মারাকেশ: উত্তর আফ্রিকার মরক্কোর পর্যটন নগরীতে কয়েকদিন


মারাকেশ ইউরোপের পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন আর আরামদায়ক আবহাওয়ার জন্য এখানে বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা অনেক বেশি। মারাকেশ ভ্রমণ নিয়ে লিখেছেন বদরুল হোসেন বাবু

Table of Contents

এক.


গন্তব্য মারাকেশ। ষ্ট্যানস্টিড এয়ারপোর্টের দূরত্ব লন্ডন শহর থেকে ৪০ মাইল। বাসে যেতে ক্ষেত্রভেদে ৪৫ মিনিট থেকে দেড় ঘন্টা লাগে।

এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি চেকিংয়ে যে পেরেশানি গেল তার ধাক্কায় মনে হল এক ঘন্টার বাস জার্ণি কিছুই না।জিন্স প্যান্টের বোতাম বা এ জাতীয় কিছুর কারণে আমি যখন সিকিউরিটির ডিজিটাল গেট পেরিয়ে আসি তখন একটা মৃদু এলার্ম বেজে উঠেছিল।ব্যস, আর যায় কোথা? হাতে স্ক্যানার নিয়ে দাড়িয়ে থাকা সিকিউরিটি কর্মীটি বলল, ফেস মী স্যার।

আমি টাইটানিকের নায়কের ন্যায় দুই হাত পা ছড়িয়ে তার দিকে মুখ করে দাঁড়ালাম। তারপর সে স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করল। এবার আর কোন শব্দ হল না। তবুও ইশারায় নড়াচাড়া না করতে বলল। এবার আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দুই হাত দিয়ে টিপে টিপে দেখল। তারপর বলল রাইট। হ্যান্ড লাগেজ টা একটু দেখতে হবে।

লাগেজ আসে অন্য লাইনে মেশিনে স্ক্যান হয়ে। সেটাতে কোন এলার্ম বেজেছিল কিনা জানি না। তবুও বললাম, নিশ্চয়ই। কিন্তু সেটাতো এখনও লাগেজ স্ক্যানারেই আছে। কয়েকটি লাগেজ দেখিয়ে আমাকে প্রশ্ন করল, কোনটা? আমি আমার হ্যান্ড লাগেজ টেনে নিয়ে বললাম এটাই।

লাগেজ পরীক্ষায় আরেক অফিসার। হাতে গ্লাভস লাগিয়ে একটা একটা করে আমার জিনিসপত্র খুলে দেখল। তারপর সবকিছু বের করে লাগেজের প্রতিটি ভাঁজ পরীক্ষা করল স্ক্যানার দিয়ে। কিছুই মিলল না। এবার তাদের চিরায়ত ভদ্রতার মুখোশে বলল, ইউ আর অলরাইট স্যার। আপনার অসুবিধার জন্য দু:খিত।

সিকিউরিটির এই কঠিন মূহুর্ত পেরিয়ে যখন হ্যান্ড লাগেজ ঠেলে এয়ারপোর্টের ভিতরে গেলাম তখন টের পেলাম গলা শুকিয়ে গেছে। যদিও ভয় পাবার কিছু ছিল না, যেহেতু আমার সাথে এমন কিছুই ছিল না যেটা বহন করা যাবে না। বোতলজাত কিছু সাথে নেয়া যাবে না দেখে পানিও নেই নাই। তাই তৃষ্ণা নিবারনের জন্য এক বোতল পানি কিনে নেয়ার জন্য গেলাম চেইন ডিপার্টমেন্টাল শপ ডব্লু এইচ স্মিথ এ। এক বোতল বাক্সটন ব্রান্ডের পানি হাতে নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে দাম পরিশোধ করলাম।

রায়ান এয়ারলাইন্স ইউরোপের ইকোনমি পরিবহনের জন্য বেশ নাম করেছে। ছোট ছোট যাত্রায় এক শহর থেকে আরেক শহরে যাবার জন্য তাদের ব্যবসায়িক পলিসি অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের টিকেটের দাম বাস বা ট্রেনের চেয়েও সস্তা। তবে সব সময়ই নানা শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ। যেমন, অনলাইনে অগ্রিম টিকেট কিনতে হবে, যাত্রার তারিখ পরিবর্তন বা ক্যান্সেল করা যাবে না (যাবে, তবে বড় অংকের টাকা গচ্চা দিয়ে), প্লেনের ভিতরে কিছূ খেলে তা কিনে খেতে হবে, ব্যাগ বা লাগেজের ওজন ১৫ কেজির বেশি হলে তার জন্য ফি পরিশোধ করতে হবে ইত্যাদি।

ইউরোপিয়ানরা সব কিছুর জন্যই অগ্রিম পরিকল্পনা করে। তাই এসবে তারা অভ্যস্ত।প্লেনে আরোহনের জন্য গেট খুলে দিতেই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল যাত্রীরা। সাড়ে তিনশ আসনের প্লেনে সিট খালি থাকবে বলে মনে হল না। এসব প্লেনের ইকোনমি সীট আর আমাদের ঢাকার লোকাল বাসের সীটের মধ্যে কোন তফাৎ নেই। শক্ত দেয়ালে পিঠ ঠেকানোর মত হেলান দেয়া আর সামনের দিকে হাঁটু চেপে ধরা আসনে বসার পর ভ্রমনের আনন্দ বেশ পাঁনসে হয়ে যায়।

এসব যাত্রায় আমি সবসময়ই করিডোর সীট পছন্দ করি, কারন তাতে নড়াচড়া করার একটা স্বাধীনতা থাকে। পাশের যাত্রীকে বিরক্ত না করেই যখন তখন উঠবস করা যায়। আমার সীট করিডোরে পড়েছিল দেখে বেশ খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু সীট বসতে না বসতেই মাঝবয়সী এক বৃটিশ মহিলা এসে দাঁড়ালেন আমার পাশে। বুঝলাম তিনি ভিতরে যাবেন। আমি দাঁড়িয়ে তাকে ভিতরে যাবার পথ করে দিতেই আমাকে অনুরোধের সুরে বললেন জানালার সিটে আমার বসতে কোন অসুবিধা হবে কীনা, কারণ তারা প্রায় ৮জনের মত একটি গ্রুপ। করিডোরের সীটটি হলে তাদের জন্য সুবিধা। অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মত সহাস্যে আমি বললাম সমস্যা নেই।

ভাবছিলাম কে বসে আমার পাশে। তাদের দলে ছেলেমেয়ে বুড়োবুড়ি সবাই আছে। কিন্তু সবাইকে সামনে পিছনে বসিয়ে দিয়ে নেত্রী গোছের সেই মহিলাটিই আমার পাশে বসলেন।


বেশ মজার কিছু বলছেন, এমনভাব নিয়ে ফিসফিস করে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে যা বললেন, তাতে বাংলায় আমার অনুবাদে যে অর্থ দাঁড়ায় তা হল, ছেলেবুড়ো সবাই বেড়াতে যেতে চায়! আমিও তার কথায় বেশ মজা পেয়েছি এমনভাব করে মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন।

একটু পরে প্লেন যাত্রা শুরু করল। উড্ডয়নপর্বে প্রচন্ড শব্দ প্লেনের ভিতরে পৌঁছে না ঠিকই, কিন্তু ভাইব্রেশনের জেরে কান তালি লেগে যাবার মত অবস্থা হয়। জানালা দিয়ে দেখছিলাম সবকিছু ছোট হয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ল। প্লেনের জানালার পাশের আসনে বসে থাকা এক ব্যক্তি জীবনের প্রথম আকাশযাত্রার উত্তেজনায় সবকিছুতেই নতুনত্ব দেখছিলেন। আগে এর কাছে, ওর কাছে এটা ওটা শুনেছেন। এবার সবকিছু তিনি নিজেই পরখ করার সুযোগ পেয়েছেন। প্লেন মাত্রই স্টার্ট করেছে, রানওয়েতে তখনো দাঁড়িয়ে আছে। কাঁপা উত্তেজনায় পাশে বসে থাকা যাত্রিকে বললেন, ভাই দেখেন, প্লেন ছাঁড়তে না ছাঁড়তেই নীচের মানুষজনকে পিঁপড়ার মত দেখাচ্ছে!

পাশের যাত্রীটি বেশ ধীরে সুস্থে বললেন, এটা আসলে পিঁপড়াই। প্লেন এখনো ছাড়েনি।

শখের বশে মাঝে মাঝে ভ্রমণ করি আর সেটা একটু আধটু অক্ষমভাষায় বর্ণনার চেষ্টা করি। এই ব্লগে যারা আমার পোষ্টগুলোতে মনের ভুলে কদাচিৎ চোখ বুলিয়ে থাকেন, তাদের অনেকেই আমার চেয়ে বহুগুন বেশি ভ্রমণ করেন। তাদের অভিজ্ঞতা, জানাশুনা এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আমার চেয়ে ঢের গুণ বেশি। তাই আমার সীমাবদ্ধতা সবিনয়ে জানিয়ে বলছি, আমি হলাম গল্পের সেই প্রথম যাত্রীর মতই। তাই কোন তথ্য বা বর্ণনা আপনাদের অভিজ্ঞতার সাথে পুরোপুরি না মিললে মনে করবেন এটা নিতান্তই লেখকের অক্ষমতা।

জানালার পাশে বসাটা অবশ্য ভালই হয়েছিল। নীল আকাশে সারি সারি সাদা মেঘের স্তর পেরিয়ে যাওয়াটা অবশ্যই উপভোগ্য। আকাশে ভাসমান মেঘরাশি পেঁজো তুলোর মত উড়ে বেড়াচ্ছে।জানালার পাশে বসাটা অবশ্য ভালই হয়েছিল। নীল আকাশে সারি সারি সাদা মেঘের স্তর পেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা অবশ্যই উপভোগ্য।বসন্তের শেষে কিংবা গ্রীষ্মের শুরুতে যেমন শিমুল তুলা বাতাসে উড়ে বেড়ায়, আকাশে ভাসমান মেঘরাশি গুলোও সেরকম তুলোর মতই উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রাচীন সংস্কৃত কবি কালিদাস তার মেঘদূত কবিতায় আকাশের মেঘকে দূত হিসাবে ব্যবহার করেছেন।কর্তব্যে অসাবধানতায় রামগিরি পর্বতে নির্বাসিত যক্ষ তার প্রেমিকার কাছে বার্তা পাঠানোর কোন বাহন না পেয়ে শেষমেষ নববর্ষার প্রথম মেঘের আশ্রয় নেয়।

প্রায় দুইঘন্টার ভ্রমণশেষে পৌছালাম ইবনে বতুতার দেশ মরক্কোতে। মারাকেশের আকাশ থেকে হলুদ রংয়ের অনেকগুলো বিল্ডিং দেখে বুঝলাম এসে গেছি মরক্কো। প্লেন অবতরণ করার পরপরই বেশ একটা হুড়োহুড়ি পড়ে গেল নেমে যাবার জন্য। আমার অবশ্য হুড়োহুড়ি নেই। কারণ আগে গেলেও ইমিগ্রেশনের হার্ডল পেরোতে আমার অনেক সময় লাগবে। তারচেয়ে ইউরোপীয়ানরা যেতে থাকুক। আমি লাইনের একদম পিছনে দাঁড়াবো।

বেশ সাদামাটা এয়ারপোর্ট মারাকেশ। পুরনো বিল্ডিং, অনেক আগে তৈরি করা মেজে। সেগুলো আস্তে আস্তে পরিবর্তনের কাজ চলছে। ইমিগ্রেশনের অনেকগুলো কাউন্টার। কিন্তু কাজে কোন দ্রুততা নেই। ইউরোপীয়ানদের পাসপোর্টগুলোতেও অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। ভীড়ের তুলনায় যে রকম শম্ভুক গতিতে লাইন আগাচ্ছে তাতে এক ঘন্টার আগে আমার সিরিয়াল আসার কোন লক্ষণ দেখছি না। তাই নির্ভারভাবেই একটি লাইনের পিছন দিকে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আজ এ পর্যন্তই।

দুই.

মারাকেশ এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন ট্যাক্সি লাগবে কিনা। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই ঠিকানা জানতে চাইলেন। আমি বললাম এভিনিউ আবদেল করিম আল খাত্তাব এলাকায় আমিন হোটেল। এখানে যাত্রী দেখেই ট্যাক্সি ড্রাইভারদের হুমড়ি খেয়ে পড়ার মত দৃশ্য চোখে পড়ল না। কয়েকজন লোক খুবই শৃঙ্খলার সাথে সবকিছু ম্যানেজ করছেন।অবশ্য আমি বেরিয়েছি প্রায় সবযাত্রী চলে যাবার পর। একারনেই হয়তোবা বেশিরভাগ ট্যাক্সিচালক সেখানে ছিল না।

এয়ারপোর্ট থেকে শহরে যাবার জন্য ট্যাক্সি ছাড়া বাসের ব্যবস্থাও আছে।তবে দুই বাসের মধ্যবর্তী সময়ে বিস্তর ফারাক। অচেনা জায়গায় ট্যাক্সি নেয়াটাই ঝামেলামুক্ত থাকার সবচেয়ে সহজ উপায়। তবে নতুন লোক পেয়ে ভাড়া কিছুটা বেশি নেয়ার যে প্রবণতা এখানেও তার ব্যত্যয় হল না। প্রায় আড়াইগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হল!

বিকেলের অস্তগামী সূর্য তখন অন্ধকারে বিলীন হচ্ছে। ৩০ডিগ্রীর উপরে তাপমাত্রা। মোটামুটি গরম। ট্যাক্সীর উইন্ডো খুলে দিলাম দুইপাশ দিয়েই। রাস্তার দুইপাশে সবুজ আবহ আনার জন্য অনেকগুলো খেজুর গাছ লাগানো। তবে সারি সারি নয়।পুরনো মডেলের অনেক রিকন্ডিশন্ড গাড়ি রাস্তায় চোখে পড়ল। গাড়ি চলছে ডান পাশ দিয়ে। রাস্তার বাতিগুলো ততক্ষণে জ্বলে উঠেছে। তবে এক পাশে। রাস্তার অন্যপার্শ্ব অন্ধকার।

সারা দিনের ব্যস্ত সময় পার করে শহরের অদিবাসীরা ঘরে ফিরছেন। সাইকেল, মটরসাইকেল, ট্যাক্সি, কার আর বাসে ঘরফেরত যাত্রীদের আনাগোনা। চোখে পড়ার মত বিষয় হল এখানকার মেয়েরা মোটরসাইকেল এ চেপে চলাফেরা করছেন পুরুষের তুলনায় সমান তালে। বেশিরভাগই ভেসপা চালাচ্ছেন।কোন সংকোচ নেই। একটি উদারপন্থী মুসলিম দেশ হিসাবে মেয়েদের নিরাপত্তাবিধানের ক্ষেত্রে তারা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই যে এগিয়ে তা আর না বললেও সমস্যা নেই।

ট্যাক্সি এসে থামল এভিনিউ আব্দেল করিম আল খাত্তাব এলাকায়। বিশাল উঁচু বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা একটি বিল্ডিংয়ের সামনে। বেশ সুরক্ষিত । দেখে মনে হল পুরনো আমলের কোন এক দুর্গ । এখনকার সময়ে বেশিরভাগ এলাকায় সেগুলোকে মিউজিয়াম বা জাদুঘরে রূপান্ত্রর করা হয়েছে। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কিসের বিল্ডিং? সে বলল এটাই আপনার হোটেল।কোন প্রকার রাখঢাক না করেই বখশিশ চাইল সে। বললাম আমার কাছে তো চেঞ্জ নেই। কোন সমস্যা নেই। এখানে চেঞ্জ পাওয়া যাবে। আমার কাছে দিন। সে বলল। আমি বিশ ব্রিটিশ মুদ্রা দিলাম বের করে। সে চেঞ্জ নিয়ে আসল। সেখান থেকে বিশ দিরহাম দিলাম বকশিশ হিসাবে।
হোটেলের বাইরের উঁচু প্রাচিরের মাঝখানে প্রবেশ পথ। প্রথম ফটকের পর ভিতরে আরেকটি গেট। দুই জায়গাতেই প্রহরী দন্ডায়মান। বেশ রাজকীয় কারবার। হোটেলের সামনে অবশ্য উদ্যানের মত জায়গায় বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ লাগানো। দেখতে বেশ মনোরম।

আমিন হোটেলের রিশিপশনিষ্ট আমাকে দেখে হাত বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ডশেকের জন্য। জিজ্ঞেস করলেন আরবী কথা বলতে পারি কিনা।আমি না বলতেই ভদ্রলোক বললেন সে কিহে। মুসলমান অথচ আরবী ভাষা জানো না। আমি বললাম আরবী পড়তে পারি কিন্তু কিছু বুঝি না। তবে এখানে দেখলাম অনেকেই ইংরেজী বলতে পারে না।তিনি বললেন এটা তো আমাদের মাত্বভাষা নয়। আমাদের ও আরবী মাত্বরভাষা নয় একথা আমি বলতেই হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি। নো প্রবলেম বলেই পাসপোর্ট চেয়ে নিলেন ফটোকপি করার জন্য।

এই হোটেলটি মারাকেশের প্রধান সড়কে অবস্থিত। কাছেই বাস স্টপেজ। শহরের প্রাণকেন্দ্র বা সিটি সেন্টারে যাওয়া আসার জন্য তাই তেমন কোন সমস্যা নেই। আর একাকী চলাফেরায় হারিয়ে যাবারও ভয় নেই। অনলাইনে বুকিংয়ের সময় হোটেলের রিভিউ দেখেছিলাম। ভালমন্দ দুইরকমের মন্তব্যই আছে। একজন অবস্থানকারী লিখেছেন লোকেশনের দিক দিয়ে ভাল। আরেকজন মন্তব্য করেছেন ষ্টাফদের বাজে আচরনের বিষয়ে।

আমার রুম পড়েছে তিনতলায়। বারান্দা ও বাথরুমসহ বেশ বড় একটি রুম। বারান্দা থেকে নীচের সুইমিংপুল দেখা যায়।চাবি দিয়ে দরজা খুলছি এই অবস্থায় দুই তরুন এগিয়ে এলেন। একজন আফ্রিকান, আরেকজন ইউরোপীয়ান। তাদের সাথে একজন এশিয়ানও আছে, শ্রীলংকান। আমাকে দেখে হয়তোবা মনে করেছিল আমিও এরকমই হবো। সকলেই খেলোয়াড়। বলল পরিচিত হতে এলাম। পরিচয়ের পালা শেষ করে বললাম, আবার দেখা হবে।

আরও পড়ুন: উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের বাড়িতে


কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য আবার তাদের সাথে দেখা হল।এবার তিনজনই এসেছে হোটেলের সুইমিংপুলে। তাদের সাথে আমি যোগ দেয়াতে চারজন। অনেক সময় নিয়ে সাঁতারের পোষাক পরল তারা।মাথায় টুপি ও চোখে গ্লাস লাগিয়ে নামল পানিতে। বিশাল সুইমিংপুলের একপাশ থেকে ধপাশ করে পানিতে পড়ার শব্দ এল। চেয়ে দেখি ইউরোপীয়ান দম্পতি তড়িঘড়ি করে শেষ করছেন তাদের সুইমিংপর্ব ।

সাঁতার কাটলে ক্ষুধা লাগে।কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা টের পেলাম। তাই রুমে ফিরে শাওয়ার করে নিলাম। হোটেলের আছে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট। তবে সেখানে গেলে বাহিরের কিছুই আর দেখা হবে না এটা ভেবে বেরিয়ে গেলাম মেইন রোডে।মিনিট দুয়েক যেতেই পেলাম বেশ সুন্দর একটি রেস্টুরেন্ট । সাইন বোর্ড আর খাবারের মেনু সবই আরবী আর ফ্রেঞ্চ ভাষায় লেখা। কিছুই বুঝার উপায় নেই। ছবি দেখে একটি মেনু অর্ডার দিলাম। ল্যাম্ব চপ বা বিশেষ আকারে কেটে বানানো ভেড়ার গোশত, সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ, সামান্য ভাত ও তাতে একটু সস, সালাদ হিসাবে একটু লেটুস পাতা এবং স্লাইস করে কাটা কমলা লেবু দিয়ে সাজানো ডিশ।সাথে বন রুটি এবং জয়তুনের আচার। একটি কোকের বোতল ও ছিল।মোটামুটি পরিচিত খাবার। কিন্তু যতঠুকু উপাদেয় হবে ভেবেছিলাম ঠিক সে রকম কিছু ছিল না। কারন মরোক্কান ফ্লেভার। তারা খাবারে ঝাল খায় বলে মনে হল না। আর আমাদের ঝাল খেয়ে অভ্যাস। তাছাড়া গোশত যে কায়দায় গ্রীল করা হয়েছে সেটা মসলার কারনে হোক বা কম পোড়ানোর কারনে হোক একটা আঁশটে গন্ধ এসে নাকে লাগল। তবুও কষ্ট করে হলেও সেটা গলাধঃকরণ করলাম।