যুক্তরাজ্য কিংবা ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য ঋণ নেয়ার ব্যবস্থা আছে। রাষ্ট্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশিরভাগ দেশে বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র ফিতে পড়ালেখা করার ব্যবস্থা আছে। প্রায় সবগুলো দেশেই এই সুবিধা স্থানীয় শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকেন। কিছু দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্যও সমান সুযোগ প্রদান করে। যেমন, জার্মানী, সুইডেন এবং আরও কিছু ইউরোপীয়ান দেশ।
ফ্রি টিউশন ফি’র সাথে ব্যাংক থেকে কিছু ক্ষেত্রে ঋণও নেয়া যায়। তবে যুক্তরাজ্যে এই সুবিধা নেই। বৃত্তি না পেলে নিজ খরচে পড়ালেখা করতে হয়। ঋণ নেয়ারও সুযোগ নেই বিদেশী শিক্ষার্থীদের। তবে সামান্য কিছু বিকল্প আছে যাতে এই সমস্যা থেকে আংশিকভাবে মুক্তি লাভ সম্ভব। কিছু নির্দিষ্ট পন্থায় পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে গেলে শিক্ষা ঋণ বা ষ্টুডেন্ট লোনের বিকল্প করা যায়। যুক্তরাজ্যে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ষ্টুডেন্ট লোনের কিছু সহজ বিকল্প আলোকপাত করা হল।
কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডিং:
বিভিন্ন কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ফান্ডিং রয়েছে। যুক্তরাজ্যের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে বাংলাদেশসহ দক্ষিন এশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য ফান্ডিং বরাদ্ধ আছে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত জানা যাবে। এছাড়াও তাদের আন্তর্জাতিক ভর্ত্তি বিভাগে যোগাযোগ করেও প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে।
বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক শিক্ষাবৃত্তি:
যুক্তরাজ্যে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ঠ শিক্ষাবৃত্তি আছে যেগুলোকে পড়া-শোনা, থাকা খাওয়ার খরচসহ হাতখরচও প্রদান করা হয়। তবে এগুলো খুবই প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ এবং সংখ্যায় খুব বেশি নেই। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকক্ষেত্রে আংশিক বৃত্তি দেয়া হয় টিউশন ফিতে। এছাড়া চলতি সেমিষ্টারে রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করেও টিউশন ফিতে পাওয়া যায় কিছুটা ছাড়।
উপরোক্ত সুবিধার বাইরে শিক্ষার্থী আরও কিছু বিদ্যমান সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন। এজন্য ধৈর্য্য, অধ্যাবসায় ও চেষ্টার প্রয়োজন। নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে নজর দিলে যেকোন শিক্ষার্থীই লাভবান হবেন।
আপনার ক্রেডিট স্কোর গড়ার ব্যাপারে মনোযোগ দিন:
পশ্চিমা দেশগুলোতে আর্থিক লেনদেনে ক্ষেত্রে আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু হচ্ছে আপনার ক্রেডিট স্কোর। মনে রাখবেন এখানে সবকিছু ডিজিটাল। তাই ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধি করার উপায়সমূহ জেনে নিয়ে সেগুলো প্রয়োগ করুন। আমাদের এই নিবন্ধ থেকেও এব্যাপারে জানতে পারবেন। একটি ভাল ক্রেডিট স্কোর থাকলে আপনি অনায়াসে প্রয়োজনীয় আর্থিক ঋণ নিতে পারবেন ব্যাংক কিংবা বিল্ডিং সোসাইটি থেকে। ক্রেডিট স্কোর বা ইতিহাস গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় ধাপের মধ্যে আছে ইউটিলিটি বা পরিষেবা যেমন: গ্যাস, বিদ্যুৎ, অন্তর্জাল, মোবাইল ফোন ইত্যাদির গ্রাহক হওয়া। মাসিক বিল ডাইরেক্ট ডেবিটের মাধ্যমে পরিশোধ করা। কোন অবস্থাতেই ডাইরেক্ট ডেবিট বা নির্দিষ্ট তারিখে বিল পরিশোধে বিলম্ব করা যাবে না। ভোটার তালিকায় অবশ্যই নাম অন্তর্ভুক্তকরন।
ব্যাংক ওভারড্রাফ্ট:
যুক্তরাজ্য আসার পর আপনার ব্যাংক একাউন্টে শুরুতে সামান্য অংকের ওভারড্রাফট সুবিধা নিন। যেমন: ৩০ থেকে ৫০ পাউন্ড। এই ওভার ড্রাফট মাঝে মাঝে ব্যবহার করুন। এবং এক থেকে দুইদিনের মধ্যে পরিশোধ করুন। এতে হয়তো আপনি সামান্য ফি প্রদান করবেন। কিন্তু ব্যাংকিন লেনদেনে আপনার বিশ্বস্ততা বাড়বে। এভাবে ক্রমে আপনার ওভারড্রাফট আরও কিছু বাড়িয়ে নিন।
বেতন নিন ব্যাংক ডাইরেক্ট ডেবিটের মাধ্যমে:
মূলধারার প্রায় শতভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের ষ্টাফদের বেতন পরিশোধ করে ব্যাংকের মাধ্যমে। তবে বিভিন্ন কমিউনিটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কারনে তাদের ষ্টাফদের বেতন পরিশোধ করে নগদে। এরকম অবস্থায় আপনার নিয়োগকর্তা যদি নগদে বেতন প্রদান করেন তাহলে তাদের সাথে আলাপ করে দেখতে পারেন যদি ব্যাংক একাউন্টে প্রদান করা সম্ভব হয়।
যদি নিতান্তই ব্যাংকে বেতনের টাকা পরিশোধ করা না যায় তাহলে আপনি মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে আপনার একাউন্টে একই পরিমান টাকা রাখুন। যাতে একটা ধারাবাহিকতা থাকে এবং ব্যাংক বুঝতে পারে আপনার একটি নির্দিষ্ট আয় আছে।
শিক্ষা ঋণের বিকল্প হিসাবে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করুন:
যুক্তরাজ্য আসার পর আপনার ক্রেডিট স্কোর যখন অনেক ভাল হয়ে যাবে এবং ব্যাংক নিজ থেকেই আপনাকে ক্রেডিট কার্ড অফার করবে তখন অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড নিন। শুরুতে একটু কম রেন্জের ক্রেডিট কার্ড নিন। এরপর সেটা নিয়মিত ব্যবহার করুন। বিল প্রদান করেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই। সম্ভব হলে আপনার যাবতীয় খরচ করুন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এবং এক মাসের মধ্যেই ক্রেডিট কার্ডের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করুন। সম্ভব হলে আপনার ব্যাংক একাউন্টের সাথে ডাইরেক্ট ডেবিটে পুরো বিল পরিশোধের অপশন চালু করে দিন। এতে আপনাকে কোন ফি বা ইন্টারেষ্ট দিতে হবে না। আপনার ক্রেডিট স্কোর আরও বাড়বে।
ষ্টুডেন্ট লোনের বিকল্প হিসাবে ব্যাংক ঋণ নিন
সবচেয়ে কম খরচে লম্বা সময়ের জন্য টাকা পাবার একমাত্র ব্যবস্থা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। যখন আপনার ক্রেডিট স্কোর অনেক বেড়ে যাবে তখন ব্যাংক আপনার কাছে চিঠি কিংবা ইমেইল পাঠাবে ঋণ নেয়ার জন্য। ব্যাংক কাউন্টারে গেলে সেখানেও তারা আপনাকে ঋণ অফার করবে। মনে রাখবেন ঋণ পাবার পূর্ব শর্ত হল ভাল ক্রেডিট স্কোর। যুক্তরাজ্য থাকাকালীন তাই যদি আপনার ক্রেডিট স্কোর ভাল থাকে তাহলে সহজেই পাবেন ব্যাংক ঋণ।
তবে আজ ইউকেতে এসে কাল ব্যাংক ঋণ পাবার চেষ্টা করবেন না। আপনার ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধি করে তবেই চেষ্টা করবেন। এতে সফল হলে বিদেশের জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে। যুক্তরাজ্যে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ষ্টুডেন্ট লোনের সহজ বিকল্প হিসাবে এটিকে ব্যবহার করুন।
ষ্টুডেন্ট লোনের বিকল্প হিসাবে ব্যালেন্স ট্রান্সফার ক্রেডিট কার্ড নিন:
ব্যালেন্স ট্রান্সফার ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারে অনেকেই অবগত নন। সবচেয়ে সহজভাবে বিনা ফি কিংবা সুদে এক থেকে কয়েক বছরের জন্য কয়েক হাজার পাউন্ড পাবার উপায় হল ব্যালেন্স ট্রান্সফার ক্রেডিট কার্ড। যখন আপনার ক্রেডিট কার্ডসমুহে বিল মোটামুটি বড় অংকের হয়ে যাবে তখন আপনি এই ব্যালেন্স ট্রান্সফার কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এরকম অনেকগুলো ক্রেডিট কার্ড আছে যারা নামমাত্র ফি কিংবা বিনা ফিতে আপনাকে কয়েক হাজার পাউন্ড ক্রেডিট ট্রান্সফার করার সুযোগ দিবে। আপনি শুধুমাত্র মিনিমাম বিল প্রদান করবেন। একবছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় একটি কার্ডে পাওয়া যায়। তারপর থাকছে অন্য আরেকটি কার্ডে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ। নির্দিষ্ট শর্তাবলী মেনে চললে এরকম যতদিন খুশি ততদিন ব্যালেন্স ট্রান্সফার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা যায়।
শেষ কথা: উপরে যেসব সুবিধার কথা আলোচনা করা হল সেগুলো শিক্ষাঋণ নয় ঠিকই, তবে একটি বিরাট আর্থিক বিকল্প। আপনার ক্রেডিট স্কোর নিয়মিত আপডেটেড রাখার মাধ্যমে উপরের সবগুলো সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে পারেন। যেকোন আর্থিক সমস্যায় এসব বিকল্প অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করবে নি:সন্দেহে।
-বদরুল হোসেন বাবু