আন্দামান: জীবন্ত প্রবালের জন্য বিখ্যাত যে দ্বীপপুন্জ


আন্দামানের নীল আইল্যান্ড জীবন্ত প্রবালের জন্য বিখ্যাত। ছোট এই দ্বীপটির জনসংখ্যা খুবই কম তাই পর্যটকেরা সাচ্ছন্দ্যে প্রবাল আর রঙিন মাছের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। 

প্রতিদিন দুপুর ৩টায় হ্যাভলক থেকে নীল আইল্যান্ডগামী জাহাজ ছেড়ে যায়। 

ডলফিন দেখার জন্য লং আইল্যান্ড পর্যটকদের খুবই জনপ্রিয় স্থান। 

ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এই আন্দামানের রাজধানীর পোর্ট ব্লেয়ার। 

ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই আন্দামান দ্বীপ, এই স্থান হল ভাসমান পান্না দ্বীপ ও পাথরের একটি সমষ্টি। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জটি নারকেল ও পাম গাছ দিয়ে ঘেরা সুন্দর সমুদ্র সৈকত ও তার স্বচ্ছ নীল জল এবং তার জলের নিচে ডুবে থাকা কোরাল ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের অবস্থানের জন্য বিখ্যাত। 

বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জ ৫৭২টি দ্বীপ গঠিত, যেগুলির মধ্যে মাত্র ৩৮টি জনবসতিপূর্ণ। 

স্যাডেল শৃঙ্গ হল আন্দামান দ্বীপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এর উচ্চতা প্রায় ৭৩২ মিটার। স্যাডেল শৃঙ্গটি উত্তর আন্দামান দ্বীপে অবস্থিত। স্যাডেল শৃঙ্গ জুড়ে রয়েছে ন্যাশনাল পার্ক। এটি বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। 

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে মূলত চারটি আফ্রিকার উপজাতি গোত্র বাস করে। গ্রেট আন্দামানিজ, অনেজ, জারাওয়া এবং সেন্টিনেলিজ। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বাস করে দুইটি মঙ্গোলয়েড গোত্র – শোম্পেন এবং নিকোবারিজ।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহের পর এই দ্বীপে একটি কারা কলোনি স্থাপন করে, যেখানে বন্দীদের আটকে রাখা হতো। 

ভারত মহাসাগরের উত্তর -পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি সাগর, একে আন্দামান সাগরও বলা হয়। এর পশ্চিমে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, উত্তরে মায়ানমার, পূর্বে মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া  এবং দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ। 

আন্দামান সাগরে অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর প্রজাতিও রয়েছে – তিমি হাঙর, ডেভিল মান্তা রে, ডুগং, কয়েক প্রজাতির ডলফিন, কয়েক প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ। 

বেশির ভাগ দ্বীপ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অংশ, ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। তবে কোকো দ্বীপপুঞ্জ ও প্রিপারিস দ্বীপ মায়ানমারের অংশ। 

আন্দামানে স্থানীয়ভাবে জন্ম নেওয়া মানুষ হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মে বিভক্ত, তারা তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসবগুলি পালন করে। 

১৯৮১ কি ১৯৮২ সালের কথা। আন্দামান দ্বীপে বেড়ানোর একদিনের কথা এখনও মনে পড়ে। পোর্ট ব্লেয়ারের, বাস টার্মিনাল থেকে মায়াবন্দর যাবার সুপার ডিলাক্স বাস ছাড়ল ঠিক ভোর ছয়টায়। শহর এলাকা শেষ হতেই শুরু হল সরু পাহাড়ি সড়ক। 

পথের দৃশ্য মুহূর্তের জন্য চোখ ফেরাতে দেয় না। পাহাড়ের গা বেয়ে সড়ক গিয়েছে ক্রমশ উত্তরে। জনবসতির কাছেই পাহাড়ের গায়ে প্রচুর কলাগাছ। কোনও ঢালে সারি সারি নারকেল গাছ চোখে পড়ল। আবার কোথাও কোথাও জঙ্গল। আদিম সব বৃক্ষ খাড়া দাঁড়িয়ে আছে। তাদের কারুর কারুর দীর্ঘ কান্ড জড়িয়ে আছে নানারকম পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ। জঙ্গল যেখানে খুব ঘন, সেখানে আলো ঢোকারও পথ নেই। 

বাস থেকেই বেশ কয়েকবার চোখে পড়ে গেল সড়কের ধার থেকে হরিণের ছুটে পালানো। ঘন সবুজ পাহাড়ের মাথায় থেমে রয়েছে এক টুকরো মেঘ। মেঘ এসে বসছে একেবারে পথের ওপর। তবে ওই অনাবিল অরণ্য পথে মাঝে মাঝেই যানবাহনের তীব্র এয়ার হর্ণ বেশ পীড়াদায়ক, হয়তো অরণ্যের পক্ষে অনিষ্ঠকরও। 

এমন পরিপূর্ণ প্রাচীন অরণ্য -ঘেরা পাহাড়ি পথে যেতে যেতে মনেই পড়ে না বিপুল জলরাশির মধ্যে সামান্য বিন্দুর মত একটি দ্বীপ রয়েছে। 

বারাটাং জায়গাটির কথা খুব করে মনে পড়ে। বেশ বড় লোকালয়। এখানেই এক খাবার টেবিলে পরিচয় হয়েছিল কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে। আর আমিও তো তখন তরুণ তরতাজা। 

বিশেষ করে পোর্ট ব্লেয়ারের সেলুলার জেল দেখার স্মৃতি মন থেকে আজও মুছে যায়নি। সেদিন, সেলুলার জেল দেখে মনে হয়েছিল, আহা কী দেখলাম! সেলুলার জেল কী -ই-না মহিমাময় আলো ধ্বনি নিয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল। এটি যে চিরপ্রণম্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি ও গাঁথাবহ মিউজিয়াম। সেলুলার জেলের কাছাকাছি রয়েছে ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও সমুদ্র সৈকত করভিন্স কোভ। এই সমুদ্র সৈকতে এ বেলা ও বেলা যখন খুশি ঘুরে আসা যায়, ঢেউয়ের সঙ্গে যতক্ষণ খুশি হাডুডু খেলা যায়। এমনকি অরণ্য -পাহাড়ের মধ্যে লুকানো পর্যটন বিভাগের গেস্ট হাউসে থাকা যায়। কিন্তু আমি উঠেছিলাম আন্দামান টিলা হাউসে। 

একদিন বিকেলে সৈকতে বেড়াতে গিয়ে দেখলাম, বালুকাবেলায় পড়ে আছে অসংখ্য মৃত কোরাল, শাঁখ আর ঝিনুক। শাঁখ দেখে তো অবাক। শাঁখগুলো যে যার মতো হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। একটি ছেলে, একটি খোলস হাতে নিয়ে বললো, ‘এটি বেঁচে নেই – শাঁখের খোলস এটিই’। শাঁখ দেখতে দেখতে ছেলেটির সঙ্গে আলাপে বিভোর হয়ে পড়লাম। তখন ডাক পড়ল ডাব খাবার। নারকেল গাছের গভীর বন দেখে সেই ছেলেটি ও আমি দু’জনে ভেতরে প্রবেশ করলাম। নারকেল বাগানের অরণ্যে বেড়ানোর অনুভূতি যেন অন্য রকমই ছিল। 

কয়েকটা দিন আন্দামানে থেকে মনে হয়েছিল, আমি তো এখানে এসে স্বর্গবাস পেলাম! 

আহা সেদিন তো আর ফিরে আসবে না। 

আরও পড়ুন: নাগাল্যান্ড আজও নিজস্ব সংস্কৃতিতে সমুজ্জ্বল