বার্বাডোস ও গ্রেনাডা ওয়েষ্টইন্ডিজ ক্রিকেট দলের বদৌলতে অনেকের কাছেই পরিচিত। ক্যারিবিয়ান এই দুই দ্বীপ দেশ নিয়ে লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন।
Table of Contents
- ক্যারিবিয়ান সাগরে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপরাষ্ট্র হলো বার্বাডোস। ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত।
- বার্বাডোস প্রায় তিন শতাব্দী ধরে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল।
- ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপরাষ্ট্র হলো গ্রেনাডা।
- দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত এই দ্বীপরাষ্ট্রটির আয়তন ৩৪৮.৫ বর্গকিলোমিটার। এর রাজধানী বসেছে সেন্ট জর্জেস। জায়ফল এবং জয়ত্রি মশলা ফসল উৎপাদনের কারণে গ্রেনাডাকে ‘মসলার দ্বীপ’ও বলা হয়।
রামের স্বাদ নিতে পশ্চিমা পর্যটকরা পাঁড়ি জমান বার্বাডোস দ্বীপরাষ্ট্রে ।
বিশ্বসেরা রাম ডিস্টিলারি তৈরি হয় বার্বাডোস দ্বীপরাষ্ট্রে। এটি কয়েক পেক খেয়ে যদি বার্বাডোস দেশটি ঘুরে দেখেন তাহলে আপনার কাছে সবকিছু রঙিন -রঙিন মনে হবে। ভাববেন, বার্বাডোসের মতো সুন্দর দেশ পৃথিবীতে বোধহয় আর একটিও নেই।
ক্যারিবিয়ান সাগরে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপরাষ্ট্র হলো বার্বাডোস। ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত।
বার্বাডোস প্রায় তিন শতাব্দী ধরে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল।
বার্বাডোস দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৬৬ সালে। অ্যাংলিকান গির্জা থেকে শুরু করে জাতীয় খেলা ক্রিকেট পর্যন্ত দেশটির সর্বত্র ব্রিটিশ ঐতিহ্যের ছাপ সুস্পষ্ট।
বার্বাডোসের বর্তমান অধিবাসীদের বেশির ভাগই চিনির প্ল্যান্টেশনে কাজ করানোর জন্য নিয়ে আসা আফ্রিকান দাসদের বংশধর।
বার্বাডোস দেশটির দক্ষিণ -পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ব্রিজটাউন দেশটির বৃহত্তম শহর।
এ দেশের রাজধানী বসেছে এই ব্রিজটাউনে। এটি আবার প্রধান বন্দরও।
বার্বাডোস দেশের সরকারি ভাষা হলো ইংরেজি।
বার্বাডোসের বালুর সমুদ্র সৈকত ও এ দ্বীপ রাষ্ট্রের চারদিকে ঘিরে থাকা প্রবাল প্রাচীর বিখ্যাত। বহু বছর ধরে আখ ছিল এ দেশের অর্থনীতির প্রধান পণ্য।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের অন্যান্য ক্যারিবীয় দেশগুলির মতো – এ দ্বীপে ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয়।
এ ভূখণ্ডটিতে প্রচুর লাল মাটি বা লাল পাথর ছিল, যার চারদিকে ছিল দাঁতের মতো প্রচুর সাদা মাটি। মূলত এগুলো ছিল প্রবাল প্রাচীর। তাই এলাকাটি উপজাতীয়দের নিকট ইচিরুগানিয়াম নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে নামটি পরিবর্তিত হয়ে বার্বাডোস ধারণ করে।
বার্বাডোসের মোট আয়তন ৪৩৯ বর্গকিলোমিটার। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ খুব কম। এখানের সর্বোচ্চ পর্বতের উচ্চতা এগারোশ’ ফুট।
বার্বাডোসের হোলটাউন নামক স্থানে প্রথম ইউরোপীয় অভিবাসী অবতরণ করে। জায়গাটির প্রকৃত নাম ছিল জেমসটাউন। রাজা প্রথম জেমসের নামানুসারে নামটি রাখা হয়েছিল। এ দেশের
ব্রিজটাউনের প্রাচীন নাম ছিল ইন্ডিয়ান ব্রিজ। ইন্ডিয়ানেরা এ ব্রিজ নির্মাণ করেছিল। তাই নাম রাখা হয় ইন্ডিয়ান। ১৬৫৪ খৃষ্টাব্দে নামটি পরিবর্তন করে ব্রিজটাউন রাখা হয়।
বার্বাডোস দ্বীপরাষ্ট্রটি ক্যারিবিয়ান সাগরে ও আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে ভেসে থাকা একটি দ্বীপ। এ দেশটির দক্ষিণে ভেনিজুয়েলা ও গায়ানা, উত্তরে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। তবে এর নিকটতম প্রতিবেশী দেশ সেন্ট ভিনসেণ্ট এবং গ্রেনাডাইনস।
পর্যটকরা যখন বার্বাডোসের কথা ভাবে তখন তারা ক্যারিবিয়ানদের দেওয়া সমস্ত আশ্চর্যের কথা ভাবে। বার্বাডোস কিন্তু হতাশ করে না। এখানের প্রধান আকর্ষণ – সাদা বালির সৈকত, আদিম জল, প্যানোরামিক ক্লিফসাইড ভিউ, অ্যানিমেল ফ্লাওয়ার কেভ ; গুহার প্রাকৃতিক পুল ; সেন্ট নিকোলাস অ্যাবে ; পায়েস বে ; ফোকস্টোন মেরিন পার্ক –
ইত্যাদি।
এ দেশের মাউন্ট গে’তে উৎপাদিত রামের স্বাদ নিতে ভুলে যাবেন না কিন্তু। রাম পান না করলে আপনার বার্বাডোস দ্বীপরাষ্ট্র ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
মসলার দ্বীপ –
ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপরাষ্ট্র হলো গ্রেনাডা।
দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত এই দ্বীপরাষ্ট্রটির আয়তন ৩৪৮.৫ বর্গকিলোমিটার। এর রাজধানী বসেছে সেন্ট জর্জেস। জায়ফল এবং জয়ত্রি মশলা ফসল উৎপাদনের কারণে গ্রেনাডাকে ‘মসলার দ্বীপ’ও বলা হয়।
গ্রেনাডার অর্থনীতি মূলত পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সমুদ্র সৈকত আর জল -ক্রীড়া এখানের প্রধান পর্যটন স্পট। ইকো-ট্যুরিজম এখানে রমরমা অবস্থা।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ আমেরিকার যে দেশে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগুরু
১৬৪৯ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৭৬৩ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত গ্রেনাডা ফরাসিদের অধীনে ছিল। ফলে এখানে ফরাসি সংস্কৃতির প্রভাব বেশি। ফরাসি সভ্যতার নানা নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে পুরো গ্রেনাডা দেশটিতে। এখানকার লোকজনের চালচলন অনেকটা ফরাসিদের মত।
যেহেতু গ্রেনাডা অবস্থিত ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত, তাই এখানের আবহাওয়া গরম ও আদ্র। বার্ষিক গড় বাতাসের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রীর কম নয়।
এ দেশের সরকারি ভাষা ইংরেজি।
এখানের দর্শনীয় স্থান হল – সেভেন সিস্টার জলপ্রপাত ; জেনি দ্বীপ, জাতীয় জাদুঘর ; ডুবো ভাস্কর্য পার্ক ; জাতীয় উদ্যান ; বনাঞ্চল ; সমুদ্র সৈকত ; কনকর্ড জলপ্রপাত ; গ্রান্ড আনচে সমুদ্র সৈকত ; আন্নানডেল জলপ্রপাত ; লিভারা সমুদ্র সৈকত ; আনডার ওয়াটার স্কুলপুচরে পার্ক।
গ্রেনাডার প্রধান উল্লেখযোগ্য স্থান – রাজধানী শহর সেন্ট জর্জেস। এছাড়া রয়েছে – বেলমন্ট, সেন্ট ডেভিডস, সেইন্ট ক্যাথেরিন, ভিক্টোরিয়া, কনস্টানটাইন, ক্যালিভিগনু, গ্রেনভিল্লে, মারকুইস, টিভোলি, রোন্ডে দ্বীপ, ডায়মন্ড দ্বীপ, ফ্রিগেট দ্বীপ, লন্ডন ব্রিজ, হিলসবোরোগ, সেলিনে দ্বীপ।
এখানের প্রবালদ্বীপ সমুদ্র সৈকতের পাশের জলে নেমে অনেকেই স্নান করেন।
গ্রেনাডা দেশটির মূল আকর্ষণ হল – এ দেশটি ক্যারিবিয়ান সমুদ্রে আর আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে ভেসে থাকা একটি দ্বীপ। হেলিকপ্টারে বসে নিচে তাকালেই মনে হবে এ যেনো এক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি।