উত্তম কুমারের জনপ্রিয়তা আজও ফুরিয়ে যায়নি। তাঁর অভিনীত প্রতিটি ছবি আজও জনপ্রিয়তার তালিকায় রয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো ছবি শীর্ষে রয়ে গেছে।
মহানায়ক উত্তম কুমারের যাত্রা হলো শুরু, সঞ্জীবনী ও কঙ্কাবতীর ঘাট ছবি তিনটি’র কথা সহজে যায় না ভোলা। সাগরপারের পাঠকদের জন্য তুমুল আলোচিত এই তিনটি ছবির গল্পের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হল।
Table of Contents
যাত্রা হলো শুরু:
সন্তোষ গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ” যাত্রা হলো শুরু ” ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৭ সালের ১৯ শে এপ্রিল।
সন্তোষ গঙ্গোপাধ্যায় একজন চিত্র সম্পাদকও ছিলেন।তিনি কলকাতার চিত্র জগতে ” মামুজী ” নামে সর্বজন প্রিয় ছিলেন। সুরকার ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়।
কাহিনী ঃ অমরেন্দ্র মুখার্জী।
এম পি প্রোডাকসন্সের ব্যানারে নির্মিত ” যাত্রা হলো শুরু ” ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ঃ উত্তম কুমার, সবিতা চট্টোপাধ্যায়, পাহাড়ী সান্যাল, নীতিশ মুখার্জী, দীপক মুখোপাধ্যায়, কমল মিত্র, শোভা সেন, মায়া ভট্টাচার্য্য, নবাগতা ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়, গোপাল মজুমদার, ধীরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, পঞ্চানন ভট্টাচার্য, দক্ষিণা ঘোষাল, সুনীত মুখোপাধ্যায়, উর্বশী, কুমারী রাণী, গোকুল মুখোপাধ্যায়, অনিল রায় চৌধুরী, সুপ্রিয়া মঞ্জুলা, দিলীপ মুখোপাধ্যায়, ঊষা, মাষ্টার স্বপন, পূর্ণ দাস, আদিত্য ঘোষ, দীনেশ মুখোপাধ্যায়, নীলিমা, গণপতি মৈত্র, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, ভোলানাথ দে, চিত্রিতা মন্ডল এবং আরও অনেকে।
মূল গল্প:
বিখ্যাত ধনী ব্যবসায়ী ও দানবীর প্রিয়নাথ মুখুজ্জে কালীনাথের নিস্পন্দ দেহটার দিকে চেয়ে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন। বুঝি তাকে খুন করে বসেছেন তিনি।
বন্ধুবেশী শয়তান কালীনাথ। তার কুচক্রে একমাত্র সন্তান তার – সুযোগ্য পুত্র সুপ্রিয় আজ গৃহ থেকে বিতাড়িত। বন্ধুকন্যা প্রমীলা – পুত্রবধূরূপে বরণের অপেক্ষায় যার হাতে বিপত্নীক প্রিয়নাথ তার সংসারের চাবির গোছা তুলে দিয়েছিলেন – সে আজ প্রত্যাখ্যাতা।
অভিন্ন হৃদয় সুহৃদ ভবতারণ তার প্রবঞ্চনা রোগ
শয্যায় কেমন করে বহন করেছেন কে জানে?
আর তার বিরাট ব্যবসায়ের সৌধ, তার অত্যুচ্চ মান – সম্ভ্রম আজ ধূলায় পর্য্যবসিত – আজ তিনি সর্বস্বান্ত, আকন্ঠ ঋণে নিমজ্জিত, পথের ভিখারী।
পালাতে হবে তাকে। আইনের হাত থেকে, সমাজ – সংসারের কাছ থেকে মুখ লুকোতে। কিন্তু সব কাজ যে তার অসম্পূর্ণ রইলো – সুপ্রিয়র কাছে, প্রমীলার কাছে,
ভগবানের কাছে……
ভাগ্য নিয়ে চলে তাকে দেবীপুরের পথে, যেখানে ভগ্ন হৃদয় আর রুগ্ন শরীর নিয়ে নিরুপায় হয়ে ফিরে গিয়েছেন কোলিয়ারের কাজে ভবতারণ প্রমীলাকে সঙ্গে নিয়ে। বন্ধুর বিচিত্র সেই পথ। অবসাদে সুসুপ্ত প্রিয়নাথের কোটটি নিয়ে যে লোকটি ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেলো সেই শুধু তাকে মুক্তি দিলো না – কুলি কামিনের ছেলে বিশাইকে অগ্নি – তান্ডব থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে তার সৌম্য মুখখানিও ঝলসে বিকৃত হয়ে গেল।
রণছোড়দাস কোম্পানির দেবীপুর কোলিয়ারীতে এক নতুন নাটক জমে উঠেছে সেদিন। প্রিয়নাথের মৃত্যু শোক রুগ্ন ভবতারণ সংবরণ করতে পারেননি। কালীনাথের চক্রান্তে সেদিনকার নিষ্ঠুর স্বপ্নভঙ্গের পরেই ভাগ্যের নিষ্ঠুরতর আঘাতে প্রমীলা আজ পিতৃহীনা। সুপ্রিয় তার সঙ্গে ছলনা করতে পারে আজো যেন তার মন মানতে চায় না সে কথা। কি মধুর সে ছলনা – তার স্মৃতি বুঝি চিরদিন এমনি করেই ভরে থাকবে তার মন!
ভবতারণের পদ অধিকার করেছে – তারই সহকারী যোগেশ! অল্প অবসরের মধ্যেই সে কোম্পানির বহু সহস্র টাকা তছনছ করে এখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে প্রমীলাকে গ্রাস করার জন্যে। কোলিয়ারীর বিশৃঙ্খলার খবর দিল্লিতে কর্তৃপক্ষের গোচরেও এসেছে ইতোমধ্যে।
আজ তাই সাড়া পড়ে গিয়েছে সারা কোলিয়ারীতে – তাদের সুযোগ্য প্রতিনিধি আসছেন তদন্ত আর প্রতিকারের জন্যে। কিন্তু যে প্রিয়দর্শন যুবকটি তার কাছে ম্যানেজারের বাংলোর হদিস চাইলো – সেই কি প্রতিনিধি মিঃ মুখার্জ্জী? নিয়তির এ কি নিষ্ঠুর পরিহাস!
প্রিয়নাথের মন ছুটে চলে তার গাড়ির পেছনে – সে কিসের আকাঙ্খায়, কিসের প্রত্যাশায়!
ত্রস্ত পায়ে হাঁটেন প্রিয়নাথ দেবীপুরের পথে -বিকৃতমুখ, পরিচয়হীন, লোকচক্ষে মৃত!
খবর পান কুলীদের কাছ থেকে যোগেশ আর তার বেপরোয়া দলের চক্রান্তের কথা মিঃ মুখার্জ্জীর বিরুদ্ধে। তাকে যে বাঁচাতেই হবে! ছুটে যান তিনি যে গুপ্ত কক্ষে বন্দী হয়ে আছেন তদন্তের প্রধান সাক্ষী মহিম হালদার – যোগেশের হাতে চরম দন্ডের অপেক্ষায়। মহিম হালদার তার চেষ্টায় মুক্ত হন – কিন্তু ততক্ষণে টের পান প্রিয়নাথ চরম বিপদ ঘনিয়ে উঠেছে মিঃ মুখার্জ্জীর মাথার উপরে।
ছুটে এসেছে প্রমীলাও মিঃ মুখার্জ্জীর বাংলোয় – সকল
অভিমান বিসর্জন দিয়ে। আকুল হয়ে অনুরোধ করে তাকে – চলে যাও, শিগগির চলে যাও সুপ্রিয় এখান থেকে।
কিন্তু তার আগেই ঢোকে যোগেশ উদ্যত পিস্তল নিয়ে।
কোম্পানির হিসেব ঠিক পেয়েছেন বলে সই করে না দিলে আর প্রমীলা যোগেশকে বিয়ে করতে রাজী না হলে গুলি করে মারবে সে মিঃ মুখার্জ্জীকে।
বাইরে কোলাহল।
খোকা – খোকা বলে – ছুটে আসছেন প্রিয়নাথ। আর গর্জে ওঠে যোগেশের পিস্তল…….।
সঞ্জীবনী:
এম, পি, প্রোডাকসন্স লিমিটেড নিবেদিত সঞ্জীবনী ছবির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা ঃ সুকুমার দাশগুপ্ত।
কাহিনী ঃ প্রতিমা দেবী। গীতিকার ঃ শ্রী শৈলেন রায়।
সঙ্গীত পরিচালনা ঃ অনুপম ঘটক। শব্দযন্ত্রী ঃ সুনীল ঘোষ। চিত্রশিল্পী ঃ বিজয় ঘোষ। সম্পাদনা ঃ কমল গাঙ্গুলী। দৃশ্য সজ্জা ঃ সুধীর খান। রূপসজ্জা ঃ বসির আহমেদ। শিল্পনির্দেশক ঃ সত্যেন রায় চৌধুরী।
সঞ্জীবনী ছবির রূপায়ণে ঃ উত্তম কুমার, সন্ধ্যারাণী
প্রীতিধারা, জহর গাঙ্গুলী, পদ্মা দেবী, প্রভা দেবী, রেবা দেবী, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, কানু বন্দ্যোপাধ্যায়,
জীবেন বসু, ধীরাজ দাস, গৌরীশঙ্কর, গোপাল দে,
আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, ভূতনাথ মজুমদার, পরেশ বসু, দ্বিজেন ঘোষ, নিশীথ সরকার, সুশান্ত রায়। মুক্তির তারিখ ৮ ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২।
মূল গল্প:
ছোট ভাই রবীন্দ্র বোস যেদিন চরণধ্বনি উপন্যাস লিখে সাহিত্য জগতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করল, সে দিন বড় ভাই শশির চেয়ে সুখী বোধহয় আর কেউ হয়নি।
সওদাগরী অফিসের কেরানী। প্রতি শনিবার দেশে না গেলেই নয়।
তবু রবির সম্বর্ধনা সভায় হাজির হবার লোভটা সে কোনমতেই সংবরণ করতে পারলো না। ঘন ঘন হাততালির মাঝে রবিকে যখন অভিনন্দিত করা হ’ল তখন উচ্ছ্বসিত আনন্দ চাপতে চাপতে নিঃশব্দেই সে রেশন ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়ল এবং সোজা গিয়ে ট্রেনে চেপে বসল।
সারা গ্রামময় সুখবরটা ছড়াতে ছড়াতে সে যখন বাড়িতে এসে পৌঁছল, তখন বেশ খানিকটা বেলা হয়ে গেছে। স্ত্রী আভা ছুটে এলো অনুযোগ করতে। কিন্তু সুখবরটা শুনে চোখ দিয়ে তার আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়লো ; কারণ এই দেবরটিকে ছোট ভাইয়ের মতই মানুষ করেছে সে এবং রবির এই খ্যাতিলাভে তার নিজের দান বড় কম নয়।
কিন্তু খবরটুকু পাওয়ার পর রবির বাবা অনাদি বোস রীতিমতো অধীর হয়ে উঠলেন। পূর্ব পুরুষ কবি সদানন্দ সোনার যে দোয়াত – কলম তাঁর হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন এতদিন তা অভিশাপের বোঝা হয়েই চেপেছিল তাঁর জীবনে। কে জানে রবি তার মর্যাদা রাখতে পারবে কি না!
তাই রবি যেদিন যশের মালা নিয়ে দেশে ফিরলো, সেদিন সব সঙ্কোচ দূর ক’রে তিনি দোয়াত – কলমটা তুলে দিতে গেলেন তার হাতে ; কিন্তু তার আগেই নিষ্প্রাণ দেহটা তাঁর লুটিয়ে পড়ল ছেলেদের হাতের মাঝে।
বাবার মৃত্যুর পর শশিনাথ সপরিবারে শহরে চলে এসে রাসু বামুণীর দোতলা ভাড়া নিল। রাসমণির বাইরের রূপটা ছিলো অত্যন্ত কঠোর কিন্তু অন্তরটা যে কত কোমল ছিল সেটা জানা গেল সেদিন, যেদিন রবির দ্বিতীয় উপন্যাস ” বনস্পতির অভিশাপ ” প্রকাশিত হল।
বৌদি আভাও যেন এই দিনটিরই প্রতীক্ষা করছিল।
দেবরকে আশীর্বাদ করে বললো — ” আর কোন ওজর আপত্তি শুনছি না ভাই, আমি আজই রেবাকে চিঠি লিখে দিই আসতে। “
রেবা তার মাসতুতো বোন। বিহারের পাটনায় থাকে। এককালে রবির সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। তারপর বহু বছর কেটে গেছে। দেখা সাক্ষাৎ আর হয়নি বটে, কিন্তু আভা তার মাসিমা – মেসোমশাইকে ব’লে বিয়ের কথাটা প্রায় পাকাপাকিই করে রেখেছে। তাই আজ যখন বৌদি সেই ইঙ্গিতটাই করল, তখন রবি পরিহাস তরল কন্ঠে ব’লে উঠলো — ” রক্ষে কর বৌদি ! শুনেছি তিনি যে রকম সাংঘাতিক বিদুষী আর নির্মম সমালোচক…. “
একটা ভুল রবি করেছিল — রেবার চেয়েও নির্মম সমালোচক যে থাকতে পারে, এটা বোধহয় সে ভাবতে পারেনি। পারল সে দিন, যে দিন ” বনস্পতির
অভিশাপ ” এর নিন্দায় সকলে মুখর হয়ে উঠলো।
বান্ধবী বাবলিদের বাড়িতে সাহিত্যিকদের যে মজলিস বসত, সেই খানে প্রথিতযশা লেখক নিবারণ চক্রবর্ত্তী উপদেশ দিলেন — ” মদ ধর রবি, নইলে কাগজের পাতায় লেখার ফুলঝুরি ঝরবে কেন ? “
বিখ্যাত সমালোচক বিভাস চৌধুরী বললেন — ” লেখায় তোমার একঘেয়েমি এসে যাচ্ছে, রবি। মদ খাও, জীবনের পুঁজি বাড়াও। “
রবি বিশ্বাস করতে রাজী নয়। তাই বাবলির দেওয়া মদের গ্ল্যাস স্পর্শ না করেই ফিরে এলো সে। কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারাতে তার দেরি হ’ল না।
বনস্পতির অভিশাপ – এর প্রথম সংস্করণ বিক্রি হ’তে তিন মাস সময়ও লাগেনি ; অথচ দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপতে কেন যে প্রকাশক রাজী হ’লেন না এটা বরাবর তার কাছে রহস্য হ’য়েই ছিল। কিন্তু যে দিন সে জানতে পারল তার দাদাই নিত্য বাজারের থলে ভ’রে সেগুলো কিনে সিন্দুকজাত করেন, সেদিন চরম আঘাত পেল রবি।
রবি অভিমান ভরেই ছুটে গেল নিধুবনে। ম্যানেজার ভট্টাচার্য্যকে গিয়ে বললো, ” আমি সেইটুকু নেশা করতে চাই, যাতে জীবনের পুঁজি বাড়ে! “
ভট্টাচার্য্য হেসে বললেন, ” হাতেখড়ি বুঝি ? “
কিন্তু সেদিন সত্যিকারের হাতেখড়ি হলেও, মদের নেশা ক্রমে জারক লেবুর মতই রবিকে জরিয়ে আনল। দাদা, বৌদি জানতে পেরে উদ্বিগ্ন হ’য়ে উঠলো। কি করে তাকে শোধরানো যায় ভেবে না পেয়ে রেবাকে তার করল আসবাব জন্য।
রেবা এসে পৌঁছল, তবে একটু দেরীতে। তার আগেই সস্ত্রীক শশিনাথ দেশে রওনা হ’য়ে গেছে, কারণ বাড়িতে পূজা। রবি একা ছিল, তাও মাতাল অবস্থায়।
রেবা ঠিক এতটার জন্যে প্রস্তুত ছিল না ; তবু এক সময় মদের গ্ল্যাসটা নিজের হাতে তুলে নিতে বাধল না তার।
হাত থেকে ধীরে ধীরে মদের বোতলটা কেড়ে নিল সে।
হার মানলো রবি ; হার মেনে ধন্য হ’ল সে। হয়তো জীবনে আর কোনদিন সে মদ স্পর্শও করত না, যদি না রেবার মায়ের কাছ থেকে আসত রূঢ় আঘাত। অন্ধ অভিমানে আবার ছুটে গেল রবি নিধুবনে।
আঘাতের বেদনা ভোলবার জন্যেই তুলে নিল মদের পেয়ালা। এরপর থেকেই হতভাগ্য রবির জীবনে শুরু হ’ল মদ ও নারীর দ্বন্দ্ব।
কঙ্কাবতীর ঘাট:
শ্রী হরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রযোজিত কঙ্কাবতীর ঘাট ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৫ সালের ১২ ই আগষ্ট।
চরিত্র চিত্রণে – সন্ধ্যারাণী, উত্তম কুমার,
অনুভা গুপ্তা, চন্দ্রাবতী দেবী, মীরা, লীলাবতী, কমলা,
অহীন্দ্র চৌধুরী, কমল মিত্র, অনুপ কুমার, শ্যাম লাহা,
সন্তোষ সিংহ, আশা, শিবকালী চট্টোপাধ্যায়,
পঞ্চানন ভট্টাচার্য্য, শান্তি ভট্টাচার্য্য, প্রীতি মজুমদার,
শান্তি মজুমদার, রাস বিহারী, ঋষি ব্যানার্জী,
মাষ্টার বাবুয়া। কর্ম পরিচালনা ঃ শ্রী সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতিকার ঃ শ্রী অরূপ ভট্টাচার্য্য।
শব্দ যন্ত্রী ঃ শ্রী শ্যামসুন্দর ঘোষ। চিত্র শিল্পী ঃ শ্রী রামানন্দ সেন গুপ্ত। চিত্র সম্পাদনে ঃ শ্রী বৈদ্যনাথ চট্টোপাধ্যায়। সুর সংযোজনায় ঃ শ্রী কালীপদ সেন।
কাহিনী ঃ শ্রী মহেন্দ্র গুপ্ত। চিত্রনাট্য ঃ শ্রী নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। শিল্প নির্দেশনা ঃ শ্রী কার্ত্তিক বসু।
রূপসজ্জা ঃ শ্রী মদন পাঠক । সহকারী পরিচালক ঃ শ্রী অসীম রায় চৌধুরী, প্রদীপ দাশগুপ্ত।
পরিচালনা ঃ শ্রী চিত্ত বসু।
মূল গল্প:
প্রবীর আর শিলা একই কলেজে পড়ে।
প্রবীর শহুরে ছেলে নয়, শহরে সে পড়তে এসেছে মাত্র ছুটি হলেই গাঁয়ে ফিরে যায়, সেখানে তার ছোটখাট জমিদারী, বাবার মৃত্যুর পর তারই ওপর পড়েছে তার দেখাশুনার ভার।
গাঁয়ের ছেলের মত সে স্বভাবতই শহরকে ভয় করে, শহরের আবহাওয়া থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে। কলেজে তাই তার সহপাঠীরা তাকে ভাল ছেলে বলে ঠাট্টা করে। বিশেষ কারুর সঙ্গে সে বড় একটা মেলামেশাও করে না — শিলাও বড় একটা কারুর সঙ্গে মেশে না।
প্রবীর কিন্তু নীরবে শিলাকে লক্ষ্য করে। বুঝতে পারে, এই মেয়েটির নীরব ম্লান মুখের আড়ালে কোথায় যেন আছে একটা বৃহৎ বেদনা।
প্রবীর লক্ষ্য করে, অর্থের অভাবে শিলা কলেজের কোন বই কিনতে পারে না, অবসর সময়ে লাইব্রেরীতে বসে তাই বইটা নকল করে নেয়।
প্রথম প্রণয়ীর ভীরু মন নিয়ে প্রবীর এগিয়ে আসে, বলে – ভুল ক্রমে আমার একই বই দুখানা কেনা হয়ে গিয়েছে,
আপনি যদি একটা নেন !
শিলার অভিমান আহত হয়, কারুর সাহায্য নিতে সে প্রস্তুত নয়। শিলার এই ব্যক্তিত্ব প্রবীরের চোখে আরো মোহনীয় হয়ে ওঠে, যথাসময়ে মাইনে দিতে না পারায় শিলার নাম কলেজ রেজিষ্টার থেকে কাটা যায় দেখে প্রবীর শিলার হয়ে মাইনে দিয়ে দেয়। সেই অছিলায় শিলাদের বাড়ীতে এসে উপস্থিত হয় এবং সেখানে শিলার মা চামেলী দেবীর সঙ্গে পরিচয় হয়।
চামেলী দেবীর সঙ্গে কথায় প্রবীরের বুঝতে দেরী হয় না যে, নিদারুণ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই শিলাকে পড়তে হচ্ছে এবং এই দারিদ্র্যের মূলে আছে একটা মস্ত বড় ট্রাজেডি, শিলার বাবা, মিঃ মুখার্জ্জী নাকি উন্মাদ হয়ে বাড়ী ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন।
সহানুভূতিতে গলে যায় প্রবীরের মন, শিলার আড়ালে চামেলী দেবীর কাছে প্রবীর জানায়, তার টাকার অভাব নেই, তিনি যদি কিছু মনে না করেন তাঁদের সংসারের সব ভার নিতে সে আনন্দে প্রস্তুত।
চামেলী দেবী রাজী হলেন, শুধু একটা সর্তে, শিলা যেন এই সাহায্যের কথা এখন না জানতে পারে, বড় অভিমানী মেয়ে কিনা ?
অবশ্য একদিন তো শিলা সব জানতে পারবেই কারণ প্রবীরের মত ছেলের হাতে তিনি শিলাকে তুলে দিতে পারলে সৌভাগ্যই মনে করেন। প্রবীর কিন্তু তখন জানতো না, চামেলী দেবী তার আড়ালে, ঠিক এমনি ভাবে শহরের সেরা লৌহ – ব্যবসায়ী লালমোহন আঢ্যির কাছ থেকেও চোখের জল ফেলে ঠিক এই সর্তেই নিয়মিত মোটা টাকা আদায় করেন।
হঠাৎ এই সময় সহসা অর্দ্ধ উন্মাদ মিঃ মুখার্জ্জী ছিন্ন মলিন বেশে দীর্ঘ প্রবাস – অন্তে এসে উপস্থিত হলেন। সেদিন শিলার জন্মতিথি উপলক্ষে মিঃ আঢ্যি এক বিরাট পার্টির আয়োজন করেছেন।
উৎসব -মত্ত বাড়ীর ভেতর চোরের মতন সঙ্গোপনে মিঃ মুখার্জ্জী প্রবেশ করলেন এবং আড়াল থেকে যে সব কথাবার্তা শুনলেন তাতে তাঁর অর্দ্ধ – শুষ্ক চেতনা আবার সজীব হয়ে উঠলো…….
ভাগ্যবিধাতার মতন অতর্কিতে তিনি প্রবেশ করলেন প্রবীর ও শিলার জীবন -নাট্যে, ব্যর্থ করে দিলেন লালমোহন আর চামেলী দেবীর চক্রান্ত। মুহূর্তের প্রেরণায়, ঘটনার অনিবার্য্যতার আদেশে, প্রবীর স্ত্রী ব’লে গ্রহণ করলো শিলাকে, তার গলাতে পরিয়ে দিল সতী কঙ্কাবতীর মালা।
শহর ছেড়ে ঘটনার ধারা চল্লো, অতসী গাঁয়ে, যে গাঁয়ের জমিদার হলো প্রবীর এবং যে – গাঁয়ে কিছুদিন আগে সতী কঙ্কাবতী অসুস্থ মুমূর্ষু স্বামীর জীবন ফিরিয়ে আনবার জন্যে সেই গাঁয়ের নদীর জলে আত্মবিসর্জন করেছিলেন।
প্রবীরের মা পূণ্যস্মৃতি স্বরূপ সঞ্চয় করে রেখেছিলেন, সতী কঙ্কাবতীর গলার মালা আর হাতের কাঁকণ, তাঁর ভবিষ্যৎ পুত্রবধূর জন্যে। অতসী গাঁয়ে সেই নদীর ঘাটকে বলে কঙ্কাবতীর ঘাট। আজ ও দেশ – দেশান্তর থেকে পূণ্যবতী সধবা নারীরা স্বামীর কল্যাণে সেই কঙ্কাবতীর ঘাটে আসে।
শেষ কথা:
মহানায়ক উত্তম কুমার বাংলা সিনেমায় কিংবদন্তীর আসনে অধিষ্ঠিত। প্রকৃত সিনেমাপ্রেমীদের অনেকেই এখনো উত্তম কুমারের ছবি পছন্দ করেন। উপমহাদেশীয় সিনেমার আসল মহানায়ক উত্তম কুমার দর্শক হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।