যে রাজ্যে গেলে ফিরে আসতে ইচ্ছে হয় না


ক্যালিফোর্নিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানীর নাম স্যাক্রামেন্টো। এই অঙ্গরাজ্যের উল্লেখযোগ্য শহর হলো – লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো। এ দু’টি এই অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর।

স্প্যানিয়ার্ডরা রাজা ক্যালিফোর্নিয়া উপদ্বীপ এবং আলতা ক্যালিফোর্নিয়াকে ‘লাস ক্যালিফোর্নিয়াস’ নাম দিয়েছিল। সেই অঞ্চলটি বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া নামে সমধিক খ্যাত।

নামটি রাণী ক্যালাফিনিয়ার কাল্পনিক গল্পে ক্যালিফোর্নিয়ার পৌরাণিক দ্বীপ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা কিনা ১৫১০ খৃষ্টাব্দে গার্সি রদ্রিগেজ ডি,

মন্টালভো রচিত ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ এসপ্ল্যান্ডিয়ান’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

রাণী ক্যালাফিয়ার রাজ্যকে সোনা এবং মুক্তো সমৃদ্ধ প্রত্যন্ত ভূমি বলা হয়। একদা এখানে সুন্দরী কৃষ্ণাঙ্গ মহিলারা বাস করত। সেই সকল সুন্দরী মহিলারা সোনার অলঙ্কার পরিধান করত। তারা অ্যামাজনের মতো জীবনযাপন করত – সেই সাথে গ্রিথিন এবং অন্যান্য অদ্ভূত প্রাণীও এই অঞ্চলের মধ্যে ছিল।

শাসক রাণী ক্যালাফিয়া বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। এর কারণ ছিল, মুসলমানরা বার বার তাঁর রাজ্যে আক্রমণ করত।

ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানীর নাম স্যাক্রামেন্টো।

কালিফোর্নিয়ার বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলস।

ক্যালিফোর্নিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৯ সেলসিয়াস। হাওয়ায় বেগ দপ ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়।

ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৮৪৮ খৃষ্টাব্দে সোনার প্রাচুর্য দেখা দেওয়ায় এ অঞ্চলে অনেক লোক বসতি স্থাপন শুরু করে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে এখানে অ্যাপল, মাইক্রোসফট, গুগল, টেসলা ইত্যাদির মতো উচ্চ প্রযুক্তির সিলিকন ভ্যালি কোম্পানিগুলির আবাসস্থল হয়ে ওঠে।

জনসংখ্যায় কালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম অঙ্গরাজ্য।

ক্যালিফোর্নিয়াম কি?

ক্যালিফোর্নিয়া নয়, ক্যালিফোর্নিয়াম কোনো স্থানের নাম নয়, ক্যালিফোর্নিয়াম একটি শক্তিশালী নিউট্রন বিকিরক অর্থাৎ এটি একটি মৌলিক পদার্থ।

১৮৫০ খৃষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া অন্তর্ভুক্ত হয়।

আয়তনে এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় অঙ্গরাজ্য।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্টা ক্রুজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ক্যাম্পাসের একটি। স্যান ফ্রান্সিস্কো থেকে ৭৫ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। এটি স্থাপিত হয় ১৯৬৫ খৃষ্টাব্দে।

ক্যালিফোর্নিয়ার উল্লেখযোগ্য আরও বিশ্ববিদ্যালয় হল, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় – সান্তা বারবারা ; ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় -আরভাইন ; ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় – বার্কলি ইত্যাদি।

ক্যালিফোর্নিয়ার স্রোত – উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর প্রবাহের প্রথম শাখা উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে দক্ষিণ দিকে বেঁকে ক্যালিফোর্নিয়া উপদ্বীপের পাশ দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। প্রবাহিত এ স্রোতটি ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত নামে আরও দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানীর নাম স্যাক্রামেন্টো। এই অঙ্গরাজ্যের উল্লেখযোগ্য শহর হলো – লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো। এ দু’টি এই অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর।

ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের নামের সংক্ষিপ্ত রূপগুলির মধ্যে রয়েছে – সিএ, ক্যাল, ক্যালি, ক্যালিফ, ক্যালিফস, ইউএসসিএ – ইত্যাদি।

১৩,০০০ বছর ধরে আগমনের ধারাবাহিক তরঙ্গে এখানে বসতি স্থাপন করা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া ছিল প্রাক -কলম্বিয়ান উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগতভাবে বৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি।

ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল অন্বেষণকারী প্রথম ইউরোপীয়রা হলেন পর্তুগিজ অধিনায়ক জুয়ান রদ্রিগেজ ক্যাব্রিলো। তাঁরই নেতৃত্বে একটি পালতোলা জাহাজের মাধ্যমে পর্তুগিজরা এখানে আসেন। তাঁদের আসার উদ্দেশ্য ছিল, বাণিজ্যিক সুযোগের সন্ধান পাওয়ার জন্য।

ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যটি পর্যায়ক্রমে শাসন করেছিল স্পেনীয়রা, মেক্সিকীয়রা – পরবর্তীতে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়।

ক্যালিফোর্নিয়ার সংস্কৃতি একটি পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং সবচেয়ে স্পষ্টভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতিতে এর আধুনিক শিকড় রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক ভাবে অনেক হিস্পানিক ক্যালিফোর্নিও এবং মেক্সিকীয় প্রভাব রয়েছে। এটি একটি সীমান্ত এবং উপকূলীয় অঙ্গরাজ্য হিসাবে বিশেষভাবে পরিচিত। ক্যালিফোর্নিয়ার সংস্কৃতি বেশ কিছু বৃহৎ অভিবাসী জনগোষ্ঠী বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা এবং এশিয়া মহাদেশের লোকদের দ্বারা প্রভাবিতও হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের আয়তন মোট ১,৬৩,৬৯৬ বর্গমাইল বা ৪,২৩,৯৭০ বর্গকিলোমিটার।

এখানকার দাপ্তরিক ভাষা – ইংরেজি। কথ্য ভাষা – স্প্যানিশ।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এবং শেষের দিকে, এই অঙ্গরাজ্যে জাতি -সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – পুলিশ এবং আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে উত্তেজনা অভ্যন্তরীন শহরগুলোতে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের সাথে মিলিত হয়ে সহিংস দাঙ্গার দিকে নিয়ে যায়। যেমন ১৯৬৫ খৃষ্টাব্দে ওয়াটস দাঙ্গা ও ১৯৯২ খৃষ্টাব্দে রডনি কিং দাঙ্গা।

ক্যালিফোর্নিয়া ব্ল্যাক প্যান্থার পার্টির কেন্দ্রস্থলও ছিল। এটি একটি দল যা আফ্রিকান আমেরিকানদেরকে অনুভূত জাতিগত অবিচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করার জন্য পরিচিত ছিল। তাছাড়া মেক্সিকীয়, ফিলিপিনো ও অন্যান্য অভিবাসী খামার কর্মীরা ১৯৬০ ও ১৯৭০ -এর দশকে ভাল বেতনের জন্য সিজার শ্যাভেজের আশেপাশে অঙ্গরাজ্যে সমাবেশ করেছিল।

বিংশ শতাব্দীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় দু’টি বড় ধরনের দুর্যোগ ঘটে। ১৯০৬ খৃষ্টাব্দে সান ফ্রান্সিসকোতে ভূমিকম্প হয়। আর ১৯২৮ খৃষ্টাব্দে সান ফ্রান্সিস বাঁধ ভেঙে বন্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল।

এ অঙ্গরাজ্যের মাঝখানে ক্যালিফোর্নিয়া কেন্দ্রীয় উপত্যকা, পূর্বে সিয়েরা নেভাদা, পশ্চিমে উপকূলীয় পর্বতমালা, উত্তরে ক্যাসকেড পর্বতমালা আর দক্ষিণে তেহাচাপি পর্বতমালা দ্বারা এ রাজ্যটি বেষ্টিত। কেন্দ্রীয় উপত্যকা হল উৎপাদনশীল কৃষি কেন্দ্রস্থল।

উল্লেখযোগ্য স্থানগুলি হল – লস অ্যাঞ্জেলস, লাক্স লা সৈকত, সান ডিয়েগো, সান জোসে, সান ফ্রান্সিসকো, ফ্রেসনো, ওকল্যান্ড, স্যাক্রামেন্টো, বেকার্সফিল্ড, ম্যামথ হ্রদ, ডেথ উপত্যকা, ইউরেকা।

দর্শনীয় স্থান হল –

সান ফ্রান্সিসকো – এ শহরটি বিখ্যাত সেতু গোল্ডেন গেট আর তার সৌন্দর্য এবং বিল্ডিং বিশালতার জন্য পৃথিবীর এক উল্লেখযোগ্য স্থান।

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া – এখানের বিখ্যাত এলাকা হল, হলিউড। এই স্থানটি ছায়াছবি নির্মাণের জন্য পৃথিবী খ্যাত। হলিউডে রয়েছে ভুবনবিখ্যাত ফিল্ম স্টুডিওর ছড়াছড়ি।

স্যান ডিয়েগো – এই শহরে রয়েছে হোটেল, রিসোর্টের ছড়াছড়ি। সকল ধরনের আনন্দ -ফূর্তি করা যায় এই শহরে এসে। তবে এ জন্য চাই পকেট ভর্তি ডলার।

ক্যালিফোর্নিয়ার নাপা ভ্যালি স্থানটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। এখানে রয়েছে বিশাল বিশাল গিরিখাত। রয়েছে আঙুর ক্ষেতের অসংখ্য বাগান। এই অঞ্চলে আঙুর দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ। ভাল ওয়াইন প্রেমীদের জন্য একটি মনোরম স্থান হল এই নাপা ভ্যালি।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর রাজধানী নামে পরিচিত যে শহর

আন্দামান: জীবন্ত প্রবালের জন্য বিখ্যাত যে দ্বীপপুন্জ