বাংলা ভাষার সঠিক বানান ও ব্যবহার দেখতে চাই 

নানাভাবে বাংলা ভাষার দূষণ ঘটছে – বাঙালি হয়েও বাংলা ভাষা বা মাতৃভাষা ব্যবহারে সর্বদাই অসতর্কতা লক্ষণীয়, ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে যাচ্ছে ভুল বার্তা। গণমাধ্যম সহ প্রতিটি মাধ্যমে চলছে ভাষাবিকৃতি – ফলে  নতুন প্রজন্মদের কাছে পৌঁছছে ভুল বার্তা। বাংলা ভাষা আসলেই

মধুর ভাষা – কিন্তু এই ভাষার উচ্চারণে অনেকেই প্রতিনিয়ত ভুল করে যাচ্ছেন। আধুনিক পণ্ডিতেরা বাংলা ভাষাকে সর্বনাশ করেছেন, যেমন – সরকারী মৌজা ম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে – কাওরান, অথচ কতিপয় মিডিয়া বিকৃত করে বলছে – কারওয়ান।

তাছাড়া বাংলা বানানের বারোটা বাজিয়েছে বাংলা একাডেমী স্বয়ং। যেমন -‘ ঈ ‘- কার প্রত্যয়কে উচ্ছেদ করে সেখানে ‘ ই ‘ প্রত্যয় বসানো হয়েছে। আমরা শৈশবে লিখেছি বাড়ী তা এখন হয়েছে- বাড়ি। আমরা লিখেছি পাখী – তা এখন -পাখি। এ রকম আরও কিছু করার কারণে আমরা মাঝে মধ্যে কষ্ট পাই, আহত হই । কেউবা লিখছেন ভুল বানান – ‘ ভুল ‘ শব্দকে আজও ‘ ভ’তে দ্বিগ্গুকার দিয়ে ‘ ভূ ‘ লিখছেন। আকাশের চাঁদ বানান ভুল করে অনেকে এখনও ‘ চ ‘ এর উপর  চন্দবিন্দু না দিয়ে লিখছেন। বাংলাদেশের ষড় ঋতুর বানান  শিক্ষিতজনদের অনেকেই সঠিকভাবে লিখতে জানেন না। কেউবা বাংলায় কিছু লিখতে গিয়ে দশটা শব্দের মধ্যে গোটা কয়েক বানান ভুল লেখেন।

কেউবা ‘ মা ‘ লিখতে গিয়ে

‘ মাদার ‘ লিখে বসেন। ‘ বাবা ‘ না লিখে কেউবা লিখে থাকেন ‘ ফাদার ‘।

অথচ ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছিল – রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত – কিন্তু সে ইতিহাস এ প্রজন্মের ক’জনেইবা জানেন? জানাবেই বা কেমনে – বই- পুস্তক পড়ার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা কম সংখ্যকদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

বই-পুস্তক না পড়লে  জানবেই বা কেমনে , ১৯৫২ সালের শহীদদের কথা ও বাংলা ভাষা সম্পর্কে ! এ অবস্থায় বাংলা ভাষা বা মাতৃভাষার প্রতি সর্বত্র দূষণ মুক্ত প্রত্যাশা করা দুরাশা নয় কী? হুজুগে অনেকে রফিক নাম উচ্চারণ করেন – কিন্তু তার পুরো নাম  সম্পর্কে অজ্ঞাত অসংখ্যজন। তাই বাধ্য হয়ে বলছি, রফিকের পুরো নাম ‘ রফিক উদ্দিন আহমেদ ‘। তাঁর জন্ম মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল বলধারা গ্রামে। ভাষা শহীদ আবদুস সালামের জন্ম ১৯২৫ সালের ২৭ শে নভেম্বর ফেনী জেলার দাগনভুইঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে। শহীদ আবদুল জব্বার ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহের  গফরগাঁও উপজেলার পাঁচাইর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভাষা শহীদ আবুল বরকত ১৯২৭ সালের ১৩ জুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার ভরতপুর থানার বাবলা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন: একের বেদনা অন্যের বোঝার কি শক্তি আছে!

মাতৃভাষা রক্ষার জন্য যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের কথা আর বাংলা ভাষা সম্পর্কে  সঠিকভাবে না জানা ও ভুল বানান লেখার একটাই কারণ , বই পড়ার প্রতি আগ্রহ এ প্রজন্মরা রীতিমতো হারিয়ে ফেলেছে। অথচ আমরা  কৈশোর বয়স থেকেই পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বিভিন্ন বই পড়েছি। নিয়মিত পাঠাগারে যেতাম – বই পড়ে বাংলা ভাষা ও বানান সম্পর্কে জানতে – বুঝতে চাইতাম। আরও বলতে বাধ্য হচ্ছি, আজকাল ঘর থেকে বের হলে দেখি দোকানপাটের সন্মুখে সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে – ইংরেজি শব্দের ছড়াছড়ি। উল্লেখ্য, মহামান্য হাইকোর্ট কয়েকবার নির্দেশ দিয়েছেন যে, দোকানপাট, স্কুল কলেজের সঠিক ভাবে বাংলা ভাষায় লিখতে হবে। বাস্তবে সব কিছু উল্টো হচ্ছে।  

বাংলা ভাষা ব্যবহারে অনেকেই উদাসীন। এ থেকে মনে হয়, বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে আমরা নিজ ভাষার মর্যাদা দিতে শিখলাম না ৬৯ বছর পরেও – তাই নয় কী? আরও লিখতে ও ব্যবহার করতে জানলাম না, একুশে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে আটই ফাল্গুন!

বাংলা ভাষার প্রতি দরদ – ভালবাসা দিতে না জানলে সে জাতির ভবিষ্যৎ হযবরল ছাড়া আর কিইবা হতে পারে! তাই বাংলাদেশের প্রতিটি বাঙালির উচিত,  নিয়মিত বাংলায় লেখা বই- পুস্তক পড়া। আর গণমাধ্যমে মাতৃভাষা ব্যবহারে অসতর্কতা যা যা রয়েছে তা দূর করা। নচেৎ নতুন প্রজন্মের কাছে বার বার চলে  যাবে  ভুল বার্তা। তাই বাংলা ভাষা প্রচার -প্রসারে সর্বত্রই সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর সেটা সম্ভব হলে  মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছিলেন তাঁদের আত্মা শান্তি পাবে। তাছাড়া বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখায় আমরা আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পারবো।

Share on:

লিয়াকত হােসেন খোকন ১৯৫৩ সালের ১৪ মার্চ পিরোজপুর শহরের রায় বাহাদুর রোডে (আদর্শপাড়া) ‘স্মৃতি ভবনে’ জন্মগ্রহণ করেন । পিতা মৃত আমির হােসেন মিয়া এবং মাতা মৃত্যু আমেনা খাতুন | লেখক ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ইতি টানেন । ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত, সহধর্মিণী শওকত আরা ডলি । ১৯৯৬ সালে তার লেখা বাংলাদেশ ভ্ৰমণ পুস্তিকাটি প্রকাশিত হয় হাক্কানি পাবলিশার্স থেকে । তার দ্বিতীয় গ্ৰন্থ ৬৪ জেলা ভ্ৰমণ অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে বের হয় ২০০৭ সালে । ২০০৮ সালে প্রকাশ হয় তাঁর তৃতীয় গ্রন্থ ভারত নেপাল ভূটান ভ্ৰমণ । ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রতিটি প্রদেশ তিনি ঘুরে দেখেছেন । বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ভ্রমণ বিষয়ক লেখা জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে লিয়াকত হোসেন খোকনের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এছাড়া দুই বাংলার চলচ্চিত্র বিষয়ে তিনি অন্যতম সেরা লেখক।