একসময় ঐতিহ্যগতভাবে বাবা -মা’য়েরা সন্তানের বিয়ে ঠিক করতেন, কিন্তু এখন ভিয়েতনামের যুবক – যুবতীরা নিজেরাই নিজেদের বিয়ের আয়োজন করে থাকে। এখানের ছেলেরা সাধারণত ২৫ বছর বয়সে এবং মেয়েরা ২১ কি ২২ বছর বয়সে বিয়ে করে। তবে ভিয়েতনাম সরকার পরিবার -পরিকল্পনা নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ দেশে দেরিতে বিয়ে ও ছোট পরিবারের জন্য ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। ভিয়েতনামকে নিয়ে লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন।
Table of Contents
- ভিয়েতনাম একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যার পুরো নাম ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। এ দেশটি ইন্দো চীন উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত।
- ভিয়েতনামের সরকারি ভাষা ভিয়েতনামী।
- দক্ষিণ ভিয়েতনাম মূলত মেকং নদীর অববাহিকা দ্বারা গঠিত, প্রশস্ত এবং এর সমভূমি উর্বর। এখানে প্রচুর কৃষিকাজ হয় এবং মূলত ধান উৎপাদন করা হয়।
- হ্যানয় ভিয়েতনামের রাজধানী। অনেকে হ্যানয়কে ‘হা নুই’ নামে ডাকেন। যার অর্থ নদীর মধ্যে শহর। এই শহরে গেলে চোখে পড়বে প্রাচীনের সঙ্গে নতুনের এক মেলবন্ধন।
ভিয়েতনামের গ্রামীণ এলাকায় একান্নবর্তী পরিবার – সবাই একই বাড়িতে বসবাস করে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে ছোট পরিবার আলাদাভাবে বাস করে।
ভাত ভিয়েতনামীদের প্রধান খাদ্য। ভাতের সঙ্গে এক ধরনের মাছের গাঁজানো সুরুয়া খাবার খেয়ে থাকে। সুরুয়াতে মাছ সহ বিভিন্ন সবজি ডুবিয়ে রাখা হয়। সুপ জাতীয় খাবার তাদের খুব প্রিয়। ভিয়েতনামীয়রা খাবার সময় সবসময় ভাতের বাটি এক হাতে ধরে রাখে। পানীয়ের মধ্যে চা, কফি ও বিয়ার জনপ্রিয়, তবে এগুলো খাবারের পরে পরিবেশন করা হয়।
ভিয়েতনামীয়রা ভলিবল, ফুটবল ইত্যাদি দলগত খেলা পছন্দ করে। তবে ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস ইত্যাদিও বেশ জনপ্রিয়।
ভিয়েতনাম একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যার পুরো নাম ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। এ দেশটি ইন্দো চীন উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত।
ভিয়েতনামের উত্তরে গণচীন, পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণ ও পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত।
ভিয়েতনামের সরকারি ভাষা ভিয়েতনামী।
ভিয়েতনাম কয়েকবার কয়েক রাষ্ট্র কর্তৃক স্বাধীনতা লাভ করে। যেমন চীন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ৯৩৮ খৃষ্টাব্দে। উল্লেখ, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে চীন এ অঞ্চলটি দখল করে। চীন থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর এক হাজার বছর ধরে ভিয়েতনাম দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার একটি গতিশীল সভ্যতায় পরিণত হয়। সেই সময়ে উপকূল ধরে দক্ষিণ দিকে দেশটি বিস্তার লাভ করতে থাকে।
১৯শ শতকের শেষ দিকে ফ্রান্স ভিয়েতনাম আক্রমণ করে। ফরাসিরা দেশটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে। অঞ্চলগুলিকে কম্বোডিয়া ও লাওসের সাথে যুক্ত করে ইন্দো চীন ইউনিয়ন তথা ফরাসি ইন্দোচীন গঠন করে। ফরাসিরা নিজেদের সুবিধার জন্য ভিয়েতনামের সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে যায়।
ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৫ খৃষ্টাব্দে। তবে এর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ দেশের কিছু অংশ দখল নিয়ে প্রচুর সম্পদ লুটেপুটে নিয়ে যায় তাদের দেশে। ১৯৭৩ খৃষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা সরিয়ে নেয়। এর দুই বছর পরে দক্ষিণ ভিয়েতনাম সাম্যবাদীরা নিজেদের দখলে নেয়।
ভিয়েতনাম ভৌগোলিক ভাবে সরু ও দীর্ঘ। এর ভূমিরূপ বিচিত্র ধরনের। উত্তর প্রান্তে ও মধ্যভাগের ভিয়েতনাম পাহাড় -পর্বতময়। উত্তরের উচ্চভূমিগুলি ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে পূর্বদিকের প্রশস্ত, নদীবহুল উপকূলীয় সমভূমির সঙ্গে মিশে গেছে।
ভিয়েতনামের সমভুমিতে নিবিড় কৃষিকাজ হয় এবং বহু শতাব্দী ধরে ভিয়েতনামীয়রা এগুলিতে অনেক বাঁধ তৈরি করে ও খাল কেটে সেচ কাজ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়ন করার জন্য যে খাল সংরক্ষণ করবে, তা তো করে না। বরং খাল দখল করে তা ভরাট করে বিশাল বিশাল অট্টালিকা গড়ে তোলে। নয়তো নগরায়ণের সম্প্রসারণ ঘটায়।
মধ্য ভিয়েতনাম দেশের সবচেয়ে সরু অংশ, এখানে পর্বতগুলি সাগরপাড়ের অনেক কাছে অবস্থিত। এমনকি কোন কোন জায়গায় এগুলি সাগরের একেবারে গা ঘেঁষে রয়েছে।
দক্ষিণ ভিয়েতনাম মূলত মেকং নদীর অববাহিকা দ্বারা গঠিত, প্রশস্ত এবং এর সমভূমি উর্বর। এখানে প্রচুর কৃষিকাজ হয় এবং মূলত ধান উৎপাদন করা হয়।
ভিয়েতনাম একটি কৃষিভিত্তিক সমাজ হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখনও ভিয়েতনামের অধিকাংশ লোক গ্রামে বসবাস করেন।
ভিয়েতনামে ৫৩টি ভিন্ন জাতিগুলির ও ভাষাগত গোষ্ঠী বসবাস করেন। তবে ভিয়েত বা ভিয়েতনামীয় জাতির লোকেরাই সর্বতোভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভিয়েতনামী জাতির লোকেরা একসময় লোহিত নদীর উপত্যকায় বাস করত।
নদীটি দক্ষিণ চীনে উৎপত্তি লাভ করে উত্তর ভিয়েতনামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টোনকিন উপসাগরে পতিত হয়েছে।
হ্যানয় ভিয়েতনামের রাজধানী। অনেকে হ্যানয়কে ‘হা নুই’ নামে ডাকেন। যার অর্থ নদীর মধ্যে শহর। এই শহরে গেলে চোখে পড়বে প্রাচীনের সঙ্গে নতুনের এক মেলবন্ধন।
হ্যানয়ের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – টেম্পল অফ লিটারেচার, হোয়ান কিয়েম হ্রদ, হো চি মিন মুসোলিয়াম, ওল্ড কোয়াটার্স, ওয়াটার পাপেট থিয়েটার, রেড নদী, প্রাচীন লং বিইন ব্রিজ, ওয়ান পিলার প্যাগোডা, ওয়েস্ট লেক, সেন্ট জোসেফ ক্যাথিড্রাল।
আরও পড়ুন: দুর্ধর্ষ মোঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিস খান জন্মেছিলেন যে দেশে
হ্যালং শহরটি হ্যানয় থেকে ১৮২ কিলোমিটার দূরে কুইং লিন প্রদেশের হ্যালং উপসাগরের কোলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এক শহর। এর পাশে টং কিং উপসাগরের অংশবিশেষ হল হ্যালং উপসাগর। ছোটবড় প্রায় ২ হাজারটি মনোলিথিক দ্বীপ নিয়ে এ উপসাগরটি। এরমধ্যে রয়েছে ৯৮৯ টি দ্বীপ।
ভিয়েতনাম দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম শহর হল হো চি মিন সিটি। এ শহরটি সায়গন নামেও পরিচিত। এর পূর্ব নাম ছিল প্রে নোকোর। হো চি মিন সিটির আয়তন মোট ৮০৯,২৩ বর্গকিলোমিটার। সায়গন নদীর তীরে এই শহরটি অবস্থিত। শহরটি দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে এবং ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় থেকে ১,৭৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। হো চি মিন সিটির উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় হলো – সিটি হল, বেন থান মার্কেট, ইন্ডিপেন্ডেন্স প্রাসাদ, নট্রে ড্যাম ক্যাথেড্রাল, মিউনিসিপ্যাল থিয়েটার হল।
দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। ভিয়েতনামের ৬টি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানরাই হচ্ছে সবচেয়ে ছোট জনগোষ্ঠী। ভিয়েতনামে মুসলমানের সংখ্যা ১ লাখের বেশি। ভিয়েতনামে মসজিদের সংখ্যা ৭৯টি। দেশটির সবচেয়ে বড় মসজিদটি গিয়াং প্রদেশের চিয়াওডক শহরে অবস্থিত।