নিকটস্থ পাতাল রেলস্টেশন হ’ল – বরানগর বা বরাহনগর।

ডানলপের লোকসভা আসন কেন্দ্র হ’ল – দমদম। ডানলপের বিধানসভা আসন কেন্দ্র হ’ল – বরাহনগর বা বরানগর।

 

ডানলপের পূর্ব দিকে – ঢাকুরিয়া ও বারুইপাড়া ;

পশ্চিম দিকে – দক্ষিণেশ্বর ও হুগলি নদী ;

উত্তর দিকে – কামারহাটি ও বেলঘরিয়া এবং দক্ষিণ দিকে – আলমবাজার, বরাহনগর বাজার ও বন হোগলি।

ডানলপ থেকে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরটি মাত্র এক মাইল দূরে অবস্থিত।

ডানলপ এলাকাটি কলকাতা মহানগরীর উত্তর শহরতলীর অঞ্চল – হাওড়া ও হুগলির সাথে এর সংযুক্তি রয়েছে।

 

বড়িশা –

বড়িশা কলকাতা মহানগরীর দক্ষিণ কলকাতার একটি অঞ্চল। এই অঞ্চলটি বিখ্যাত জমিদার সাবর্ণ রায় চৌধুরীর বাসভবনের জন্য বিখ্যাত।

বিখ্যাত ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মস্থান হিসেবে বড়িশা খ্যাত হয়ে আছে।ঐতিহাসিক ভাবে বড়িশা অঞ্চলটি কলকাতার সবচেয়ে পুরনো এলাকাগুলির একটি।

বড়িশা অঞ্চলটি কলকাতা মহানগরীর কেন্দ্রস্থল এসপ্ল্যানেড থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ – পশ্চিমে অবস্থিত। অতীতে এই বড়িশা আলাদা একটি গ্রাম ছিল। বড়িশা অঞ্চলটি বর্তমানে কলকাতা মহানগরীর মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের অন্তর্গত।

কলকাতা পৌর সংস্থার –  ১২৩ নং ১২৪ নং,  ১২৫ নং ও ১২৬ নং ওয়ার্ড

নিয়ে বড়িশা অঞ্চলটি গঠিত। উত্তরে বিবেকানন্দ মহিলা কলেজ থেকে শুরু করে দক্ষিণে ঠাকুরপুকুর পর্যন্ত এই অঞ্চলটির বিস্তার। বড়িশার মাঝখান দিয়ে ডায়মন্ড হারবার রোড ও জেমস লং সরণি চলে গিয়েছে।

 

borisha

 

বড়িশার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে বেহালা চৌরাস্তা, শাখের বাজার, সাবর্ণ সংগ্রহশালা, ডগলাস গ্রাউন্ডস, চান্দী মন্দির ও তার মেলা। বাংলার একটি ঐতিহাসিক জমিদার পরিবার হ’ল সাবর্ণ রায় চৌধুরী।

ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে এই পরিবার ছিল কলকাতার জমিদার। ১৬৯৮ সালের ১০ নভেম্বর সুতানুটি, কলকাতা ও গোবিন্দপুর গ্রাম তিনটির সত্ব সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের কাছ থেকে ইজারা নেয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

বড়িশার এই পরিবার সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার নামেও পরিচিত।সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার বর্তমানে পারিবারিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার প্রচেষ্টায় বড়িশায় সাবর্ণ সংগ্রহশালা নামে একটি জাদুঘর স্থাপন করেছেন।

এটি একটি গবেষণা ও প্রকাশনা সংস্থা হিসেবেও কাজ করছে।

ইতিহাস বলে, সাবর্ণ রায় চৌধুরীরা ব্রিটিশদের এই তিনটি গ্রাম ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। ব্রিটিশরা মুঘল রাজদরবারে ঘুষ দিয়ে এই গ্রাম তিনটির ইজারা কেনার অনুমতি আদায়ে সমর্থ হন। ১৬৯৮ সালে সাবর্ণ রায় চৌধুরীরা ইংরেজদের হাতে গ্রাম তিনটি তুলে দেন। ইংরেজরা বার্ষিক ১,৩০০ টাকা রাজস্বের বিনিময়ে গ্রাম তিনটির ইজারা ক্রয় করে নেন।

সেই সময় কলকাতার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অধুনা বিবাদী বাগের লালদিঘির নিকটে সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের কাছারি ও গৃহদেবতা শ্যাম রায়ের বা কৃষ্ণের মন্দির অবস্থিত ছিল।

জানা যায়, কাছারির দোল পূর্ণিমা উৎসবের আবিরে দিঘির রং লাল হয়ে যেত বলে

এই দিঘির নাম হয়েছিল লালদিঘি। জন অ্যান্টনি নামে এক পর্তুগিজ ভাগ্যান্বেষী সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের কাছারিতে কাজ করতেন।

তাঁর পৌত্র অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি পরবর্তীকালে এক স্বনামধন্য কবিয়াল হয়েছিলেন।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে এই কাছারিটি ভাড়া নেন এবং পরে কিনে নেন। এখানেই বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় মহাকরণ অবস্থিত।

১৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বড়িশার পারিবারিক বাড়িতে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি বাংলার প্রাচীনতম দুর্গোৎসবগুলির মধ্যে একটি এবং সম্ভবত কলকাতা অঞ্চলের প্রথম দুর্গাপূজা।

বর্তমানে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারে মোট সাতটি দুর্গাপূজা হয়। এগুলির মধ্যে ছয়টি হয় বড়িশায় এবং সপ্তমটি হয় বিরাটিতে। বড়িশার পূজাগুলি হল – আটচালা, বড়োবাড়ি, মেজোবাড়ি, বেনাকি বাড়ি, কালীকিংকর ভবন ও মাঝের বাড়ি।

দুর্গাপুজা ছাড়াও সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারে চণ্ডীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, অন্নপূর্ণা পূজা, দোলযাত্রা ও রথযাত্রা প্রভৃতি আজও প্রচলিত আছে – যা কিনা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়।

২০০১ সালে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে দাবি করা হয় যে, জব চার্নক সত্যই কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা কিনা তা খতিয়ে দেখা হোক।

হাইকোর্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০০৩ সালের ১৬ মে রায় দেন যে, জব চার্নক কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা নন এবং ২৪ তারিখটিতে জব চার্নক সুতানুটিতে উপনীত হয়েছিলেন – কলকাতার জন্মদিনও নয়।

 

উল্টাডাঙা –

উল্টাডাঙা হ’ল  কলকাতা মহানগরীর অন্যতম একটি অঞ্চল এখানে রেলওয়ে জংশন আছে। যা কিনা সবসময় ব্যস্ত ও জন ভিড়ে মুখরিত থাকে। কখনও কখনও মনে হয়, এই স্টেশনে যেন নেমেছে জনস্রোত। উল্টাডাঙা অঞ্চলটি কলকাতার উত্তর – পূর্ব সীমানায় অবস্থিত।

উল্টাডাঙা কলকাতার সীমা চিহ্নিত করে রেখেছে। উল্টাডাঙার বিশিষ্ট স্থানগুলি হ’ল তেলঙ্গা বাগান ও মুচি বাজার। উল্টাডাঙার প্রধান সড়ক হ’ল – বিধাননগর রোড ; বিধাননগর রেলস্টেশন রোড, সিআইটি রোড।

উল্টাডাঙার হুডকো মোড় কলকাতার অন্যতম ব্যস্ততম ক্রসিং – এটি চারটি সড়কের সংযোগস্থল। এই চারটি সড়ক হ’ল – উল্টাডাঙা মেইন রোড, ভিআইপি রোড, বিধাননগর রোড ও বাগমারী রোড।

উল্টাডাঙা এবং গৌরীবাড়ি বা মানিকতলা অরবিন্দ সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত – ভিআইপি রোডের সাথে সংযুক্ত করতে উল্টাডাঙায় উল্টাডাঙা ফ্লাইওভার রয়েছে।

কলকাতার অন্যতম ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন হ’ল এই উল্টাডাঙা রেলস্টেশনটি।

উল্টোডাঙার উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হ’ল – স্যার গুরুদাস মহাবিদ্যালয়।

উল্টাডাঙা অঞ্চলটি কলকাতা পৌর সংস্থার অন্তর্গত একটি অঞ্চল।

কলকাতার ১৩ নং, ১৪ নং ও ৩২ নং ওয়ার্ড নিয়ে উল্টাডাঙা অঞ্চলটি গঠিত।

উল্টাডাঙার লোকসভা কেন্দ্র হ’ল – কলকাতা উত্তর। বিধানসভা কেন্দ্র হ’ল – মানিকতলা।

জানা যায়, হালতাবাগানের ওপারে মারাঠা খাদের বাইরে উল্টাডাঙা পড়েছিল, সেখানে শিখ বিলিয়নেয়ার উমিচাঁদের একটি বাগান ছিল। তবে এটি ছিল বিপরীত তীরের জমি বা কিনা বাংলায় উল্টা।

পলাশীর যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মীর জাফরের কাছ থেকে কয়েকটি গ্রাম কেনে – এর মধ্যে দিহি পঞ্চনগ্রাম নামে একটি ব্লক ছিল। এই ব্লকের মধ্যে উল্টাডাঙাও ছিল। তখন থেকেই এই অঞ্চলটি মারাঠা খাদের সীমা ছাড়িয়ে শহরতলীকে বিবেচনা করা হতে থাকে।

উল্টাডাঙা নামটি সেই জায়গার আসল নাম, উল্টা ডিঙি, বা এমন একটি জায়গা থেকে এসেছে যেখানে ছোট ছোট নৌকোগুলি যেগুলি চালিয়ে ডিংগিস নামে পরিচিত ছিল বা তৈরি করা হয়েছিল।

জানা যায়, এটি একটি ঘাট অঞ্চল ছিল এবং সম্ভাবনা রয়েছে যে এটিও ইতিহাসের এক পর্যায়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আগে গঙ্গার তীরে ছিল। ১৮৮৯ সালে মানিকতলা, উল্টাডাঙা এবং বেলিয়াঘাটা কলকাতা পৌর সংস্থার সীমান্ত অঞ্চল ওয়ার্ড হয়ে ওঠে।

উল্টাডাঙায় রয়েছে বিভিন্ন দোকান, রেস্তোরাঁ, শপিং মল, ব্যাঙ্ক, সরকারি আবাসন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সিটি সেন্টার, সোনি ওয়ার্ল্ড, বিএসএনএল টাওয়ার।

 

হরিদেবপুর –

হরিদেবপুর কলকাতা মহানগরীর দক্ষিণ কলকাতার একটি পাড়া। এখানের নিকটস্থ পাতাল রেল স্টেশন হ’ল – মহানায়ক উত্তম কুমার ও নেতাজি। কলকাতা পৌর কর্পোরেশনের অন্তর্গত এই এলাকাটি। হরিদেবপুরের লোকসভা আসন কেন্দ্র হ’ল – কলকাতা দক্ষিণ। বিধানসভা আসন কেন্দ্র হ’ল – বেহালা পূর্ব।

হরিদেবপুর থানাটি কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ – পশ্চিম বিভাগের অন্তর্গত।

হরিদেবপুর অঞ্চলটি মহাত্মা গান্ধী রোড ঠাকুরপুকুর এবং জোকাকে টালিগঞ্জের সাথে সংযুক্ত করে।

হরিদেবপুরের নিকটস্থ জুল্পিয়া ও ঠাকুরপুকুর থেকে প্রাইভেট বাস চলাচল করে বাবুঘাট পর্যন্ত। কালীতলা থেকে মিনি বাসে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত যাওয়া যায়।

হরিদেবপুর থেকে ডাব্লুবিটিসি বাসে হাওড়া স্টেশনে যাওয়া যায়। জোকা থেকে নিউ টাউন ; বারাসাত যাওয়ার জন্য ডাব্লুবিটিসির বাস যায়।

হরিদেবপুরের আশেপাশে রয়েছে – ফিলিপস কলোনি ; সোদপুর শনিমন্দির ; কেওরা পুকুর ; দক্ষিণ পাড়া ; জয়শ্রী কালী মন্দির।

 

ঢাকুরিয়া –

ঢাকুরিয়া দক্ষিণ কলকাতার একটি অংশ এই অঞ্চল। ঢাকুরিয়ার উত্তরে বালিগঞ্জ,  কসবা ও গড়িযাহাট পূর্ব দিকে হাল্টু বা হালতু ; দক্ষিণে যাদবপুর, সেলিমপুর এবং পশ্চিম দিকে লেক গার্ডেন ও যোধপুর পার্ক অবস্থিত।

ঢাকুরিয়ার লোকসভা কেন্দ্র হ’ল – কলকাতা দক্ষিণ।ঢাকুরিয়ার উল্লেখযোগ্য হাসপাতাল হ’ল – আমরি হাসপাতাল। ঢাকুরিয়ার প্রধান আকর্ষণ রবীন্দ্র সরোবর।

ঢাকুরিয়া এলাকায় এবং এর আশেপাশে রয়েছে – ঢাকুরিয়া পাবলিক লাইব্রেরী ; শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু সেতু ; আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক ; ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ;

শিব মন্দির ; আদি টেম্পল ; দুর্গা মন্দির ; তানুপুকুর পার্ক ; দাসপাড়া বাজার।

রবীন্দ্র সরোবর দক্ষিণ কলকাতায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম হ্রদ। লোকমুখে এটি দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস হিসেবে আখ্যায়িত – ঢাকুরিয়া লেক নামটি এই হ্রদ সংলগ্ন অঞ্চলটিরও পরিচায়ক।

এই হ্রদের উত্তরে সাউদার্ন অ্যাভিনিউ, পশ্চিমে রসা রোড, পূর্বে ঢাকুরিয়া এবং দক্ষিণে কলকাতা মহানগরীর রেলওয়ে লাইন অবস্থিত।

এই হ্রদের উত্তরাংশে রবীন্দ্র সরোবর নামে ২৬ হাজার আসন বিশিষ্ট একটি ফুটবল স্টেডিয়াম আছে। এই স্টেডিয়ামটি ১৯৫০ এর দশকে নির্মিত হয় – বর্তমানে এটি সম্পূর্ণ অডিও – ভিস্যুয়াল প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত কলকাতার প্রথম স্টেডিয়াম।

হ্রদ অঞ্চলের উত্তরাংশে আরও রয়েছে নজরুল মঞ্চ নামে একটি বিশাল মুক্তমঞ্চ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি পূর্ণাবয়ব ভাস্কর্য রয়েছে হ্রদের পাশে। হ্রদের মধ্যভাগে অবস্থিত একটি দ্বীপে আছে একটি মসজিদ।

এটি হ্রদ নির্মাণের আগে থেকেই সেখানে আছে। দ্বীপটি একটি কাঠের কেবল – স্টেইড ঝুলন্ত সেতু দ্বারা হ্রদের দক্ষিণভাগের সঙ্গে যুক্ত।

 

বাঁশদ্রোণী –

বাঁশদ্রোণী বা বানসড্রোনি কলকাতা মহানগরীর দক্ষিণ কলকাতার একটি এলাকা।

বানসড্রোনি অঞ্চলটি কলকাতার পৌর কর্পোরেশনের অন্তর্গত এবং কলকাতা পুলিশের অধীনে।

 

কলকাতা পৌর সংস্থার

৯৮ নং, ১১২ নং, ১১৩ নং ও ১১৪ নং ওয়ার্ড নিয়ে বাঁশদ্রোণী এলাকাটি গঠিত।

বাঁশদ্রোণীর লোকসভা কেন্দ্র হ’ল – যাদবপুর। বিধানসভা আসন কেন্দ্র হ’ল –

টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র। বাঁশদ্রোণীর নিকটস্থ পাতাল রেল স্টেশন হ’ল –

মাষ্টারদা সূর্য সেন।

বাঁশদ্রোণী শিল্প ও সংস্কৃতির একটি জায়গা। আদি গঙ্গা যখন সমুদ্র বঙ্গোপসাগরে গঙ্গার মূল প্রবাহ ছিল তখন সতেরো শতকে এই স্থানটি বন্দর হিসাবে ব্যবহৃত হত। এই জনপদটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিশাল বিস্তীর্ণ প্রবেশ পথ ছিল। বাঁশদ্রোণী তার নাম রেখেছিল বঙ্গশ্রোণ থেকে – যার অর্থ বাঁশের বন।

বাঁশদ্রোণী নামটি বিভিন্নভাবে লেখা হয় – বাঁশড্রোনি, বানসড্রোনি। বাঁশদ্রোণী থানায় রয়েছে দক্ষিণ শহরতলি বিভাজনের কলকাতা পুলিশের – এটি রায়নাগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র মধ্যপাড়া, বাঁশদ্রোণীতে অবস্থিত।

পাটুলি মহিলা থানা দক্ষিণ শহরতলীর বিভাগের অধীনে সমস্ত নেতা জেলা অর্থাৎ নেতাজি নগর, যাদবপুর, কসবা, রিজেন্ট পার্ক, বাঁশদ্রোণী, গারফা এবং পাটুলির অধীনে রয়েছে।

যাদবপুর, ঠাকুরপুকুর, বেহালা, পূর্ব যাদবপুর, তিলজালা, রিজেন্ট পার্ক, মেটিয়াব্রুজ, নাদিয়াল ও কসবা থানাগুলিকে ২০১১ সালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলা থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়।

আর নতুন থানা হ’ল – পার্নশ্রী, হরিদেবপুর, গারফা, পাটুলি, জরিপ পার্ক, প্রগতি ময়দান, বাঁশদ্রোণী এবং রাজাবাগান।

 

বাঁশদ্রোণী অঞ্চলটি মুলত একটি আবাসিক এলাকা – প্রায় প্রতিটি ভবনের আবাসিক একটি করে ছিল। আর এখন তো বহুতল ভবন আর ভবন।

ঊষা ফ্যান কারখানাটি বাঁশদ্রোণী এলাকায় অবস্থিত। বিদ্যাসাগর পার্ক লেনটি এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

বাঁশদ্রোণীর কাছাকাছি রয়েছে – গড়িয়া, নাকতলা, টালিগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চল।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডের খুব কাছে বাঁশদ্রোণী। বাঁশদ্রোণীর কাছেপিঠের – রাইফেল ক্লাব, জয়শ্রী, দীনেশ নগর, কংগ্রেস নগর, আনন্দ পালি, সুবোধ গার্ডেন, চিরন্তনী পার্ক, অরবিন্দ পার্ক, রানিয়া ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।

বাঁশদ্রোণী ও এর আশেপাশের উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হ’ল – গেম চার্চ স্কুল ; ফিউচার ফাউন্ডেশন ; জিডি বিড়লা ; মহর্ষি বিদ্যা মন্দির ; হলি হোম ; আদর্শ ইংলিশ হাই স্কুল ; বিডি মেমোরিয়াল ; সেন্টমারির ⛪ চার্চ স্কুল ; ডি পল স্কুল ; খানপুর হীরেন্দ্রলাল সরকার হাই স্কুল ; খানপুর নির্মলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ; বিনয়পল্লী আদর্শ বিদ্যালয় ; সেন্ট ক্লেয়ার স্কুল।

বাঁশদ্রোণীতে – বানসড্রোনি পার্ক ও ডাক পার্ক অবস্থিত।

দর্শনীয় স্থান হ’ল – শিব মন্দির ; কুইন অফ পিস ⛪ চার্চ ; কালীবাড়ি ও কালী মন্দির। বাঁশদ্রোণীতে বসবাস করতেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেতা ছবি বিশ্বাস।

একসময় বাঁশদ্রোণীতে থাকতেন – বাপ্পি লাহিড়ী ; নায়িকা – গায়িকা কানন দেবী ;

গীতিকার শ্রী শিবদাস ব্যানার্জীও বাঁশদ্রোণীতে থাকতেন।

 

বলিউডের প্লেব্যাক গায়ক উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়ের শেকড় বাঁশদ্রোণীতে।

বাঁশদ্রোণী বা বানসড্রোনির বাসিন্দারা সঙ্গীত – সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রেমী এবং প্রকৃতির খুব শৈল্পিক। সময়ের সাথে সাথে বাঁশদ্রোণী জায়গাটি ভিড় করে উঠেছে।

বাঁশদ্রোণীতে গেলে হৃদয় মন্দিরে ভেসে উঠবে কানন দেবী ও ছবি বিশ্বাসের মুখ দু’টি। বাংলা ছায়াছবির গর্ব ও ভালবাসা যে তাঁরাই।

 

টেংরা –

টেংরা  কলকাতা মহানগরীর পূর্ব কলকাতার এমন একটি অঞ্চল যা প্রচলিত ভাবে হাক্কা চীনা বংশোদ্ভূত লোকদের মালিকানাধীন বহু ট্যানারি ছিল।

টেংরার উল্লেখযোগ্য সড়ক হ’ল – গোবিন্দ চন্দ্র খটিক রোড।

কলকাতা মহানগরীর পৌর সংস্থার অধীনস্থ টেংরা অঞ্চলটি ৫৬ নং, ৫৭ নং, ৫৮ নং, ৫৯ ও ৬৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

নিকটস্থ পাতাল রেল স্টেশন হ’ল – বেলিয়াঘাটা এবং বরুণ সেনগুপ্ত। তবে এ দু’টি স্টেশন নির্মাণাধীন রয়েছে। টেংরার লোকসভা আসন কেন্দ্র হ’ল – টেংরার কিছু অংশ – কলকাতা উত্তর এবং কিছু অংশ কলকাতা দক্ষিণ।

 

টেংরা_কলকাতা

 

টেংরার বিধানসভা আসন কেন্দ্র হ’ল – বেলেঘাটা, এন্টালি এবং কসবা। টেংরার পুরো চিনাটাউন টাঙ্গারাকে ৩৫০ টিরও বেশি ট্যানারি দিয়ে আচ্ছাদন করত। বেশির ভাগ স্থায়ী কাঠামোগুলি জলাবদ্ধ এবং পুনরায় দখলকৃত নিম্ন – জমি জমার উপর বহু বছর ধরে শ্রমজীবী হাক্কা চীনা দ্বারা নির্মিত হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে এটি কলকাতার চিনা টাউনের অবস্থান হিসাবে কাজ করেছে। এটি একটি কাকতালীয় নয় ; হাক্কা চাইনিজ, কলকাতা ধীরে ধীরে কলকাতার এই অংশটি সমাপ্ত এবং আধা সমাপ্ত চামড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে পরিণত করেছে। এই জনপদটি হাক্কা চাইনিজ চামড়া তৈরিতে বিশেষীকরণ করেছিল – এটিকে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান শিল্পে করে। আর এই কারণে এই শিল্পকারখানায় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল।

 

টেংরায় রয়েছে শতাধিক জুতো এবং চামড়াজাত প্রস্তুত কারখানা। এখানের উৎপাদিত চামড়াজাত সামগ্রী ভারতের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা ছাড়াও উন্নত দেশগুলিতে তা রফতানি করা হয়ে থাকে।

টেংরায় চীনা স্থাপনাগুলি এবং রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে একটি খুব পুরনো কালী মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি কিম ফা রেস্তোরাঁ এবং রিলাক্স বিদেশি লিকার শপের কাছে অবস্থিত। এই মন্দিরটি চীনা এবং হিন্দু ভক্ত উভয়ই দর্শন করে থাকে।

 

টেংরা থেকে প্রাপ্ত খাবার হ’ল ঐতিহ্যবাহী হাক্কা চাইনিজ খাবারগুলি ভারতীয় উপাদান এবং বাঙালি তালুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া। টেংরার আগে যে অনন্য খাবারের রেসিপিগুলি ছিল তা বরাবর ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। টেংরা এখন চীনা খাবারের জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয় গন্তব্য। টেংরার রেস্তোরাঁগুলিতে বিক্রি হওয়া চাইনিজ খাবারগুলি এখন সারা বিশ্বে হাক্কা স্টাইল চাইনিজ খাবার হিসাবে পরিচিত।

 

টেংরা অঞ্চলে প্রথম দিকে বসতি গড়ে তোলে বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে আসা লোকজন – এরা সবাই ছিল দরিদ্র ও নিম্নবর্ণজাত।

 

টেংরা থেকে প্রাইভেট বাস চলাচল করে কলকাতার বিভিন্ন দিকে, যেমন – হাওড়া স্টেশন ; বাবুঘাট ; আলিপুর চিড়িয়াখানা। টেংরার থানা গোবিন্দ চন্দ্র খটিক রোডে অবস্থিত।টেংরা নামটি আরও যে ভাবে লেখা হয় – ট্যাংরা , ট্যাঙ্গরা।