নাগার সংস্কৃত অর্থ সর্প। নাগা হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং জৈন ধর্মে, পৌরাণিক অর্ধদৈবিক প্রাণীর একটি শ্রেণির সদস্য, অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক কোবরা। তারা একটি শক্তিশালী, সুদর্শন প্রজাতি যারা হয় সম্পূর্ণ মানব বা সম্পূর্ণ সর্প আকার ধারণ করতে পারে। কিন্তু এরা সম্ভাব্য বিপজ্জনক তবে প্রায়ই মানুষের জন্য উপকারী।
একটি ধর্মীয় কেন্দ্র হিসাবে নাগাকে একটি তীর্থযাত্রার শহর হিসাবে ডাব করা হয়েছে, পেনাফ্রান্সিয়ার আওয়ার লেডির অলৌকিক চিত্রটি এর জনগণের বিশ্বাস এবং ভক্তির কেন্দ্র হিসাবে পরিণত করেছে। এর গির্জা এবং স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক ল্যান্ডমার্কগুলির একটি হাঁটা সফর দর্শক বা পর্যটকদের একটি বিস্ময় অনুপ্রেরণাদায়ক স্মৃতির গলিতে নিয়ে আসে।
নাগাল্যান্ডের প্রধান ধর্ম হল খ্রিস্টধর্ম। রাজ্যের জনসংখ্যার ৯১ শতাংশ লোক খ্রিস্টান। তাছাড়া ৯৮ শতাংশেরও বেশি নাগা মানুষ নিজেদের খ্রিস্টান হিসাবে পরিচয় দেয়।
নাগামি বা নাগা ভাষা নাগাল্যান্ডে প্রচলিত একটা মিশ্র ভাষা। অসমীয়া ভাষাকে ভিত্তি করে এর সৃষ্টি হয়েছে।
নাগাল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী কোহিমা, তবে নাগাল্যান্ডের বৃহত্তম শহর ডিমাপুর।
নাগাল্যান্ডে সরকারি ভাষা ইংরেজি। রাজধানী কোহিমা নাগাল্যান্ডের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত।
নাগা পাহাড় হল প্রায় ৩,৮২৫ মিটার বা ১২,৫৪৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত একটি পাহাড়। এটি একটি জটিল পর্বত ব্যবস্থা এবং এই পর্বতশ্রেণীর অংশকে ভারতের ও বর্মী নাগা স্ব –
প্রশাসিত অঞ্চলে নাগা পাহাড় বলা হয়। নাগা পাহাড়ের সর্বোচ্চ বিন্দু হল সরমতি পর্বত।
কোহিমা বিখ্যাত হওয়ার কারণ হল, কোহিমা তার অস্পৃশ্য সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। এই স্থানটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। কোহিমা হল ব্রিটিশদের দ্বারা প্রদত্ত একটি ইংরেজি নাম যার মূল নাম কেউহিমা বা কেওহিরা উচ্চারণ করতে পারেনি, যা পাহাড়ের চারপাশে পাওয়া কেভি ফুল থেকে আসে।
নাগাল্যান্ডের কোহিমা অঞ্চলের সর্বাধিক লোক আঙ্গামি ভাষায় কথা বলে, আঙ্গামি একটি নাগা ভাষা।
নাগাল্যান্ডের ৪৬ শতাংশ লোক জেলার শহরাঞ্চলে বাস করে।
নাগাদের মধ্যে কোন বর্ণপ্রথা নেই, তবে নাগা উপজাতির প্রত্যেকটিই কয়েকটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত।
নাগাল্যান্ডে সরকারি ভাষা ইংরেজি থাকার কারণ হল, প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর এক বা একাধিক উপভাষা রয়েছে যা অন্যদের কাছে দুর্বোধ্য। এ কারণে ১৯৬৭ খৃষ্টাব্দে নাগাল্যান্ড অ্যাসেম্বলি ভারতীয় ইংরেজিকে নাগাল্যান্ডের সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করে এবং ইংরেজি ভাষা নাগাল্যান্ডে শিক্ষার মাধ্যম।
একসময় নাগারা সাধারণত বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করত। নাগাদের ইতিহাস বহু শতাব্দী আগের, তবে ভারতীয় ইতিহাসের মধ্যযুগীয় সময়ে অহোম রাজ্যের লিখিত রেকর্ডে প্রথম নাগাদের নাম উল্লেখ করা হয়।
নাগাল্যান্ড রাজ্যে দুইবার গিয়েছি – ওখানের নাগাদের সঙ্গে মেলামেশা করে দারুণ আনন্দ পেয়েছি – নাগা ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে পেয়েছি প্রাণঢালা ভালবাসা ও আন্তরিক অভিনন্দন।
নাগা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমি নিবিড় ভাবে মেলামেশা করার সুযোগ পেয়েছিলাম সেই যৌবনকালে।
সেইদিন বুঝেছিলাম, নাগারা প্রেম দিতে জানে,
জানে আদর সোহাগ দিতে — বুকে বুক মিলাতে জানে।
তারা আনন্দে মাতোয়ারা হতে জানে।
অতিথি আপ্যায়নে তাদের তুলনা হয় না কারো সঙ্গে।
কি কি খেয়েছি –
তা বলে কারো বিরাগভাজন হতে চাই না।
আঙ্গামি উৎসবে নাগা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দারুণ এনজয় করেছিলাম…..
সে তো পঁয়ত্রিশ বছর আগেকার কথা।
এই প্রদেশের আয়নত : ১৬,৫৭৯ বর্গ কিলোমিটার।
রাজধানী : কোহিমা। বৃহত্তম শহর ঃ দিমাপুর বা ডিমাপুর। জেলার সংখ্যা : ১২ টি । গ্রামের সংখ্যা : ১,২৭৮ টি। জনসংখ্যা : ১৯,৮০,৬০২ (২০১১ হিসাব অনুযায়ী)। বিমানবন্দর : ডিমাপুর বা দিমাপুর।
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ঃ নেইফিউ রিও।
জেলা শহরগুলো হলো : ১. কোহিমা। ২. কিফেরে। ৩. ওখা। ৪. মোককচুং। ৫. মন। ৬. টুয়েনসাং। ৭. ফেক ।
৮. কোহিমা। ৯. লংলেং। ১০. পেরেন। ১১. জুনহেবটো। ১২. নোকলাক।
নাগাদের দেশ নাগাল্যান্ড।
অবস্থান এর ভারতের পূর্বাঞ্চলে। আসাম, মণিপুর, অরুণাচল আর প্রতিবেশী দেশ বর্মার সীমান্ত-বেষ্টিত এক পাহাড়ি রাজ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। তেমনি বৈচিত্র্যময় এর জনগোষ্ঠী।
আঙ্গামি, আও, সেমাই, কোনিয়াক, কুকিসহ ১৫টি উপজাতীয় গোষ্ঠীর বাস।
প্রতিটি গোষ্ঠীর মুখের ভাষা আলাদা আলাদা। তবে সংযোগ রক্ষাকারী ভাষা হচ্ছে নাগামিজ,
যা সব গোষ্ঠী অল্প স্বল্প বুঝতে পারে।
আর লেখার লিপি রোমান হরফে।
প্রকৃতি-পূজা নাগা আদিম ঐতিহ্যের অঙ্গ। একদা নরমুণ্ড শিকার করত এরা। তবে ১৯ শতকে খ্রিষ্টান মিশনারিদের প্রভাবে খ্রিষ্টধর্ম ও পশ্চিমি শিক্ষায় প্রসার পেয়েছে নাগাভূমে।
আজ শিক্ষিত নাগারা খুবই আধুনিক। তবে সামগ্রিকভাবে নাগারা খুবই স্বাধীনচেতা ও সংগ্রাম-প্রিয়।
আবার অতিথি বৎসল ও সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
১৯৬৩ থেকে ভারতের ১৬তম রাজ্য হলেও রাজনৈতিক সমস্যা আছে।
ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চল ইংরেজ শাসনে ছিল। আর স্বাধীনতার পর ছিল
আসাম রাজ্যের অংশ। তবে ১৯৪৭ সালেই নাগা গণপরিষদ স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
আর ১৯৫৬ সালে নাগা নেতা ফিজোর নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়। আর ১৯৬৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শান্তি মিশনের চেষ্টায় যুদ্ধবিরতি হলেও স্থানবিশেষে আজও সমস্যা আছে।
নাগাদের মধ্যে আঙ্গামি নাগারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। শিক্ষা আর উন্নতিতে
এরাই নাগা সমাজের অগ্রগণ্য।
আজ আধুনিকতার প্রভাব বেশি এদের জীবনে। চিরাচরিত বর্ণাঢ্য নাগা পোশাক ও দেওমণি পাথর আর ধনেশ পাখির পালক বসানো টুপি আজ শুধুই উৎসবের অঙ্গ।
বীরত্বের দ্যোতক বাহারি বর্শা আজ আর তেমন চোখে পড়ে না নাগাভূমে।
তবে ঐতিহ্যমণ্ডিত নাগা শাল আজও আদ্রিত সাধারণের প্রয়োজনে।
জংলা বেত, বাঁশ ও দারু সামগ্রীর নানা হস্তজাত সম্ভারসহ লাল ডোরা কাটা নাগা
শাল স্মারকরূপে সংগ্রহ করা যেতে পারে নাগাল্যান্ড ভ্রমণে গিয়ে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ‘সেক্রেনি’ বা আঙ্গামি —
নাগাদের বর্ণাঢ্য উৎসব। আর খ্রিষ্ট উৎসব বড়দিন ও নববর্ষেও ধুমধাম হয়।
নাগাদের হর্ণবিল উৎসব –
নাগাল্যান্ডের নাগা হেরিটেজ ভিলেজে প্রতিবছর ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় হর্ণবিল উৎসব। আও, আথামি, লোথা, চ্যাং, চাখে সাং, কুকি, কাছারি, পচুরি প্রভৃতি আদিবাসীর মিলনমেলা এই হর্ণবিল উৎসব। নাগা হেরিটেজ ভিলেজের কিসামা পাহাড়ের কোলে হর্ণবিল উৎসবের জন্য নাগাল্যান্ড সরকারের তৈরি স্টেডিয়ামও রয়েছে। এরই ঠিক পশ্চিমে ধাপে ধাপে তৈরি হয়েছে নাগাল্যান্ডের প্রধান ষোলোটি আদিবাসীর প্রত্যেকের আলাদা আলাদা একটি করে অবিকল গ্রাম্য বাড়ি। প্রত্যেক দোচালা বাড়ির সামনে রয়েছে উঠান। আর এরই ধারে বাঁশের মাচা করে বসার জায়গা আছে। এখানের বাড়িগুলো তৈরি হয়েছে বাঁশ, কাঠ, দরমা, খড়, স্লেট পাথর ইত্যাদি দিয়ে।
উৎসবের দিনে এরা সকাল সকাল নিজেদের সাজ-পোশাক পরে প্রস্তুত থাকে। কারণ সকাল ৯টার পরই এরা নাচে-গানে-অভিনয়ে স্টেডিয়াম মাতিয়ে তুলবে। ষোলোটি উপজাতির দল একে একে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে বসে। প্রত্যেকের পরনে ঐতিহ্যবাহী রং-বেরঙের পোশাক, মুকুট ও হাতে-পায়ে-গায়ে অলংকার দেওয়া থাকে। একেক উপজাতি দেখতে একেক রকম। সবার মাথায় থাকে মুকুট। মুকুটেই ধনেশ পাখির পালক শোভা পায়। এদের বিচিত্র সব অলংকার তৈরি হয় নানা মাপের রঙিন পুঁতি, সাদা কড়ি, বন্য শূকরের দাঁত, হাতির দাঁত, নানা পাখির পালক, জীবজন্তুর লোম, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে।
বেশির ভাগ উপজাতি হাতে দা, বল্লম, ঢাল নিয়ে পুরনো দিনের যোদ্ধার বেশে সাজে। এদের এ উৎসব দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটক ভিড় জমান। স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলে ডান দিকে মূল মণ্ডপ। সেখানে বিশিষ্ট অতিথিদের বসার জায়গা। উৎসবে যা যা দেখানো হয় তা হলো প্যারাগ্লাইডিং শো, নৃত্যগীত যেমন বিহুনৃত্য, চণ্ডীনৃত্য, চেরাওনৃত্য, সাদ ডংডংনৃত্য, ঝুমুরনৃত্য ইত্যাদি। উৎসবের সময় খাওয়ার জন্য বেশকিছু অস্থায়ী রেস্তোরাঁ থাকে। সেখানে ভাত, সবজি, মাংস, ডাল সবই পাওয়া যায়। মাংস মানে মুরগি আর শূকরের। নাগাল্যান্ডে মদ কেনাবেচা নিষিদ্ধ। তাই উৎসবের সময় মদের বিকল্প হিসেবে নাগারা বাড়িতে ভাত বা জোয়ার গাঁজিয়ে বানানো উত্তেজক পানীয় এনে এখানে বিক্রি করে এবং তা নিজেরাও পান করে।
আরও পড়ুন: চড়ক পূজা ও গাজনের উৎসব
বিলাসহুল ও স্বর্ণ ব্যবসার কেন্দ্রস্থল দুবাই