Table of Contents
মালি পরিচিতি:
সার্বভৌম রাষ্ট্র মালি আটটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সাহারা মরুভূমির মাঝখানে এ দেশটি অবস্থিত। এ দেশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে নাইজার ও সেনেগাল নদী। দেশটির অর্থনীতি কৃষি ও খননের উপর নির্ভরশীল। মালির অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ হল সোনা এবং দেশটি আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী।
এ দেশটি লবণও রপ্তানি করে থাকে।
পশ্চিম আফ্রিকার এই বড় দেশটির উত্তরে প্রায় অর্ধেক জুড়ে রয়েছে সাহারা মরুভূমি। মালির বাকি অংশ জুড়ে রয়েছে সবুজ তৃণভূমি।
গরিব কৃষি ভিত্তিক এ দেশটিতে বিভিন্ন সময়ে খরায় বহু মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষ্ণকায় আফ্রিকি,তাদের বসবাস গ্রামাঞ্চলে। তাদের জীবিকা কৃষিকাজ ও পশুপালন।
বাংলাদেশ থেকে মালির দূরত্ব
বাংলাদেশ থেকে মালির দূরত্ব নিয়ে অনেকেরই জানার আগ্রহ আছে। বিভিন্ন অনলাইন ফোরামেও এই প্রশ্ন দেখা যায়। এছাড়া সাধারন জ্ঞান বিষয়ক প্রশ্নেও এরকম বিষয় দেখা যায়। এটা ঠিক যে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে মালি পর্যন্ত স্থল যোগাযোগ নেই। তাই এক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্যালকুলেশনই ভরসা বাংলাদেশ থেকে মালির দূরত্ব নির্ণয়ে। গুগল সার্চের সরবরাহকৃত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে মালির দূরত্ব ৯৬৫১ কিলোমিটার।
মালি শান্তিরক্ষা মিশন
মালি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব অনেকদিন থেকেই। বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদার সদস্যগণ ২০১৩ সাল থেকে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির রাজধানী বামাকোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।
একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১৫ সালে মালিতে মোতায়েন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭২২। এর মধ্যে সেনাবাহিনী ১ হাজার ৩১০, নৌবাহিনী ১৩৩, বিমান বাহিনী ১২৩, পুলিশ ১৪০ ও স্টাফ অফিসার ১৬ জন। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৭৪-এ।
মালি যুদ্ধ
১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মালি অস্থির ও সংঘাতময় সময় পার করছে। ২০১২ সালে মালিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এরপর মালি সরকারের অনুরোধে সেখানে শান্ত-শৃংখলা ফিরিয়ে আনটে জাতিসংঘ শান্তিমিশন পাঠায়।
তারপরও সংঘাত থেমে নেই। বিভিন্ন সময়ে সেখানে আক্রান্ত হচ্ছেন এমনকি জাতিসংঘের শান্তিমিশনে কর্মরতরাও। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কয়েকজন শান্তিরক্ষী ইতিমধ্যেই সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন।
মালিতে বহু খনিজ পদার্থ থাকলেও তার ব্যবহার খুব অল্প।
৩০০০ থেকে ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত দেশটি আফ্রিকার তিনটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য ঘানা, মালি ও সোঙ্গাই সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ১৮৯৫ থেকে ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত ফরাসিদের অধিকারে ছিল দেশটি।
১৯৬০ খৃষ্টাব্দে মালি স্বাধীনতা লাভ করে।
মালি হলো পশ্চিম আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর পুরো নাম মালি প্রজাতন্ত্র। ১২,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মালি আফ্রিকার অষ্টম বৃহত্তম দেশ। এ দেশের নীতিবাক্য – ‘এক জনতা, এক লক্ষ্য, এক বিশ্বাস’।
মালির রাজধানী বসেছে বামাকোতে। বামাকো হল মালির বৃহত্তম শহর। শহরটি নাইজার নদীর তীরে অবস্থিত। হস্তশিল্পের জন্য এই রাজধানী শহরটি খুব বিখ্যাত। বামাকোতে দেখার মতো রয়েছে – জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় উদ্যান, চিড়িয়াখানা। এই শহরটি মালির প্রাকৃতিক প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত। সংস্কৃতির একটি গলিত পাত্রও বলা হয় বামাকোকে। এই শহরে ফুলানি, সেনুফস, ডগনস, টুয়ারেগস বা বাম্বারাস এমন কিছু জাতিগত গোষ্ঠী একত্রে বসবাস করে। যাদের প্রত্যেকের পোশাক, জীবনযাপন বা ধর্মীয় বিশ্বাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে – যা বড়ই বৈচিত্র্যময়।
মালির পর্যটন আকর্ষণ:
মালির জিম্নি শহরটি দেখার মতো – সুদান এবং সাহারার আর্দ্র অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষে জিম্নি শহরটি। শহরটি একজাতীয় সুদানীস স্থাপত্য শৈলীর অনুসরণে নির্মিত হয়েছে। এখানের বাড়িগুলি প্লাস্টার করা অ্যাডোব কিউবগুলি এবং ছিদ্রযুক্ত পাইলাস্টার, বাজমেন্ট বা প্যারাপেটগুলি দিয়ে সজ্জিত। জেঞ্জার এগারোটি পাড়া প্রাচীর দ্বারা সীমাবদ্ধ বিশ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রশস্ত এবং সরু বালুকাময় রাস্তাগুলি দু’টি অপরিহার্য স্কোয়ারের দিকে চলে গেছে। এর একটি দিক গেছে মার্কেট স্কয়ার। আরেকটি রাস্তা গেছে মসজিদের দিকে। এর কাছাকাছি আছে বিশ্বের বৃহত্তম অ্যাডোব মন্দির। এ মন্দিরটি পশ্চিম আফ্রিকার সবচেয়ে সুন্দর সুদানী ধাঁচের। এ কারণেই এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার একটি অংশ।
মপ্টি শহরটি নাইজার নদীর তীরে অবস্থিত। এই শহরটিকে আফ্রিকার ভেনিস নামে ডাকা হয়। এই শহরের গ্রেট মসজিদটি অপরূপ রূপে সজ্জিত। এর স্থাপত্য কীর্তি দেখে যে কেউ বিস্মিত হয়ে পড়েন। বারে বারে তাকিয়ে থাকে গ্রেট মসজিদটির দিকে।
দোগনকে বলা হয় দোগন দেশ। মালির অন্যতম আকর্ষণীয় নৃগোষ্ঠী এই দোগনে বা ডোগনে বসবাস করে।
ডগন চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই জায়গায় এসেছিল যখন ইসলামের সম্প্রসারণ থেকে পালানোর সময় মালি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে, কারণ তারা নিরীহ ধরনের ছিল। এখানে তারা ছোট সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকা অ্যাডোব বাড়িতে তাদের সংস্কৃতি স্থাপন এবং সংরক্ষণের জন্য একটি জায়গা খুঁজে পেয়েছিল।
আফ্রিকান সোভানা এবং সাহারা মরুভূমির মাঝামাঝি অংশ, সাহেল নামে একটি অঞ্চল টিম্বুক্টু। এই টিম্বুক্টু বছরের পর বছর ধরে টুয়ারেগের রাজধানী হয়ে আছে।
আরও পড়ুন:
- মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র: বায়া ও বান্দাদের দেশ
- ট্রয় নগরী ধ্বংসের কারণ যা আজও বিস্ময়কর
- চাদ: জেনে নিন সেখানে কখন মনুষ্য বসতি গড়ে ওঠে
এই শহরে সুন্দর সুন্দর মাটির ঘর রয়েছে। যে জন্য টিম্বিক্টু বা তিম্বুক্টু শহরকে মাটির শহর বলা হয়।
মালির উল্লেখযোগ্য অঞ্চল হলো – কায়েস, কৌলিকোরো, বামাকো, সিকাসো, সেগো, মপ্তি, টমবকটৌ, গাও, কিডাল, টাউডেনিট, মেনাকা।
উনিশ শতক অবধি মুসলিম বিশ্বের দক্ষিণ -পশ্চিম প্রান্তে এবং আরব দাস ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে টিম্বক্টু গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মালি সাম্রাজ্যটি সুন্দিয়া কেইতা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এর শাসকদের ধনদৌলতের সুবাদে, বিশেষত প্রথম মানসা মুসার জন্য সুপরিচিত হয়ে ওঠে। মালি সাম্রাজ্যের পশ্চিম আফ্রিকায় অনেক গভীর সাংস্কৃতিক প্রভাব ছিল। যার ফলে নাইজার নদীর তীরে এর ভাষা, আইন এবং রীতিনীতি ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। তখন অসংখ্য ভাসাল রাজ্য এবং প্রদেশগুলি সমন্বিত ছিল।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে মালি সাম্রাজ্য দুর্বল হতে শুরু করে, তবে তখনও এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাব ধরে রেখেছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে টিকে থাকলেও ততদিনে সাম্রাজ্য তার পূর্ব শক্তি এবং গুরুত্ব অনেকটাই হারিয়ে ফেলে।
মালিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের সাম্রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাম্রাজ্য ছিল –
সোংহাই সাম্রাজ্য, সাদি রাজবংশের সাম্রাজ্য, সোনহাই সাম্রাজ্য, বাম্বারা সাম্রাজ্য, কর্তা রাজ্য, টাকচলিউর সাম্রাজ্য, ওয়াসোলৌ সাম্রাজ্য ইত্যাদি।