ছন্দময় ফুটবলশৈলী উপহার দিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে কলম্বিয়া ও ইকুয়েডর। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ শুরুরপূর্বে কলম্বিয়া ছিল অন্যতম ফেভারিট। যদিও মূলপর্বে তারা ব্যর্থ হয়েছিল। কলম্বিয়া ও ইকুয়েডর নিয়ে লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন।
Table of Contents
- দক্ষিণ আমেরিকার দুই দেশ কলম্বিয়া আর ইকুয়েডর । এই দুই দেশের অবস্থান পাশাপাশি।
- কলম্বিয়ার টোলিমা শহর নদীর ধারে – শহরটা পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত। শহরটি খুব ছোট।
- কলম্বিয়ান রেফারি উইলমার রোলদান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল রেফারি হিসেবে খ্যাত।
- পূর্ব দিকে গেলে ঘন বনজঙ্গল। সেখানে বন্য শূকরের বসবাস। খুব সাহসী লোকেরা বনজঙ্গলে যায় বন্য শূকর ধরার জন্য।
দক্ষিণ আমেরিকার দুই দেশ কলম্বিয়া আর ইকুয়েডর । এই দুই দেশের অবস্থান পাশাপাশি।
দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ার দক্ষিণে পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড় যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনও কোনও পাহাড় পাঁচ হাজার ফুট উঁচু। লোকজন খুবই কম এসব পাহাড়ি অঞ্চলে। বড় বড় পাহাড়ের গা বেয়ে রাস্তা চলে গেছে নানান দিকে। এখানে যানবাহন চলাচল করে পাহাড়ি পথে ওঠা -নামার ঘুরপাক খেতে খেতে। প্রথম দেখায় মনে হবে ভুল পথে বুঝি যাচ্ছি।
কলম্বিয়া দেশটির দক্ষিণে ইকোয়েডর বা ইকোইটোস দেশ।
কলম্বিয়া থেকে ইকুয়েডরে যাওয়ার পথে রয়েছে আন্দিজ পর্বতমালা। পাহাড়টা যেন প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে। এ পাহাড়ি পথে চললে কখনও কখনও মনে হবে, পাহাড় যেন গিলে খাবে সব।
কলম্বিয়ার বোগোটা শহর ৯ হাজার ফুট উঁচুতে। পাহাড়ের গায়ে রাস্তা রয়েছে। এ রাস্তা হয়ে যানবাহন যাচ্ছে বোগোটা শহরে। এখানকার বেশির ভাগ লোক রেড ইন্ডিয়ান। বোগোটা হল কলম্বিয়ার রাজধানী শহর।
কলম্বিয়ার পাহাড়ি এলাকায় চোকা নদীর ধারে গেলে দেখা যায় কোনো মানুষের বসবাস নেই সেখানে। কিন্তু চারদিকের দৃশ্য অপূর্ব সুন্দর, যেন হৃদয় -মন হরণ করে নেয়।
কলম্বিয়ার টোলিমা শহর নদীর ধারে – শহরটা পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত। শহরটি খুব ছোট।
দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর -পশ্চিম অংশে অবস্থিত কলম্বিয়া দেশটি। কলম্বিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে আছে নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত, পর্বতমালা, সবুজ অরণ্য। কলম্বিয়ার পাশে রয়েছে ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর। এই দেশটির পূর্বে ভেনেজুয়েলা ও ব্রাজিল, দক্ষিণে ইকুয়েডর ও পেরু এবং উত্তর -পশ্চিমে পানামা।
এই দেশের আদিবাসীরা হল চিবচা জাতি। ১৬শ শতক থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত কলম্বিয়া স্পেনের একটি উপনিবেশ কলোনি রাজ্য ছিল। ১৮১৯ সালে কলম্বিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
শক্তিশালী মাদক চোরাকারবারি চক্রের প্রভাবে কলম্বিয়া দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কুখ্যাতি অর্জন করে আছে। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি শ্রেণীবৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থা চোখে পড়ার মতো। কলম্বিয়ার সরকারি ভাষা স্প্যানিশ।
কলম্বিয়ান রেফারি উইলমার রোলদান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল রেফারি হিসেবে খ্যাত।
কলম্বিয়ার বোগোটা শহর থেকে সড়কপথে বাসে ইকোয়েডরের কুইটো শহরে যাওয়া যায়। কুইটো শহরটি বেশ ছোট। পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত এ শহরের উচ্চতা ৯ হাজার ফুট। এখানের অধিকাংশ লোকজন পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত। তাদের সঙ্গে রেড ইন্ডিয়ানদের সংমিশ্রণ রয়েছে ।
ইকুয়েডর দেশটির নাম ইকুয়েডর করার কারণ বিষুবরেখা দেশের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। আমাজন নদীর অনেকগুলো উৎপত্তিস্থল আছে এই দেশটির মধ্যে। কিতো শহর উঁচুতে অবস্থিত বলে এখানে বেশ ঠান্ডা। আবার পাহাড় থেকে নিচে নেমে এলে ভীষণ গরম লাগে। এখানে বেশির ভাগ পথ পাহাড়ের গা বেয়ে চলেছে। এদিকের সব পাহাড় রুক্ষ। দূরের পাহাড়ের মাখায় বরফ থাকে সারা বছর।
পূর্ব দিকে গেলে ঘন বনজঙ্গল। সেখানে বন্য শূকরের বসবাস। খুব সাহসী লোকেরা বনজঙ্গলে যায় বন্য শূকর ধরার জন্য।
কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরের লোকেরা বন্য শূকরের মাংস খেতে খুব ভালবাসে। ঠান্ডার দেশ বলে শূকরের মাংস স্বাভাবিকভাবে কয়েকদিন রেখে তারপর সিদ্ধ করে খেয়ে থাকে।
ইকুয়েডরের ঘন বনজঙ্গল এ দেশ ছাড়িয়ে পেরু ও ব্রাজিল সীমানার মধ্যেও পড়েছে। তিন দেশ জুড়ে যেনো এই জঙ্গল। বন্য জন্তুর মধ্যে এখানে রয়েছে পুমা। এই প্রাণিটি দেখতে অনেকটা সিংহের মতো। মানুষ দেখলেই তেড়ে আসে না, বরং ভয়ে দূরে থাকে। লামা নামে একটা সুন্দর বুনো জন্তু এই জঙ্গলে বাস করে। এরা দেখতে ছোট উটের মতো। এদের দেহ সাদা পশমে ভরা।
ইকুয়েডরে কুইটো বা কিতো ছাড়া আরও উল্লেখযোগ্য শহর আছে, যেমন – গুয়াকুইল, রিওবাসবা, কুইনচা, লরা। একদম দক্ষিণের শহর লরা। লরা শহরের পরই পেরু দেশটি।
দক্ষিণ আমেরিকার এই ইকুয়েডর এক পাহাড়ি রাষ্ট্র। এই দেশের পাহাড়ি লোক আর রেড ইন্ডিয়ানদের স্বভাবও বিচিত্র। বিশেষকরে রেড ইন্ডিয়ানরা হাটে -বাজারে গিয়ে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি কত সব পণ্য দ্রব্য বেচাকেনা করে। বিদেশি লোক দেখা মাত্রই ইশারায় আড়ালে ডাকে। এরপর জামার ভেতর থেকে একটা মানুষের মাথা বের করে দেখায়। বলে, এটার দাম পাঁচ ডলার। এটি বেশ পরিস্কার -পরিচ্ছন্ন। দেখতে মুখোশের মতো। শহর এলাকায় এটি পড়ে গেলে বিপদের মুখোমুখি হতে হয়। একদা এটি মাথায় দেওয়া কিংবা সঙ্গে রাখা হলে ইকুয়েডর দেশে মৃত্যদন্ড দেওয়ার প্রচলনও না-কি ছিল।
ইকুয়েডরের পাহাড়ি আর রেড ইন্ডিয়ানদের অদ্ভুত কথাও শোনা যায়। এরা না-কি মানুষের চুল সুদ্ধ মাথার ব্রেন, চোখ ইত্যাদি ফেলে দিয়ে যাবজ্জীবন রেখে দিতে পারে। এরা বিজাতীয় লোক ধরে তার গলা কেটে ফেল সংগ্রহ করে ভেতরের বাকি জিনিস ফেলে দেয়। এরা গলা দিয়ে মাথার ভেতর গরম পাথর ঢুকিয়ে সমস্ত মুখটাকে সজীব রাখে। কেবল মাত্র দুই চোখ সুতো দিয়ে বাঁধে। কারণ হিসেবে জানা যায়, ইভিল স্পিরিট চোখের মধ্যে থাকে। বন্ধ করে দিলে ভূত -প্রেতের ভয় থাকে না। গরম পাথর বা অন্য কোনো উপায়ে এই কাজ হয় বলে মাথাটা অপেক্ষাকৃত ছোট হয়ে যায়। সে জন্য মাথার চুল আরও ঘন দেখায়।
ভ্রমণ নিয়ে আরও পড়ুন: মেক্সিকো: মায়া সভ্যতার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের দেশ
ইকুয়েডরের রাজধানী কিতো শহরটি ৯ হাজার ফুট উঁচুতে। শহরটি তেমন একটা বড় নয়। তবে এই দেশের সবচাইতে বড় শহর হল গুয়াকুইল।
ইকুয়েডর দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত। মূল ভূখণ্ড থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। ইকুয়েডর ১৮২২ সাল পর্যন্ত একটি স্পেনীয় উপনিবেশ ছিল। সেই বছর অর্থাৎ ১৮২২ সালে স্বাধীনতাকামী এ দেশের জনগণ স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশটিকে স্বাধীন করেছিল। বর্তমানে এই দেশে বহু জাতির লোকের বসবাস। ইকুয়েডরে ইউরোপীয়, আদিবাসী আমেরিকান এবং আফ্রিকার বংশোদ্ভূত লোকেরা বাস করেন। বেশির ভাগ আমেরিকান দেশের আদিবাসীরা দেশের উচ্চভূমি অঞ্চলে দরিদ্র অবস্থায় বসবাস করে। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত লোকদের একটি ক্ষুদ্র অভিজাত শ্রেণির লোকরা ভূমি ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।