২০২২ সালে কলকাতার টালিগঞ্জে বেশ কিছু ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে মনে রাখার মতো উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘ছায়াসূর্য’। নামটি যেমন অসাধারণ, তেমনি মনে দাগ কাটার মতো তো বটেই।
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটের ওপর নির্মিত এ ছবিটি।
‘ছায়াসূর্য‘ জীবনের কথা বলেছে, পরিবারের কথা বলেছে – ছবিটি প্রমাণ করে ছেড়েছে, সম্পূর্ণ ঘটনা যেন বাস্তব জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
এক রেল শহরের বিয়ে বাড়িতে ডাক্তার সূর্য’র সঙ্গে দেখা ছায়া নামের মেয়েটির। এক পলকের দেখা, সহসা রূপ নিল প্রেমে। কিন্তু ছায়া ও সূর্য’র ভালবাসা বা প্রণয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন ছায়ার বাবা।
এরপরে ছায়া আর সূর্য – একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
তার পর ছবিতে একে একে যা যা ঘটেছিল, তা দেখার জন্য দর্শকরা কিন্তু অধীর আগ্রহে প্রেক্ষাগৃহে বসে ছিল। বসে থাকবেই না কেন। সাসপেন্স আর সাসপেন্স। সবারই মনে প্রশ্ন ছিল, এরপরে কি হবে, কি হচ্ছে? ছায়া ও সূর্য’র কি মিলন হবে? মনের গহীন কোণে ঘুরপাক খাচ্ছিল এই প্রশ্নগুলি, যে জন্য পুরো ছবিটা না দেখে কেউ ছবিঘর থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাবতেই পারেননি।
ছবির প্রতিটি গান দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করেছে। যেমন – ‘আজ মনটা আমার বলে আগের জনমে’ ; ‘যেই মৌ জমে যায় দূর মহুয়ার বনে’ ; ‘রাই জাগো জাগো রাই ঘুমায়ো না আর’ ; ‘কাঁদিয়ে কি তোমার প্রেম জানি না কৃষ্ণ ভগবান’ – এই গানগুলি সহজে ভুলে যাওয়ার নয়। আহা বহুদিন পরে মনে হল, সিনেমার গান যেন আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। টালিগঞ্জের ছবিপাড়া থেকে ভাল গান তো হারিয়ে গিয়েছিল। হৃদয়ে দাগকাটা গান আবার পাওয়া গেল ‘ছায়াসূর্য’ ছবিটির মাধ্যমে।
গর্বের সঙ্গে বলতে হয়, দিগ্বিজয় চৌধুরীর প্রযোজনা ও পরিবেশনায় নির্মিত ‘ছায়াসূর্য’ এ সময় সিনেমা দর্শকদের জানিয়ে দিল, কলকাতার টালিগঞ্জে এখনও ভাল ছবি হয়। ভাল ছবি নির্মাণ করে তিনি দুঃসাহস দেখিয়েছেন বটে। এ ছবির আবেদন চিরন্তন, কেননা এ রকম ভাল ছবি কালেভদ্রে নির্মিত হয়ে থাকে। পরিচ্ছন্ন এই ছবিটি ২০২২ সালের ছবির তালিকায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় নিবেদিত এবং রীণা চৌধুরীর চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘ছায়াসূর্য’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল এই ২০২২ সালে।
ছবির কাহিনী রচয়িতা – মানিকলাল চট্টোপাধ্যায়। সংগীত পরিচালনা – অতনু দাশগুপ্ত। গীত রচনা – ভবিষ্যত চৌধুরী ও মোহিনী চৌধুরী। নেপথ্য কন্ঠ – অন্বেষা দত্তগুপ্ত, হিমিকা ব্যানার্জী, সীমন্ত সরকার, স্বর্ণালী বসু ও অনিনাভ।
অভিনয়ে – সাহেব চট্টোপাধ্যায়, চুমকি চৌধুরী, বিদিশা চৌধুরী, স্নেহা গোস্বামী, ডঃ শংকর ঘোষ, পাপিয়া দেবরাজন, গৌরীনাথ ব্যানার্জী, পুলকিতা ঘোষ, রাহুল গোস্বামী, প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, জোনাথন, আয়তি, রাণা মুখার্জী, মনোজিৎ, টিংকু সরকার, উশান মুখার্জী, সমীরণ সরকার, মৌসুমী পাঠক, রামেশ্বর মুখার্জী, সুকান্ত গোস্বামী, শচীন চ্যাটার্জী, নির্মলেন্দু সিকদার, সুদীপ দে কুট্টি, রূপম বাগ, অনুপম ভট্টাচার্য, বিপুল অধিকারী, অরুন্ধতী ব্যানার্জী, বরুণ রায়, অঙ্কিতা মুখার্জী, তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়, বাবলা চক্রবর্তী, দেবাশীষ গুহ, প্রভাত, কৌশিক পাত্র, হারু ভট্টাচার্য, তপন মিদ্দে, অনুপ মিদ্দে, জ্যোৎস্না, শংকর, পলাশ প্রিয় ও সম্প্রদায়।
সিনেমা নিয়ে আরও পড়ুন: রানী মুখার্জী মানেই ছিল বাঙালির বুক ফুলিয়ে ঘোরা
বলতে গেলে, এরা সবাই স্ব স্ব মহিমায় যথেষ্ট সুন্দর অভিনয় করেছেন। অভিনয় শিল্পীরা তাদের চরিত্রের সঙ্গে মিশে প্রমাণ করে গেছেন, অভিনয়ে তাঁরা কেউ পিছিয়ে নেই। স্বমহিমায় সবাই উজ্জ্বল।
ছবিটির কাহিনী বিন্যাস, চিত্রনাট্য পরিবর্তন ও পরিবর্ধনেও ছিলেন দিগ্বিজয় চৌধুরী।
ছবির যা কিছু কৃতিত্ব তা সবারই – ছবির সকল শিল্পী কলাকুশলীর আপ্রাণ চেষ্টায় ‘ছায়াসূর্য’ একটি সফল ছবি। শুধু কি তাই, এ তো বাঙালির চিরায়ত গল্পের ছায়াছবি। ছবিটি দেখে গল্পের কথা যায় না যে সহজে ভোলা আর এ জন্য মনের কোণে বারে বারে উঁকি দেয় সাহেব চট্টোপাধ্যায়, চুমকি চৌধুরী, বিদিশা চৌধুরী ও স্নেহা গোস্বামীর প্রাঞ্জল অভিনয়।