সার্বিয়া সর্বনিম্ন বেতন কত এই তথ্য জানার আগে আমরা দেশটি সম্পর্কে জেনে নিই। সার্বিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ। তবে এখনো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি। বলকান অঞ্চলের দেশ হিসাবেও পরিচিত সার্বিয়া।
ইদানিং সার্বিয়াতে বাড়ছে বিদেশীদের আনাগোনা। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের লোকজনই এখানে আসছেন ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে। এর মধ্যে অনেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে কাজ করতে আগ্রহী।
যদি কোন উপায়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায় তাহলে বাংলাদেশ কিংবা ভারতের অনেকেই সেখানে যেতে আগ্রহী। বিভিন্ন উপায়ে পাওয়া যেতে পারে সার্বিয়ার ওয়ার্ক পারমিট বা শ্রম ভিসা।
সাধারণত সার্বিয়ার জনগন ছাড়া সেখানে অন্যদের বৈধ উপায়ে কাজের অধিকার নেই। কাজ করতে হলে লাগবে ওয়ার্ক পারমিট। তবে সার্বিয়ার ওয়ার্ক পারমিট নেয়াটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।
সার্বিয়ার কয় প্রকারের কাজের ভিসা আছে?
সার্বিয়ায় সাধারণত প্রতিবেশি ইউরোপীয়ান দেশগুলোর জনগন ভিসা ছাড়াই সেখানে যেতে পারেন। এছাড়া আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারীদেরও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য (সর্বোচ্চ তিন মাস) সেখানে থাকতে হলে ভিসার প্রয়োজন হয় না। এছাড়া অন্য সব দেশের অধিবাসীদের জন্য ভিসার দরকার পড়বে।
সার্বিয়া দুই ধরনের ভিসা প্রদান করে। যথা:
(১) সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ভিসা (সর্বোচ্চ ৯০ দিন)। এই ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
(i) সার্বিয়ায় অনুষ্ঠেয় কোন কনফারেন্সে উপস্থিত হওয়ার জন্য
(ii) পর্যটনের উদ্দেশ্যে সেখানে যেতে চাইলে
(iii) কর্মশালায় উপস্থিত হওয়ার জন্য
(২) দীর্ঘমেয়াদী ভিসা (সর্বোচ্চ ছয় মাস)। এই ক্যাটাগরির ভিসায় ছয়মাস পর ভিসার মেয়াদ বাড়ানো যায়। এই ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
(i) ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
(ii) ব্যবসা-বাণিজ্য স্থাপন
(iii) বসতবাড়ির মালিকানা থাকলে
(iv) সেখানে বসবাসরত পরিবারের কোন সদস্যের সাথে দেখা-সাক্ষাতের জন্য
(v) চিকিৎসার জন্য
(vi) উচ্চশিক্ষার জন্য
(vii) ধর্মীয় সেবার জন্য
সার্বিয়ায় যে ধরণের ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়:
সার্বিয়ায় বিভিন্ন ধরনের ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়। তবে মূলত: প্রধান দুইটি ধারার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দেখা যায়। যথা: ব্যক্তিগত ওয়ার্ক পারমিট এবং সহজ ওয়ার্ক পারমিট। এই দুই ধারার বাইরে আরও দেখা যায় স্বকর্মসংস্থান ভিসা এবং বিশেষ কর্মসংস্থান ভিসা।
আসুন দেখে নিই সার্বিয়ার ওয়ার্ক পারমিট বা শ্রম ভিসার ক্ষেত্রগুলো:
(১) ব্যক্তিগত ওয়ার্ক পারমিট:
এই ভিসা ক্যাটাগরীতে ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে থাকেন সাধারণত নিম্নোক্ত ক্যাটাগরির আবেদনকারীরা:
(i) তৃতীয় বিশ্বের লোকজন যারা সার্বিয়ায় রিফুজী হিসাবে আছে
(ii) সার্বিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত বিদেশীরা
(iii) সার্বিয়ার অধিবাসী নন কিন্তু সেখানকার অধিবাসীদের পরিবারের সদস্য কিংবা আত্মীয়- স্বজন।
সহজ শ্রম ভিসা
এই ক্যাটাগরীতে আছেন যারা নির্দিষ্ঠ পজিশনে সার্বিয়ার কোন কোম্পানী থেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। সার্বিয়ার ফ্যাক্টরীগুলোতে শূন্যস্থান পূরণের জন্য বিদেশীকর্মী আনার জন্য সার্বিয়ার সরকার অনুমোদন দেয়। বিদেশীরা এসব পদে আবেদন করে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসা পেতে পারেন।
বিশেষ ওয়ার্ক পারমিট
এই ভিসা প্রক্রিয়ায় সার্বিয়ায় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীগুলোর কর্মী অন্যদেশ থেকে আসতে পারবেন যদি সেই কোম্পানীর ব্রাঞ্চ অন্য দেশে থাকে। এটাকে কর্মী ট্রান্সফার করার সুযোগ হিসাবেও বলা যায়।
স্বকর্মসংস্থান ওয়ার্ক পারমিট
সার্বিয়ায় বৈধভাবে বসবাসরতরা ছোটখাট একমালিকানাধীন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাইলে এই ভিসার জন্য বিবেচিত হবেন। এই ভিসায় আবেদন করার জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই সেখানে থাকার বৈধ অনুমোদন থাকতে হবে। একমালিকানাধীন কারবার ছাড়াও এই ভিসার জন্য ফ্রি-ল্যান্সার, দূর-নিয়ন্ত্রিত কর্মী (রিমোট ওয়ার্কার) আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
সার্বিয়া বেতন কত
সার্বিয়ায় বৈধভাবে যারা কাজ করেন তাদের বেতন কাঠামো নির্ধারন করে সেখানকার প্রশাসন। গড়ে সার্বিয়ায় বছরে সেখানকার মুদ্রায় ষোল লাখ আশি হাজার টাকা উপার্জন করা যায়। যা ডলারে রূপান্তর করলে দাঁড়ায় পনের হাজার নয়শ (প্রায়) এবং ইউরোতে ১৪২৩১ (প্রায়)। বাংলাদেশী টাকায় পাওয়া যাবে সাড়ে সতের লক্ষ টাকার কাছাকাছি। ভারতীয় মূদ্রায় তের লক্ষ রূপীর একটু বেশি।
সার্বিয়া সর্বনিম্ন বেতন কত
সার্বিয়ায় ননস্কিল্ড কর্মীদের বেতন অবশ্য একটু কম। এখানে তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে আগত অভিবাসীরা সাধারণত বেতন কম পান। সার্বিয়া সর্বনিম্ন বেতন অবশ্য হঠাৎ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি কিছুটা কমেও যায়। সবমিলিয়ে গড় বেতন হিসাব করলে মাসে ৩৪৩ ইউরো সর্বনিম্ন বেতন পাওয়া যায়। টাকার অংকে এর পরিমাণ হবে এক চল্লিশ হাজারের একটু বেশি। ভারতীয় রূপিতে মিলবে একত্রিশ হাজারের একটু বেশি।
আরও পড়ুন: কসোভো বেতন কত? যে ১০টি কারণে কসোভোতে বেতন ইউরোপের গড় বেতনের চেয়ে কম
লন্ডনে কম খরচে থাকা খাওয়ার জায়গা পাবেন যেখানে
উচ্চশিক্ষায় লন্ডন: যুক্তরাজ্যে ষ্টুডেন্ট ভিসার কিছু নতুন নিয়ম
সার্বিয়া টাকার মান বাংলাদেশ
সার্বিয়ার মুদ্রার নাম দিনার। এই মুদ্রা অবশ্য খুব শক্তিশালী নয়। বাংলাদেশী টাকা এবং সার্বিয়ান দিনার প্রায় একই মানের। সার্বিয়ান এক দিনারে পাওয়া যাবে বাংলাদেশী এক টাকা দুই পয়সা।
সার্বিয়া মুসলিম জনসংখ্যা
সার্বিয়ায় মুসলমানরা সংখ্যালঘু হিসাবে আছেন। ২০২২ সালের সর্বশেষ আদমশুমারী অনুসারে সার্বিয়ায় সর্বমোট ২৭৮২১২ জন মুসলমান বসবাস করছেন। মোট জনসংখ্যার তুলনায় যা শতকরা ৪.২ ভাগ।
সার্বিয়া ওয়ার্ক পারমিটের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগবে:
(১) পাসপোর্ট (পাসপোর্টে ভিসা পাবার তারিখ থেকে কমপক্ষে তিন মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)।
(২) ইনভাইটেশন লেটার বা আমন্ত্রণপত্র। নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:
(ক) ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য সার্বিয়ার সংশ্লিষ্ঠ দপ্তর থেকে প্রত্যায়িত আমন্ত্রণপত্র
(খ) সার্বিয়ার কোন রেজিষ্টার্ড কোম্পানী থেকে প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্র
(গ) পর্যটন কোম্পানীর গ্রুপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সেই কোম্পানীকে প্রদান করা টাকার রশিদ
(৩) ভিসা আবেদনপত্র
(৪) ফটো (size 3.5×4.5cm)
(৫) রিটার্ণ টিকেট অথবা ভ্রমণ পরিকল্পনা
(৬) পর্যাপ্ত পরিমান টাকা থাকার প্রমাণ (ব্যাংক বিবরণী, ফিক্সড ডিপোজিট কিংবা অন্যান্য প্রমাণ)
(৭) স্বাস্থ্যবীমা
(৮) ভিসা ফি
বিস্তারিত জানার জন্য সার্বিয়ার ইমিগ্রেশন অফিসের ওয়েবসাইট দেখুন।
আরও পড়ুন:: কসোভো বেতন কত? যে ১০টি কারণে কসোভোতে বেতন ইউরোপের গড় বেতনের চেয়ে কম