সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেষ্ট ক্রিকেটেও ইংল্যান্ডের বৃহস্পতি তুঙ্গে!


গত বছর বিশ্বকাপে জয়ের পর টেষ্ট ক্রিকেটেও একের পর এক জয় তুলে নিচ্ছে ইংল্যান্ড। যেকোন কিছুই করা সম্ভব এরকম আত্মবিশ্বাস জন্মেছে দলের মধ্যে। দলে বেশিরভাগ নতুন খেলোয়াড়দের নিলেও শক্তির তারতম্যে তেমন পার্থক্য হয়নি। টেষ্ট ক্রিকেটের দীর্ঘ্য ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি বহন করে চলেছে ইংল্যান্ড। দেশের মাঠিতে পাকিস্থানকে হারাতে তেমন একটা বেগ পেতে হয় নি তাদের।

সাফল্যলক্ষী ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে দুই হাতে দিয়েই চলেছেন। পিছিয়ে পড়েও ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২-১ ম্যাচে দুর্দান্ত সিরিজ জয়। সেই সাফল্যের রেশ না কাটতেই প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃপ্তির বিজয়। টেষ্ট ক্রিকেটে এমন মধুময় সাফল্য সর্বশেষ কবে জুটেছিল তা খুঁজে পেতে গুগলে অনেকক্ষন কাটাতে হবে তা বলে দেয়া যায়!

প্রথম টেষ্টের চতুর্থ দিনে ২৭৭ রানের লক্ষমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে ১১৭ রানেই নেই যুদ্ধের অর্ধেক রশদ। পাঁচ উইকেট হারিয়ে মোটামুটি ত্রাহি অবস্থা! শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান উইকেট রক্ষক জস বাটলারের সাথে যারা ব্যাট করার বাকি ছিলেন তাদের সবার ব্যাটিং গড়ই ২০/২৫ এর আশেপাশে। ফর্ম হারিয়ে বাটলারও ইদানিং ধুঁকছেন। এরাই শেষ পর্যন্ত জয়ের নোঙর তীরে ভেড়াবেন এরকম কিছু হয়তো ইংল্যান্ডের পাঁড় সমর্থকদেরও ভাবনায় ছিল না। কারন প্রতিপক্ষ দলে পেস কিংবা স্পিন বোলিংয়ে বৈচিত্রের অভাব নেই। আর প্রথম ইনিংসেও ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা আহামরি কিছুই দেখাতে পারেননি। এরাই চতুর্থদিনের ঘূর্ণি উইকেটে পাকিস্থানের দুই স্পিনার লেগি শাদাব ও অফস্পিনার ইয়াসির শাহকে শেষ পর্যন্ত আটকে রাখবেন এমনটা বেশ কঠিন। কিন্তু সেই কঠিন কাজকেই কী অবলীলায় বাস্তবে রুপান্তর করলেন অলরাউন্ডার অকস এবং জস বাটলার!

সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেষ্ট ক্রিকেটেও ইংল্যান্ডের বৃহস্পতি তুঙ্গে!
ইংল্যান্ডের জস বাটলার

আসলে ইংল্যান্ডের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। গত বছর একদিনের ক্রিকেটে অভাবিতভাবে চ্যাম্পিয়নশীপ লাভের পর থেকেই বদলে গেছে ইংল্যান্ড। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং সব বিভাগেই তাদের টগবগে আত্মবিশ্বাস। দলে অলরাউন্ডারদের আধিপত্য থাকায় যেকোন সময় ঘুরে দাঁড়াতে পারে তারা। তা ব্যাটিং কিংবা বোলিং যাই হোক না কেন!

পাকিস্থানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেষ্টেও তাই দেখা গেল। প্রথম ইনিংসে পাকিস্থানের ৩২৬ রানের ইনিংসে বোলারদের কৃতিত্ব আলোর নীচে রাখলে দেখা যায় ৮টি উইকেটই শিকার করেছেন ইংল্যান্ডের তিন অলরাউন্ডার মিলে। ব্রড ও আর্চার ৩টি করে, অক্স দুটি। সময়ের সেরা অলরাউন্ডার বেন স্টোক্স একটি বলও করেননি প্রথম ইনিংসে।

 

করোনা মহামারীর কারনে পাকিস্থান ক্রিকেট দল প্রায় দুইমাস থেকেই অবস্থান করছে ইংল্যান্ডে। এখানকার মাঠে প্রশিক্ষনের পর্যাপ্ত সুযোগও পেয়েছে। গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডের তাপমাত্রা পাকিস্থানের নভেম্বর মাসের সমান। সুতরাং মাঠ, আবহাওয়া,প্রশিক্ষণসুবিধা সবকিছু মিলিয়ে এই সিরিজে পাকিস্থানের বিপক্ষের মাঠ হিসাবে ধরার কিছু নেই। প্রায় নিজ দেশে খেলার সুবিধা পাচ্ছে তারা।

শন মাসুদ
শন মাসুদ

এত সুযোগ সত্বেও প্রথম ইনিংসে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শন মাসুদ ছাড়া কেউই ইনিংস স্ফীত করতে পারেননি। পাকিস্থানের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আযম শনকে যোগ্য সহায়তা দিয়ে ৬৯ রানেই পাততাড়ি গুঠান। শেষমেষ পাকিস্থানী লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার শাদাব খানের ৪৫ রানের সুবাদে ৩২৬ রানের সংগ্রহ মোটামুটি নিরাপদই বলা যায়।

ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ঝটপট ৩ উইকেট মাত্র ১২ রান খরচায় তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে ভালমতই চেপে ধরেন পাকিস্থানের বোলাররা। তবে মিডল অর্ডার ও শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরা সম্মিলিতভাবে ইংল্যান্ডের স্কোর দুইশ রানের উপরে নিয়ে যান। ১০৭ রানের লিড নিয়ে পাকিস্থান হয়তো জয়ের সুবাস পাচ্ছিল।

সেই আত্মবিশ্বাসেই কীনা নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে খেই হারিয়ে ফেলেন তারা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৬৯ রানেই অলআউট!

দলের সর্বোচ্চ স্কোর স্পিনার ইয়াসির শাহের ৩৫। হয়তোবা ইংল্যান্ডের বোলাররাই তেতে উঠেছিলেন প্রথম ইনিংসে পাকিস্থানী বোলারদের সাফল্যে! প্রথম ইনিংসের ধারাবাহিকতায় অলরাউন্ডার ব্রড তুলে নিলেন ৩ উইকেট। তার দেখাদেখি অন্য দুই অলরাউন্ডার অক্স এবং বেন স্টোকস শিকার করলেন দুটি করে উইকেট।

আরও পড়ুন: ইংলিশ ক্রিকেটের যে সব রেকর্ডে নাম লেখালেন ক্রলি

চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা আগেই বলা হয়েছে। তবে তারা হারলে এবার উইকেট কীপার ব্যাটসম্যান জস বাটলারের উপর খড়গ নেমে আসত। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে তিনটি নিশ্চিত আউট মিস করেছেন। প্রথম ইনিংসে উইকেটে জমে গিয়েও বড় স্কোর গড়তে পারেননি। নিকট অতীতেও বলার মত কিছু নেই। দল থেকে বাদ পড়াটা যখন সময়ের ব্যাপার তখনই ঘুরে দাঁড়ালেন বাটলার। অকসের সাথে ১৩৯ রানের ম্যাচজয়ী পার্টনারশীপ। বাটলারের ইনিংসের মাহাত্ম অনেক!

তবে সব কিছু ছাড়িয়ে গেছেন অলরাউন্ডার ক্রিস অকস। চাপের মুখেও যে পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন তাতে তার জুড়ি মেলা ভার। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে ১০টি চার মেরেছেন। ১২০ বলে ৮৪- প্রায় ওয়ানডে ষ্টাইলে ব্যাট করেছেন। ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, অপরাজিতভাবে। দুই ইনিংসে ২টি করে নিয়েছেন প্রতিপক্ষের চার উইকেট।প্রথম ইনিংসে ১৯ রানের পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাচজয়ী ৮৪ রানসহ ম্যাচে ১০৩ রান। সাথে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্থানের প্রধান ব্যাটসম্যান বাবর আজমের ক্যাচ। ম্যান অব দ্য ম্যাচের লড়াইয়ে বিবেচনার জন্য অকসের ধারে কাছেও কেউ ছিলেন না!