হাসপাতাল থেকে যেভাবে ছড়িয়েছিল করোনার প্রাদুর্ভাব


করোনা ভাইরাসের তীব্রতা যখন শুধুই বাড়ছিল তখন স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। হাসপাতালে যায় মানুষ সুস্থ হতে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ দিনগুলোতে হাসপাতাল থেকেই নানাভাবে ছড়িয়েছিল করোনার প্রাদুর্ভাব।

গবেষকরা ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২ অক্টোবরের মধ্যে আটটি দেশ থেকে ২৪ টি সমীক্ষায় দেখেছেন যে ভাবে হাসপাতাল থেকে ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস যা মূলত: বায়ু থেকে ছড়ায়

আইসিইউর কক্ষগুলি থেকে সংগৃহীত বায়ুর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে এটি ননআইসি ইউ রুম থেকে সংগৃহীত বায়ুর তুলনায় দ্বি-গুণ করোনা ভাইরাস ছড়ায়।

টয়লেট এবং বাথরুম থেকে নেওয়া বায়ুর নমুনায় এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি করোনা পজিটিভ  (২৩.৮%০ ছিল

করিডোর থেকে সংগৃহীত বায়ুর প্রাপ্ত নমুনাগুলিতে 56.3% করোনা পজিটিভ ছিল

 করোনা ভাইরাসের সাধারন উপসর্গ নিয়ে আপনি হয়তো হাসপাতালে গেলেন করোনা পরীক্ষায়। হয়তোবা আপনার করোনা পজিটিভ নাও হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সেখানে যাবার পর যে সময়টুকু হাসপাতালে অবস্থান করবেন সেখান থেকেই আপনি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে যেতে পারেন। ফ্রান্সের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনা রিপোর্টে সেই বিষয়টিই বিশ্লেষন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: হেটেই নিন লাখ টাকা! সাথে আরও বোনাস!

ফ্রান্সের নান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় হাসপাতালের একটি গবেষনা দল সম্প্রতি বলেছে, ভাইরাস সংক্রমনের প্রবল ঝুঁকিতে থাকা হাসপাতালের সম্মুখ সারির কর্মীরা তাদের সুরক্ষা পোষাক থাকা সত্বেও কীভাবে ভাইরাসের সাথে আলিঙ্গন করছেন।

মা নেটোয়ার্কে প্রকাশিত বিশ্লেষনে এ বছরের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়ের সংগৃহীত তথ্য তুলে ধরা হয়। সর্বমোট ২৮টি গবেষনা রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয় ৮টি দেশ থেকে  যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইরান অন্তর্ভুক্ত ছিল।

যে ভাবে হাসপাতাল থেকে ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস

৮৯৩টি সংগৃহীত নমুনা থেকে দেখা যায় শতকরা ১৭.৪ ভাগ বাতাসে যে সব ভাইরাস ছড়ায় তার আরএনএ ছিল। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে সংগৃহীত বাতাসে সাধারন কেবিনের চেয়ে (২৫.২%) দ্বি-গুন ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায় (১০.০৭%)। আইসিইউ রুম ছাড়াও করিডোর এবং বাথরুম থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলোতেও করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হবার প্রামান্য উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সংগৃহীত নমুনার পাঁচভাগের একভাগ থেকেও বেশি করোনা পজিটিভের হার পাওয়া যায় বাথরুম এবং টয়লেট থেকে সংগৃহীত বাতাসের উপাদানে। গবেষকরা বলছেন বাথরুমে বায়ু চলাচলে জায়গার স্বল্পতা এবং আক্রান্ত রোগির মল থেকেও ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। ছোট বাথরুমে টয়লেটে ফ্লাশ করার কারনে বাতাসে সম্পূর্ণভাবে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস।

এসব ছাড়াও হাসপাতালের করিডোর থেকে সংগৃহীত বায়ুর উপাদানে ৫৬.৩ ভাগ করোনার উপস্থিতি মিলেছে যা সম্মিলিতভাগে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ চলাচলের জায়গায় আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশ।

যে ভাবে হাসপাতাল থেকে ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস

হাসপাতালের ষ্টাফদের চলাচলের এলাকায় বাতাসে করোনার উপস্থিতি শতকরা ১২ ভাগ। এছাড়া হাসপাতালের মিটিং রুমে পাওয়া যায় ১৯.২ভাগ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে মিলেছে শতকরা ৩.৯ ভাগ করোনার উপস্থিতি। গবেষণা রিপোর্টের লেখকরা লিখেছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের মিটিং, খাবার কক্ষ এবং পোশাক পরিবর্তনের সময় করোনা ভাইরাস একে অন্যের থেকে ছড়াচ্ছে।

গবেষণা রিপোর্টের লেখকরা লিখেছেন, হাসপাতালের করিডোর, বাথরুম, পোশাক পরিবর্তনের কক্ষগুলো করোনা সংক্রমনের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বিশেষ যত্ন সহকারে দেখা উচিত। এসব জায়গায় ভাইরাসের উপস্থিতি প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করা উচিত যেহেতু এটি ভাইরাস সংক্রমনের সম্ভাব্য মাধ্যম।


Leave a Comment