এফ এ কাপের ফাইনালে চেলসির বিরুদ্ধে লেষ্টার সিটির হামজা চৌধুরী মাঠে নেমেছেন বদলি খেলোয়াড় হিসাবে। খেলেছেন ১০ মিনিটের একটু বেশি। বড় ম্যাচের গুরুত্ব অনুযায়ী এই প্রথমবারের মত ক্লাব ফুটবলে তার ক্যারিয়ারের বড় একটি এক্সপোজার পেলেন। নানা কারনে এই ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে হামজার ফুটবল ক্যারিয়ারে।
প্রথমত: চেলসি ক্লাবের ফাউন্ডাররা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইসরাইলের পৃষ্টপোষক। লেষ্টার সিটির বিরুদ্ধে এই ফাইনালটি হয়েছে এমন এক সময়ে যখন ইসরাইলি সেনাবাহিনী কর্তৃক শত শত নিরীহ ফিলিস্থিনি জনগণকে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে হত্যা করা হচ্ছে। বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে স্থাপনা।
চেলসির বিরুদ্ধে লেষ্টার সিটির একগোলের এই জয়ের তাৎপর্য অনেক। খেলাশেষে লেষ্টার সিটির অন্যতম তারকা ফুটবলার হামজা মাঠের মধ্যে ফিলিস্থিনের পতাকা উচিয়ে ধরেন। এর মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের প্রতি সংহতি প্রদর্শন করেন। পরে সেই পতাকা গায়ে জড়িয়ে বিজয়ী দলের খেলোয়াড়দের সাথে মেডেল সংগ্রহ করেন।
হামজার এই ভূমিকায় বৃটেনের গণমাধ্যমে অনেক আলোচনার জন্ম হয়েছে। বিশ্বের শান্তিকামী বেশিরভাগ মানুষ হামজার প্রশংসা করেছেন। সামাজিক মাধ্যম টুইটার, ফেসবুকে এই বিষয়ে অনেকেই তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন যার বেশিরভাগই হামজা চৌধুরীকে প্রশংসায় বন্যায় ভাসিয়েছে।
জীবনী বৃত্তান্ত:
হামজা চৌধুরী বাংলাদেশী বংশদ্ভুত একজন বৃটিশ ফুটবলার যিনি ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ড অনুর্ধ-১৯ জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেছেন। তিনি মূলত একজন রক্ষণভাগের খেলোয়াড়। লেষ্টারসিটি ফুটবল ক্লাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড় তিনি।
হামজার মা একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী যিনি হবিগন্জ জেলার বাহুবল উপজেলার একজন বাসিন্দা। ছোটবেলায় হামজার মা বৃটেনে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি প্রথমে বিয়ে করেন একজন গ্রানাডাবাসীকে। এই ঘরে জন্ম নেন হামজা চৌধুরী। পরবর্তীতে হামজা চৌধুরীর মা বিয়ে করেন একজন বাংলাদেশীকে।
ছোটবেলায় মায়ের সাথে অনেকবার বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন হামজা । সেটা কমপক্ষে বিশবার বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে। হামজা সিলেটি বাংলায় অনর্গল কথা বলতে পারেন।
হামজা চৌধুরীর ফুটবল ক্যারিয়ার:
হামজা চৌধুরী ইতিমধ্যেই খেলেছেন ইংল্যান্ড অনুর্ধ ২১ জাতীয় দলে। লেষ্টারসিটির হয়ে ২০১৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ৭০টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। প্রথমবারের মত এফ এ কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
হামজা চৌধুরীর উপার্জন:
হামজা লেষ্টার সিটির সাথে বর্তমানে চার বছরের একটি চুক্তিতে আছেন। এই চুক্তি অনুযায়ী বছরে তিনি বেতন হিসাবে পাবেন £৩৯০০০০ পাউন্ড ষ্টার্লিং যা বাংলাদেশী টাকায় কনভাট করলে দাঁড়ায় চারকোটি সাড়ে ছেষট্রি লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: প্রথম বলেই উইকেট সাকিবের, আইপিএলে কলকাতার শুভসূচনা
ভবিষ্যত পরিকল্পনা:
হামজা চৌধুরীর এই মূহুর্তে একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে যেকোন উপায়ে ইংল্যান্ড জাতীয়দলে স্থান লাভ করা। এই জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন তিনি। এছাড়া হামজার পিতার দেশ গ্রানাডাও তাকে পাবার জন্য ব্যাকুল। তিনি যেকোন সময় সুযোগ পেতে পারেন সেখানে। তবে ব্যক্তিগতভাবে হামজার দ্বিতীয় পছন্দ বাংলাদেশ জাতীয় দল। যদি কোন কারনে ইংল্যান্ডের সেরা দলে বিবেচিত না হন তবে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারেন।