অভি ভট্টাচার্য: মহাপ্রস্থানের পথে দেবদূত যখন সূর্যমূখি হলেন

তিনি যখন মুম্বাই জয় করেন তখন ছিল বোম্বে । সেই অভিনেতার নামটি হলো ” অভি ভট্টাচার্য ” । অভি ভট্টাচার্যের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস । লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র ও ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন

Table of Contents

গুগলে সার্চ দিলে পাওয়া যায় , অভি ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায় ১৯২১ সালে । কিন্তু পুরনো দিনের পত্র পত্রিকায় প্রকাশ , অভি ভট্টাচার্যের জন্ম পাবনায় ১৯১৮ সালের ২০ নবেম্বর ।

তাঁর শৈশবকাল কেটেছে কলকাতায় । ১২ বছর বয়সে শিশু অভিনেতা হিসেবে ” পুনর্জন্ম ” ছবিতে অভিনয় করেন । ১৯৪৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উপন্যাস অবলম্বনে নীতিন বোস পরিচালিত বোম্বে টকিজের নৌকাডুবি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবন শুরুর হয়।  এতে তিনি  নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। তাঁর নায়িকা ছিলেন মীরা সরকার ও মীরা মিশ্র ।

কলকাতায় অভি ভট্টাচার্য অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হলো – সহসা , নতুন পাঠশালা , মহাপ্রস্থানের পথে , ভোর হয়ে এলো , দেবদূত , মায়ের ডাক , বিষের ধোয়া , সহসা , মধ্য রাতের তারা , সূর্যমুখী , চিতা বহ্নিবান , পরিত্রাণ , শেষবেশ , ভৈরব মন্ত্র – প্রভৃতি ।

১৯৫২ সালে বোম্বের ছবি করার জন্য অভি সেখানে চলে গেলেন । ১৯৫৩ সালে ” বিরাজ বহু ” ছবিতে অভিনয় করার পরে দিকে দিকে অভি ভট্টাচার্যের নাম ছড়িয়ে পড়লো । এরপরে তাঁর অভিনীত স্মরণীয় ছবিগুলো হলো – পরিচয় , অমরপ্রেম , ফুলওয়ালী , জাগৃতি , এক গাঁও কী কাহানী , জেলার ,গৌরিপূজা , মহাভারত , রামভক্ত হনুমান , তীর্থযাত্রা , নয়না , অনুরাধা , দোস্তি , ধরতি করে পুকার কে , শরাফত , আরাধনা , মেরে আপনে , সীমা , সীতা আউর গীতা , যব ইয়াদ কিসি কি আতি , সংসার , আখেরি বদলা – প্রভৃতি আরও কত কি ।

আরও পড়ুন: বলিউডের আলোচিত কয়েকটি কমেডি সিনেমা

অভি বোম্বের বাসিন্দা হয়ে গেলেও কলকাতার ছবিতে সুযোগ পেয়ে তাও করেছেন অতি দরদ দিয়ে । কারণ , তিনি মনে করতেন , যেহেতু তিনি বাঙালি তাই কলকাতার ছবিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ । ১৯৫৫ সালে অভি বিয়ে করলেন চিত্র নায়িকা প্রণতি ঘোষকে । পঞ্চাশের দশকে হিন্দি ছবিতে ” অভি – প্রণতি ” জুটিকে বলা হতো দ্যা হ্যাপি লাভ বার্ডস ।

ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে তিনি বহু পৌরাণিক ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি বিনোদ খান্না ও যোগিতা বলি অভিনীত মেমসাব এবং বিশ্বজিৎ, সাধনা ও ধর্মেন্দ্র অভিনীত ইশক পার জোড় নাহিনে চলচ্চিত্রে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

অভি ভট্টাচার্য মারা যান বোম্বেতে ১৯৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর । আর প্রণতির মৃত্যু ১৯৭৫ সালে ।

কলকাতার অভি ভট্টাচার্য অভিনীত একটি ছবি দেখুন এখানে

Share on:

লিয়াকত হােসেন খোকন ১৯৫৩ সালের ১৪ মার্চ পিরোজপুর শহরের রায় বাহাদুর রোডে (আদর্শপাড়া) ‘স্মৃতি ভবনে’ জন্মগ্রহণ করেন । পিতা মৃত আমির হােসেন মিয়া এবং মাতা মৃত্যু আমেনা খাতুন | লেখক ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ইতি টানেন । ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত, সহধর্মিণী শওকত আরা ডলি । ১৯৯৬ সালে তার লেখা বাংলাদেশ ভ্ৰমণ পুস্তিকাটি প্রকাশিত হয় হাক্কানি পাবলিশার্স থেকে । তার দ্বিতীয় গ্ৰন্থ ৬৪ জেলা ভ্ৰমণ অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে বের হয় ২০০৭ সালে । ২০০৮ সালে প্রকাশ হয় তাঁর তৃতীয় গ্রন্থ ভারত নেপাল ভূটান ভ্ৰমণ । ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রতিটি প্রদেশ তিনি ঘুরে দেখেছেন । বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ভ্রমণ বিষয়ক লেখা জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে লিয়াকত হোসেন খোকনের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এছাড়া দুই বাংলার চলচ্চিত্র বিষয়ে তিনি অন্যতম সেরা লেখক।