জাপান হল পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চী,উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত। সূর্যোদয়ের দেশ জাপানকে নিয়ে লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন।
যে কারণে বা কাঞ্জি অনুসারে জাপানের নামটি এসেছে, সেটির অর্থ ‘সূর্য উৎস’। জাপানকে কিন্তু ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ বলে অভিহিত করা হয়।
জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল – হোনশু, হোক্কাইডো, ক্যুশু ও শিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭ শতাংশ বা শতকরা ৯৭ ভাগ এলাকা নিয়ে গঠিত।
জাপানের জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়ন। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের দশম বৃহত্তম রাষ্ট্র।
জাপানের রাজধানী টোকিও শহরে জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন। টোকিও শহরটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার দ্বিতীয় বৃহত্তম মূল শহর। টোকিও ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত বৃহত্তর টোকিও অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মহানগরীয় অর্থনীতি।
টোকিও শহরটি জাপানি দ্বীপপুঞ্জের মূল চারটি দ্বীপের মধ্যে বৃহত্তম হোনশু দ্বীপের পূর্ব পার্শ্বে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের মাঝামাঝি অবস্থানে, টোকিও উপসাগরের মাথায় অবস্থিত।
প্যালিওলিথিক যুগেও জাপানে জনবসতির অস্তিত্ব ছিল। জাপানের প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টিয় প্রথম শতাব্দীতে রচিত চীনা ইতিহাস গ্রন্থগুলিতে। এই দেশের ইতিহাসে প্রথমে চীনা সাম্রাজ্যের প্রভাব পড়েছিল। তারপর একটি বিচ্ছিন্নতার যুগ কাটিয়ে এই দেশের ইতিহাসে পড়ে পশ্চিম ইউরোপের প্রভাব।
১২শ শতাব্দী থেকে ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত শোগুন নামের সামরিক সামন্ত শাসকরা সম্রাট উপাধিতে জাপান শাসন করেছিলেন।
১৭শ শতাব্দীর প্রথম ভাগ জাপান এক দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার পর্যায়ে প্রবেশ করে।
১৮৫৩ খৃষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পাশ্চাত্যের সামনে জাপানকে খুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে সেই বিচ্ছিন্নতার যুগের অবসান ঘটে।
প্রায় দুই দশক আভ্যন্তরিণ বিবাদ ও বিদ্রোহ চলার পর ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে মেইজি সম্রাট রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হন এবং জাপান সাম্রাজ্য ঘোষিত হয়।
এই সাম্রাজ্যে সম্রাট জাতির দিব্য প্রতীকের সন্মান পান। ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে এবং ২০শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান প্রথম চীন -জাপান যুদ্ধ, রুশ – জাপান যুদ্ধ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করে। এই ক্রমবর্ধমান সামরিক যুগে জাপান নিজ সাম্রাজ্যের পরিধি বিস্তৃত করে।
১৯৩৭ খৃষ্টাব্দের দ্বিতীয় চীন -জাপান যুদ্ধ ১৯৪১ খৃষ্টাব্দের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বর্ধিত অংশে পরিণত হয়।
১৯৪৫ খৃষ্টাব্দে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়।
১৯৪৭ খৃষ্টাব্দে সংশোধিত সংবিধান গ্রহণের পর জাপান একটি এককেন্দ্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয়।
ইংরেজি শব্দ জাপান শব্দটি সম্ভবত এসেছে জাপানি নাম নিহন -এর আদি মান্ডারিন চীনা বা উ চীনা উচ্চারণ থেকে। জাপানি ভাষায় এই শব্দটির উচ্চারণ নিপ্পন বা নিহন। জাপানি জাতি নিজেদের বলে নিহনজিন এবং নিজেদের ভাষাকে বলে নিহঙ্গ।
আরও পড়ুন: বিচিত্র ধরনের ভূমিরূপ যে দেশে
জাপান ৪৭টি প্রিফেকচার নিয়ে গঠিত। প্রত্যেকটি প্রিফেকচারের দায়িত্বে রয়েছেন একজন নির্বাচিত গভর্নর, আইনসভা ও প্রশাসনিক আমলাতন্ত্র।
প্রিফেকচরগুলি আবার মহানগর, শহর ও গ্রামে বিভক্ত।
জাপানের প্রধান দু’টি ধর্ম হলো – শিন্তো ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম। প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের প্রাচীন উপাসনার বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী শিন্তো ধর্মের ভিত্তি। শিন্তো ধর্মে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে কিছু বলা নেই। জাপানের অনেক বাসাতে শিন্তো দেবদেবীর পূজার উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি তাক বা স্থান রয়েছে। জাপানে ৬ষ্ঠ শতকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন শুরু হয়।
জাপানের জাতীয় খেলা – সুমো এবং জুডো।