মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে 


‘মা’ একটি ছোট্ট শব্দ। এই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া, মমতা, অকৃত্রিম স্নেহ, আদর, নিঃস্বার্থ  ভালোবাসার সব সুখের কথা। চাওয়া -পাওয়ার এই পৃথিবীতে বাবা -মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। মায়ের তুলনা মা নিজেই। 

মা হলো প্রত্যেক সন্তানের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ এবং শান্তির আশ্রয়।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম একটি শব্দ হলো মা। 

একমাত্র মায়ের ভালোবাসা কখনো শেষ হয়ে যায় না। মা এমন একজন মানুষ যে আপনি তাকে হাজার কষ্ট দিলেও সে কখনও আপনাকে কষ্ট দিবে না। 

পৃথিবীতে একমাত্র মায়ের ভালোবাসার মধ্যে কোন খাদ নেই। 

মা মারা গেলে মায়ের যে ভালোবাসা, সেই ভালোবাসা আর কাউকে দিয়ে পূরণ হয় না। মৃত্যু যন্ত্রণা যত না কঠিন তার চেয়েও কঠিন হচ্ছে মা হারানো বেদনা। 

একজন সন্তান মাকে যতোই কষ্ট দেক না কেন, সেই মা কখনো সন্তানের কষ্ট নিজের মনে ধারণ করেন না। 

সন্তান বিপদে পড়লে, পাড়াপড়শি না জানিলেও আগে জানে তার মা’য়। 

মা একবার হারিয়ে গেলে তা আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না। 

মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের স্বর্গ, মাকে যারা কষ্ট দিবে তারা কখনও জান্নাতে যেতে পারবে না। 

মা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ মম, যা পূর্বে ব্যবহৃত শব্দ মাম্মা এর পরিবর্তিত রূপ। ইংরেজি শব্দ মাম্মা এসেছে ল্যাটিন শব্দ মাম্মা থেকে। 

সংস্কৃতিতে মা শব্দটি হল মাতা। জননী এবং আম্মা – এ দুটি শব্দ মা শব্দের সংস্কৃত প্রতিশব্দ। 

মা শব্দটি একটি তদ্ভব শব্দ – এটি ইন্দো-ইয়োরোপীয়ান ভাষা থেকে এসেছে। 

মা কথাটি শুধু একটি শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মা হচ্ছে মা, মাতৃভাষা, সর্বোপরি একটি আস্থার নাম। মা মিশে আছে রক্তের প্রতিটি অনুতে, কোষে, অনুভবে। 

মা শব্দটি ঠিক যেন এক বিশ্বজনীন সংগীত। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই মা শব্দটি শুনতে একই রকম লাগে। উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি। যেমন জার্মান ভাষায় ‘মাতার’, নেদারল্যান্ডসের ভাষায় ‘মোয়েদের’, ইতালির ভাষায় :মাদর’,  চীনা ভাষায় ‘মামা’, হিন্দি ভাষায় ‘মাতা’, প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় ‘মাত’ এবং বাংলার মত আফ্রিকার বিভিন্ন ভাষায়ও ‘মা’ বলা হয়। 

সবসময় এক তরফা মা তাঁর সন্তানের সবকিছুই ভালো চায়। অনেক সময় দেখা যায় কিছু সন্তান এই মা’কেই অসম্মান করে বৃদ্ধ বয়সে কষ্ট দেয়। কোনও খবর রাখে না, অথচ মা এই বৃদ্ধ বয়সেও সন্তানকে দেখতে না পেরে ডুকরে ডুকরে কাঁদে।

অনেকেই অট্টালিকার মাঝে সুখ খুঁজতে অনেক সময় মা’কে ভুলে যান। শহরের রঙিন দালানে থেকে মায়ের কষ্টগুলো বেমালুম ভুলে গিয়ে বন্ধু -বান্ধব নিয়ে আনন্দ ফূর্তিতে মেতে ওঠে। মায়ের খোঁজ রাখে না, তখন মায়ের মনে জন্ম নেয় একবুক শূন্যতা। মা গ্রামের থেকে সর্বদাই চিন্তা করে কেমন আছে তার নাড়ি ছেঁড়া ধন ছেলেটা। এভাবে হয়ত দিন যায়, মাস যায় একসময় বছরও হয়তো গড়িয়ে যায়। তবুও মা সন্তানের দেখা পায় না। 

অগত্যা মা আবারও এক বুক আশা নিয়ে সন্তানের পথের দিকে চেয়ে বসে থাকে – একমাত্র তার সন্তানকে একটিবার দেখার জন্য। মায়ের ভাবনা, সন্তান আসলেই তাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে, আদর করবে এবং এই বৃদ্ধ বয়সেও নিজ হাতে খাবার তুলে দেবে। 

এই বৈষয়িক পৃথিবীতে মা-ই একমাত্র কোনো বিষয়াদি এবং স্বার্থ ছাড়া আজীবন তার সন্তানদের জন্য পথ চলে। পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের মাঝে লুকিয়ে আছে তাদের সন্তানদের জন্য এক নিঃসীম গভীর মায়া – মমতা। এই মায়া -মমতা এমনই যে ইচ্ছে করলেও কেউ এতে ভাগ বসাতে পারে না। 

সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা স্বর্গীয় ভালোবাসা তুল্য। এই ভালোবাসা কখনও উঁবে যায় না কিম্বা কমবেশি হয় না। মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য যা কিছু করতে পারে অন্য কোনও সম্পর্ক তার কিঞ্চিৎ পরিমাণ করার ক্ষমতা রাখে না। কারণ মায়ের ভালোবাসা আর অন্য কারো ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত এক সুবিশাল ফাঁড়াক, যা সৃষ্টি থেকেই বহমান। 

সাধারণত সন্তানের প্রতি মায়ের এমন এক ঐশ্বরিক শক্তি যে শক্তি দিয়ে মা সর্বদাই বুঝতে পারে তার সন্তানের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কী না। যা অন্য কোনও সম্পর্কে আঁচ করা সম্ভব নয়। 

আরও পড়ুন:

যে ৫টি কারনে ভ্রমণ জরুরী

এই পৃথিবীতে প্রতিটি মা-ই প্রত্যাশা করে, তাদের সন্তান মানুষের মত মানুষ হয় – তাদের মুখ উজ্জ্বল করুক। সন্তান যেন সুখে -শান্তিতে জীবন কাটায়। এর বাইরে তাদের সন্তান যেন সবসময় সুপথে চলে কারো ক্ষতি না করে। মানুষ তাকে খারাপ না বলে – সেটাও প্রাণভরে প্রার্থনা করে মা। 

তাই সকলে আসুন,  মাটির পৃথিবীর একমাত্র স্বর্গ মা’কে প্রাণভরে ভালোবাসি। চোখ বুজে একটিবার ভাবুন, কিশোর বয়সের কথা, তবেই বুঝা সম্ভব হবে মা যে কি। 

মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে – তাই নয় কি? 

যার মা নেই, তখন সে-ও বলতে বাধ্য হয়, মাকে মনে পড়ে আমার। তার মায়ায় ভরা সজল বীথি সে কি কভু হারায়? না। কারণ, মা – সে যে জড়িয়ে আছে, ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায় – সেই যে আমার মা। 

সূর্য বা রবির কথাই বলি, তার ললাটের সিঁদুর দিয়ে ভোরের রবি ওঠে। তখন তো, আলতা পড়া পায়ের ছোয়ায় রক্ত কমল ফোটে। সে কথা ক’জনেই বা স্মরণ করেন! 

যিনি মাকে হারিয়েছেন, তিনি যদি সত্যি সত্যিই মাকে স্মরণ করেন তাহলে তিনি অনুভব করতে 

পারবেন, ‘প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে কে জেগে রয় দুঃখের ঘরে  – সেই যে আমার মা / বিশ্ব ভূবন মাঝে তাহার নেই কো তুলনা’… গানের এই চরণগুলি।