উত্তর আমেরিকার ধনী দেশ কানাডা। বলা হয়ে থাকে কানাডা ইমিগ্রান্টদের দেশ। লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন।
Table of Contents
- ১৫৪৫ খৃষ্টাব্দ থেকে ইউরোপের বই এবং মানচিত্রে এই অঞ্চলকে ‘কানাডা’ হিসেবে নির্দেশিত করা শুরু হয়।
- এ দেশে প্রতিদিন আনটার্টিক বরফাচ্ছন্নের দ্বারা শৈত্য প্রবাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই কানাডাকে বলা হয় ‘শৈত্যপূর্ণ এবং হিমশীতল দেশ’।
- কানাডার দর্শনীয় শহর ও জায়গাগুলো হলো – হুইসলার, কেপপ্যারি, বেলচার দ্বীপ, চার্চিল, প্রিন্স অ্যালবার্ট, রেজিনা, ক্যালগারি, এডমনটন, প্রিন্স জর্জ, ইয়োলো নাইফ, লাব্রাডর, পেলি বে, ফ্রবিসার বে, উইনিপেগ, ডেভন দ্বীপ, সাউদাম্পটন দ্বীপ, কেটচিকান, ভ্যানকুভার, ভিক্টোরিয়া, টোফিনো, কুইবেক, মন্ট্রিয়ল, অটোয়া, ব্যানফ, লেক লুইস, টরেন্টো -ইত্যাদি।
উত্তর আমেরিকার আমেরিকার উত্তরাংশে অবস্থিত কানাডার অধিকৃত ভূমি প্রথম বসবাসের জন্য চেষ্টা চালায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা। পঞ্চদশ শতকের শুরুতে ইংরেজ এবং ফরাসি অভিযাত্রীদল আটলান্টিক উপকূল আবিষ্কার করে। এরপরে এখানে ইংরেজ ও ফরাসিরা কানাডায় বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এখানে প্রায় ৮ বছর ধরে যুদ্ধ চলে। ১৭৬৩ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যের কাছে পরাজয় স্বীকার করে কানাডা থেকে চলে যায়।
ব্রিটিশরা এরপরে কানাডা দীর্ঘদিন ধরে শাসন করে। ব্রিটিশরা এখানে প্রথম চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ নিয়ে দেশ হিসেবে কানাডা গঠন করে। এরফলে পরবর্তীতে আরও প্রদেশ ও অঞ্চল গঠনের পথ সুগম হয়। তাছাড়া দেশটি ইংল্যান্ড থেকে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছিল। ১৯৮২ খৃষ্টাব্দে জারিকৃত কানাডা অ্যাক্ট অনুসারে দশটি প্রদেশ এবং তিনটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত কানাডা সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আইনগত রাজতন্ত্র উভয়ই মেনে চলে।
কানাডার উত্তর -পূর্বাংশ জুড়ে রয়েছে শিল্ড অঞ্চল। বিরাট ‘ভি’ আকৃতির এ অঞ্চলটি হাডসন উপসাগরের কোলে অবস্থিত। পৃথিবীর মোট ১১টি শিল্ড অঞ্চলের মধ্যে এটি বৃহত্তম। শিল্ড কথার অর্থ হল বর্ম বা ঢাল, তবে এক্ষেত্রে এর অর্থ শক্ত পাথুরে তরঙ্গায়িত ভূমিরূপ। এর আরেক নাম – লরেন্সিয় মালভূমি।
কানাডা নামটি এসেছে সেন্ট লরেন্স ইরোকোয়াইয়ান শব্দ ‘কানাটা’ থেকে, যার অর্থ ‘জেলেদের ক্ষুদ্র গ্রাম’ অথবা জেলেদের বসতি। আরও জানা যায়, ১৫৩৫ খৃষ্টাব্দের দিকে বর্তমান ক্যুবেক শহরের বসবাসকারীরা অভিযাত্রী জ্যাক কার্তিয়ারকে স্টেইডাকোনা গ্রামের দিকে পথ নির্দেশনার সুবিধার্থে শব্দটি ব্যবহার করেছিল। কার্তিয়ার ‘কানাডা’ শব্দটি ব্যবহার করেছিল শুধুমাত্র গ্রামটি চিহ্নিত করতেই নয়, বরং গ্রাম্য প্রধান ডোন্নাকোনা সম্পর্কিত সব কিছু নির্দেশ করতে।
১৫৪৫ খৃষ্টাব্দ থেকে ইউরোপের বই এবং মানচিত্রে এই অঞ্চলকে ‘কানাডা’ হিসেবে নির্দেশিত করা শুরু হয়।
বর্তমানে কানাডা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি। প্রায় তিন চতুর্থাংশ মানুষ অর্থাৎ কানাডাবাসী কোন না কোন সেবা শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কাঠ ও খনিজ তেল আহরণ শিল্প কানাডার প্রধানতম দু’টি ভারী শিল্প। তাছাড়া কানাডার অন্টারিওতে রয়েছে মোটরযান উৎপাদন শিল্প কারখানা।
উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশে অবস্থিত কানাডা। কানাডা রাষ্ট্রের দশটি প্রদেশ ও তিনটি অঞ্চল ও আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর এবং উত্তরে আনটার্টিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। কানাডা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। উত্তর আমেরিকার শতকরা প্রায় ৪১ ভাগ জায়গা নিয়ে কানাডা দেশটি গঠিত।
এ দেশে প্রতিদিন আনটার্টিক বরফাচ্ছন্নের দ্বারা শৈত্য প্রবাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই কানাডাকে বলা হয় ‘শৈত্যপূর্ণ এবং হিমশীতল দেশ’।
কানাডার রাজধানী বসেছে অটোয়াতে। এ দেশের বৃহত্তম শহর হলো টরেন্টো। কানাডার সরকারি ভাষা ইংরেজি ও ফরাসি। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে কানাডাতে। এই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ইউরোপীয়দের সংখ্যা সবচাইতে বেশি। অর্থাৎ ইউরোপীয়দের সংখ্যা প্রায় শতকরা ৭৩ ভাগ। এরপরে জাতিগোষ্ঠীদের মধ্যে যাদের বসবাস রয়েছে তারা হলো – আদিবাসী, আফ্রিকান, এশিয়ান, লাতিন, আমেরিকান ও ওশেনিয়।
কানাডার অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এছাড়া অল্পসংখ্যক লোক হিন্দু, শিখ, ইসলাম, বৌদ্ধ, ইহুদি সহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর রয়েছে। তবে অনেক লোক আছে যাদের কোনো ধর্ম নেই। এদের সংখ্যা প্রায় শতকরা ২৪ ভাগ। আর খৃষ্টান ধর্মালম্বীর সংখ্যা শতকরা প্রায় ৬৮ ভাগ।
কানাডার মোট আয়তন ৯৯,৮৪,৬৭০ বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে স্থলভাগের মোট আয়তন
৯০,৯৩,৫০৭ বর্গকিলোমিটার। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী কানাডার জনসংখ্যা ৩,৮৪,৩৬,৪৪৭ জন।
এদেশের মুদ্রার নাম কানাডীয় ডলার।
কানাডার দর্শনীয় শহর ও জায়গাগুলো হলো – হুইসলার, কেপপ্যারি, বেলচার দ্বীপ, চার্চিল, প্রিন্স অ্যালবার্ট, রেজিনা, ক্যালগারি, এডমনটন, প্রিন্স জর্জ, ইয়োলো নাইফ, লাব্রাডর, পেলি বে, ফ্রবিসার বে, উইনিপেগ, ডেভন দ্বীপ, সাউদাম্পটন দ্বীপ, কেটচিকান, ভ্যানকুভার, ভিক্টোরিয়া, টোফিনো, কুইবেক, মন্ট্রিয়ল, অটোয়া, ব্যানফ, লেক লুইস, টরেন্টো -ইত্যাদি।
টরেন্টোর প্রধান আকর্ষণ – সবুজ উদ্যান, কুইন্স পার্ক, আর্ট গ্যালারি অফ অন্টারিও, রয়াল অন্টারিও মিউজিয়াম, হকি হল অফ ফেম, দ্য বেল লাইটবক্স।
ব্যানফ শহর থেকে কিছুটা দূরত্বে লেক লুইস জায়গাটি তার হিমবাহ, স্বচ্ছ পানির হ্রদ ও পর্বতমালার জন্য বিখ্যাত। ব্যানফ শহরের আকর্ষণ হল – রিসোর্ট, জাদুঘর, ন্যাশনাল পার্ক, বরফাচ্ছাদিত পাহাড়। অটোয়ার দর্শনীয় স্থান হল – পাবলিক পার্ক, জাদুঘর, পার্লামেন্ট হিল, ট্রি লাইন রাউডাউ খাল। মন্ট্রিয়লের আকর্ষণ হলো – মন্ট রয়্যাল পর্বত, বিস্ময়কর বিভিন্ন স্থাপনা, আইল্যান্ড অফ মন্ট্রিয়ল, গ্যালারি, জাদুঘর। কুইবেক হল ফরাসি কানাডিয়ান সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু।
এখানের দর্শনীয় স্থান হল – পুরনো আমলের বাড়িঘর, গীর্জা, ক্যাফে, বিস্ট্রোস, ম্যানিকিউরেটেড স্কোয়ার, চটিউ ফ্রন্টেন্যাক। কানাডার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত টোফিনোর দর্শনীয় স্থান হল – সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন পার্ক। কানাডার ভিক্টোরিয়া শহরকে বলা হয় গার্ডেন সিটি। এখানে প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে বাগান। তাছাড়া রয়েছে বাটচার্ট গার্ডেন, গোল্ডস্ট্রিম প্রোভিনশিয়াল পার্ক আর সমুদ্র সৈকত। কানাডার সমুদ্র পার্শ্ববর্তী শহর হুইসলারের দর্শনীয় স্থান হল – বরফময় পাহাড়, স্নোবর্ডিং কল্পকাহিনী যুক্ত গ্রাম, রিসোর্ট আর রিসোর্ট।
ভ্যানকুভার শহরটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত। এই শহরের পাশে রয়েছে জর্জিয়া প্রণালীর তীর, কোস্ট পর্বতমালা। কানাডার সর্ববৃহৎ বন্দর এই শহরটি। ভ্যানকুভার শহরটি ব্রিটিশ নাবিক জর্জ ভ্যানকুভারের নামে নামকরণ হয়েছে। নিউইয়র্ক ও লসঅ্যাঞ্জেলেসের পরেই ভ্যানকুভার কানাডার তথা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প শহর।