বিশ্বের সুপারপাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসেন বেড়াতে। বার্ষিক হিসাবে যা কয়েক কোটি। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় আট কোটি। এদের মধ্যে একটি অংশ ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আসেন আমেরিকা। বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়ের কেন্দ্রস্থল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্যাংকিং লেনদেনের দরকার পড়ে। ব্যবসায়ীরা তাদের লাইসেন্স অনুযায়ী আন্তর্জাতিক রীতি মেনেই লেনদেন করেন।
কিন্তু সাধারন ভিজিটররা কী আমেরিকায় হাই ষ্ট্রিট ব্যাংকগুলোতে একাউন্ট করতে পারবেন?
আমেরিকায় অনেকগুলো অঙ্গরাজ্য এবং এর প্রত্যেকটিতে কেন্দ্রীয় আইনের পাশাপাশি চলে স্থানীয় আইন অনুযায়ী। তাই সব এলাকায় একই নিয়মের প্রত্যাশা করাটা অর্থবহ নয়। বছর দুয়েক আগে আমি গিয়েছিলাম আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে। আমি চেষ্টা করলাম একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য। যেহেতু আমার হলিডে ছিল তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। আমি অনুভব করলাম স্থানীয় একটি ব্যাংকে একাউন্ট করতে পারলে যাতায়াত এবং শপিংয়ে অনেক বাঁধা দূর হবে।
প্রথমেই আমি গেলাম নিউইয়র্কের জ্যাকসনহাইটসের নিকটবর্তী উডসাইড এলাকায় অবস্থিত চেজ ব্যাংকের শাখায়। যথারীতি ব্যাংকের লোকজন মিষ্টিহাসি দিয়ে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানাল। প্রথমে একজন আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল। কেন ব্যাংক একাউন্ট করতে চাই, কত টাকা লেনদেন হবে, আয়ের উৎস কী এইসব। প্রাথমিক পর্যায়ের আনুষ্টানিকতা শেষ হবার পর ব্যাংকের সেই অফিসার আমাকে বসতে বলল।
মিনিট পাঁচেক পর সে ফিরে এল তার ম্যানেজার সহকারে। ভদ্রলোক উপমহাদেশের একটি দেশের লোক। তিনি আমাকে ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করলেন সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার আছে? আমি বললাম না, নেই। তিনি বললেন তাহলে আমরা আপনার একাউন্ট করতে পারব না। আমি বললাম আমার আইটিআইএন আছে। উল্লেখ্য, সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসরতদের। আর আইটিআইএন হচ্ছে অন্যদেশের লোকজন যারা আমেরিকায় স্থায়ী নন কিংবা বিনিয়োগ বা অন্য কারনে ট্যাক্স অফিস থেকে এই নাম্বার দেয়া হয়।
ম্যানেজার সাহেব বললেন সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার ছাড়া আমাদের ব্যাংকে একাউন্ট করা যায়না। সেটা লাগবেই। আপনি অন্য ব্যাংকে দেখতে পারেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের পাঁচটি সেরা ক্যাশব্যাক ব্যাংক একাউন্ট
সেখান থেকে বেরিয়ে গেলাম ষ্ট্যার্লিং ব্যাংকে। ঘড়িতে বেলা এগারটা। ব্যাংকের রিসেপশনে এক বাংলাদেশী আপা বসে বসে ঝিমুচ্ছেন। তাকে আমার উদ্দেশ্যের কথা জানালাম। তিনি আমাকে বসতে বললেন। এরপর আবার তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন। এভাবে কেটে গেল প্রায় চল্লিশ মিনিট। কেউ আসার কোন লক্ষণ নেই। অগত্যা আমার অন্য একটি তাড়া থাকায় সেখান থেকে চলে আসতে হল।
সেদিন বিকেলের দিকে গেলাম জ্যাকসন হাইট্স। এখানে কয়েকটি ব্যাংক চোখে পড়ল। ঢুকলাম সিটি ব্যাংকের অফিসে। কিছুক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর পেলাম একজন ভারতীয় মহিলাকে। তিনি হয়তো ম্যানেজার হবেন। আমার উদ্দেশ্য জেনে নিয়ে পরদিনের জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলেন। আমি একাউন্ট করতে পারব কীনা নিশ্চিত না হয়ে পরদিনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেব কীনা ভাবতে লাগলাম। যদিও আমার পিছনে আরও কয়েকজন থাকায় আমি আর বেশি কথা বলার সুযোগ পেলাম না। সেখান থেকে চলে আসতে হল।
সিটি ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেলাম টিডি ব্যাংকে। মোটামুটি বড় অফিস। অনেক ব্যস্ত। এখানেও বসতে হল অনেকক্ষণ। অফিসারদের অনেকেই বাংলাদেশী। যেহেতু এই এলাকাতে বাঙ্গালিদের আধিক্য এমনিতেই বেশি। প্রায় ৩০ মিনিট বসে থাকার পর আমাকে ডাকলেন একজন কর্মকর্তা। নিয়ে গেলেন তার ডেস্কে। সব কাগজপত্র দেখে তিনি একাউন্ট খোলার ব্যাপারে সম্মতি দিলেন।
কিছু কাগজপত্র আমি সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। যেমন: যে ঠিকানায় থাকি সে ঠিকানায় আমার নামে একটি ডকুমেন্টস। আমি এর আগে অনলাইনে কিছু জিনিস কিনেছিলাম সেই ঠিকানায়। আমার নাম লেখা চিঠি দেখালাম। এরপর দরকার পড়ল স্থানীয় একটি ফোন নাম্বার। আমি একজন আত্মীয়ের নাম্বার ব্যবহার করলাম। আর কিছুর দরকার পড়েনি। একাউন্ট চালু হওয়ার কনফার্মেশন নিয়ে বেরিয়ে এলাম ব্যাংক থেকে।
আরও পড়ুন :ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা নেয়া উচিত যে ৫টি কারনে
এরপর বিভিন্ন প্রয়োজনে টিডি ব্যাংকে অনেক বার গিয়েছি। আমার আইডি প্রদর্শন করে কাঙ্ক্ষিত সেবা গ্রহণ করেছি। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ছাড়াও অন্যান্য ব্রাঞ্চেও কোন সমস্যা হয়নি।
নিউইয়র্ক ছাড়া অন্যান্য ষ্টেটেও তাদের গ্রাহক সেবার মান অত্যন্ত ভাল। ফিলাডেলফিয়ার বিভিন্ন ব্রাঞ্চে গিয়েছি অনেকবার। আইডি দেখানোর পরই ব্যাংক অফিসিয়ালরা ভাল সার্ভিস দিয়েছেন।
পরবর্তীতে আরো কিছু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমেরিকার অনেক ব্যাংকেই ভ্রমণ ভিসায় আগমনকারীরা ব্যাংক একাউন্ট করতে পারবেন। তবে ডকুমেন্ট যাচাই ও ডিপোজিটের পরিমানভেদে ব্যাংকিং শর্তাবলীতে তারতম্য আছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকে সরাসরি উপস্থিত হয়ে চেষ্টা করলে ব্যাংক একাউন্ট চালু করাটা কারো জন্যই খুব একটা কঠিন নয়।
লেখক পরিচিতি : বদরুল হোসেন বাবু: ফ্রি-ল্যান্স লেখক ও ব্লগার।