লন্ডন বাস ভ্রমনে প্রতিদিন সমাগম হয় হাজার হাজার যাত্রীর। ইউকে এবং এর বাইরের দেশগুলো ছাড়াও ইউরোপের অন্যান্য দেশের ট্যুরিষ্টও কম নন। এর বাইরে আছেন বিলেতের বিভিন্ন শহরে বসবাসরত বাংলাভাষী মানুষদের একটি বড় অংশ। এদের অনেকেই লন্ডন শহরে ভ্রমণের সময় আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন কিংবা টেক্সী ব্যবহার করেন। যা খুবই ব্যয়বহুল। এর চেয়ে অনেকগুণ কমে বাসে ভ্রমণ করা যায়।
মুদ্রাস্ফীতির কারনে লন্ডনের বাস ভাড়া প্রতি বছরেই ২-৪% করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লন্ডনের নাগরিক ব্যয়। অত্যন্ত খরুচে লন্ডনের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কর্মজীবি মানুষের জন্য পাবলিক পরিবহনে যাতায়াত অনেকটা অপরিহার্য। যদি যারা লন্ডনার্স এবং যারা শুধুমাত্র ভ্রমণের জন্যই লন্ডনে আসেন সবার জন্যই সমান খরচ। তবে কিছুটা তারতম্য দেখা যায় বিভিন্ন রকম পাস কেনায় এবং একাধিক ভ্রমণের বেলায়। তাহলে আসুন জেনে নিই লন্ডনে বাস ভ্রমণে সাশ্রয়ী উপায়সমুহ কী হতে পারে সে সম্বন্ধে।
লন্ডনের পাবলিক বাসে নগদ টাকায় ভ্রমণের সুযোগ নেই। ভ্রমণের পূর্বে আপনাকে ওয়েষ্টার
কার্ড কিনে নিতে হবে অথবা কন্টাক্টলেস ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হবে।
লন্ডন বাস ভ্রমণের বেলায় যে কয়টি তথ্য জেনে নেয়া প্রয়োজন তার মধ্যে শুরুতেই আসে প্রতিদিনের টিকেটের ক্যাপ। এটাকে ডে পাসও বলা যায়। পরপর তিনটি বাসের মধ্যে একই ওয়েষ্টার কার্ড কিংবা কন্টাক্টলেস কার্ড ব্যবহার করার পর সেদিনের জন্য বাস ভ্রমণে আর কোন চার্য্য হবে না। আনলিমিটেড যাতায়াত করতে পারবেন। একবার ভ্রমণের খরচ £১.৫০ সে হিসাবে £৪.৫০ হচ্ছে একদিনের জন্য আপনার সর্বোচ্চ বাস ভাড়া।
এক ঘন্টার ভ্রমণে অবশ্য লন্ডনের বাসে আরেকটি সুবিধা আছে। যা দেখা যায় নিউইয়র্কের ট্রেন এবং বাস কম্বিনেশনে। প্রথম বাসে ভ্রমণ শুরুর সময় থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে যদি আপনি আরেকটি বাসে একই কার্ড ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে আর টিকেটের দাম গুনতে হবে না।
লন্ডনের সিটি বাসে অবশ্য একদিনের সর্বোচ্চ ভাড়ার ন্যায় সপ্তাহের সর্বোচ্চ ভাড়াও নির্ধারণ করে দেয়া আছে। এক সপ্তাহে আপনি একই ট্রাভেল কার্ড ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ খরচ পড়বে £২১.২০। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত। এর বেশি চার্য্য করার সুযোগ নেই। আর এরজন্য যাত্রীকেও অতিরিক্ত কিছু করতে হবে না।
লন্ডনের বাঙ্গালি অধিবাসীদের বড় একটা অংশ বাস করেন আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনের জোন ২ এবং ৩ এলাকায়। এই দুই জোনের মধ্যে চলাচলে সাধারণত আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনের সাপ্তাহিক এবং মাসিক পাসের খরচ তুলনামুলক কম। বর্তমানে মাসিক পাসের দাম £১০৩.৭০ এবং সাপ্তাহিক £২৭। এই পাস কিনে নিলে শহরের যেকোন স্থানে চলাচলে লন্ডন বাস ফ্রিতে চড়তে পারবেন।
উপরোক্ত সুবিধাসমুহ যারা টিকেটের পূর্ণ দাম দিয়ে কিনবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য। এবার দেখা যাক ডিসকাউন্টে টিকেট কেনায় কী কী সুবিধা রয়েছে।
(১) প্রথমেই আসে ফ্রিডম পাসের কথা। এই পাস দিয়ে লন্ডনের যেকোন বাসে ফ্রি চলাচল করা যায়। সাধারনত নির্দিষ্ট বয়সের লোকজন এবং প্রতিবন্ধীরা এই পাস পেয়ে থাকেন।
(২) ষাটোর্ধ বয়সীদের ফটো কার্ড: লন্ডন শহরের বসবাসরত ষাটের অধিক বয়সীরা এই কার্ড দিয়ে যেকোন বাসে এবং ওভারগ্রাউন্ড ট্রেনে ফ্রি চলাচল করতে পারবেন। তাদের অবশ্যই লন্ডন শহরের যেকোন বরায় বসবাসের প্রমাণপত্র দেখিয়ে আবেদন করতে হবে।
(৩) এগার বছরের কম বয়সী শিশুরা বাসে বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন।
(৪) সরকারের বিভিন্ন স্কিম অনুসারে ৩০%-৫০% পর্যন্ত বাসে যাতায়াতে কনসেশন দেয়া হয়। যেমন শিক্ষানবিশী স্কিম এবং জবসেন্টার স্কিম।
(৫) ষ্টুডেন্ট কার্ডে ৩০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। লন্ডন বাস এবং ট্রেনেও এই সুবিধা পাবেন। জেনে রাখা প্রয়োজন যে ষ্টুডেন্ট কার্ড পেতে হলে ফুলটাইম ষ্টুডেন্ট হতে হবে। তবে যেকোন বয়সী কেউ ষ্টুডেন্ট হলে আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: লন্ডন আই : আর্কিটেক্ট দম্পতির স্বপ্নের ফসল
এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার:
লন্ডন শহরে এবং শহরতলী মিলিয়ে মোট ছয়টি এয়ারপোর্ট আছে। এয়ারপোর্টে যাত্রী সংখ্যার আনাগোনায় ২০১৮ সালে লন্ডন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত শহর। সুতরাং বোঝাই যায় কী পরিমান যাত্রী আসেন এখানে।
লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্ট এবং সিটি এয়ারপোর্ট দুটিই আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্কের আওতায় আছে। বাকি এয়ারপোর্টগুলো শহর থেকে মোটামুটি দূরে অবস্থিত। যেমন, গেটউইক, ষ্ট্যানষ্টিড, লুটন এবং সাউথ অন সি এয়ারপোর্ট। এসব এয়ারপোর্টে যাতায়াতের পরিবহন খরচ আগে থেকে বুকিং না দিলে মোটামুটি ব্যয়বহুল হয়ে যায়।
অনেকেই মনে করেন ট্রেন তো আছেই। এছাড়া টেক্সী কিংবা উবারও আছে। এছাড়াও আছে এয়ারপোর্ট বাস। কিন্তু এসব পরিবহনে যাতায়াত করতে হলে আপনাকে চড়া মাশূল দিতে হবে যদি আপনি তৎক্ষনাৎ টিকেট কিনেন। টেক্সী আর উবার অবশ্য সেই হিসাবে পড়বে না। কিন্তু এগুলোতে খরচ অনেক বেশি।
অনেকেই জানেন বাস বা ট্রেনের টিকেট আগে থেকে কিনে নিলে দাম পড়বে অনেক কম। তবে সেগুলোর একটা মিনিমাম রেট আছে। ধরা যাক, ন্যাশনাল এক্সপ্রেস কোচ কিংবা ট্রেনের ওয়েবসাইটে আপনি লন্ডনের ষ্ট্যানষ্টিড এয়ারপোর্ট থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনের লিভারপুল ষ্টেশন পর্যন্ত ট্রান্সফারের একটি টিকেট বুকিং দিলেন ভ্রমণের কমপক্ষে চার সপ্তাহ আগে। এক্ষেত্রে বুকিং ফি সহ আপনার টিকেটের দাম পড়বে কোচে সাড়ে ৬ পাউন্ড এবং ট্রেনে ১০-১২ পাউন্ড। সেই একই কোচের টিকেট যদি আপনি অন্য একটা কোম্পানীর ওয়েবসাইট থেকে কিনেন তাহলে তার দাম পড়বে মাত্র ১.৯৯ পাউন্ড। সেই ওয়েবসাইট হল আরেকটা ট্রান্সফার কোম্পানী যার নাম ইজি বাস। তাদের নিজস্ব পরিবহনেও অবশ্য ক্ষেত্রবিশেষে টিকেটের একই দাম থাকে। তবে যাতায়াতকালীন সময়ে টিকেট কিনলে আপনাকে পুরো দাম দিয়েই নিতে হবে।
আর ট্রেনের টিকেটে পাবেন বিশেষ ছাড় কিংবা ডিসকাউন্ট সে বিষয়ে আমরা আরেকটি নিবন্ধে আলোচনা করব।