যে নাটকে অভিনয় করে রাতারাতি বিখ্যাত হলেন শাহরুখ খান


শাহরুখ খান ছেলেবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন । মাকে হারান বোম্বের ছবিতে যোগ দেয়ার কিছুদিন পরে। তাই অল্প বয়স থেকেই শাহরুখ দুঃখ, কষ্ট, দারিদ্র্যকে কাছ থেকে দেখেছিলেন। তিনি তখনই অনুভব করলেন, কি করে জীবনে সফল হওয়া যাবে , সফল যে হতেই হবে।

দিল্লিতে থাকতেই তাঁর অভিনয়ে হাতেখড়ি। প্রথমে নাটকে, তারপর সুযোগ পান ছোট পর্দায়।

shah1

 ‘ফৌজি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেই শাহরুখ রাতারাতি হয়ে ওঠেন পরিচিত মুখ।

সেই ভরসাতেই তিনি দিল্লি থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন মুম্বাই।

তখন তো চোখে একরাশ স্বপ্ন – নায়ক হবেন।

মুম্বাইতে তিনি ডাক পান আজিজ মির্জার ইউনিট থেকে। এই যোগাযোগই শাহরুখের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। মোহাম্মদ আজিজের সঙ্গে প্রথম কাজ করেন ‘সার্কাস’ সিরিয়ালে।

এরপরে আজিজ মির্জা ছবি শুরু করলেন -‘রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান’। এই ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করলেন শাহরুখ খান। সেই শুরু….তখন তো রোমান্টিক নায়কদের রমরমা। সেই মুহূর্তে

শাহরুখ খান নিজের ভাবমূর্তি বদলাতে শুরু করলেন নেগেটিভ চরিত্র দিয়ে। বাজিগর, ডর, অঞ্জাম – এর মতো ছবিতে শাহরুখ সন্তর্পণে পালটে দিলেন বলিউডি নায়কের প্রচলিত সংজ্ঞা। কিছুদিনের মধ্যেই ওই ধরনের ছবি তৈরির হিড়িক পড়ে যায় মুম্বাইতে। আর তখনই শাহরুখ নতুন করে উপলব্ধি করেন, আর না। এবার অন্য কিছু ভাবতে হবে।

 

শাহরুখ খান যে নাটকে অভিনয় করে রাতারাতি বিখ্যাত

তখনই আদিত্য চোপড়ার কাছ থেকে সুযোগ আসে।

শাহরুখ খানকে প্রস্তাব দেন, রোমান্টিক চরিত্র করার জন্য। সেই ছবিটি হলো -‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’। এই ছবিতে অভিনয় করার পরে শাহরুখ খান নিজের ভিত গড়ে নিলেন।

১৯৯২ সাল থেকে তাঁর যথার্থ উত্থান ঘটে মুম্বইর হিন্দি ছবির জগতে।

শাহরুখ খান অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হল – রাজু বান গেয়া, দিল আশনা হ্যায়, বাজীগর, কাভি হাঁ কাভি না, আঞ্জাম, করন অর্জুন, রাম জানে, পরদেশ, দিল তো পাগল হ্যায়, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, বাদশা, ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি, জোশ, অশোকা, দেবদাস, চলতে চলতে, পহেলি, স্বদেশ, কাভি আলবিদা না কেহনা -ইত্যাদি। সবগুলো ছবিই বক্স অফিসে সুপার-ডুপার হিট।

২০২১ সালে তাঁর অভিনীত মনে রাখার মতো ছবি হলো ‘পাঠান’।

shah 2

শাহরুখ খানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। তাঁর পিতা ও মাতার নাম যথাক্রমে – তাজ মোহাম্মদ খান ও লতিফ ফাতেমা। স্ত্রীর নাম গৌরী খান। তাঁদের তিন সন্তান।তাঁদের নাম – আরিয়ান খান, সুহানা খান ও আব্রাহাম খান।

শাহরুখ খান লেখাপড়া করেছিলেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সাম্প্রতিককালে শাহরুখ খানের জীবনে দুঃখজনক ঘটনা হল, তাঁর ছেলে আরিয়ান খান মাদক মামলায় জড়িয়ে পড়া। পরে অবশ্য আরিয়ান খান জামিনে মুক্তি পান। আর এ জন্য শাহরুখ খানকে কিছুদিন আইনজীবীর কাছে দ্বারস্থ হতে হয়, কোর্টে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল।

শাহরুখ খানকে বলা হয় কিং খান, কিং অব রোমাঞ্চ, কিং অব বলিউড।

শাহরুখের পুরো নাম শাহরুখ মির তাজ মোহাম্মদ খান।

শাহরুখ খানের বাড়ির ঠিকানা – মান্নাত, ল্যান্ডস এন্ড, বাসস্ট্যান্ড, পশ্চিম বান্দ্রা, মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত।

লেখক পরিচিতি : লিয়াকত হোসেন খোকন এদেশের একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র গবেষক, লেখক ও ভ্রমণ পিয়াসী ব্যক্তি। এপার ওপার দুই বাংলার চলচ্চিত্রের উপর তার লেখা ৩০ টি বই বেরিয়েছে এ যাবত।উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হ’ল – ৬৪ জেলা ভ্রমণ ;পৃথিবী ভ্রমণ ;জাদুটোনার দেশ কামরূপ কামাখ্যা ;গানে গানে বাংলাদেশ ;ভারত ভ্রমণ ; আনন্দ উল্লাসের নগরে ভ্রমণ ; মৃত মানুষের নগরে ভ্রমণ ; ভারত নেপাল ভূটান ভ্রমণ ; চলচ্চিত্র তারকাদের বেদনার কথা ; চিরদিনের উত্তম কুমার ; চিরদিনের সুচিত্রা সেন ; বাংলাদেশ নদ নদী ভ্রমণ ; বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড ; বাঙালির চরিত্র ; ৬৪ জেলা পরিচিতি ; ঘুরে দেখুন বাংলাদেশ ; পত্রমিতালী ; ভূস্বর্গ কাশ্মীর ভ্রমণ ; ভূস্বর্গ সিলেট ভ্রমণ ; পার্ব্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ ; কক্সবাজার ভ্রমণ গাইড – ইত্যাদি।

লিয়াকত হোসেন খোকনের জন্ম ১৪ মার্চ ১৯৫৩ সালে পিরোজপুর শহরের রায়বাহাদুর রোডের (আদর্শপাড়া) ‘স্মৃতি ভবন’ এ। পিতা আমির হোসেন মিয়া ও মাতা আমেনা খাতুন। পড়াশোনা করেছেন পিরোজপুর সরকারি হাই স্কুলে। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

লিয়াকত হোসেন খোকন এমন একজন সংস্কৃতিবান ও উদারচিত্তের ব্যক্তি যিনি সত্তরের দশকের গোড়া থেকে বিভিন্ন দৈনিক ও  সাপ্তাহিক পত্রিকায় চিঠিপত্র লেখালেখির মাধ্যমে আমাদের ছাত্রজীবনকে সংস্কৃতির আলোকে ভরিয়ে দিতে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। শিখিয়েছেন কিভাবে ভালোবাসার মানুষের কাছে চিঠি লিখতে হয়। কিভাবে আচ্ছন্ন হতে হয় নষ্টালজিয়ায়।

লিয়াকত হোসেন খোকনের লেখা চিঠির সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ হাজার। প্রতিবেদন প্রকাশের সংখ্যা ২০ হাজারের অধিক। লিয়াকত হোসেন খোকন আপাদমস্তক একজন রোমান্টিক, সংস্কৃতির সেবক ও নিভৃতচারী নিপাট ভদ্রলোক। আজ তিনি জনসমক্ষে আর আসেন না।