ধারাবাহিক নাটক: রাম -রহিমের প্রেম-1


রাম রহিমের প্রেম নিয়ে সামাজিক দ্বন্দমুখর একটি বাস্তবধর্মী নাটক লিখেছেন: লিয়াকত হোসেন খোকন

রাম আর রহিম দু’জনে একে অপরের প্রাণের বন্ধু।

একজন আরেকজনের বিপদে পাশাপাশি সহ -অবস্থান করে। যখন খুশি তখন তারা একজন আরেকজনের বাড়িতে খাওয়া -দাওয়া করে।
বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুরা ও উস্কানিদাতারা অনেক চক্রান্ত করেও রাম -রহিমের বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে পারেনি।
পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে রাম ও রহিম। জিলাপি ভাজছে এক যুবক বনফুল দোকানের বাইরে রাস্তার পাশে। কেনাকাটা যারাই করেন তারা টাকাটা দেন বনফুলের কাউন্টারে। তবে বয়স্ক লোকটি বা চাচা  কাউন্টারে ঢুকলেন না।
এক বয়স্ক লোক বা চাচা – এই ছেলে, জিলাপি কত করে?
একপোয়া নিব, কত টাকা দিতে হবে?
ইকবাল – একপোয়া জিলাপির দাম ৬০ টাকা।
বয়স্ক লোক বা চাচা  – টাকা আছে মাত্র ৩০ টাকা। এক পোয়া জিলাপি এই টাকায় দিতে পারবা?
ইকবাল – আমার নাম ইকবাল, আমি সব পারি, যেখানে যাই সেখানে করি চুরি। আমার নামের সুনাম নাই কোথাও। কত জায়গার মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিলাম, আর আমি আপনাকে একপোয়া জিলাপি ৬০ টাকার বদলে ৩০ টাকায় দিতে পারব না। এটা কোনো কথা হলো না-কি! ওই গাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়ান। নিয়ে আসছি। খুচরা ৩০ টাকা আছে তো?
চাচা – আছে। চিন্তার কারণ নেই।
বয়স্ক লোকটি অর্থাৎ চাচা গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়াল। একটু পরে জিলাপির প্যাকেটটা বয়স্ক লোকের ব্যাগে দিয়ে তার কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে তা পকেটে ভরে নিয়ে চলে গেল ইকবাল।
রাম ও রহিম তা দেখে ওরা দু’জনে বয়স্ক লোকের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
রাম – চাচা, কি লেনদেন হল?
চাচা – ছোটোখাটো দুর্নীতি হয়েছে মাত্র। পুকুর চুরি তো আর করিনি।
রহিম – বাজার কি কি করলেন?
চাচা – বাজারে যে অগ্নিমূল্য তাতে বেঁচে থাকা বড় দায়। তাই ফাঁকফোকর দিয়ে তরিতরকারি ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতে ভুল করি না। গোস্তের দোকানে গিয়ে দেখি, গোস্তবিক্রেতা বাথরুমে যাবে বলে দাঁড়াতে বললো। এই সুযোগে রানের বড় একটা মাংস ব্যাগে ভরে জলদি কেটে পড়লাম। আমাকে আর কে পায়।
আমি ইকরামের বাপ সবই পারি।
রাম – চাচা, আপনি যা দেখালেন – প্রকল্পের বড় চোরের চেয়ে……। কোন ইকরাম?
চাচা – চোর হবো কেন, আমার টাকা নাই, খেতে হবে, বাঁচতে হবে তাই সুযোগমতো সদাই-পাতি ব্যাগে ভরি। আল্লাহর মাল আমি ব্যাগে ভরলে কেউ চোর হয় না।
রহিম – আপনাকে পুলিশে ধরিয়ে দিব।
চাচা – আমার দুই ছেলে পুলিশ, মানুষের মধ্যে মানুষের গোলমাল লাগিয়ে আমার সুপুত্র ইকরাম  সবার প্রিয়। আর তোমরা আমাকে পুলিশের ভয় দেখাও?
আবাল কোথাকার। তোমাদের দু’জনার ছবি দিয়ে আমার ছেলে ইকরাম এমন কথা লিখবে, তখন দেখবে পুলিশ তোমাদেরকে খুঁজবে। যত্তসব…..
pexels lukas 306066
রাম – রহিম, দ্যাখ -দ্যাখ সামাজিক মাধ্যমে ধর্মের ওপর কি অবমাননাকর কথা লিখেছে একজন শিক্ষকের নাম জড়িয়ে । আবার কিনা কতিপয় ছাত্র তাকে ধর্মীয় প্রশ্ন করে ধর্মের ওপর আঘাতের ফাঁদে আটকাতে চাচ্ছে।
রহিম – ওখানে কমেন্ট বা লাইক দিস না। সবই কট্টরপন্থীদের চক্রান্ত। উঠতি বয়সের বালকরাও ইদানীং গুজব, অপপ্রচার করে সমাজে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মজা নিতে চাইছে।
রাম – এই পোলাপানগুলা ইতরের ঘরে জন্ম না নিলে কি আর একজন শিক্ষকের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়াতে পারে। এরা ইকবাল সাজতে শুরু করেছে।
রহিম – ভালোর সংখ্যা কমে গেছে। চারিদিকে মন্দের সংখ্যা বেড়ে গেছে। কতিপয় বখাটে ছেলে শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দিল, আর কি-না স্কুলের প্রধান শিক্ষক হতে শুরু করে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে বিজ্ঞান শিক্ষকের বিচার চাইল। মিছিলে স্লোগান কি জানিস? ‘ ধর্ম অবমাননার জন্য বিজ্ঞান শিক্ষকের ফাঁসি চাই ‘।
রাম – আর বলিস না, সবাই হুজুগে নাচে। করলো অপরাধ বখাটে কতিপয় ছাত্র, ওরা বিজ্ঞান শিক্ষকের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে কিভাবে পুরো স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষকদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরালো। কারা মিথ্যুক, কারা অপরাধী, কারা গুজব রটায় – তাদেরকে খুঁজে বের করতে তো পারলই না। বরং একজন নির্দোষ গুণসম্পন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অযথা লাগলো।
রহিম – সমাজে সত্যিকারের মেধাসম্পন্ন গুণী লোকের বড় অভাব। সবাই হয়ে আছে যেন এক ধরনের আহাম্মক। আর তা না হলে গুজবের ফাঁদে পা দিয়ে শিক্ষকরা নাচবে কেন , প্রধান শিক্ষকের কথায় অফিস সহকারী বিজ্ঞান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলাই বা করবেন কেন, বোকার মতো ছাত্রছাত্রী করে ভাংচুর আর বেকুব জনগণ করে নানান ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা। গুজবকারী রটায় মিথ্যা রটনা -অপবাদ আর তাতে নাচে হাজার – হাজারজন।
জ্ঞানবুদ্ধি  হবে বোধহয় ওদের মরলে পরে – এর আগে লক্ষ্যন দেখি না।
বিবেকের গান –
ওরে বোকা জনতা, ভুল পথে পা বাড়াস নে,
হুজুগে করিস না নাচানাচি।
ইকবাল হোসেন কোরান রাখল দেবীর পায়ের নিচে
ইকরাম -ফয়সালরা সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ায়
একটি ধর্মের মানুষকে দায়ী করে
দায়ী করে গুজব রটায়।
গুজবের ফাঁদে পা দিয়ে করলো মন্দির লুঠ
পুড়িয়ে দিল বাড়িঘর
মরল মানুষ গুজবের নাচনেওয়ালাদের তাণ্ডবে ।
হায় রে নিঠুর পৃথিবী
কেউ হাসে কেউ কাঁদে
এই ধরনীর বুকে শুধু হানাহানি।
অপরাধ করে ইকবাল হোসেনরা
আর মরে নিরপরাধ সনাতন ধর্মের মানুষ।
Untitled design 2
রাম – পৃথিবী যতদিন আছে ততদিন কি এরকম দেখতে হবে? সকল সময় কি মিথ্যের জয় হবে?  বারবার কি সত্যের পরাজয় ঘটবে?
রহিম – মানুষের বিবেক জাগরিত হওয়ার কোনো লক্ষন নেই। কারণ, তারা বিবেকসম্পন্ন নয়, তারা প্রগতিশীল নয় – কোনটা সত্য তা একটিবারের জন্যও ভেবে দেখে না। করে না যাচাই। এরা গুজবের ফাঁদে পা দিয়ে ভয়ংকরি নৃত্য দেখায়। মিথ্যার পক্ষ নিয়ে উল্লাসে মাতে, পাপে মাততে জানে। ন্যায় কোনটা, অন্যায় কোনটা তা বুঝতে চায় না বলেই তো অন্যায়ের পক্ষে সবাই সাফাই গায়।
রাম – একসময় যখন সত্যটা প্রমাণ হয়, তখনও মানুষ অনুশোচনা করে না। বলে না যে, আমি ভুল করেছি। কেন, ইকবাল হোসেনরা যখন অপরাধী প্রমাণিত হল, তারপর সেই অগ্নিসংযোগকারী, লুঠেরা ও মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা কি ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল ? চায়নি।
রহিম – এ জন্য একদিন মিছিলকারীরা দোজখের আগুনে জ্বলবে -জ্বলবেই।
বিবেকের গান –
ওরে গুজববাজ, মানুষ হও , মানুষ হও
কতকাল থাকবে রে আর অমানুষ।
দশমাস দশদিন পরে শিশু হয় ভূমিষ্ট,
কুশিক্ষা পেয়ে হয় যে অমানুষ।
বেত মেরেও যায় না করা মানুষ ,
হয়ে রয় ওরা ভয়ঙ্করি অমানবিক
করে তাই অপরাধ,
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে
তাই অপরাধী পায় ছাড়া,
অপরাধী জানে কিছুই হবে না
চলে তাই দিনের পরে দিন
খবরের কাগজের পাতায় ভরে যায়
অপরাধের কাহিনি, অপরাধের কাহিনি।
pexels deepak khirodwala 3923073 1
রাম – যারা মিথ্যা গুজবের ফাঁদে সাধারণ মানুষকে ফেলায় তারা কেমন ঘরের সন্তান?
রহিম – কেমন ঘরের সন্তান ? দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ দরিদ্র। দরিদ্ররা কি বুঝবে?  মিথ্যাটাকেই বুঝবে সত্য। যে জন্য ওরা চিরকাল মিথ্যাকে সত্য বলে ধরে নেয়। গুজব যারা রটায় কিংবা মানুষের নামে যারা অপবাদ রটায় তারা হল,
মুনাফাখোর, মজুদদার, লুঠেরা, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, ভেজালবাজ, দখলবাজদের বংশধর।
এই চক্রের বংশধররা পারে সকল ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে।
রাম – যারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এবং পিছন থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষককে অযথা হয়রানি করে জেলের ভাত খাওয়ালো তাদেরকে কি আইনের আওতায় আনা হবে এখন ?
রহিম – শোন রাম, যে করে অপরাধ – তার খুঁটির জোর বড়। প্রতিটি অপরাধীদের মাথার উপর রয়েছে বিশাল বা প্রকাণ্ড আকারের একটা বটবৃক্ষ। যে জন্য ওদের ধরলেও দুই একদিন নাটক দেখানো হয় টেলিভিশনের চ্যানেলে -চ্যানেলে। কয়েকদিন পরে
ক্রিমিনালদের দেখা যায় রাস্তায় রাস্তায় মাস্তানী করতে।
রাম – যারা কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া পোস্ট শেয়ার করে, লাইক করে -ওরা কেমন ধরনের লোক?
রহিম – সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে গেছে একটা, গুজবের কারখানা। তাই যারা এসব শেয়ার করে আর লাইক দেয়, তারা হলো মস্তবড় ক্রিমিনাল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হবে বন্ধু -বান্ধব, আত্মীয় -স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম একটি মাধ্যম। গঠনমূলক প্রবন্ধ লেখারও একটি প্লাটফর্ম। কিন্তু তা করছে ক’জনে? হিংসাত্মক লোকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটাকে আজ অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
রাম – যারা অমানুষ হয়ে যায়, তাদেরকে কোনদিনই মানুষ করা যাবে না?
রহিম – লেজ কখনও করা যায় না সোজা। তাই অমানুষ হয় না কখনও মানুষ।
ভিখিরি – যারা চক্রান্ত করে বিজ্ঞানের শিক্ষককে অপদস্ত হেয় করলে, তোরা কি মানুষ হবি না?
শিক্ষককে ফাঁসানোর সঙ্গে যারা চক্রান্তকারী – ওদের বিচার দেখব কবে, শুনবো কবে?
।অসমাপ্ত।
লিয়াকত হোসেন খোকন