ইংলিশ ক্রিকেটের যে সব রেকর্ডে নাম লেখালেন ক্রলি


প্রথম টেষ্ট সেঞ্চুরীকে ডবল সেঞ্চুরীতে রুপান্তরের মাধ্যমে অনেকগুলো অর্জন নিজের করে নিয়েছেন জ্যাক ক্রলি। চলতি ইংল্যান্ড-পাকিস্থান ক্রিকেট সিরিজের চুড়ান্ত ম্যাচের প্রথম দিনে তিন নাম্বারে নেমেছিলেন ১২ রানে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাবার পরে। উইকেটে সেট হতে না হতেই আরও তিনজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলেন। দলীয় রান ১২৭ চার উইকেটের বিনিময়ে।

টেলএন্ডার ব্যাটস্ম্যানরা ব্যাট-প্যাড নিয়ে মোটামুটি প্রস্তুত। সেখান থেকেই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান জস বাটলারকে নিয়ে যা করলেন তাতে অনেকগুলো রেকর্ড আপনা আপনিই তার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে।

টেষ্টে  ইংলিশ ক্রিকেট দল গঠন-পূনর্গঠনের ধারায় এতদিন জো রুট ছিলেন এক নাম্বার পছন্দ। কিন্তু অতি সম্প্রতি কিছু নতুন মুখের পরীক্ষা নিরীক্ষায় জো রুটকে চার নাম্বারে নামিয়ে তিনে পাঠানো হল জ্যাক ক্রলিকে। এর আগের ছয়  টেষ্টের দশ ইনিংস খেলেও কোন সেঞ্চুরীর মুখ না দেখা জ্যাক ক্রলি শেষ পর্যন্ত বড় চমক দেখালেন। নিজের প্রথম টেষ্ট সেঞ্চুরীকে শেষ পর্যন্ত তিন শ রানের নাগালের মধ্যে নিয়ে যান। যদিও শেষ  পর্যন্ত ট্রিপল সেঞ্চুরী ছুঁতে পারেন নি। আটকে গেছেন ২৬৭তে।

ক্রলির প্রথম সেঞ্চূরী ২৬৭ রান টিম ফষ্টারের পর দ্বিতীয় ইংলিশ ব্যাটসম্যান যিনি প্রথম সেঞ্চুরীকে বড় অংকে নিয়ে গেছেন। গত ২৫ বছরে শুধুমাত্র ভারতের করুন নায়ার ক্রলির চেয়ে বেশী রান করেছেন ৩০৩ রান করে।

ক্রলির আগে আর মাত্র চারজন ব্যাটসম্যান ২৫০ এর বেশী রান করেছেন সর্ব কনিষ্ট হিসাবে। ক্রলির বয়স ছিল ২২ বছর ২০০ দিন। এর আগে যার এই মাইল ফলক পেরিয়েছেন তাদের নামগুলো অনেক বড়-ওয়েষ্ট ইন্ডিজের গ্যারি সোবার্স, অষ্ট্রেলিয়ার ডন ব্র‍্যাডম্যান, ইংল্যান্ডের লেন হাটন এবং দক্ষিন আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ। ২৩ বছরে পৌঁছার আগেই ডন ব্রাডম্যান এবং গ্রায়েম স্মিথ দুইবার করে ২৫০ এর বেশি রান করেন।

ক্রলি হলেন তৃতীয় কনিষ্ট ইংলিশ ব্যাটসম্যান যিনি দ্বি-শতক করলেন। এর আগে শুধুমাত্র লেন হাটন এবং ডেভিড গাওয়ার এই কৃতিত্বের ভাগীদ্বার ছিলেন।

তিনে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের হয়ে এর আগে মাত্র একটি ইনিংস আছে যেটি ক্রলির চেয়ে বড়। এই পজিশনে ওয়ালী হ্যামন্ডের একটি ইনিং আছে ৩৩৬ রানের।

টেষ্ট ইতিহাসে পঞ্চম উইকেটে ক্রলি এবং বাটলারের ৩৫৯ রানের পার্টনারশিপটি চতুর্থ সর্বোচ্চ। ইংল্যান্ডের যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ পার্টনারশীপের ক্ষেত্রে এটি ষষ্ট।

ষ্ট্যাম্পড আউট হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি এখন ক্রলির। এর আগের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল সীমোর নার্সের ২৫৮ রান।

জ্যাক ক্রলি

ক্রলির ভাগ্যও ভালো ছিল। ক্রলি ১৯৭৯ সালের পর সর্বকনিষ্ঠ ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল করার অপেক্ষায় ছিলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর অপেক্ষা ফুরায়। সেখানেও নাটকীয়তা। নাসিম শাহর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালয়ে বসেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। দ্বিতীয় স্লিপে থাকা বাবর আজমের হাতে বলটা জমতে পারত। কিন্তু ভাগ্য ভালো থাকলে যা হয় ঠিক তাই হলো। ক্রলির ব্যাট হয়ে বল গেল সীমানার বাইরে। ১৯৭ থেকে স্কোরবোর্ডে সংখ্যাটা বদলে হলো ২০১ রান।

ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটিই ডাবল সেঞ্চুরি বানিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ক্রলি। স্পিনারদের সুইপ, রিভার্স সুইপ করে লেংথ পেছনে নিতে বাধ্য করেন। খেলেছেন পায়ে কাজে লং অন, লং অফ দিয়েও। পেসারদের একই জায়গা ধরে বল করতে দেননি ড্রাইভ, পুল ও লেগ গ্লান্সে।

ক্রলির রান বাড়তে থাকে, সঙ্গে ইংল্যান্ডও উঠতে থাকে রানের পাহাড়ে। এই তরুণ ব্যাটসম্যানকে থামাতে শেষ পর্যন্ত সিলেবাসের বাইরের কিছু ব্যবহার করেন পাকিস্তানি অধিনায়ক আজহার আলী। অনিয়মিত বোলার আসাদ শফিক, শান মাসুদ ও ফাওয়াদ আলমদের নিয়ে বোলিং করান তিনি। জুয়া খেলে জিতেও যান। চা বিরতির ঠিক আগে লেগ স্টাম্পের বাইরে ইচ্ছে করে বল ফেলে ক্রলিকে স্টাম্পিং করেন আসাদ।