নিশিকান্ত চট্টরাজ স্ত্রী কন্যা সহ লন্ডনের ব্রিক্সটন এর হার্ন হিল এ থাকে , সুন্দর ছোট পরিবার । সেদিন রাতের বেলায় মাম্পি বেলায় ওর বাবার সাথে আর মেয়ে দুজনে মিলে ডিনারের পর ছাদে রাতের আকাশ দেখছিল। রাতের আকাশ দেখতে মাম্পির খুব ভালো লাগে । ও প্রায় রোজই ডিনার সেরে রাতে ছাদের মধ্যে বিস্তৃত অজানা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
মাম্পির মা এই নিয়ে মাম্পিকে বকাঝকা করে , কি এত আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে বিড়বিড় করিস ? লোকে জানলে পাগল বলবে । বাবা বলল আঃ প্রমিতা ওকে বকছো কেন ? ওকে ওর মত থাকতে দাও । মাই ডটার ইজ স্পেশাল । মাম্পি একটা ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউড দেখিয়ে চলে গেল , মাম্পির সামনে কেউ উচ্চ স্বরে কেউ কথা বকাঝকা করলেই ওর চোখে জল চলে আসে , কিন্তু ও কাউকে চোখের জল দেখাতে চায় না , সেজন্যই সামনে থেকে পালিয়ে গেল। মা বকবে জেনেও , ও সেই প্রতিদিন রাতের আকাশ দেখবে , আর কল্পনার রাজ্যে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে । মাম্পির বাবা অবশ্যই মাম্পিকে সাপোর্ট করে । মাম্পির সৌন্দর্য প্রীতি, কৌতূহলতা , দূরদৃষ্টি আর ক্ষুরধার সম্পন্ন মস্তিষ্ক নিয়ে মেয়ের প্রতি গর্বিত অনুভব করে ।
এই বছর মাম্পি ৬ এ পা দিল । খুব ধুমধাম করে জন্মদিনের পার্টি হয়েছিল । সবার দেওয়া উপহার এর মধ্যে বাবার দেওয়া গিফট টাই ওর সব থেকে বেশি পছন্দ হয়েছে , ওর বাবা ওকে একটা দূরবীন উপহার দিয়েছে । সাতদিন হয়ে গেল জন্মদিনের পার্টি হয়েছে , সেই থেকে দূরবীন টাকে এক মুহূর্তের জন্য হাত ছাড়া করেনি। চোখে দূরবীন লাগিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে -” বাবা এটার কি নাম ? ওটার কি নাম ? বাবা ওই যে তারার মত চলছে ওটা কি ? ” এইসব অনবরত প্রশ্নের উত্তর বাবা ওকে দিয়ে থাকে । ডিনারের পর বাপ – বেটি দুজনে মিলে ছাদে গিয়ে আকাশ দেখে । কোনো কোনো দিন নিশিকান্তের কাজ থাকলে ল্যাপটপ এ কাজ করে আর মাম্পি ঘুরে ঘুরে তারা দেখে আর মাঝে মধ্যে বলে ওঠে – ওই যে বাবা ওটা ওটা যাচ্ছে , ওটা কী ? নিশিকান্ত ওকে কোন সময় কোন আকাশে কোন তারাটা ওঠে , কালপুরুষ , ক্যাসিওপিয়া , সপ্তর্ষিমন্ডল , ধ্রুবতারা , পেগাগস , সাত ভাই বা সাত বোন , লুব্ধক , রোহিণী, শুকতারা , ধ্রুবতারা চিনতে শিখিয়েছে। এইটুকু বয়সে সব মনে রাখতে পারে না যদিও , তাও মনে রাখবার চেষ্টা করে আর বাবা কে প্রশ্ন করে ।
জন্মদিনে মাম্পি বাবা – মায়ের কাছে আবদার করে বসলো এই সাটারডে তে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে কিন্তু । নিশিকান্ত বলেছিল নিয়ে যাবো , কিন্তু কোনো কারণবশত এই সাটারডে হয় নি , পরের সাটারডে তে ওরা ঘুরতে যাবে ঠিক হল । লন্ডন আই দেখতে যাবে। লন্ডন আই নামটা শুনে নিয়ে মনে মনে কয়েকবার বলে মুখস্থ করে নিল। মাম্পির স্টাডি টেবিলে একটা গ্লোব রাখা থাকতো , যদিও মাম্পি গ্লোব ভালো করে দেখতে শেখেনি তাও সেদিন অনেক খুঁজে গ্লোব থেকে লন্ডন খুঁজে বের করলো। আর তার উপর স্কেচ পেন দিয়ে বড় মতন একটা চোখ এঁকে নিয়ে রাত্রে ঘুমোতে যাবার আগে বাবাকে দেখাতে গেল। বাবা দেখে মিষ্টি একটা হেসে কোলে টেনে নিয়ে বললো – সোনা আমার , এবার ঘুমোতে যাও । কাল তো আমরা যাচ্ছি ।
মাম্পিকে বড় সুন্দর দেখাচ্ছিল আজ । আইস ব্লু রঙের ক্যাপ্রি আর লাল রঙের টি শার্ট পড়েছিল উপরে স্লিভলেস জ্যাকেট পড়েছিল । মাম্পির লম্বা পিঠ অবধি চুল , মাম্পির মা প্রমিতা , মাম্পির চুল সুন্দর ফিশ টেল বেনী করে বেঁধে দিয়েছিল । মাম্পিরা প্রবাসী বাঙালী , ইন্ডিয়ার চন্দন নগরে ওদের বাড়ি , কর্মসূত্রে বছর সাতেক হলো বিক্সটন এ এসেছে । মাম্পি লম্বাটে গড়নের , ব্লন্ড কালার এর ঘন সনের মত চুল , গায়ের রঙ ফর্সা তবে ঠিক পশ্চিমীদের মত নয় । পশ্চিমের আবহাওয়া আর পূর্বের পৈত্রিক জিন এর সংমিশ্রণে মাম্পির চেহারায় একটা অন্যরকম উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য আছে । নিশিকান্তের বয়স চল্লিশ হবে , ব্লু জিন্স প্যান্ট আর হোয়াইট টি শার্ট পড়েছিল । প্রমিতা ওদের সাথে গেলো না , প্রমিতার পিসি ওদের বাড়িতে সকালেই এসেছে , পিসির শরীরটা ভালো যাচ্ছে না কদিন থেকে এখানে চেক আপের জন্য এসেছে । প্রমিতারও সাথে যাবার কথা ছিল , কিন্তু পিসিকে একলা রেখে ঘুরতে গেল না । শেষ মুহূর্তে প্রমিতার যাওয়া ক্যান্সেল করতে হল । কিন্তু মাম্পি জেদ ধরে রইলো যাবার জন্য । নিশিকান্ত আর মাম্পি দুজনে মিলে ১০ টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে via A23 and Kennington Rd/A23 দিয়ে লন্ডন আই এর উদ্দেশ্যে রওনা হল। আর সাথে মাম্পি দূরবীনটাও নিল । নিশিকান্ত বারণ করল – বেটু লন্ডন আই এ ওটা লাগবে না , মাম্পি শুনলো না , সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।
গাড়িতে বাবাকে মাম্পিকে অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে বসল – আচ্ছা বাবা লন্ডন আই এর আইল্যাশ গুলো কত বড় ? ! নিশিকান্ত কিছুটা হতবাক হল , ঠোঁটের কোণে হালকা একটা হাসির সরলরেখা ফেলে মাম্পির কপালে স্নেহের চুম্বন দিয়ে বলল – চলো নিজে গিয়েই দেখবে। মাম্পি নিজের মনেই কল্পনা করতে লাগলো চোখ! কটা হবে ? বাবার কাছে শুনেছে লন্ডন অনেক বড় শহর , তাহলে নিশ্চয় অনেক গুলো চোখ হবে , তাহলে কত দূর আর কতকিছু দেখতে পায় , আর আকাশ তাকে তো সবসময় দেখতে পায় , মাম্পির মনে মনে একটু দুঃখ হল ও যদি লন্ডন আই হতে পারত !
গাড়ি পার্কিং করে মাম্পির বাবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাম্পি বিশাল বড় একটা সাইকেলের চাকা দেখতে পেল , আর একটা কোথায় ওটায় খুঁজছে । নিশিকান্ত বলল এই মাম্পি কি খুঁজছো ? মাম্পি বলল – বাবা আর একটা সাইকেলের চাকা কত দূরে আছে ? বাবা বললো ওটা সাইকেলের চাকা নয় ,ওটাই দি লন্ডন আই : আর্কিটেক্ট দম্পতির স্বপ্নের ফসল ।
মাম্পি একটু সন্দেহের সুরে বলল লন্ডন আই ? ! কিন্তু আই এর মত দেখতে নয় , আইল্যাশ , পিউপিল এগুলো তো নেই ,তাহলে আই কেন? বাবা বললো আমরা চোখের সাহায্যে যেমন সব কিছু দেখতে পাই তেমনি এটাতে পুরো লন্ডন শহর টাকে দেখা যায় । কিন্তু বাবা পিউপিল নেই যে । নিশিকান্ত বলল আমাদের চোখের পিউপিল যেমন হয় , দেখো লন্ডন আই ঐরকম পিউপিল এর মত দেখতে । মাম্পি বলল আচ্ছা বাবা ; এটা তো আমার সাইকেলের চাকার মত দেখতে! ওই দেখো বিয়ারিং আর সাইকেলের স্পোক । বাবা বলল একদম ঠিক বলেছ।
লন্ডন আই মূলত একটি রাইড , মানে নাগর দোলনা । এটি বিশ্বের 4th largest ride , প্রায় ৪৫ তলা (১৩৫ মিটার ) উঁচু মানে হলো আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট এর ৪ গুণ ও বেশি , আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট ১০ তলা । ৪২৪ মিটার গোলাকার বৃত্তের উপর ডিমের মত আটকানো ক্যাপসুল । খানিকটা লিফটের মত , ক্যাপসুলের ভিতরে প্রবেশ করে রাইড এর আনন্দ নিতে হয় । রাইডে চড়ার জন্য ওরা টিকিট কাউন্টারে গেল । প্রমিতা সঙ্গে ছিল না , তাই নিশিকান্ত ঠিক করল ওরা শুধুমাত্র রাইডে চড়বে । সেইজন্য দুজনের জন্য টিকিট কাটল। এছাড়াও স্পেশাল রাইড , স্পেশাল প্যাকেজ আছে । টিকিট আগে থেকে নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় , তাই ওরা জুবিলী গার্ডেনে গেল । ওখানে নিশিকান্তের সাথে এক বয়স্ক বাঙ্গালী ভদ্রলোকের আলাপ হল । ওই বাঙ্গালী ভদ্রলোক সাট্টন এ থাকে , তিনি পেশায় আর্কিটেকচার ।
নিশিকান্ত ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করল – আপনি আগে কখনো এই রাইড এ চড়েছেন , ভদ্রলোকটি বলল – কতবার.. , এই তো তৈরী হতে দেখলাম । এতে চড়ার অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ আছে মশায় । মনে হবে আকাশে দাঁড়িয়ে গোটা লন্ডন শহরটাকে দেখছেন । লন্ডন শহরের দূরবীন বললেও ভুল হবে না । আর এর নির্মাণ রচনা ; ও ! দুর্দান্ত ! দি লন্ডন আই : আর্কিটেক্ট দম্পতির স্বপ্নের ফসল তৈরীর পিছনে এক গল্প আছে । নিশিকান্ত বলল কি রকম ? তখন বাঙ্গালী ভদ্রলোকটি বলল – আসন্ন সহস্রাব্দ এর নতুন রাজত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৩ সালে লন্ডন সানডে টাইমস , মনুমেন্ট আইডিয়াস নামক একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল । সেই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণকারী দম্পতি ডেভিড মার্ক্স ও জুলিয়া বারফিল্ড এর মস্তিষ্ক প্রসূত ভাবনার ফসল এই লন্ডন আই , যেটি সময়ের চাকার প্রতীকী স্বরূপ আসন্ন নতুন শতাব্দীর মুকুটে নতুন পালকের সংযোজন করেছে।
ঐ ১৯৯৮ এর ওই শেষ দিক করে হবে বুঝলেন, সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার এলাকার সাউথ ব্যাঙ্কের বিগ বেন এর ওপর পাশে লন্ডন আই তৈরীর কাজ শুরু হয়েছিল । তারপর ১৯৯৯ এর অক্টোবর নাগাদ লন্ডন আই এর চাকাটি টেমস নদীর সাউথ ব্যাঙ্কে পাকাপাকি ভাবে বসানো হয় । ৩১ শে ডিসেম্বর টনি ব্লেয়ার লন্ডন আই এর উদ্বোধন করেন , কিন্তু ক্যাপসুলের ক্লাচের সমস্যা থাকার কারণে এটি বন্ধ থাকে । তারপর ২০০০ এর মার্চ – এ সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় । এযাবত্ কাল পর্যন্ত ৭৫ এর থেকেও বেশি আন্তঃরাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে ।
লন্ডন আই এর চাকা খুব ধীর গতিতে ঘোরে , প্রত্যেক ঘণ্টায় (০.৯৬ kph) ০.৬ মাইলস যাতে প্যাসেনঞ্জার এই রাইড চড়ার আনন্দ নিতে পারে , ভয় না পায় এবং একপাক লাগাতে আধ ঘণ্টা নেয় , যাতে ধীরে সুস্থে ২৫ মাইল পর্যন্ত দিগন্ত বিস্তৃত লন্ডন শহরটাকে দেখতে পাওয়া যায়। আরো মজার বিষয় কি জানেন মশাই , গোলাকার চাকাটা ঘোরে ক্যাপসুল গুলো ঘোরে না তাই সবাই চাপতে পারে ।
আর ইঞ্জিনিয়ার এর মাথা তুখোড় বুঝলেন , না হলে মাত্র ৬টি শক্তিশালী ক্যাবল দিয়ে ১৩৫ মিটারের এই বৃত্তটিকে ২২০০ টন কংক্রিট এবং ৪৪ টি কংক্রিটের পাইল দিয়ে মূল বেসের সাথে A ফ্রেম দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল ! ১৬ টা রিম রোটেশন ক্যাবল আর ৬৪ টা স্পোক ক্যাবল দিয়ে তৈরি করেছে একদম সাইকেলের চাকার মত দেখতে । নিশিকান্ত তখনই বলে উঠলো – হ্যাঁ তা যা বলেছেন , আমার কন্যা তো লন্ডন আই কে দেখেই বলেছে “বাবা এটা তো আমার সাইকেলের চাকার মত দেখতে । ওই দেখো মাঝখানে বিয়ারিং এর তার মধ্যে থেকে স্পোক আটকানো ” । ভদ্রলোকটি মাম্পিকে দেখিয়ে বলল এটি আপনার কন্যা ? নিশিকান্ত বলল – হ্যাঁ । ভদ্রলোকটি মাম্পির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল – তোমার নাম কি মা ? মাম্পি বলল – শাওন চট্টরাজ । ভদ্রলোকটি বলল বা! খুব মিষ্টি নাম তো। তোমার নামের মানে জানো ? মাম্পি বলল শাওন মানে বৃষ্টি , বর্ষাকাল ।
ভদ্রলোকটি ঘাড়টা সামান্য হেলিয়ে নীচে চোখ দুটো বড় করে , নীচের ঠোঁটটা, উপরের ঠোঁটের দিকে উপরে ঠেলে দিয়ে , থুতনিতে সাময়িক গর্ত দেখা দিল , তারপর কিছুটা বিস্ময়ের সুরে বলল ইন্টেলিজেন্ট গার্ল ! নিশিকান্ত বলল – ওর এইটুকু বয়স থেকেই সব ব্যাপারে বিশাল আগ্ৰহ , কৌতুহল আছে । তখন চার বছর বয়স , একদিন এসে আমার স্ত্রী কে জিজ্ঞাসা করেছিল -” মা শাওন মানে কি ?” আমি আর আমার স্ত্রী দুজনেই কিছুটা হতবাক হয়েছিলাম , তারপর ওর নামের মানে বলে দিয়েছিলাম , তখন থেকেই মনে রেখেছে । ভদ্রলোক প্যাকেট থেকে একটা চকলেট বের করে মাম্পিকে দিল । মাম্পি নিতে অস্বীকার করছিল । তারপর নিশিকান্ত বলল – নাও মাম্পি আঙ্কেল দিচ্ছেন । বাবার কথা শুনে মাম্পি চকলেটটা নিয়ে থ্যাংকিউ আঙ্কেল জানাল । ভদ্রলোকটিও ওয়েলকাম সম্ভাষণ জানাল ।
আবার ভদ্রলোকটি বলল – ‘স্কোডা স্টিল’ এর নাম শুনেছেন ? লন্ডন আই এর এই ‘স্পাইন্ডল’ টা এই ‘স্কোডা স্টিল বানিয়েছে । একসাথে ৬৪ টা স্পোক কে একসাথে আটকে রেখেছে , স্পাইন্ডল’ টা ঘুরলেই পুরো চাকাটা ঘুরবে ।
ওই যে লাল রঙের ক্যাপসুল টা দেখছেন , ওটা ‘ coronation capsule ‘ ২০১৩ সালের ২ জুন মাসে দ্বিতীয় কুইন এলিজাবেথ ৬০ তম অ্যানিভার্সারি উপলক্ষে নাম দেওয়া হয়েছে ।
লন্ডন আই এর প্রথম রাখা হয়েছিল ব্রিটিশ এয়ারওয়ে লন্ডন আই তারপর মার্লিন এন্টারটেইনমেন্ট লন্ডন আই , EDF লন্ডন আই , কোকাকোলা লন্ডন আই (২০১৫) কিন্তু ওই লন্ডন আই নামেই জনসাধারণে প্রচলিত।
যেহেতু এটি লন্ডনে অবস্থিত তাই লন্ডন একা নাম কুড়োচ্ছে , কিন্তু এর পিছনে অন্য দেশেও অবদান আছে বুঝলেন। স্টীল এবং ইলেট্রিক সাপ্লাই ইউ কে থেকে , ক্যাবল আর গ্লাস ইটালি থেকে আনা হয়েছে , বিয়ারিং জার্মানি থেকে , স্পাইন্ডল এবং হাব চেক প্রজাতন্ত্র থেকে আনা হয়েছে । আর ক্যাপসুল গুলো ফ্রান্সের তৈরী।
আরও পড়ুন-লন্ডনে বাস ভ্রমণ: জেনে নিন সাশ্রয়ী উপায়সমুহ
নিশিকান্ত আর ভদ্রলোকটি গল্প করছিল। দুজনে গল্প করছে দেখে মাম্পির কিছুটা বোরিং লাগছিল , অ্যাটেনশন পাবার জন্য তখনই হঠাৎ মাম্পি বলে উঠলো – আচ্ছা বাবা এইরকম কটা ক্যাপসুল আছে ? বাবা বলল – তুমি গুণে দেখো । মাম্পি উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে গুণে দেখল ৩২ টা । বাবা বলল এই ৩২ টা ক্যাপসুল লন্ডনের ৩২ টা টাউন কে ইন্ডিকেট করে ।
এবার ওরা রাইড চড়ার জন্য গার্ডেন থেকে বেরিয়ে গেল । রাইড এ কাঁচের মোড়কে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ক্যাপসুল এর ভেতরে ঢুকে মাম্পির বেশ রোমাঞ্চ লাগছিল । মাম্পির তো টিভি তে কার্টুন এ দেখেছে এইরকম স্পেসশিপ কি সুন্দর চারিদিকে কাঁচের দেওয়াল ডিমের মত দেখতে । প্রথম যখন রাইড ঘোরা শুরু হয় ,তখন মাম্পি খানিকটা ভয় পেয়ে বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে বাবার গায়ের মধ্যে মুখ লুকিয়ে দিয়েছিল । তারপর নিশিকান্ত বলে উঠল – মাই প্রিন্সেস , মাই ব্রেভ গার্ল ।
আমি আছি তো ভয় কিসের, দেখো আকাশটা কি সুন্দর দেখাচ্ছে , কত বড় বড় বিল্ডিং । তখন মাম্পি বাবার কথায় ভরসা পেয়ে মুখ তুলে কাঁচের মধ্যে দেখলো ও আকাশের কত কাছে , আকাশটাকে ছোঁয়াবার জন্য কাঁচের দেয়ালে হাত দিল। বিশাল আকাশের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাদা মেঘের দল আর তার মধ্যে ক্যাপসুল বন্দি মাম্পি । নিশিকান্ত আর মাম্পি দুজনে মিলে দেখলো পায়ের তলায় গভীর বিস্তৃত টেমস এর জলরাশি। জলে সূর্যের আলো পড়ে ঝলমল করে উঠছে । মাঝখানে লন্ডন শহরের হৃৎপিণ্ড টেমস নদীর আর নদীর দুই তীরবর্তী পরিপাটি করে সাজানো নগর সভ্যতা । ব্রিটিশ পার্লামেন্ট , বিগ বেন, , দিগন্ত ছোঁয়ার অনুভূতি আর সাথে আকাশের হাতছানি , উঁচু উঁচু বিল্ডিং এর চূড়া , লন্ডন ব্রিজ , ব্যস্ত নাগরিক , টেমস নদীতে বোট এর আনাগোনা ।
ক্যাপসুলের ভেতরেই ভদ্রলোকটি বললেন – তবে নিউ ইয়ার আর খ্রিস্টমাস মাসে নতুন সহস্রাব্দের আইকন দি লন্ডন আই দেখার মত। আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় । তখনকার বিউটি , ওহ ! মনে হবে রাজমুকুট। সত্যিই আর্কিটেক্ট দম্পতিকে কুর্নিশ জানাই দি লন্ডন আই এর জন্য।
দি লন্ডন আই থেকে নেমে ভদ্রলোকটিকে নমস্কার জানিয়ে চলে গেলেন । নিশিকান্ত আর মাম্পি লাঞ্চ সেরে জুবলী গার্ডেন এর মধ্যেই রেলিং দিয়ে ঘেরা ওপারে বিশাল শান্ত টেমসের জলরাশি দেখার জন্য বসার জায়গা করা আছে । ওখানেই বাপ বেটি দুজনে মিলে এসে বসল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাম্পি বাবার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। নিশিকান্ত আর ডেকে তুললো না । পাখিদের আনাগোনা , খিচির মিচির ডাক , নদীর জলে আস্তে আস্তে ঢোলে পড়া সূর্যের আলোয় মোড়া টেমসের অপরূপ শোভা দেখতে দেখতে মনের গভীরে ডুব দিয়ে প্রমিতা আর নিশিকান্ত এই গার্ডেন একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতিরপাতা উল্টে দেখছিল। কখন সে দুপুর গড়িয়ে বিকেল গড়িয়ে এল টেরই পেল না ।
এমন সময় লন্ডন আই এর লাইট জ্বালিয়ে সন্ধ্যে ঘোষণা করলে নিশিকান্ত মাম্পিকে কে ডেকে তুলল – মাম্পি.. মাম্পি …ওঠ । আমরা বাড়ি যাব তো এবার । মাম্পি চোখ কচলাতে কচলাতে হাই তুলল । তারপর দুজনে গার্ডেন থেকে বেরিয়ে কিছু খাবার দাবার কিনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। বাড়ি ফিরে মাম্পি একটু খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ল সারাদিনের ক্লান্তি ছিল তাই আজ আর ছাদে রাতের আকাশ দেখতে গেল নিমেষের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।