রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠা ১১ বছরের বালিকা এমি। কঠোর পারিবারিক অনুশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নাচের দলে যোগ দেয়। সেখানেই খুঁজে পায় শান্তি। এই গল্প নিয়েই কিউটিস। তবে কিউটিসে শিশু পর্ণগ্রাফির প্রতিবাদে সর্বত্র কমছে নেটফ্লিক্সের গ্রাহকসংখ্যা।
এমির বড় হয়ে উঠার গল্প নিয়ে ফরাসী ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মান করেন সেনেগালি বংশদ্ভুত ফ্রেন্চ নাগরিক মামুনা ডুকুরি। ব্যাপক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ছবিটি মুক্তি পায় গত ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ছবিটি মুক্তির পর এর পটভূমি এবং শিশুদের মাঝে যৌনতাকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে দর্শকমহল থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ আসতে শুরু করে।
বিশেষ করে ইউরোপের উদার দর্শকসমাজও এরকম যৌন উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়াকে মেনে নিতে পারে নি। বিশেষ করে স্কুলগামী কিশোর কিশোরীদের মাঝে এই সিনেমা যৌনতাকে উস্কে দিতে পারে এই আশংকায় অনেকেই সরব হয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ইস্যুতে অনেক দিন সরব থাকতে দেখা গেছে দর্শকদের। সরাসরি প্রশ্নবানে জর্জরিত করেছেন নেটফ্লিক্স কতৃপক্ষকে। চালু করেছেন নেটফ্লিক্স ত্যাগ করুন হ্যাশট্যাগ আন্দোলন। এটি ভাইরাল হওয়ার কারনে নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে প্রচুর পরিমানে দর্শক তাদের গ্রাহক সাবসক্রিপশন প্রত্যাহার করেছেন।
ফলশ্রুতিতে দ্রুত ধ্বস নেমেছে নেটফ্লিক্সের ব্যবসায়। সদস্যভুক্তি বাতিলের কারনে গ্রাহকসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এই মুহর্তে এর হার প্রায় ৮০০ শতাংশ বলে দুটি বাজার বিশ্লেষক কোম্পানীসূত্রে জানা গেছে।
নেটফ্লিক্সের গ্রাহকসংখ্যার উপর নজর রাখে এমন একটি সংস্থা এ্যান্টেনা জানিয়েছে হ্যাশট্যাগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পরই গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের গ্রাহক সংখ্যার পর্যালোচনা করে সংস্থাটি জানিয়েছে আগষ্ট মাসে যে পরিমান লোক নেটফ্লিক্স ছেঁড়েছেন সেপ্টেম্বরে তার পাঁচগুণ বেশি চলে গেছেন।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক ইপিতডাটা, যা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে তথ্য বিক্রি করে, সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে হ্যাশট্যাগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পরদিন থেকে প্রায় আট গুণ হারে গ্রাহক সংখ্যা হারাচ্ছে প্রতিষ্টানটি।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সেরা সিনেমা দেখুন বিনামূল্যে ১৬ মাস আনলিমিটেড!
সামাজিক মাধ্যম এবং সংগীত ভিডিও দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একটি নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য কিশোরীদের দলটি অণুশীলন শুরু করে। তবে সেটা ছিল কম বয়সী মেয়েদের নিয়ে যৌন উত্তেজক দৃশ্যাবলীর সহযোগে চিত্রায়িত। ছবিটির নির্মাতা ডকোরী বলেছেন যে প্যারিসের একটি দরিদ্র শহরতলিতে নির্মিত চলচ্চিত্রটি তার নিজের অভিজ্ঞতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং এটি শিশুদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর সামাজিক মন্তব্য। তবে ছবিটিতে কিশোরী মেয়েদের নিয়ে যৌন উস্কানীমুলক নাচের ভঙ্গিতে দেখানো হয়েছে যা শিশুদের মধ্যে যৌনতা ছড়িয়ে দিতে পারে বলে অভিযোগ দর্শকদের। এজন্য ছবিটি মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে আইনী ঝামেলার মধ্যেও পড়েছে নেটফ্লিক্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি আদালত ছবিটির মাধ্যমে অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। অবশ্য নেটফ্লিক্স বলেছে কিউটি ছবিটি মূলত: শিশুদের যৌন আসক্তি ছড়িয়ে পড়ার একটি বর্ণনা মাত্র। অভিযোগের যুক্তি নেই এবং আমরা ছবিটির সাথে থাকব।
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ ছবিটির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে কাজ করছেন। এটর্নী জেনারেল উইলিয়াম বারের কাছে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানান ছবিটি বাচ্চা মেয়েদের মধ্যে যৌনতাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে নাচ এবং উত্তেজক দেহভঙ্গিমার মাধ্যমে। এর মধ্যে একটি ছবিতে উঠন্ত মেয়ের স্তনযুগলকেও দেখানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি জানান, ছবিটি সম্প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে আমি চিঠি দিয়েছি যাতে ছবিটির মাধ্যমে নেটফ্লিক্স, এর নির্বাহীগণ কিংবা ছবিটির নির্মাতা শিশু পর্ণগ্রাফি উৎপন্ন ও বিপননের মাধ্যমে ফেডারেল আইন লংঘন করেছেন কীনা তা খুঁজে দেখা হয়।
অবশ্য সাম্প্রতিক হ্যাশট্যাগ আন্দোলনে গ্রাহক সংখ্যা কিছুটা কমলেও এখনও বলা যায় সম্প্রচার জগতের জলহস্তী হিসাবেই রয়েছে নেটফ্লিক্স। সারাবিশ্বে কোম্পানীটির গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে উনিশ কোটি, যার মধ্যে শুধুূ উত্তর আমেরিকাতেই প্রায় সাড়ে সাত কোটি। এ বছরের শেষ নাগাদ বিশ কোটি গ্রাহক সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় ছিল নেটফ্লিক।