মরক্কোর প্রাচীন কীর্তিময় ৭টি শহর যা দেখলে আপনিও বিমোহিত হবেন


মরক্কোর রাজধানী রাবাত। সমুদ্র উপকূলবর্তী রাবাত শহরে রয়েছে হোটেলের ছড়াছড়ি। রাবাত শহরটি মরক্কোর সবচেয়ে বড় শহর হিসেবে পরিচিত। দেশটির উত্তর -পশ্চিমাঞ্চলে রাবাত শহরটি অবস্থিত। এই শহরের আকর্ষণীয় স্থান হল রয়্যাল প্যালেস ও আর্ট ডেকো ক্যাথেড্রাল। এই শহরের পুরনো অংশের বিভিন্ন গলি -শাখা গলি নিয়ে গড়ে ওঠা রাস্তাগুলো যেন এক ভুলভুলাইয়া। শহরটি জুড়ে রয়েছে প্রচুর গাছের ছড়াছড়ি।

 

উত্তর -পশ্চিম আফ্রিকার এক প্রাচীন মুসলিম দেশ মরক্কোর রয়েছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। আফ্রিকা মহাদেশের একদম উত্তর -পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত মরক্কো নামের দেশটি বহু কারণে বিশ্বখ্যাত। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মিনারবিশিষ্ট মসজিদের অবস্থান মরক্কো দেশেই। বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টি রয়েছে মরক্কোর ফেজ শহরে। এই শহরে তৈরি হয় বলেই টুপিটি ফেজ টুপি নামে বিখ্যাত।

অনেকেই হয়তো খোঁজ রাখেন না যে, ফেজ শহরেরই আল -কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো। ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ফাতিমা আল ফিহরি এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চালু আছে আল -কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে এটি আধুনিক রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, ফাতিমা মুহাম্মদ আল ফিহরি ছিলেন তিউনিসিয়ার কাইরাওয়ানের একজন আরব নারী।

মরক্কোর অন্যতম আকর্ষণ স্থান হল মারাকেশ। এটলাস পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য ঘেরা রাজকীয় এক শহর মারাকেশ।

 

মারাকেশ
কুতুবিয়া মসজিদ, মারাকেশ

 

মারাকেশের জেম্যা ঈল ফনা স্কয়্যার। এটি হল শহরের চত্বর এবং বাজার এলাকা। মারকেশে রয়েছে  কুতুবদিয়া মসজিদ, বিভিন্ন প্যালেস, সমুদ্র সৈকত ও সুইমিং পুল সহ বহু হোটেল। সেখানে রাত্রিযাপন করে বেশ আনন্দ মেলে।

মরক্কোর উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হল –

১.। মরক্কোর দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সিদি ইফনি শহরে রয়েছে সমুদ্র সৈকত। এরই পাশাপাশি আছে সার্ফ খেলার জায়গা। শহরে বেশ কয়েকটি ক্যাফে ও রেঁস্তোরা রয়েছে। সেখানে ঢুকে পছন্দের খাবার খেতে পারেন। একদা এই শহরটি কয়েক দশক ধরে স্পেনিশদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল।

২. মেকনেস। মেকনেস শহরে রয়েছে মনুমেন্ট, মসজিদ, প্যালেস, প্যাভিলিয়নসহ আরও অনেক দর্শনীয়। তাই অবশ্যই মেকনেস শহরে দু’তিন দিন অবস্থান করবেন। জানা যায়, নবম শতকে বার্বার জাতি এই শহরে প্রথম বসতি গড়ে তোলে। একাদশ শতকের মধ্যে শহরটি সমৃদ্ধ শহরে রূপ পায়। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর সুলতান মৌলে ইসমাইল এই শহরকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

৩. ফেস। ৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফেস শহর মরক্কোর রাজধানী ছিল। বর্তমানে এই শহরটি মরক্কোর তৃতীয় বড় শহর হিসেবে পরিচিত। ফেস শহরে গিয়ে দেখবেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা। ফেস শহরে রয়েছে অষ্টাদশ শতকে নির্মিত মুরিশ প্যালেস। তবে এটি দেখার পর মিউজিয়াম অবশ্য ঘুরে দেখে নিবেন।

৪. আসিলাহ। আসিলাহ শহরটি সমুদ্রের কাছে অবস্থিত। এখানে রয়েছে রিসোর্টের ছড়াছড়ি। একটি রাত এখানে কাটিয়ে প্রবল আনন্দ পাবেন। রাতের আলো আঁধারে সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়াতে ভুলে যাবেন না কিন্তু। আসিলাহ শহরটি মরক্কোর উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে এই শহরের খ্যাতি রয়েছে। একদা ফিনিশীয় জাতিরা এই শহরে বাণিজ্য করতে আসে। তাও প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা।

৫. শেফচৌয়েন। জাতীয় উদ্যান দেখতে চাইলে অবশ্যই শেফচৌয়েনে যাবেন। মরক্কোর উত্তর – পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এ শহরটি। শেফচৌয়েন শহরটি রিফ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বলে শহরটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তুলনা নেই। শহরের টালাসেমটানে জাতীয় উদ্যান – একটি দিন ঘুরে দেখার জন্য এই দৃষ্টিনন্দন উদ্যানে গিয়ে বেশ আনন্দ পাবেন।

৬. ভলুবিলিস। তৃতীয় শতাব্দীতে তৈরি হওয়া ভলুবিলিস শহরে দেখবেন প্রাচীনকালের নানা রোমান স্থাপত্য।

 

ফেজ, মরক্কো
মরক্কোর মরুভূমির একটি দৃশ্য

 

৭. মূলে ইদ্রিস। মূলে ইদ্রিস শহরটি পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। এখানে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত মসজিদটি দেখার মতো। মূলে ইদ্রিস শহরে গিয়ে যেন ফিরে আসতে মন চাইবে না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অতুলনীয় মূলে ইদ্রিস শহরটি।

মরক্কোর আরও উল্লেখযোগ্য স্থান হল – টেটোয়ান, এসাউইরা, এইত বেনহাদু।

মনে রাখবেন, দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ইসলামিক নানা নিদর্শনে ভরা এই মরক্কো দেশটি। প্রাচীন ঐতিহ্য আর সাংস্কৃতিক নানা নিদর্শন

নিয়ে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে আছে মরক্কো। অর্থনৈতিক প্রগতিতে ইদানীং মরক্কো এগিয়ে গেছে। সর্বক্ষেত্রে পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া।

ভ্রমণ নিয়ে আরও পড়ুন: ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও পেরু ভ্রমনে যেসব স্থান ঘুরে দেখবেন

ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে মরক্কোর যুবকরা বিশ্বের বিখ্যাত ফুটবলের দেশগুলিকে ছাড়িয়ে গেছে। মরক্কোর ফুটবলারদের বড় গুণ, প্রাণশক্তি প্রচুর। দৌড়াদৌড়িতে মনে হয়, ২০২২ সালের বিশ্বকাপের সেরা অ্যাথলেটিক দল তারা।

মরক্কোতে রয়েছে আরগান গাছের ছড়াছড়ি। এই গাছের ফলের বীজ দিয়ে মরক্কো দেশে এক ধরনের তেল বের করা হয়। আর তা রান্নায় ও প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

মরক্কোতে গেছো ছাগলের সংখ্যাও অত্যাধিক। মরক্কোর ছাগলের প্রিয় খাদ্য আরগান গাছের ফল।

সেই ফল খাবার জন্যই তারা তরতর করে উঠে পড়ে গাছের ডালে।

ফলটা খেলেও এই ফলের বীজ ফলের বীজ কিন্তু ছাগলরা হজম করতে পারে না। সেই ফেলে দেওয়া বীজ জোগাড় করতে গেছো ছাগলগুলোর পিছনে ঘুরে বেড়ায় মরক্কোর চাষি ও পশু পালকরা।