ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ। এ দেশটির সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময় আর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্যও এই দেশটির তুলনা হয় না। ব্রাজিল নিয়ে লিখেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন।
Table of Contents
- ব্রাজিল দেশটির আয়তন ৮,৫১৪,৮৭৭ বর্গকিলোমিটার। এই দেশটিতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি।
- ব্রাজিলের মহিলাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় পোশাক হচ্ছে ক্যারমেন মিরান্ডা। লম্বা ফ্রক আর গাউনের মিশেলে এ ধরনের পোশাকে অনেক রং থাকে। সঙ্গে পাগড়ির মতো লম্বা স্কার্ফ পেঁচানো থাকে মাথায়। আর গলায় নেকলেস হাতে ব্রেসলেটসহ অন্যান্য গয়না তো রয়েছেই।
- ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সংযোগ স্থলে পৃথিবীর পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ইগুয়াচ্ছু জলপ্রপাত। উত্তরে ব্রাজিল, দক্ষিণে আর্জেন্টিনা আর পশ্চিমে প্যারাগুয়ে এই তিন দেশকে ছুঁয়েছে দু’টি প্রধান নদী।
ব্রাজিল দেশটির আয়তন ৮,৫১৪,৮৭৭ বর্গকিলোমিটার। এই দেশটিতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি।
এটি আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজভাষী দেশ এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র। রাজধানী বসেছে ব্রাসিলিয়ায়। তবে ব্রাজিলের বৃহত্তম নগরী হল সাও পাওলো। এ দেশের নৃগোষ্ঠীগুলো হলো – শেতাঙ্গ, পারদো, কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়, আমেরিকান ইন্ডিয়ান।
ব্রাজিলের পূর্বভাগ আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। ব্রাজিলের উত্তরে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম ও ফ্রান্সের সামুদ্রিক দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা। এছাড়াও এর উত্তর -পশ্চিমভাগে কলম্বিয়া ; পশ্চিমে বলিভিয়া ও পেরু ; দক্ষিণ – পশ্চিমে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে এবং সর্বদক্ষিণে অবস্থিত উরুগুয়ে।
বিমানে চলে যাবেন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর কাছাকাছি বিমানবন্দরে। পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝরণা, জলপ্রপাত, অরণ্য ইত্যাদি দেখে দেখে চলে যাবেন রিও ডি জেনিরো শহরে। পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যাবে।
বাকিদিনটা শহর ঘুরে দেখুন। সন্ধ্যায় ব্রাজিলের বিখ্যাত সাম্বা নাচ দেখে নিন। আপনি যদি রসিক হন তাহলে ওদের সঙ্গে নাচতে পারেন। পরদিনও রিও ডি জেনিরো সাইট দেখে নিন। সারাদিনের ট্যুরে দেখবেন বিশ্বখ্যাত যিশু খ্রিস্টের স্ট্যাচু, তিজুকা ফরেস্ট, মারকানা স্টেডিয়াম, কোপা কা বানা সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি।
এরপরে আমাজনের জঙ্গলে যাত্রা করুন। মানাউস পৌঁছে হোটেলে বিশ্রাম নিন। পরের দিন আমাজনের অ্যালিগেটর পার্ক দেখতে যাবেন। সেই সুযোগে আমাজন নদী দেখে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করুন। দেখতে ভুলে যাবেন না কিন্তু আমাজনের আদিবাসীদের আর তাদের জীবনযাত্রার দৃশ্য।
একদিন সকালে চলুন মাঙ্কি জঙ্গলে। লাঞ্চের পর সাও পাওলোতে ফিরে আসুন। বাকি দিনটা সাও পাওলো শহর ঘুরেফিরে কাটাবেন।
ব্রাজিল সম্পর্কে যা জানবেন – বিশ্বকাপকে ঘিরে ফুটবল মাঠের বাইরেও অনেক কিছু নিয়ে মাতামাতি হয় ব্রাজিলে। ফুটবল মাঠে প্রিয় দলকে উৎসাহ দিতে অনেকেই তাদের দেশিয় পোশাক পরে গ্যালারিতে যান। এছাড়াও নিজেদের ঐতিহ্যবাহী বাঁশী, টুপি এসব নিয়েও হরহামেশাই দর্শকদের দেখা যায়। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের দাপট রয়েছে। সে কারণে দর্শক সংখ্যাও তাদের নেহাত কম নয়। আর এদেরই একটা বড় অংশকে হয়তো হলুদ -নীল জার্সি ছাড়াও অন্যান্য পোশাকে গ্যালারিতে দেখা যায়।
ব্রাজিল দেশটির পোশাক আশাকে ইউরোপীয় ছাপও রয়েছে যথেষ্ট।
দীর্ঘদিন পর্তুগিজদের ঔপনিবেশিক ছিল ব্রাজিল। পর্তুগিজদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যেও লেস আকৃতির এক ধরনের ফেব্রিক খুব জনপ্রিয় ওখানে। যাকে বলা হয় বোরদাদো রিচেলিউ।
ব্রাজিলের মহিলাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় পোশাক হচ্ছে ক্যারমেন মিরান্ডা। লম্বা ফ্রক আর গাউনের মিশেলে এ ধরনের পোশাকে অনেক রং থাকে। সঙ্গে পাগড়ির মতো লম্বা স্কার্ফ পেঁচানো থাকে মাথায়। আর গলায় নেকলেস হাতে ব্রেসলেটসহ অন্যান্য গয়না তো রয়েছেই।
তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্তুগিজ ঔপনিবেশিকদের শাসনের ফলে ব্রাজিলের সংস্কৃতির মূল অংশটি এসেছে পর্তুগালের সংস্কৃতি থেকে। কার্নিভাল ও সাম্বা নৃত্য এখানের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সংস্কৃতি। এছাড়াও ব্রাজিলের সংস্কৃতি আফ্রিকান ও আদিবাসী ইন্ডিয়ানের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য দ্বারাও প্রভাবিত রয়েছে।
ফুটবল খেলাই ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিড়া হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিলীয় সাহিত্যে বিশ্বে অন্যতম আলোড়ন তোলা সাহিত্য। ব্রাজিলের নামকরা লেখক হলেন পাওলো কোয়েলহো, মাচাদো দ্যে অ্যাসিস।
ব্রাজিলের সাও পাওলোর উপকূলে রয়েছে এক ভয়ংকর দ্বীপ। এই দ্বীপে এমন সব ভয়ংকর সাপের বাস যে ব্রাজিল সরকার বাধ্য হয়ে দ্বীপটিতে সাধারণ মানুষের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। কারণ, দ্বীপটিতে যাবেন তো ঠিকই জীবন নিয়ে তবে ফেরার নিশ্চয়তা নেই।
চূড়ান্ত রকমের ভয়ংকর এই দ্বীপটির নাম ইহা ডি কুইমাডা গ্র্যান্ডি। দ্বীপটিতে যে শুধু পৃথিবীর বিষধর সাপগুলোর প্রায় হাজার পাঁচেকের মতো বাস তাই নয়। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ গোল্ডেন ল্যান্সহেডেরও বাস এই দ্বীপটিতেই।
গোল্ডেন ল্যান্সহেডকে এ দ্বীপটি ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই দ্বীপটির আয়তন ৪৩০ বর্গমিটার। দ্বীপটিতে ভ্রমণে ব্রাজিল সরকারের নিষেধাজ্ঞা তো রয়েছেই, মানুষ এমনিতেই পারতপক্ষে কুইমাডা গ্র্যান্ডিমুখী হয় না। তবে ওই দ্বীপের ভয়ংকর সাপগুলো নিয়ে গবেষণা করেন এমন কিছু বিজ্ঞানীর দ্বীপটিতে ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে। এছাড়া ব্রাজিলীয় নৌবাহিনীর সদস্যদেরও দ্বীপটিতে যেতে হয় প্রায়ই।
ব্রাজিলের উল্লেখযোগ্য শহর হলো –
ব্রাসিলিয়া। এ শহরটি ব্রাজিলের রাজধানী। এটি একটি দর্শনীয় স্থাপত্যের শহর। উল্লেখযোগ্য ভবনগুলির মধ্যে ঝুড়ি আকারের ক্যাথিড্রাল, সুন্দর সুন্দর প্যালেস – এ সব বারে বারে দেখেও আকাঙ্খা মেটে না।
ফ্লরিয়ানোপলি। এ শহরটিতে রয়েছে হ্রদ, লেগন, আশ্চর্যজনক প্রকৃতি, প্রাকৃতিক সৈকত। শহরের সান্তা কাতারিনার দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর।
ফ্লরিয়ানোপলিকে আটলান্টিক মহাসাগরের একটি দ্বীপও বলা হয়।
ভিতরিয়া। এ শহরটি সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত। পাহাড়, অরণ্য নিয়ে অপূর্ব সুন্দর শহর ভিতরিয়া।
তাকুয়ারুসু। এই শহরের আশেপাশে রয়েছে পাহাড় আর জলপ্রপাত।
ব্রাজিলের আরও উল্লেখযোগ্য ও সৌন্দর্যের শহর
হল – বেলেম, সাও লুইস, মাকাপা পোর্তো সানটারেম, তেরোসিনা, ফোর্টালেজ, নাতাল, মেসিও, সালভাদর, ডিয়ামনটিনা, কাম্পোস, রিও ডি জেনিরো, সানতোস, পারানাগুয়া, পোর্তো আলেগ্রে, রিও গ্রান্ডে, সান্টা মারিয়া, মাটোগ্রোসো, গোয়াস, আনা পোলিস, ফার্তালিজা -প্রভৃতি।
ব্রাজিলের সীমানায় আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে কয়েকটি দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে, এগুলো হলো – ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার, সেন্ট পল রকস, ত্রিনিদাজি এ মার্চি ভাজ।
১৫০০ খৃষ্টাব্দে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউ ব্রাজিলে পৌঁছানোর পর থেকে ১৮১৫ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রাজিল ছিল পর্তুগিজদের উপনিবেশ রাজ্য। ১৮২২ খৃষ্টাব্দে ব্রাজিল, পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
ব্রাজিলের অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ, বাজার বিনিময়ের ভিত্তিতে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ব্রাজিলের মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে – উড়োজাহাজ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গাড়ি, ইথানল, টেক্সটাইল, পাদুকা, ইস্পাত, কফি, কমলার রস, লৌহ আকরিক, সয়াবিন, কর্নড বিফ।
আরও পড়ুন: বলিভিয়া : দক্ষিণ আমেরিকার নান্দনিক সৌন্দর্যের দেশ
পৃথিবীর ভয়ংকর শহরগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিলের ম্যাসিয়ো। এক সময় সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত ব্রাজিলের এ শহরটিতে প্রতি ১ লাখে ১৩৫ জনের বেশি মানুষ হত্যার শিকার হয়।
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সংযোগ স্থলে পৃথিবীর পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ইগুয়াচ্ছু জলপ্রপাত। উত্তরে ব্রাজিল, দক্ষিণে আর্জেন্টিনা আর পশ্চিমে প্যারাগুয়ে এই তিন দেশকে ছুঁয়েছে দু’টি প্রধান নদী।
একটির নাম ইগুয়াচ্ছু, আরেকটির নাম পারানা। এই দুই নদীর সঙ্গমের বাইশ কিলোমিটার আগে সৃষ্টি হয়েছে এই অনিন্দ্য সুন্দর জলপ্রপাত। ইগুয়াচ্ছুকে দেখে অনেকেই জলপ্রপাত বলেন না, বলেন জলপ্রপাতমালা। ইগুয়াচ্ছু নদী পারানা নদীর সঙ্গে মিলিত হবার আগে বহু শাখা -প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি করেছে ২৭৫টি জলপ্রপাত।
ব্রাজিলের বিভিন্ন শহর থেকে কেনাকাটাও করে নিতে পারেন, কারণ বেড়ানো তো একসময় সমাপ্ত হবেই।
ফিরবার সময় সাও পাওলো থেকে দুবাইগামী বিমান ধরবেন। দুবাই হয়ে ঢাকা ফিরে আসবেন।