ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ বর্তমানে বাংলাদেশের কর্মপ্রত্যাশীদের কাছে অন্যতম আলোচিত একটি বিষয়। উন্নত অর্থনীতি, স্থিতিশীল চাকরি, নিরাপদ পরিবেশ এবং উচ্চ আয়ের সুযোগ—সব মিলিয়ে ইতালি এখন স্বপ্নের গন্তব্য। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ বৈধ বা অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার চেষ্টা করে, তবে বৈধ উপায়ে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই সঠিক প্রক্রিয়া জানা জরুরি। ইতালিতে কাজের বাজার কতটা শক্তিশালী, কী যোগ্যতা লাগে, কোন সেক্টরে কর্মীর চাহিদা বেশি এবং কীভাবে ভিসা পাওয়া যায়—এসব তথ্য জানতে হলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও জানতে পারেনঃ কিরগিজস্তান কাজের ভিসা
ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ পাওয়ার বৈধ উপায়
ইতালিতে কাজ করতে চাইলে প্রথম শর্ত হচ্ছে বৈধ ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করা। বাংলাদেশ থেকে এই ভিসা পাওয়ার স্বীকৃত তিনটি পথ রয়েছে—সরকারি আবেদন, বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন এবং নিজে নিজে জব অফার সংগ্রহ করে আবেদন।
১. সরকারি উপায়ে ভিসা আবেদন
বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিদেশগামী শ্রমিকদের ইতালিতে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। এখানে প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলি হলো:
-
বোয়েসেল (BOESL)
-
বিএমইটি (BMET)
-
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
-
আমি প্রবাসী অ্যাপ
এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ইতালির কাজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদনকারীকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে পছন্দের চাকরিতে আবেদন করতে হয়। পরে সরকার যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে সরাসরি ইতালিতে পাঠায়। সরকারি পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে—খরচ কম এবং প্রতারণার সুযোগ নেই।
২. বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন
অনেক অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি ইতালির নিয়োগদাতাদের সাথে কাজ করে। তারা আবেদনকারীর পক্ষ থেকে:
-
কাজের অফার সংগ্রহ
-
ভিসার কাগজপত্র প্রস্তুত
-
আবেদন জমা
-
এম্বাসি অ্যাপয়েন্টমেন্ট
এসব সম্পন্ন করে। তবে এজেন্সির ক্ষেত্রে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে চুক্তি করতে হবে, কারণ বাজারে ভুয়া এজেন্সির সংখ্যাও কম নয়।
৩. নিজ উদ্যোগে জব অফার সংগ্রহ
অনেকে পরিচিত বা অনলাইন জব পোর্টালের মাধ্যমে ইটালির চাকরির অফার সংগ্রহ করে সরাসরি ভিসা আবেদন করেন। ভিসা আবেদন করতে হলে এম্বাসির অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে এবং নির্ধারিত তারিখে সাক্ষাৎকার দিতে হবে। ঢাকায় ইতালির দূতাবাসেই পুরো ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
আরও জানতে পারেনঃ আলবেনিয়া বেতন কত
ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ করতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
ইতালিতে কাজের উদ্দেশ্যে ভিসা আবেদন করতে নিচের কাগজপত্রগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
-
বৈধ পাসপোর্ট
-
আপডেটেড সিভি
-
শিক্ষাগত সনদ
-
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
-
মেডিকেল রিপোর্ট
-
দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
-
বৈধ জব অফার লেটার
-
দক্ষতার সনদ
-
কাজের অভিজ্ঞতা সনদ
-
ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
ডকুমেন্টগুলো সম্পূর্ণ ও সঠিকভাবে জমা দিতে পারলে ভিসা অনুমোদনের সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে যায়।
(এখানে পুনরায় কীওয়ার্ড প্লেসমেন্ট—ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫)
ইতালিতে বেতন কত হতে পারে?
ইতালির বেতন কাঠামো ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতোই তুলনামূলক উন্নত। সাধারণত বেতন নির্ভর করে—
-
আপনার কাজের ধরন
-
অভিজ্ঞতা
-
দক্ষতা
-
ভাষা জ্ঞান
-
কোম্পানির নিয়ম
বর্তমানে ইতালিতে বৈধ শ্রমিকদের গড় বেতন ৮০০ ইউরো থেকে ৩৫০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। হোটেল–রেস্টুরেন্ট, কনস্ট্রাকশন, কৃষিকাজ, ফুড ডেলিভারি, কারিগরি কাজ ইত্যাদি সেক্টরে বেতন তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। অবৈধ কর্মীরা অনেক সময় কম বেতন পায় এবং শ্রমিক অধিকারও পুরোপুরি পান না। তাই নিরাপদ আয় ও অধিকার নিশ্চিত করতে বৈধ ভিসা অপরিহার্য।
ইতালিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি? (ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫)
ইতালির অর্থনীতি বহুমুখী এবং বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ কর্মীর চাহিদা স্থায়ীভাবে রয়েছে। বিশেষ করে যেসব পেশায় বাংলাদেশি কর্মীরা বেশি সুযোগ পান:
-
মেকানিক
-
ইলেকট্রিশিয়ান
-
ক্লিনার
-
ড্রাইভার
-
ফার্ম ও কৃষিকাজ
-
কনস্ট্রাকশন শ্রমিক
-
প্লাম্বার
-
ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার
-
ফুড ডেলিভারি
-
রেস্টুরেন্ট স্টাফ
এক বা একাধিক কাজে দক্ষ হলে ইতালিতে জব অফার পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। বর্তমানে ইতালি দক্ষ শ্রমিকদের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে, ফলে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ থাকলে সেটি কাজে লাগানো উচিত।
ইতালিতে বৈধভাবে কাজ করার সুবিধা
বৈধ ওয়ার্ক পারমিট থাকলে একজন কর্মী যেসব সুবিধা পান—
-
স্থায়ী বেতনের নিশ্চয়তা
-
ওভারটাইমের সুযোগ
-
স্বাস্থ্য সুবিধা
-
শ্রমিক অধিকার রক্ষা
-
দীর্ঘমেয়াদে বসবাস ও পরিবারের সদস্য আনার সুযোগ
-
স্থায়ী রেসিডেন্সি (PR) পাওয়ার সম্ভাবনা
তাই অবৈধভাবে যাওয়ার পরিবর্তে বৈধ আবেদন করাই নিরাপদ ও টেকসই পথ।