হুগলীর তীরে প্রিয় শহর কলকাতায়, পর্ব-5


চলচ্চিত্র ও ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন ভারত ভ্রমণ করেছেন ষাটেরও বেশি বার। লেখকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে তিলোত্তমা নগরী প্রাণবন্ত কলকাতা। বারবার ভ্রমণের সেই অভিজ্ঞতা লেখক প্রান্জল ভাষায় ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সাগরপারের পাঠকদের জন্য। আজ প্রকাশিত হল তৃতীয় পর্ব। আগের পর্ব সমূহ পড়ুন: পর্ব-4পর্ব-৩, পর্ব-২পর্ব-১

 

কলকাতার চিৎপুর -এসপ্ল্যানেড -জোড়াসাঁকো -চোরঙ্গী -কেষ্টপুর -বেলঘরিয়া -বিরাটি -ঠাকুরপুকুর এলাকা পায়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখার কথা খুব করে মনে পড়ে।

চিৎপুর

চিৎপুর হ’ল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা মহানগরীর উত্তরাংশের একটি অঞ্চল।

চিৎপুর এলাকার পশ্চিম দিকে হুগলি নদী এবং এর অন্য তিন দিকে রয়েছে কাশীপুর, সিঁথি, পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া ও বাগবাজার এলাকা।

হুগলি নদীর ঠিক উল্টো দিকে পশ্চিমে হাওড়া শহরের সালকিয়া অবস্থিত।

রবীন্দ্র সরণি সংলগ্ন বা এখানের রাস্তাটির পূর্বতন নাম চিৎপুর রোড – তাই সমগ্র এলাকাটিকে কখনও কখনও চিৎপুর বলে অভিহিত করা হলেও, উক্ত এলাকার বিভিন্ন অংশের আলাদা

আলাদা নাম রয়েছে কিন্তু।

কলকাতা মহানগরীর সুদূর দক্ষিণ এলাকা থেকে একটি রাস্তা উত্তর দিকে এসেছে –

এটি বিভিন্ন এলাকায় রসা রোড, চৌরঙ্গী রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, চিৎপুর রোড ও ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড নামে পরিচিত –

এরপর এটি দমদম রোড নাম নিয়েছে।

এও জানা যায়, মুর্শিদাবাদ ও কালীঘাটের মধ্যে এটি একটি প্রাচীন যোগসূত্র

যা কিনা কলকাতার আদি জমিদার বরিশার সাবর্ণ রায় চৌধুরী এই রাস্তাটি নির্মাণ করিয়েছিলেন।

পুরনো চিৎপুর সড়কটি ছিল একটি

জনপ্রিয় তীর্থপথ।

 

চিৎপুর

 

এই পথের ধারে অনেক ধর্মশালা ও দোকান – বাজার ছিল।

চিৎপুর রোড ছিল কলকাতার প্রাচীনতম রাস্তা – এই রাস্তার আশেপাশে ধনীদের পাশাপাশি বহু সাধারণ ব্যবসায়ীর বাস ছিল।

এই জনপদে মাংসের বাজার ছিল – কসাইটোলা ও মৃৎশিল্পীদের বসতি অঞ্চলটি কুমারটুলি নামে পরিচিত ছিল।

চিৎপুর এলাকা থেকেই একসময় বাংলা পঞ্জিকা ছাপা হত।

ছিল এখানে বইবাজারের কেন্দ্র।

চিৎপুর রোডের সঙ্গে যুক্ত অনেক কিছুই কলকাতার বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল।

পান, আড্ডা, যাত্রা ও বিবাহ উৎসবে ‘ হি ইজ আ গুড ফেলো ‘ গাওয়া ব্রাস ব্যান্ডের কেন্দ্র ছিল এই চিৎপুর জনপদ ও সড়ক।

লোয়ার চিৎপুর রোডের একটি অংশ দিল্লির চাঁদনি চকের সমতুল্য এলাকা ছিল –

এখানেই ১৯২৬ সালে নাখোদা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।

নবাবদের সর্বশেষ অবশিষ্টাংশ চিৎপুর রোডেই পাওয়া যেত।

চিৎপুর রোডের পাশেই রামমোহন রায় ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে এটিই আদি ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয়।

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে –

এর পরপরই এই রাস্তাটি এখানকার বিশিষ্টতম বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে নামাঙ্কিত হয়ে রবীন্দ্র সরণি নামে পরিচিত হয়ে গেল।

কলকাতার বিভিন্ন জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ এই চিৎপুর সড়কের বাসিন্দা।

ঠাকুর পরিবারের আদি বাসভবন তথা অধুনা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো শিক্ষাপ্রাঙ্গন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি

এই রাস্তার পাশেই অবস্থিত।

১৮৯৯ সালে কলকাতার শহরতলী এলাকাকে ভেঙ্গে সাব – আর্বান মিউনিসিপালিটি অফ কাশীপুর অ্যান্ড চিৎপুর গঠিত হয়।

বর্তমানে চিৎপুর কলকাতা পৌর সংস্থার ৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত।

চিৎপুর থানা কলকাতা পুলিশের উত্তর ও উত্তর শহরতলী বিভাগের অধীনস্থ।

চিৎপুরে কলকাতা রেলস্টেশন অবস্থিত – এটি কলকাতার চতুর্থ যাত্রীবাহী ট্রেনের টার্মিনাল স্টেশন।

এই চিৎপুরে এর আগে এক শতাব্দীকাল ধরে রেলের একটি ইয়ার্ড ছিল।

কলকাতার অন্যান্য রেলস্টেশনের চাপ কমাতে পরবর্তীতে চিৎপুরেও টার্মিনাল স্থাপন করা হয় – মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি সহ আরও অনেক ট্রেন এই চিৎপুর রেলস্টেশন থেকে ছাড়ে এবং শেষ স্টেশন হিসেবে এখানে এসেও থামে বহু ট্রেন।

চিৎপুরের ইতিহাস ৪০০ বছরের পুরনো – মনোহর ঘোষ এই জনপদে দেবী চিত্তেশ্বরীর বা কালীর একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেই মন্দিরের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় চিৎপুর।

তবে অনেকে মনে করেন, এই জনপদের প্রকৃত নাম ছিল চিত্রপুর।

কিন্তু ইতিহাস বলে, চক্রপাণি নামে বাংলার নবাবের এক সেনাপতি এ অঞ্চলে বাস করতেন। এ অঞ্চল ছিল শিল্পীদের একটি বর্ধিঞ্চু এক এলাকা। আর এই মত অনুসারে, ১৬১০ সালে জনৈক গোবিন্দ ঘোষ চিত্তেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করিয়েছিলেন — চিতে ডাকাত নামের এক কুখ্যাত ডাকাত এই মন্দিরে নরবলিটলি দিত – আর এই চিতে ডাকাতের নামানুসারে এই জনপদের নাম হয়েছিল চিতেপুর – পরে ঘুরেফিরে হয়ে গেল  চিৎপুর।

ইংরেজ আমলে চিৎপুর, টালা, বীরপাড়া, কালীদহ সহ কয়েকটি এলাকা নিয়ে এ অঞ্চল ডিহি চিৎপুর গঠিত হয়।

চিৎপুরে নবাব মহম্মদ রেজা খানের একটি বাগানবাড়িও ছিল – তা কোথায় হারিয়ে গেল কেউ আর  তা জানাতে পারে না। ইংরেজদের পদচিহ্ন পড়ত এই চিৎপুরে – তাও আজ ধূসর স্মৃতি!

 

এসপ্ল্যানেড –

এসপ্ল্যানেড হ’ল কলকাতা মহানগরীর মধ্য কলকাতার একটি অঞ্চল।

এটি আক্ষরিক অর্থে এসপ্ল্যানেড নয়, কারণ এই অঞ্চলটি কোনো জলাশয়ের ধারে অবস্থিত নয়। যদিও হুগলি নদী এই অঞ্চলের কিছু দূর দিয়েই প্রবাহিত হয়।

 

এসপ্ল্যানেড

 

এসপ্ল্যানেড কলকাতা মহানগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত –

এই জনপদটি কলকাতা মহানগরীর সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত এলাকা।

কলকাতার ময়দান অঞ্চলটি অতীতে ছিল জঙ্গল এলাকা – এই জঙ্গলের উত্তর অংশটিকে এসপ্ল্যানেড নাম দেওয়া হয়।

পুরনো কলকাতার ধর্মতলা বা অধুনা লেলিন সরণি থেকে হুগলি নদীর তীরবর্তী চাঁদপাল ঘাট পর্যন্ত এসপ্ল্যানেড বিস্তৃত ছিল।

ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় এই অঞ্চলটি ব্রিটিশদের প্রমোদ ভ্রমণের জন্য প্রিয় রাস্তায় পরিণত হয়।

একদা কলকাতার পাঁচটি প্রধান রাস্তা এই অঞ্চলটি ঘিরে ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগের এসপ্ল্যানেডের ছবি এঁকেছেন ড্যানিয়েল ও উইলিয়াম বেইলি। পুরনো গভর্নমেন্ট হাউস ও কাউন্সিল হাউসকে সেই চিত্রে দেখা যায়।

পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে ১৭৫৮ সালে এসপ্ল্যানেডের কাছেই ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরপর কলকাতায় ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর বসতি ছোটো অঞ্চল ছেড়ে ধীরে ধীরে ময়দানের আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

একাধিক রাস্তা এসপ্ল্যানেডের অঙ্গ। যেমন –

ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট বা রাস্তাটি এসপ্ল্যানেড রোড ইস্ট বা সিধু কানু ডহরের সঙ্গে বিবাদীবাগ বা আগেকার নাম ডালহৌসি স্কোয়ার অঞ্চলকে যুক্ত করেছে। এখন যেখানে সেন্ট জনস চার্চ – অতীতে সেইখানে ছিল ওল্ড কোর্ট হাউস। সেই থেকেই এই রাস্তাটির উৎপত্তি। এই রাস্তার উত্তর দিকে বিবাদীবাগ পূর্ব। ১৭৮১ সাল নাগাদ এই রাস্তাটি তৈরি হয়। এর শেষ প্রান্তটি নবগঠিত ফোর্ট উইলিয়ামে গিয়ে শেষ হতো।

কর্নেল হেনরি ওয়াটসন কলকাতার অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে এসপ্ল্যানেডের  অনেক উন্নতি বিধান করেছিলেন। এই রাস্তাটির সম্প্রসারিত অংশের নাম রেড রোড।

ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটের যে অংশটি গণেশ অ্যাভিনিউ বা বিবাদীবাগের উত্তর – পূর্ব কোণ থেকে ওয়াটারলু স্ট্রিট পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে, তার নতুন নামকরণ করা হয়েছে হেমন্ত বসু সরণি।

ওয়াটারলু স্ট্রিটের মোড় থেকে রাণী রাসমণি অ্যাভিনিউর মোড় পর্যন্ত প্রসারিত অংশটির নতুন নাম করা হয়েছে মাক্স এঞ্জেলস বিথী।

কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট বা রাস্তাটি বিবাদীবাগের পশ্চিম অংশকে এসপ্ল্যানেড রোডের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

গভর্নমেন্ট হাউসের পশ্চিম অংশে ছিল পুরনো কাউন্সিল হাউসটি – সেই থেকেই এই রাস্তাটির নামের উৎপত্তি। কাউন্সিল হাউসটি বন্ধ হয়ে যায় ১৮০০ সালে। এই রাস্তার দক্ষিণ অংশটির নাম গভর্নমেন্ট প্লেস ওয়েস্ট।

কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটেই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ অবস্থিত ছিল।

এসপ্ল্যানেড রোডের পূর্বদিকের ও ওয়াটারলু স্ট্রিটের মাঝে ছোটো গলিটির নাম ডেকার্স লেন – এটি অতীতে ছিল অভিজাত এলাকা। এই রাস্তার নামকরণ হয়েছে ১৭৭৩ সালে কালেক্টর ও পরবর্তীকালে কাউন্সিল সদস্য ফিলিপ মিলনার ডেকার্সের নামানুসারে। বর্তমানে এই রাস্তাটির নাম জেমস হিকি সরণি। এখানে অনেক খাবারের দোকান থাকার জন্য রাস্তাটি লোকমুখে টিফিন গলি নামেও পরিচিত।

এসপ্ল্যানেড বা পূর্ব দিকে ধর্মতলা স্ট্রিটের সংযোগস্থলে টিপু সুলতান মসজিদ অবস্থিত – এটি টিপু সুলতানের অষ্টম পুত্র গোলাম মহম্মদের স্থাপন করা একটি মসজিদ।

কলকাতা পৌর সংস্থা এই মসজিদটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী ভবন ঘোষণা করেছে।

এর আশেপাশে রয়েছে – চৌরঙ্গী স্কোয়ার ; মেট্রোপলিটন বিল্ডিং ; ভিক্টোরিয়া হাউস ; মেট্রো সিনেমা।

এসপ্ল্যানেড অঞ্চলে অনেক মূর্তি আছে, যেমন –

লেলিন মূর্তি ; ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মূর্তি ; সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মূর্তি ; হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও মূর্তি ; রাণী রাসমণি মূর্তি ; রাসবিহারী বসু মূর্তি ;

হরিরাম গোয়েঙ্কা মূর্তি ; সরোজ দত্ত মূর্তি।

 

জোড়াসাঁকো

জোড়াসাঁকো উত্তর কলকাতার একটি অঞ্চল

ও বিধানসভা কেন্দ্র। ঠাকুরবাড়ি এই জোড়াসাঁকো অঞ্চলেই অবস্থিত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো বাংলা ও বাঙালির নবজাগরণের ইতিহাসে

এক বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী।

 

জোড়াসাঁকো

 

ঠাকুরবাড়ি বর্তমানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা প্রাঙ্গন।

এছাড়া জোড়াসাঁকো অঞ্চলটি কলকাতার শঙ্খ শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

কলকাতা পৌর সংস্থার ১ নং ও ২৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে জোড়াসাঁকো অঞ্চলটি গঠিত।

জোড়াসাঁকোর নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন হ’ল –

গিরিশ পার্ক।

জোড়াসাঁকো অঞ্চলের আদি নাম মেছুয়াবাজার।

ঠাকুর পরিবার ছাড়াও নবজাগরণের অন্যান্য পৃষ্ঠপোষক – সিংহ পরিবার – কালীপ্রসন্ন সিংহের পরিবার ; পাল পরিবার – কৃষ্ণদাস পালের পরিবার

এবং

দেওয়ান বানারসি ঘোষ ও চন্দ্রমোহন চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের ভদ্রাসনও এই জনপদে অবস্থিত ছিল।

এই ভাবে জোড়াসাঁকো হয়ে উঠেছিল বাংলার নবজাগরণের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রস্থল।

জোড়াসাঁকো থানা কলকাতার প্রাচীনতম থানাগুলির অন্যতম একটি – ১৭৮৫ সালে কলকাতা শহরের পৌর প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের জন্য যে ৩১ টি থানা সৃষ্টি করা হয়েছিল, জোড়াসাঁকো ছিল তার মধ্যে অন্যতম।

আদি ব্রাহ্ম সমাজ ; জোড়াসাঁকো নাট্য সমাজ ; কলকাতা হরিভক্তিপ্রদায়িনী সভা ; মিনার্ভা লাইব্রেরি ;

ওরিয়েন্টাল সেমিনারি প্রভৃতি ইতিহাস খ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলি জোড়াসাঁকো অঞ্চলেই স্থাপিত হয়েছিল।

১৯২৯ সালে শিক্ষাবিদ গৌর মোহন আঢ্য প্রতিষ্ঠিত ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ছিল কলকাতার প্রাচীনতম বেসরকারি ও

প্রথম শ্রেণির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত বা চালিত এই বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র মধ্যবিত্ত ও নিম্ন – মধ্যবিত্ত হিন্দু ছাত্ররাই পড়াশোনার সুযোগ পেতেন।

১৯৬২ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি প্রাঙ্গণে কলকাতার তৃতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। প্রথম দিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল সঙ্গীত ও চারুকলা শিক্ষাকেন্দ্র –

পরবর্তীকালে জোড়াসাঁকো রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও মানবীয় বিদ্যা পঠনপাঠন শুরু হয়।

জোড়াসাঁকো অঞ্চলটি রবীন্দ্র সরণির উপর অবস্থিত। এখানের ঐতিহাসিক রাস্তাটির আদি নাম চিৎপুর রোড।

তবে অনেকে জোড়াসাঁকো সহ এখানের রাস্তার দুই ধারের সমগ্র অঞ্চলটিকে চিৎপুর নামে অভিহিত করে থাকেন।

জোড়াসাঁকোর পুরনো স্মৃতি মানে এখানের নাট্যশালা।

এখনও অনেকের মুখে মুখে ফেরে – জোড়াসাঁকো নাট্যশালার কথা  –  প্যারিমোহন ঘোষের বানারসি ঘোষ স্ট্রিটের বাসভবনে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল  এই নাট্যশালাটি।

এই নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হওয়া একমাত্র নাটকটি ছিল উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জুলিয়াস সিজার।

১৮৬৫ সালে গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর পারিবারিক থিয়েটার হিসেবে দ্বিতীয় জোড়াসাঁকো নাট্যশালাটির প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বছরই এই নাট্যশালায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের কৃষ্ণকুমারী নাটকটি অভিনীত হয় – এই নাটকে তরুণ জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম নাট্যাভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি নারী চরিত্র অহল্যা দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

১৮৫৪ সালের ৩ রা মে এই নাটকটি জোড়াসাঁকো নাট্যশালায় মঞ্চায়িত হয়েছিল।

জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের একটি অংশ।

বিধানসভা কেন্দ্র হ’ল – জোড়াসাঁকো।

জোড়াসাঁকোর অন্তর্গত রয়েছে কলকাতা চক্ররেলের বড়বাজার স্টেশনটি।

 

চৌরঙ্গী

চৌরঙ্গী হ’ল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা মহানগরীর মধ্যাংশের একটি অঞ্চল বা এলাকা।

এই অঞ্চলের পশ্চিম দিকে জওহরলাল নেহেরু রোড অবস্থিত।

আগে এই সড়কের নাম ছিল চৌরঙ্গী রোড।

চৌরঙ্গী কলকাতার একটি ইতিহাস – সমৃদ্ধ অঞ্চল।

চৌরঙ্গী এলাকাটি একটি বাণিজ্য কেন্দ্র।

তথা হোটেল – বিনোদন কেন্দ্র।

চৌরঙ্গী এলাকাটি কলকাতা পৌর সংস্থার ১ নং, ৪৬ নং, ৫২ নং, ৬১ নং, ৬২ নং ও ৬৩ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

চৌরঙ্গীর লোকসভা কেন্দ্র হ’ল – কলকাতা উত্তর।

চৌরঙ্গীর বিধানসভা কেন্দ্র হ’ল – চৌরঙ্গী।

চৌরঙ্গীর মেট্রো স্টেশন হ’ল – এসপ্ল্যানেড, পার্ক স্ট্রিট ও ময়দান।

জানা যায়, চৌরঙ্গী গিরি নামে এক সন্ন্যাসীর নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় চৌরঙ্গী।

এই চৌরঙ্গী সন্ন্যাসীই হিন্দু দেবী কালীর একটি মুখাবয়ব পেয়ে আদি কালীঘাট মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তবে আরেকদলের মতে, চৌরঙ্গী গ্রামের নামকরণ করা হয়েছিল রহস্যময় ধর্মাবলম্বীর চৌর্যঙ্গনাথেে নামে, যেখানে তার ঘাঁটি বা ডেরা ছিল এবং ইংরেজ শাসন সত্বেও এই নামটি থেকে যায় এবং ভারতের স্বাধীনতার পর পরিবর্তিত হয় কংগ্রেস সরকারের শাসনের সময়।

সপ্তদশ শতাব্দী বা তারও আগে অধুনা ময়দান ও এসপ্ল্যানেড ছিল বাঘের রাজত্ব – পুরো এলাকা ছিল গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ।

এর পশ্চিম দিকে একটি প্রাচীন রাস্তা অবস্থিত ছিল।

সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার বড়িশা থেকে হালিশহর পর্যন্ত এই রাস্তাটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। তার ওধারে ছিল পুকুর – জলাভূমি – ধানক্ষেত। তার মধ্যে এখানে ওখানে জেলে, পাখির বাজিকর, কাঠুরিয়া, তাঁতি ও জেলেদের কুটির। সেখানেই তিনটি ছোটো গ্রাম ছিল –

চৌরঙ্গী, বিরজি ও কোলিম্বা।

এই চৌরঙ্গী প্রায় তিনশো বছর আগে ছিল – জলাভূমি – আকীর্ণ ধানক্ষেত ও বাঁশঝাড়ে ভরা একটি ছোটো গ্রাম। সেই গ্রামে এখানে ওখানে ছোটো ছোটো কুঁড়েঘর ছিল। একটি জঙ্গল দ্বারা গ্রামটি গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।

কথিত আছে, ওয়ারেন হেস্টিংস সেই জঙ্গলে হাতি নিয়ে শিকার করতে আসতেন।

অধুনা ময়দানের দক্ষিণ – পূর্ব কোণ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল ও রবীন্দ্র সদন এলাকাটি ছিল বিরজি গ্রাম।

খরমুজার  নাম থেকে কোলিম্বা গ্রামের নামটি এসেছিল।

অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংরেজরা চৌরঙ্গীতে বড়ো বড়ো অট্টালিকা নির্মাণ করতে শুরু করে – এর ফলে

কলকাতা প্রাসাদ নগরীর তকমা পায়।

কলকাতার চিৎপুর রোড পাকা করা হয় ১৮৩৯ সালে।

১৮৫৭ সালে চৌরঙ্গী অঞ্চল ওরিয়েন্টাল গ্যাস কোম্পানির দ্বারা গ্যাসের আলোয় সজ্জিত হয়।

চৌরঙ্গীর রাস্তাটি দক্ষিণে লোয়ার সার্কুলার রোড বা আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোড থেকে উত্তরে ধর্মতলা পর্যন্ত প্রসারিত ছিল।

পার্ক স্ট্রিটের দক্ষিণাংশের অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয়েছিল চৌরঙ্গী। যদিও ১৭৯৪ সালে এই অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছিল ডিহি বিরজি এবং চৌরঙ্গীর সীমানাটি ছিল পূর্বে সার্কুলার রোড ; দক্ষিণে পার্ক স্ট্রিট ; উত্তরে কোলিঙ্গা ও পশ্চিমে রোড টু চৌরঙ্গীর একটি অংশ।

রোড টু চৌরঙ্গীতে দক্ষিণ থেকে উত্তরে আসতে প্রথম যে ক্রসিংটি পড়ে, সেটি ছিল থিয়েটার রোড – বর্তমানে এর নাম শেকসপিয়ার সরণি। ১৮১৩ থেকে ১৮৩৯ সাল পর্যন্ত এখানে একটি থিয়েটার হল ছিল। পরের ক্রসিংটি হ্যারিংটন স্ট্রিট – বর্তমানে এর নাম হো চি মিন সরণি।

এরপরের ক্রসিংটি মিডলটন স্ট্রিট – এই রাস্তাটির নামকরণ করা হয় কলকাতার প্রথম বিশপ টমাস ফ্যানশ মিডলটনের নামানুসারে। এই রাস্তায় রয়েছে বেঙ্গল ক্লাব – বেঙ্গল ক্লাবের পিছনে রয়েছে

রাসেল স্ট্রিট – বর্তমানে এই সড়কের নাম দেয়া হয়েছে আনন্দীলাল পোদ্দার সরণি।

এরপরের ক্রসিংটি পার্ক স্ট্রিট – এর বর্তমান নাম মাদার তেরেসা সরণি। এই ক্রসিংয়েই এশিয়াটিক সোসাইটি অবস্থিত। পার্ক স্ট্রিট থেকে সার্কুলার রোড পর্যন্ত প্রসারিত রাস্তাটির নাম অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি।

এছাড়াও এই জনপদে রয়েছে উড স্ট্রিট ; ফ্রি স্কুল

স্ট্রিট বা মির্জা গালিব রোড ; কিড স্ট্রিট ; সদর স্ট্রিট ;

লিন্ডসে স্ট্রিট ; ক্যাথেড্রাল সড়ক  ইত্যাদি।

 

কেষ্টপুর –

কেষ্টপুর বা কৃষ্ণপুর হল কলকাতার পার্শ্ববর্তী বিধাননগর পৌর সংস্থার অন্তর্গত একটি অঞ্চল।

এই অঞ্চলটি কাজী নজরুল ইসলাম সরণি বা ভি আই পি রোডের পাশে ও কেষ্টপুর খাল সংলগ্ন এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে।

কেষ্টপুর থেকে নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি মাত্র ৭ মাইল উত্তরে অবস্থিত।

এটি ভি আই পি রোডের একটি ব্যস্ত এলাকা। এই

কেষ্টপুর অঞ্চলটির অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ –

কারণ এখান থেকে সামান্য দূরত্বে বিধাননগর বা সল্ট লেক, সেক্টর পাঁচ বা নবদিগন্ত, রাজারহাট, নিউ টাউনের মতো কলকাতা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলির অবস্থান।

কেষ্টপুরকে কৃষ্ণাপুরও বলা হয়। আবার কেস্তাপুরও বলা হয়।

কেষ্টপুরের শহর বলা হয় কলকাতাকে।

কেষ্টপুর উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার অন্তর্ভুক্ত।

কেষ্টপুর থেকে বারাসাত, রাজারহাট,

বিধাননগর, দমদম, হাওড়া ও কলকাতার বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে বাস যোগাযোগ রয়েছে। এখান থেকে সরকারি বা বেসরকারি উভয় বাস বা এসি বাস পরিষেবা চালু আছে।

কেষ্টপুরে আছে একটি খাল –

এই খালটি উত্তর কলকাতার টালা অঞ্চলের গজনবী ব্রিজের নিকট, দেশবন্ধু পার্ক ও কলকাতা স্টেশনের কাছে সার্কুলার ক্যানেল বা বেলেঘাটা খাল থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ পূর্ব দিকে বাহিত হয়েছে। খালটি এরপর উল্টোডাঙার কাছে ভি আই পি ব্রিজ নীচ দিয়ে গিয়ে প্রথমে উত্তর -পূর্বে বাহিত হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম সরণি ও বিধাননগর এলাকার সীমানা ধরে প্রায় ৩ কিলোমিটার  চলে গিয়েছে। এরপর এটি দক্ষিণ অভিমুখে সল্ট লেক ও কেষ্টপুর এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলে গিয়েছে।

এই খালটি অবশেষে ঘুরে ফিরে বিদ্যাধরী নদীতে গিয়ে  পড়েছে।

খালটি ১৯১০ সালে খনন করা হয়  –

সেই সময় থেকে এই খালটি কলকাতার একটি বাণিজ্যিক খাল হিসাবে ব্যবহৃত হত।

একদা খালটিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কলকাতার পণ্য বোঝাই নৌকা নোঙর করত।

এছাড়া খালটি কলকাতার অন্যতম নিকাশি হিসাবে ব্যবহৃত হত।

কয়েক বছর আগে এই খালটি পলি ও বর্জ্য পদার্থ দ্বারা মজে গিয়েছিল। ফলে প্রতিবছর বর্ষায় খাল ছাপিয়ে বসতি এলাকায় জল জমে যেতো। এছাড়া জমা জলে মশার উৎপাত বেড়ে এই জনপদে মশা বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাত।

পরবর্তীতে এই খালটির দুই পাশ থেকে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সকল বসতি উচ্ছেদ করে খালটির সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হয়। অতঃপর সৌন্দর্য ফিরে এসেছে। কেষ্টপুরে বসবাস করেন

চিত্রপরিচালক বাদল সাহা।

 

বেলঘরিয়া –

বেলঘরিয়া হ’ল কলকাতা মহানগরীর অন্তর্গত কামারহাটি পৌরসভার একটি শহরাঞ্চল।

উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার অন্তর্গত লোকালয়।

বেলঘরিয়া অঞ্চলটি কলকাতার উত্তরে অবস্থিত।

বলঘড়িয়া শহরটি কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অংশ।

এখানের উল্লেখযোগ্য সড়ক হল – ফিডার রোড। এটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক – যা পশ্চিমে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ও পূর্বে মধুসূদন ব্যানার্জী রোডের মাধ্যমে কলকাতা বিমানবন্দরকে বেলঘড়িয়ার সাথে যুক্ত করেছে।

শিয়ালদহ – রাণাঘাট রেলপথে বেলঘরিয়া স্টেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ – এছাড়া বেলঘড়িয়ার নিকটবর্তী স্টেশনগুলি হ’ল –

বরানগর রোড স্টেশন ও বিরাটি স্টেশন।

নবনির্মিত বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নিবেদিতা সেতু ও যশোর রোডকে যুক্ত করেছে।

বেলঘড়িয়ার বাস পরিবহন হ’ল – বেলঘরিয়া থেকে হাওড়া দমকল ভবন ;

বেলঘরিয়া থেকে গল্ফগ্রীন।

বেলঘরিয়ার লোকসভা কেন্দ্র হ’ল – দমদম।

বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্র হ’ল – কামারহাটি।

বেলঘরিয়া অঞ্চলটি কামারহাটি পৌরসভার অন্তর্গত।

বেলঘরিয়ার দর্শনীয় স্থান হ’ল –

কবি চণ্ডীচরণ মিত্রের বসতবাটি ;

দক্ষিণপাড়া ভুবনমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাটি ;

টেক্সম্যাকো কারখানা ;

বেলঘড়িয়া রামকৃষ্ণ মিশন ;

ঘোষালবাড়ি জোড়া শিব মন্দির ; রত্নেশ্বর মন্দির ;

বুড়োশিবতলা শিবমন্দির ;

রায় চৌধুরী বাড়ি জোড়া শিব মন্দির ;

পঞ্চাননতলার শিবমন্দির।

আঠারো – উনিশ শতকে বেলঘরিয়ায় প্রচুর বাগানবাড়ি ছিল – আশেপাশের বিভিন্ন বড়লোকেরা আমোদ ফূর্তি করার জন্য এই অঞ্চলে বাগানবাড়ি তৈরি করেছিল। তাছাড়া এই অঞ্চলে ছিল অসংখ্য পুকুর – এক দেড়শো বছর আগে জলাভূমি ও পুকুরের অভাব ছিল না।

এই অঞ্চলের বাবা ঠাকুর ছিলেন পঞ্চাননতলার শিব, বাবা পঞ্চানন – বড় ঠাকুর নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন।

বেলঘরিয়ার সবচেয়ে পুরনো মন্দির এই পঞ্চাননতলাতেই আর এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূর -দূরান্তে। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসতেন এখানে পূজা দিতে, মানত পালন করতে।

বেলঘরিয়ার উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল ছিল রূপমন্দির সিনেমা হল – সেটি কয়েক বছর আগে ভেঙে চালু করা হয়েছে শপিং মল।

বেলঘরিয়ার নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, গড়িয়া অনার্য শব্দ –

বেলঘরিয়ায় একসময় ছিল প্রচুর বেল গাছ।

আর এই বেল গড়িয়া মিলে বেলঘরিয়া শব্দের সৃষ্টি।

কেউবা মনে করেন, এখানে বেল গাছ কেটে গর্তে ফেলা হত। ঐ গর্তগুলি বেগড়ে নামে পরিচিত ছিল। সেই থেকে গোটা এলাকা হয় বেলগড়ে। পরবর্তীতে লোকের মুখে মুখে বেলগড়ে বেলঘরিয়ায় পরিবর্তিত হয়েছে।

আবার এ-ও শোনা যায়, সপ্তদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চল ছিল পাট, মাছ ও তরিতরকারির প্রধান পাইকারি বাজার। প্রবাদ আছে, আড়িয়াদহে নৌকা থেকে পাট ও অন্যান্য সামগ্রী লোডিং ও আনলোডিং করার কাজে মাল বাহকদের ডাকার জন্য ওখানে একটা ঘন্টা লাগানো থাকত। যা থেকে এই অঞ্চলটার নাম হয়েছে বেলঘর – অতঃপর বেলঘর থেকে বেলঘরিয়া।

আরও শোনা যায়, প্রাচীনকালে এই জনপদে প্রচুর বেল গাছ ছিল এবং সেই গাছগুলিতে জন্ম নেওয়া বেলের আয়তনও ছিল স্বাভাবিকের থেকে অনেক বড়। সেই কারণেই এ অঞ্চলের নাম হয় বেলঘর – পরে হয়ে গেল বেলঘরিয়া।আমার

 

বিরাটি –

বিরাটি হ’ল কলকাতার নিকটবর্তী এবং কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির আওতাধীন এলাকার একটি অংশ।

বিরাটি অঞ্চলটি উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার অন্তর্ভুক্ত।

এর পৌরসভা – উত্তর দমদম পৌরসভা।

বিরাটির লোকসভা কেন্দ্র – দমদম উত্তর।

বিধানসভা কেন্দ্র হ’ল – দমদম উত্তর।

লক্ষ্মীকান্ত রায় চৌধুরীর সময় থেকেই নিমতা – বিরাতি বা বিরাটি অঞ্চলটি একটি বিখ্যাত জনপদ ছিল।

১৬৯৯ সালে লক্ষ্মীকান্ত রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পরে এটি লক্ষ্মীকান্তের জগির রাজধানী হয় এবং রাজধানী বরিশায় স্থানান্তরিত হওয়ার পরে ১৭১৬ সাল অবধি প্রশাসনিক সদর দপ্তর থেকে যায়।

এখনও বিরাটি অঞ্চল সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের বংশধরদের আবাসস্থল।

বিরাটি পূর্বে রয়েছে

যশোর রোড, পশ্চিমে নিমতা, উত্তরে ব্যারাকপুর এবং দক্ষিণে দুর্গজনগর।

বিরাটিতে রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে।

বিরাটির নিকটস্থ মেট্রো স্টেশন হ’ল দমদম।

বিরাটির উল্লেখযোগ্য পার্ক হ’ল গীতাঞ্জলি পার্ক।

বিরাটিতে রয়েছে তরুণ সেনগুপ্ত স্মৃতি ভবন – এটি বিরাটি অঞ্চলের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তন।

বিরাটির উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হ’ল –

মৃণালিনী দত্ত মহাবিদ্যাপিঠ বা বিরাটি কলেজ।

বিরাটির খুব কাছে দমদম, দমদম বিমানবন্দর, যশোর রোড।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সেতু রয়েছে বিরাটিতে – এটি বিরাটি স্টেশনের উপরে অবস্থিত। এর কাছেই মধুসূদন বন্দ্যোপাধ্যায় সড়ক – এই সড়কটি মূল রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।

বিরাটি থেকে বিভিন্ন দিকে বাস যায় –

যেমন বাবুঘাট যায় – এছাড়া যায় দক্ষিণেশ্বর, বারাসাত, সল্ট লেক ইত্যাদির দিকে। অনেক বাস যশোর রোডের বিরাটি মোড় দিয়ে বিভিন্ন দিকে যায়।

বিরাটি রেলওয়ে স্টেশন উপর শিয়ালদহ – বনগাঁ লাইন এলাকার স্থল।

 

ঠাকুরপুকুর

ঠাকুরপুকুর গিয়ে দেখা হ’ল এক ঠাকুরের সঙ্গে –

তিনি আমায নিয়ে গেলেন এক মেলায়। ঐ জায়গাটা নাকি একসময় ছিল  পুকুরটুকুর ।

 

ঠাকুরপুকুর

 

সেখানে তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন এক ঠাকুরমা’র সঙ্গে।

ঠাকুরমা বললেন, আজ আমার বাড়িতে থাকবে চলো আমার সঙ্গে।

পুকুর নেই, আগে নাকি পুকুর ছিল –

একতলা একটি বাড়ি – বাড়িটির উপরে লেখা ঠাকুর বাড়ি – মুগ্ধ হতেই হ’ল।

পরপর এলো সুন্দরী ছয়টি মেয়ে –

ওরা এসে আমায় প্রণাম করলো।

জানতে চাইলাম তোমাদের নামটাম কি?

ওরা বলতে শুরু করলো –

আমি হলাম ঠাকুরপুকুরের – ঠা এর ঠান্ডী দেবী

আমি হলাম ঠাকুরপুকুরের কু এর কুঞ্জলতা

আমি হলাম ঠাকুরপুকুরের র এর রঙ্গিলা দেবী

আমি হলাম ঠাকুরপুকুরের পু এর পুষ্পরেণু

আমি হলাম ঠাকুরপুকুরের কু এর কুসুমরাণী

আমি হলাম ঠাকুরপুকুরের র এর রঞ্জিতা দেবী।

একটু পরে ভিতর

ঘরে গিয়ে বসলাম – সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙল তা রাত সাড়ে দশটায়

ঠাকুরমা এসে জানালেন, যাদের ঘুমটুম ঠিক মতো হয় না, তারা এই ঠাকুরবাড়িতে এলে ঘুমের স্পর্শ পায় –

এই যে তুমি কখন ঘুমালে, ঠাকুরবাড়ি এসেছো বলেই ঘুমটুম ভালো হ’ল তাই না!

ঠাকুরমা এবার বললেন, রাতে পাশের বাড়ি থেকে চিতল মাছের ঝোল ; চিংড়ি মাছ ভুনা আর ইলিশ মাছ ভাজা আসবে…..

পাশের বাড়ির উত্তম ঠাকুর বেশ ভালো লোক –

নাম ছিল ওর উত্তম মৃধা –

বাংলাদেশের পিরোজপুর থেকে আসার পরে হয়ে সে গেল মৃধা থেকে ঠাকুর।

নাতনীরা আসতেই ঠাকুরমা বললেন,

ওদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলো – যাকে ভালো লাগবে তার সঙ্গে না হয় করবে বন্ধুত্ব – ঠাকুরপুকুরের ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের মেয়েদের মত স্মার্টটেস্মার্ট।