বৈজু বাওরা ও ষোলভা সাল: পঞ্চাশের দশকের স্মরণীয় 2টি হিন্দি ছায়াছবি 


১৯৫০ – এর দশকে মনে রাখার মতো অসংখ্য হিন্দি ছবি নির্মিত হয়েছিল, সেই সব ছবি দেখার স্মৃতি এখনও অনেকের মন থেকে মুছে যায়নি। এমনই স্মরণীয় দু’টি হিন্দি ছবি হল বৈজু বাওরা আর ষোলভা সাল।

বৈজু বাওরা – মুক্তির তারিখ : ৫ ই অক্টোবর, ১৯৫২।

মন তড়পত হরি দরশন কো আজ, মন তড়পত হরি দরশন কো আজ, মোরে উন বিন বিগড়ে জিগড়ে আজ, বনতি কি রাত হো রাখিও লাজ। তুমহারে দুয়ার কা হো ম্যায় জোগী,  হামারি আওর নজর কব হোগী, ছুনো মেরে ব্যকুল মনকা বাজ —, বিন গুরু গীয়ান কাহা ছে লাও, বে জুবান হরি গুণ গাও। জব গুণী জিনপে তুমরা রাজ। মেরা মনুর আশ না তুড় দো, মুরলী মনোহর মোহন গিরিধার হরি ওঁ , ও দুঃখ বুঝন মুরা ছাথ না ছোড়,  মেরে দরশন বখশা দে দো আজ, মুরলী মনোহর — মন তড়পত……. ” – গানখানি এক সময় ভারতবর্ষের সিনেমা প্রেমিকদের মুখে মুখে ফিরতো।

তারপর কেটে গেল ৭০ টি বছর। আজও এই গান সমান  জনপ্রিয়। আর স্মরণীয় ছবি হয়ে রইলো ” বৈজু বাওরা “।

মীনা কুমারীর খ্যাতি ফুরিয়ে যায় নি। ভারত ভূষণ সে আমলে ঘরে ঘরে পূজিত হতো।

ইতিহাস খ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ বৈজু – বাওরা ও তানসেনের জীবনের ওপর ভিত্তি করে এ ছবির কাহিনী রচিত হয়েছিল।

ছবির হৃদয় বিদারক কাহিনী ও গানের জন্য সে আমলের সিনেমা প্রেমিকরা বৈজু বাওরা ছবিটি রাতের পর রাত দেখেছে।

সবার মুখে মুখে ছিল — ” বচপ কি মোহাব্বত কো দিলছে জুদা কর না — ” গান সহ অন্যান্য গানগুলি।

১৯৫২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ” বৈজু বাওরা ” ছবিতে অভিনয় করেছিলেন – মীনা কুমারী, ভারত ভূষণ, সুরেন্দ্র, কুলদীপ কাউর, বিপিন গুপ্ত, মনোমোহন কৃষ্ণ, বি এম ভেয়াস, মিশ্র, রাধাকৃষ্ণ, কেশরী, তাবাসসুম, রাই মোহন, নাদির, রাজন হকসার, ভগওয়ানজী, রমেশ, সীতারাম, কৃষ্ণা কুমারী।

বৈজু বাওরা ও ষোলভা সাল

কে কোন চরিত্রে ছিলেন —

ভারত ভূষণ — বৈজুর ভূমিকায়।  মীনা কুমারী — গৌরী চরিত্রে।  সুরেন্দ্র — তানসেন চরিত্রে। কুলদীপ কাউর – রূপমতী চরিত্রে। ছবির পরিচালক ছিলেন – বিজয় ভট্ট । সংগীত পরিচালক – নৌশাদ আলী। চিত্রশিল্পী : ভি, এন, রেড্ডি। সম্পাদনা: প্রতাপ দেব। চিত্রনাট্য : আর, এস, চৌধুরী। প্রযোজনায় : প্রকাশ পিকচার্স। সংগীত মুখর ছবি ছিল ” বৈজু বাওরা ” ছবিটি।

বৈজু বাওরা ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের গান : বচপন কি মোহাব্বত না দিলছে জুদা করনা, বচপন কি মোহাব্বত কো দিলছে না জুদা করনা, জব ইয়াদ মেরি আয়ে মিলনে কি দোয়া করনা। ঘর মেরি উম্মিদো কা ছুনা কিয়া যাতে হো, জুগম দিয়ে যাতে হো উছ গমকি দোয়া করনা, বচপন কি……., ছাউনমে পাপিয়ে কা সঙ্গীত চুরাউঙ্গি, ফরিয়াদ তুম হি আপনি গা – গাকে শুনাউঙ্গি , আওয়াজ মেরি শুনকর দিল থাম লিয়া কর না, বচপন কি…………………”।

এই ছবিতে গান গেয়েছিলেন – মোহাম্মদ রফি, লতা মঙ্গেশকর, ওস্তাদ আমীর খান, শামসাদ বেগম – প্রমুখ কন্ঠশিল্পীরা। ছবির কাহিনীকার ছিলেন – রামচন্দ্র ঠাকুর। ভাষা : হিন্দি।

বৈজু বাওরা ছবিটি দেখুন এখানে

বৈজু বাওরা ছবির আরও উল্লেখযোগ্য গান হলো –

১. ইনসান বানো — কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ রফি। ২. তরি যাই যাই করতার — কণ্ঠশিল্পী : আমির খান। ৩. ঘনান ঘনান ঘন গরজে — কণ্ঠশিল্পী : আমির খান। ৪. ও দুনিয়া কে রাখেওয়ালা — কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ রফি। ৫. দূর কোই গায়ে — কণ্ঠশিল্পী : লতা মঙ্গেশকর। ৬. মোহে ভুল গায়ে সানওয়ারিয়া — কণ্ঠশিল্পী : লতা মঙ্গেশকর। ৭. তু গঙ্গা কি মৌজ — কণ্ঠশিল্পী : লতা মঙ্গেশকর। ৮. ঝুলে ম্যায় পাওয়ান কি আয়ে — কণ্ঠশিল্পী : লতা মঙ্গেশকর। ৯. আজ ঘাট মন মেরো — কণ্ঠশিল্পী ঃ আমির খান ও পণ্ডিত ডি, ভি। ১০. মন তরাপত হরি দরশন কো — কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ রফি। ১১. বাচপান কি মোহাব্বত — কণ্ঠশিল্পী : লতা মঙ্গেশকর।

আরও পড়ুন:সঞ্জীবনী সুধায় কঙ্কাবতীর ঘাট থেকে উত্তম কুমারের যাত্রা হল শুরু

ষোলভা সাল

মুক্তির বছর — ১৯৫৮ ষোলভা সাল ছবির পরিচালনায় :  রাজ খোসলা। প্রযোজনায় : চন্দ্রকান্ত সি দেশাই। সুরসৃষ্টি : শচীন দেব বর্মণ। গীত রচনা : মজরুহ সুলতানপুরী। ভাষা : হিন্দি।

অভিনয়ে :

দেব আনন্দ, ওয়াহিদা রেহমান, জগদীপ, কামো, সুন্দর, বিপিন গুপ্ত, বীর সাকুজা, এ, কাপুর, টুনটুন, প্রভু, বলবীর, অনিল, লীলা, শীলা বাজ, হীরা সাওয়ান্ত, পাপ্পু এবং আরও অনেকে।

নব যৌবনে ছেলে কিম্বা মেয়েটি কি করবে তা ভেবে পায় না — ষোল মানে যৌবন শুরু টালমাটাল হয়ে ভাল লাগার মানুষটিকে মন দিয়ে বসে ছেলে কিম্বা মেয়েটি। একই ক্লাসে পড়ে প্রেমিকা ও প্রেমিক  —

একে অপরের প্রেমে জড়িয়ে ঘর থেকে কখনও কখনও পালিয়ে যায় যৌন উত্তেজনার কারণে। কখনো দৈহিক মিলনের জন্য ,

আবার কখনও বা বাবা- মা পাত্র ঠিক করেছেন শুনে মেয়েটি তাঁর প্রেমকে সফল করে তুলতে দিকবিদিকশুন্য হয়ে  প্রেমিক যুবকটির হাত ধরে ঘর থেকে পালিয়ে যায়।

এ রকমই ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছিলো ষোল ভা সাল ছবিতে।

 

বৈজু বাওরা ও ষোলভা সাল

আবার কখনও কখনও মেয়ের সর্বনাশ ঘটিয়ে তার সোনা গয়নার লোভে পড়ে — তা নিয়ে চম্পট দেয় কোনো কোনো লোভী প্রেমিক যুবক।

ছবিতে নব প্রেমিক – প্রেমিকা দু’জনেই ঘর থেকে পালিয়ে এসে উঠলো ট্রেনে। লাজ ও শ্যাম — উঠতি বয়সের এই দুই প্রেমিক – প্রেমিকা ট্রেনে বসে প্ল্যান করছিল কোথায় যাবে কি করবে —।

ট্রেনে প্রাণ নামে এক কৌতুকপূর্ণ সাংবাদিক প্রেমিকাদের পরিকল্পনার শুনে এবং একটি গল্পের অনুসন্ধানে তাদের অনুসরণ করতে থাকে।

শ্যাম প্রাণের গতিবিধি বুঝতে পারে, একসময় লাজের নেকলেস নিয়ে ছুটে যায় সে।

ষোলভা সাল ছবিটি দেখুন এখানে

প্রেমিক – প্রেমিকা হয়ে গেল বিচ্ছিন্ন।

নেকলেস উদ্ধার করতে প্রাণ আসে – – –

এরপরে যা ঘটেছে তার ষড়যন্ত্র, অ্যাডভেঞ্চার এবং রোম্যান্সের একটি গানে ভরপুর ক্যাপচার —-

লাজ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে থাকে, যেমন — চিন্তামগ্ন হয়ে পড়লো, কিছুই বুঝতে পারে না, কি হতে কি হয়ে গেল ;

কোথায় যাবে – কি করবে ;

হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করে —

ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে ভুল পথে চলে যাওয়া —

ইত্যাদি আরও কত কি অঘটন ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়ে ছিল ।

এই সকল সমস্যা থেকে লাজকে বেরিয়ে আসতে সহযোগিতা করেছিল  প্রাণ।

ষোলভা সাল ছবির গানগুলি হ’লো : ১. হাই আপনা দিল তো আওয়ারা  — প্রথম পার্ট  —- কণ্ঠশিল্পী : হেমন্ত কুমার। ২. দেখো মোহে লাগা ষল ভা সাল — কণ্ঠশিল্পী : আশা ভোঁসলে, মোহাম্মদ রফি ও সুধা মালহোত্রা। ৩. হাই আপনা দিল তো আওয়ারা — ২ য় পার্ট — কণ্ঠশিল্পী : হেমন্ত কুমার। ৪. ইয়ে ভি কোই রুথনে কা মৌসম হ্যায় —- কণ্ঠশিল্পী : আশা ভোঁসলে।

৫. নজর কি কাতারি ইয়ে কৈ সি — কণ্ঠশিল্পী : আশা ভোঁসলে।

৬. ইয়াহী তো হ্যায় ভোট দেখি ইয়াহী তো হ্যায় —-

কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ রফি।